জানুয়ারি ০২, ২০২৪ ১৬:৪০ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা! আজ ২ জানুয়ারি মঙ্গলবারের কথাবার্তার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • ড. ইউনূস কি আইনের ঊর্ধ্বে, শাস্তি কি সরকার দিয়েছে: প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের-প্রথম আলো
  • আওয়ামী লীগের ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না-মানবজমিন
  • আমি জাতির পিতার কন্যা, কারও কাছে মাথা নত করব না: শেখ হাসিনা-ইত্তেফাক
  • ভোটকেন্দ্র নয় পুরো বাংলাদেশ এখন ঝুঁকিতে:  ১২ দলীয় জোট-যুগান্তর

কোলকাতার শিরোনাম:

  • দেশজুড়ে শুরু অনির্দিষ্টকালের রেশন ধর্মঘট, বিপাকে অন্তত ৮১ কোটি গ্রাহক-সংবাদ প্রতিদিন
  • নিদান-আরএসএস'র-মন্দির উদ্বোধনের সময় মসজিদে রামনাম জপ–গণশক্তি
  • তাঁর মুক্তির জন্য বিমান অপহরণ, ভারতকে ‘শেষ’ করার হুমকি, মাসুদ আজহার কি সত্যিই নিহত?-আনন্দবাজার পত্রিকা
  • জল্পনার মধ্যেই মমতার বাড়িতে অভিষেক, গেলেন ফিরহাদও-আজকাল

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি- 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১. লিফলেট বিতরণ বিএনপির রহস্যময় কর্মসূচি: ওবায়দুল কাদের। দৈনিক মানব জমিনের শিরোনাম এটা। কী বলবেন আপনি?

২. লোহিত সাগরে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি প্রতিহত করব- একথা বলেছে ইয়েমেনের পার্লামেন্ট। প্রশ্ন হচ্ছে- পারবে কী তারা?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর

ড. ইউনূস কি আইনের ঊর্ধ্বে, শাস্তি কি সরকার দিয়েছে: প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের-প্রথম আলোর এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, ড. ইউনূস আইন–আদালতের ঊর্ধ্বে কি না, সেই প্রশ্ন করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ প্রশ্ন করেন তিনি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলার রায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনার স্ট্যাটাস, পজিশন, ব্যক্তিত্বের উচ্চতা কি আইনের ঊর্ধ্বে? ড. ইউনূস সাহেব কি আইন-আদালতের ঊর্ধ্বে? শাস্তি কি তাঁকে আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে? যে শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন, তাঁদের মামলা, সেই মামলায় আদালত তাঁকে শাস্তি দিয়েছেন। এখানে সরকারের কী করণীয়। সরকার কেন এখানে সমালোচনার মুখে পড়বে? এটা তো যথাযথ নয়।’

বিএনপির কর্মসূচিকে রহস্যময় বলেছেন ওবায়দুল কাদের। এখন লিফলেট বিতরণের নামে বাইরে নীরবতা দেখানো হলেও তারা হঠাৎ সশস্ত্র তৎপরতার মাধ্যমে সরব হয়ে উঠবে, এ রকম খবর পাচ্ছেন, বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, ‘আমরা অবাক হচ্ছি যে তারা (বিএনপি) লিফলেট বিতরণ করতে যাচ্ছে ৪ তারিখ পর্যন্ত। পাশাপাশি কিছু কিছু খারাপ তথ্যও পাচ্ছি, হঠাৎ তারা গুপ্তহত্যা, চোরাগোপ্তা হামলা—ভয়ংকরভাবে এসবের প্রতি ঝুঁকে পড়তে পারে এবং সে জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

আগামীবার আওয়ামী লীগ আরও শক্তভাবে, সুশৃঙ্খলভাবে দেশ পরিচালনা করবে, বলেন আওয়ামী লীগের নেতা ওবায়দুল কাদের। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি এখন নীরবতার মধ্যে রয়েছে। তাদের লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি নিরীহ। এটাকে আন্দোলন বলবেন?’

ড. ইউনূসকে দোষী সাব্যস্ত করা বাংলাদেশের মানবাধিকারের অবরুদ্ধ দশার প্রতীক: অ্যামনেস্টি-প্রথম আলো

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দোষী সাব্যস্ত করা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবরুদ্ধ দশার প্রতীক। বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষ স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে। সমালোচকদের দমিয়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয় এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে। বিবৃতিটি গতকাল সোমবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা হয়েছে।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে গতকাল ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অ্যামনেস্টি বলেছে, মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে যে অস্বাভাবিক গতিতে বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে, তা বাংলাদেশের অন্যান্য শ্রম অধিকার-সম্পর্কিত আদালতের মামলায় শম্বুকগতির সম্পূর্ণ বিপরীত।

অ্যামনেস্টি আরও বলেছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থে শ্রম আইন ও বিচারব্যবস্থার অপব্যবহার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।

অ্যামনেস্টি মনে করে, দেওয়ানি ও প্রশাসনিক ক্ষেত্র-সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জন্য মুহাম্মদ ইউনূসসহ তাঁর সহকর্মীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম শুরু করা শ্রম আইন ও বিচারব্যবস্থার একটি স্পষ্ট অপব্যবহার। এটি ইউনূসের কাজ ও ভিন্নমতের জন্য তাঁর প্রতি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার একটি ধরন।

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

দেশজুড়ে শুরু অনির্দিষ্টকালের রেশন ধর্মঘট, বিপাকে অন্তত ৮১ কোটি গ্রাহক-সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন থেকেই দেশজুড়ে শুরু অনির্দিষ্টকালের রেশন ধর্মঘট(Ration Strike)। রেশন ধর্মঘটের ডাক দেয় অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ওনার্স ফেডারেশন। ধর্মঘটের ফলে গোটা দেশে ৫ লক্ষ ৩৮ হাজার রেশন দোকান বন্ধ। সম‌স‌্যায় দেশের অন্তত ৮১ কোটি মানুষ। মঙ্গলবার সকাল থেকে কেষ্টপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার, ব্যানার হাতে পথে নামেন রেশন ডিলাররা। খাদ্যভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচিও রয়েছে তাঁদের। মঙ্গলবার সকালে কেষ্টপুরে পোস্টার ব্যানার হাতে নিয়ে পথে নামেন রেশন ডিলার।

উল্লেখ্য, বহু রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে নানা সময় অভিযোগ ওঠে রেশনে কারচুপির। বরাদ্দ অনুযায়ী রেশন মিলছে না বলে অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। এই অভিযোগ মেটাতে আইরিশ স্ক‌্যানারে গ্রাহকের পরিচয় যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে রেশন দোকানগুলিতে। রেশন তোলার ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিকের প্রয়োজনে আধার কার্ড নম্বর আপডেট করার পাশাপাশি হাতের আঙুলের ছাপ মিলিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে খাদ‌্যদপ্তর। তাতেও সমস‌্যা মিটছিল না। হাতের আঙুলের ছাপ না মেলাতে পারায় গ্রাহকের পরিচিতি নিয়ে সমস‌্যা হচ্ছে।

ফের অগ্নিগর্ভ মণিপুর-মৃত অন্তত চার- ফের কারফিউ মণিপুরে, শান্তি বজায় রাখার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর। সংবাদ প্রতিদিনের এ খবরে লেখা হয়েছে, নতুন বছরের প্রথম দিনে আবার উত্তপ্ত মণিপুর (Manipur Violence)। গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে সেরাজ্যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত আরও ৪। হিংসার জেরে ফের কারফিউ শুরু করছে মণিপুর প্রশাসন। উল্লেখ্য, গত বছর মে মাস থেকে জাতি সংঘর্ষের জেরে জ্বলছে মণিপুর। প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০০ জন। নতুন বছরের প্রথম দিনেই আবার হিংসা ছড়াল সেরাজ্যে। সোমবার বিকেলে থৌবালের লিলং এলাকায় গুলির লড়াই শুরু হয়।

দৈনিকটির অপর এক খবরে লেখা হয়েছে, অন্ধ্রে নতুন অঙ্ক! কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী জগনের বোন? বিস্তারিত খবরে  বলা হয়েছে, কংগ্রেসে (Congress) যোগ দিতে চলেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগন মোহন রেড্ডির বোন ওয়াই এস শর্মিলা। সূত্রের খবর, হাত শিবিরে বড়সড় পদ পেতে পারেন এই নেত্রী। চলতি বছরেই বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশে। সঙ্গে রয়েছে লোকসভা ভোটও। দুই নির্বাচনকে মাথায় রেখেই অন্ধ্রে (Andhra Pradesh) নতুন অঙ্ক তৈরি করতে চাইছে কংগ্রেস। 

সদ্য তেলেঙ্গানায় প্রথমবার সরকার গড়েছে কংগ্রেস। তার পরেই প্রতিবেশী রাজ্যেও ক্ষমতা দখলের জন্য ঝাঁপিয়েছেন রাহুল গান্ধীরা। অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রীর বোন শর্মিলাকে (YSR Sharmila) কংগ্রেসে সই করিয়েই দক্ষিণের রাজ্যটিতে নয়া সমীকরণ তৈরির চেষ্টা চলছে। শর্মিলার পরে ওয়াই এস আর কংগ্রেস থেকে একঝাঁক নেতাও কংগ্রেসে যোগ দেবেন বলে আশা করছে হাত শিবির। উল্লেখ্য, গত বছর তেলেঙ্গানা নির্বাচনে কংগ্রেসের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন শর্মিলা।

নিদান-আরএসএস'র-মন্দির উদ্বোধনের সময় মসজিদে রামনাম জপ–গণশক্তি

গণশক্তি পত্রিকার খবরে লেখা হয়েছে, ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরে রামলালার 'প্রাণ প্রতিষ্ঠা' অনুষ্ঠানের দিন মসজিদ, দরগা এবং মাদ্রাসায় রামনাম জপ করার নিদান দিল আরএসএস। সাড়ে চারশ বছরের একটি পুরাতন মসজিদে জোর করে  মূর্তি রেখে  মুসলমানদের প্রবেশ আটকে প্রথমে সেই মসজিদটি দখলে নেয়া হয় তারপর মসজিদ গুড়িয়ে দিয়ে সেখানে মন্দির তৈরির পর সঙ্গ নেতারা নিদান দিচ্ছেন শান্তি ও সদ্ভাবের সেই মন্দিরের উদ্বোধনের দিন রামনাম জপ করার।

আনন্দবাজার পত্রিকার শিরোনাম-তাঁর মুক্তির জন্য বিমান অপহরণ, ভারতকে ‘শেষ’ করার হুমকি, মাসুদ আজহার কি সত্যিই নিহত?

বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে, ১৯৯৪ সালে এই হরকত-উল-আনসারের হয়ে পরিচয় গোপন কাশ্মীরে এসেছিলেন তিনি। ওই সংগঠনের দুই শাখার মধ্যে বিবাদ শুরু হয়েছিল। তা দমন করতেই শ্রীনগরে গিয়েছিলেন মাসুদ। তার পর?

দাউদের পর মাসুদ আজহার? বছরের প্রথম দিন ছড়িয়ে পড়ল তাঁর নিহত হওয়ার খবর। সমাজমাধ্যমে কিছু সংবাদ সংস্থা দাবি করল, পাকিস্তানে একটি বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। যদিও কোনও সূত্রের তরফে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। মাসুদের তরফেও আসেনি বিবৃতি। কে এই মাসুদ?দাউদের পর মাসুদ আজহার? বছরের প্রথম দিন ছড়িয়ে পড়ল তাঁর নিহত হওয়ার খবর। সমাজমাধ্যমে কিছু সংবাদ সংস্থা দাবি করল, পাকিস্তানে একটি বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। যদিও কোনও সূত্রের তরফে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। মাসুদের তরফেও আসেনি বিবৃতি। কে এই মাসুদ?সোমবারে ভোরে ভওয়ালপুরের মসজিদ থেকে ফিরছিলেন মাসুদ। পথে অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীদের নিশানা হন তিনি। তাঁর কনভয় লক্ষ্য করে পর পর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।গত কয়েক মাসে পাকিস্তানে একাধিক ভারত বিরোধী কাশ্মীরি এবং খলিস্তানপন্থী জঙ্গি নেতা খুন হয়েছেন। পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর দিকে আঙুল তুলেছে।নভেম্বরে করাচিতে খুন হয়েছিলেন জইশের প্রথম সারির নেতা মৌলানা রহিমউল্লা। তাঁকেও গুলি করে খুন করেন অজ্ঞাতপরিচয় কয়েক জন। অভিযুক্তদের এখনও ধরতে পারেনি পাকিস্তানের পুলিশ। সেই হত্যাকাণ্ডের পিছনেও ‘র’-এর হাত দেখছে পাকিস্তানের একাংশ। তার পরেই সমাজমাধ্যমে একটি অংশ দাবি করেছে, মাসুদের খুনের নেপথ্যে থাকতে পারে ‘র’-এর হাত।

সমাজমাধ্যমে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘‘দাউদের পর মাসুদ আজহার। অজ্ঞাতপরিচয়দের হাতে খুন হয়েছে ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি। নতুন বছরের এই উপহারের জন্য অপরিচিত সেই ব্যক্তিকে ধন্যবাদ।’’২০২০ সালের মে মাসে মাসুদকে ‘আন্তর্জাতিক জঙ্গি’ (গ্লোবাল টেররিস্ট) ঘোষণা করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। তার আগে এই পদক্ষেপের ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন বাধা হয়েছিল চিন। পরে তা প্রত্যাহার করার পর ‘আন্তর্জাতিক জঙ্গি’-র তকমা পান মাসুদ। একে ভারতের নৈতিক জয় বলে মনে করা হয়।

কেন মাসুদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা? তার উত্তর খুঁজতে গেলে যেতে হবে অতীতে। ১৯৬৮ সালে পাক পঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুরে জন্ম মাসুদের। ১৯৬৮ সালের ১০ জুলাই। তাঁর বাবা ছিলেন সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। পাশাপাশি ধর্ম প্রচারকও ছিলেন। পশুপালন এবং ডেয়ারির ব্যবসা ছিল তাঁর পরিবারের।

অষ্টম শ্রেণিতে উঠে স্কুল ছাড়েন মাসুদ। ভর্তি হন জামিয়া উলুম ইসলামিক স্কুলে। ১৯৮৯ সালে স্নাতক হন। এর পর ওই মাদ্রাসারই শিক্ষক নিযুক্ত হন। ক্রমে তিনি পাকিস্তানে জিহাদি গোষ্ঠী ‘হরকত-উল-আনসার’-র দ্বারা প্রভাবিত হন।

এর পর আফগানিস্তানে জিহাদ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও যোগ দিয়েছিলেন মাসুদ। প্রশিক্ষণের মাঝেই সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে শামিল হন তিনি। তবে আহত হয়ে যুদ্ধের মাঝপথেই ফিরতে বাধ্য হন। পরে হরকত-উল-আনসারের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন মাসুদ। ওই সংগঠনের হয়ে বিদেশে গিয়ে অনুদান জোগাড়ের কাজ শুরু করেন।

১৯৯৩ সালের নাইরোবি গিয়েছিলেন মাসুদ। সেখানে আল-কায়দার সোমালিয়া কেন্দ্রিক শাখা সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ একটি রিপোর্টে দিয়ে জানিয়েছিল, হরকত-উল-আনসারের জঙ্গি কার্যকলাপ ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে। কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নিশানা করছে তারা।

১৯৯৪ সালে এই হরকত-উল-আনসারের হয়ে পরিচয় গোপন কাশ্মীরে এসেছিলেন তিনি। ওই সংগঠনের দুই শাখার মধ্যে বিবাদ শুরু হয়েছিল। তা দমন করতেই শ্রীনগরে গিয়েছিলেন মাসুদ। তখনই ধরা পড়ে যান। প্রথমে শ্রীনগরের বাদামি বাগ ক্যান্টনমেন্ট, তার পর দিল্লির তিহাড়, শেষে ছিলেন জম্মুর কোটবলওয়াল জেলে। সেখান থেকেই মুক্তি।

১৯৯৯ সালে নেপালের কাঠমান্ডু থেকে দিল্লিতে আসছিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের একটি বিমান। সেটিকে অপহরণ করে নিয়ে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে নামানো হয়েছিল আফগানিস্তানের কন্দহরে। সে সময় তালিবানের নিয়ন্ত্রণে ছিল কন্দহর, যাদের আবার সমর্থন করত পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই।

পণবন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে মাসুদ-সহ তিন জঙ্গিকে ফেরানোর শর্ত দেয় জঙ্গিরা। নেতৃত্বে ছিলেন মাসুদের ভাই ইব্রাহিম আথার। শর্ত মেনে নেয় ভারত সরকার। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে অনেকে ‘কূটনৈতিক ব্যর্থতা’ বলেছিলেন। অপহরণকারীদের হাতে মাসুদকে তুলে দেওয়ার পর তাঁরা পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

পাকিস্তান সরকার জানিয়েছিল, অপহরণকারীদের খোঁজ মিললে অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে। তবে তা আর কখনও হয়নি। যদিও মাসুদকে যে কিছু করা হবে না, সেই ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল পাকিস্তান।

এর পর করাচিতে একটি জনসভা করেছিলেন মাসুদ। সেখানে বলেছিলেন, ভারতকে শেষ না করা পর্যন্ত মুসলিমদের নিশ্চিন্তে থাকা উচিত নয়। কাশ্মীরকে ভারতের শাসন থেকে ‘স্বাধীন’ করার অঙ্গীকারও নিয়েছিলেন।

১৯৯৯ সালে হরকত-উল-আনসারকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের তালিকায় স্থান দেয় আমেরিকা। এর পর সংগঠনটি নাম বদলে ফেলে। নতুন নাম হয় হরকত-উল-মুজাহিদিন। এর পর আজহার তৈরি করেন নতুন সংগঠন। নাম দেন জইশ-এ-মহম্মদ। রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, আইএসআই, তালিবান, ওসামা বিন লাদেনও নাকি সমর্থন জুগিয়েছিলেন মাসুদকে।

এর পর ভারতে একের পর এক জঙ্গি হামলার নেপথ্যে নাম জড়িয়েছে জইশের। ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভারতের সংসদে হামলা হয়। অভিযুক্তেরা লস্কর-এ-তইবা এবং জইশের সদস্য ছিলেন। ঘটনায় পাঁচ জঙ্গি, দিল্লি পুলিশের ছ’জন কর্মী, দু’জন নিরাপত্তারক্ষী, এক জন মালি— মোট ১৪ জন নিহত হন।

২০০৫ সালে অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি মন্দিরে হামলায়ও নাম জড়ায় জইশের। ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি আফগানিস্তানে মাজার-ই-শরিফে ভারতীয় দূতাবাসের উপর হামলাও তাঁরই নির্দেশে হয়েছিল।

২০১৬ সালে পাঠানকোটে সেনাঘাঁটিতে হামলা করে জইশ। হামলার আগে হামলাকারীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল মাসুদ এবং তাঁর ভাইয়ের। হামলাকারীদের ফোনে ক্রমাগত নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) তদন্তে নেমে সেই প্রমাণ খুঁজে বার করেছিল। সেই প্রমাণ দাখিল করে ইন্টারপোলকে মাসুদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় রেড কর্নার নোটিস জারি করার অনুরোধ জানিয়েছিল কেন্দ্র।

২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপিএফের কনভয় লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলা হয়েছিল। নিহত ৪৪ জন জওয়ান। পাকিস্তানের সেনা হাসপাতালে বসে হামলার দায় নেন মাসুদ। এর পরেই তাঁর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব আনে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স।

গত মাসে একটি রিপোর্টে জানা যায়, এখন পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে নিরাপদে রয়েছেন মাসুদ আজহার। শুধু তাই নয়, বহাল তবিয়তে রয়েছেন। জইশের রোজের কাজকর্ম দেখাশোনা করেন তাঁর ভাই আবদুল রউফ আসগার আলভি। মাসুদের ভগ্নিপতি মহম্মদ ইউসুফ আজহার প্রশিক্ষণের বিষয়টি তদারকি করেন। কান্দাহার অপহরণের নেপথ্যে ছিলেন মাসুদের যে ভাই, সেই আথার আলভি এখন সন্ত্রাসের জন্য অনুদান সংগ্রহ করেন।

রিপোর্টে এও জানা গিয়েছিল, ভারতে সন্ত্রাস হামলার ছক এখনও কষছে জইশ। তার মাঝেই কি তবে নিহত হলেন জইশ প্রধান? নেপথ্যে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা? সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! কথাবার্তার আজকের আসর এখানেই গুটিয়ে নিচ্ছি। আবারও কথা হবে আগামী আসরে ততক্ষণ সবাই ভালো ও সুস্থ থাকুন।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ২

ট্যাগ