এপ্রিল ০৩, ২০২৪ ২১:০১ Asia/Dhaka

নারী জাতির ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যুগে যুগে নারী সমাজ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। প্রাক-ইসলামী যুগে নারীর কোনো অধিকার ছিল না বললেই চলে।

সেই যুগে আরব উপদ্বীপ, পারস্য, ভারত উপমহাদেশ ও এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলেও  পছন্দের স্বামী নির্বাচনের অধিকার, মোহরানা আদায়ের অধিকার, সম্পদের মালিকানা এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে মতামত প্রকাশ বা এসব অঙ্গনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার কোনো অধিকার নারীদের ছিল না। পশ্চিমা সমাজগুলোতেও ছিল একই ধরনের অবস্থা। পাশ্চাত্যে বিংশ শতকের প্রথম দিকে নারীর রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার দেয়া শুরু হলেও নারীকে সস্তা শ্রমিক হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে  তাদেরকে কল-কারখানায় ও ঘরের বাইরের কর্মক্ষেত্রে টেনে আনা হয় সমানাধিকার দেয়ার কথা বলে। পাশ্চাত্যে নারীর শরীর ও দৈহিক সৌন্দর্যকে অপব্যবহারও ব্যাপক মাত্রায় শুরু হয় এই কথিত সমানাধিকারের শ্লোগানের আড়ালে। মোট কথা পশ্চিমা সভ্যতা নারীকে মূলত ভোগের সামগ্রী হিসেবেই দেখতে অভ্যস্ত, ফলে সেখানে পরিবার ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন এবং ছড়িয়ে পড়েছে নগ্নতার সংস্কৃতি। 

অন্যদিকে ইসলামী আইনে নারীর সম্পদ বা মালিকানা ও বিয়ের মোহরানার অধিকারসহ স্বামী নির্বাচনের অধিকার এবং পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারগুলোরও স্বীকৃতি দেয়া হয়। ইসলাম নারী ও পুরুষকে মানুষ হিসেবে সমান মর্যাদা দিয়েছে। তবে মা ও স্ত্রী হিসেবে ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান এবং অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়েও বেশি মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনীর মতে সমাজের নেতা নির্বাচনে  ভোট দেয়ার অধিকার তথা নিজের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার নারীকে দেয় ব্যক্তিত্ব ও সম্মান। মহানবী (সা) গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নারীদের বাইয়াত বা আনুগত্য আদায়ের প্রথা চালু করেছিলেন। নবী-রাসুলগণ এসেছেন মানুষের আত্মা, চিন্তাধারা ও তৎপরতাকে পবিত্র করতে। কিন্তু তাঁরা যেসব খোদায়ি বিধান তুলে ধরতেন ও প্রচার করতেন সেসব গ্রহণ করা বা মেনে নেয়া কিংবা মেনে না নেয়াটা জনগণের স্বাধীন ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। অবশ্য মহান আল্লাহ বিষয়গুলো বোঝার জন্য মানুষকে দিয়েছেন বিবেক ও বুদ্ধি তথা চিন্তাশক্তি। 

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষ সমান মর্যাদার অধিকারী 

মানুষকে পছন্দের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে বলেই তারা পরকালে পুরস্কার বা শাস্তির অধিকারী হবে। কিন্তু যদি তারা মানবীয় ইচ্ছা-অনিচ্ছার ঊর্ধ্বে কেবল রোবটের মত মহান আল্লাহর নির্দেশ বা বিধি-বিধান মেনে চলতে বাধ্য হন তাহলে পরকালীন জবাবদিহিতার কোনো অর্থ হয় না। ইসলাম নারীকে অশিক্ষিত থাকতে ও সামাজিক কাজে উদাসীন থাকতে উৎসাহ দেয় না। বরং ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা ও সমাজ-সংস্কৃতির বিষয়ে নারীকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে বা যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে অন্য যে কোনো মতাদর্শের চেয়ে বেশি উৎসাহ দেয় যাতে নারীও মানুষ হিসেবে পূর্ণতার অধিকারী হতে পারে। ইসলাম প্রয়োজনীয় বা জরুরি জ্ঞান অর্জনকে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই ফরজ বলে ঘোষণা করেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি বলেছেন, 

আমাদের শত্রুরা অভিযোগ করছে যে আমরা নারীর বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতিতে বাধা দিচ্ছি! কিন্তু শত্রুরাও এটা জানে যে এসব অভিযোগ মিথ্যা, তবুও তারা বার বার এসব অভিযোগ প্রচার করছে। আমরা মনে করি নারী ও পুরুষ মানুষ হিসেবে সমান এবং পূর্ণতার পথ তাদের সামনে খোলা। তারা যত বেশি চেষ্টা চালাবে তত বেশি পূর্ণতা অর্জন করবে। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও রাজনীতিতে ভূমিকা রাখার পথও তাদের উভয়ের জন্যই খোলা। - ইরানের ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (র) বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানগত উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতেন। ইরানের ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এর প্রতিফলনও ঘটেছে। ফলে সংস্কৃতি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে ইরানের নারী সমাজ খুবই সক্রিয়। ইমাম খোমেনী (র) শিশু-কিশোরদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়া, অশিক্ষিতদের শিক্ষাদান, মানবীয় বিষয়গুলোর শিক্ষকতায় এবং পবিত্র কুরআনের সংস্কৃতি শিক্ষাদানে ভূমিকা পালনকারী ইরানের অঙ্গীকারবদ্ধ নারী সমাজ তথা বিপ্লবী নারী সমাজের প্রতি অশেষ শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। ইসলামী  ইরানে নারীদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং জ্ঞান-গবেষণা চর্চার নানা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বিপুল হারে বেড়ে যাওয়ার ঘটনাও শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জ্ঞান গবেষণায় ইসলামী ইরানের নারী-উন্নয়নের সাক্ষ্য বহন করছে।


উচ্চ-শিক্ষিত বা সুশিক্ষিত এবং পরিশুদ্ধ আত্মার অধিকারী নারী, সমাজকে উপহার দিতে পারে সুশিক্ষিত ও পবিত্র সন্তান। তাই আধ্যাত্মিক ও ইসলামী শিক্ষা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই অপরিহার্য। আর এর ব্যবস্থা করাও ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য জরুরি। ইসলাম যদি নারীকে তুচ্ছ বা হীন বলে জ্ঞান করতো তাহলে মসজিদের জামায়াতের নামাজ, ঈদের জামায়াত ও পবিত্র হজের সমাবেশে নারীর উপস্থিতিকে নিষিদ্ধ করত। কারবালায় ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষার যে বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ইমাম হুসাইন (আ) তা অপরিপূর্ণ থেকে যেতো যদি তাঁর বোন হযরত যাইনাব (সালামুল্লাহ আলাইহা) এ বিপ্লবের অসমাপ্ত কাজের নানা গুরুত্বপূর্ণ দিকের দায়িত্ব গ্রহণ না করতেন। অন্য কথায় শালীনতা বজায় রেখে মুসলিম নারী ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়িত্বও পালন করতে সক্ষম এবং অনেক সময় তা মহা-জরুরি বা অনিবার্য হয়ে পড়ে। ইয়াজিদ ও  ইবনে জিয়াদের দরবারে হযরত যাইনাবের সাহসী ও যুক্তিপূর্ণ ভাষণ বা বক্তব্যগুলো মুসলিম নারীর জন্য মহাগৌরবের বিষয় হয়ে আছে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের গণ-ভিত্তি জোরদার হয়েছিল এবং পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধেও পুরুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ সহজ হয়েছিল বিপ্লবী নারী সমাজের ভূমিকার কারণে।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের উত্তাল দিনগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনসমাবেশ, মিছিল ও ধর্মঘটেও অংশ নিয়েছেন দেশটির বিপ্লবী নারী সমাজ। এমনকি ব্যাপক গুলি বর্ষণের মুখেও সাগরের প্রবল ঢেউয়ের মত মিছিলের সারি নিয়ে বার বার সামনে এগিয়ে গেছেন ইরানের অকুতোভয় বিপ্লবী নারী ও যুবতীরা। ইরানের ইসলামী রাষ্ট্র  ইরানি নারীদের নানামুখী প্রতিভা বিকাশের ব্যাপক সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে তারা রাষ্ট্রীয় নানা ক্ষেত্রে এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতির নানা বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছেন শালীনতা ও লজ্জাশীলতা বজায় রেখেই। আর এতেই বোঝা যায় নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য নারী সমাজের মান-মর্যাদার পরিপন্থী পুরুষ-বিদ্বেষী উগ্র নারীবাদ বা পশ্চিমা নগ্নতার সংস্কৃতি আমদানির দরকার হয় না।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৩ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ