'সমাজের পরিশুদ্ধি ও উন্নয়ন নারীর পরিশুদ্ধি ও উন্নয়নের ওপর নির্ভরশীল'
নারী: মানব-ফুল-৩৮ (ইরানের আদর্শ ইসলামী-বিপ্লবী নারী-সমাজ)
ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান ও মানবীয় মর্যাদা। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ হিসেবে নারী ও পুরুষ সমান মর্যাদার অধিকারী। ইরানের ইসলামী বিপ্লবও বদলে দিয়েছে ইরানি নারী সমাজকে।
ইসলামী বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট ইরানের নারী সমাজের পরিবর্তন বিশ্ব-সমাজের জন্য বড় ধরনের বার্তা বহন করছে। আর এ থেকেই প্রমাণ হচ্ছে যে ইতিহাস ও সমাজের চাকা ঘোরানোর ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির ভাষায় সার্বিকভাবে ইসলামী ইরানের নারী সমাজ বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের নারী সমাজের চেয়ে উন্নত। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজে তারা বেশি অগ্রসর। জিহাদের সময় দেখা যায় তারা জিহাদে নিজ সন্তানদের পাঠাচ্ছেন। অন্যদিকে ঘর-সংসারে ও সন্তান-প্রতিপালনেও তারা হচ্ছেন পাকা গিন্নি। এ বিষয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও তা ইসলামী শিক্ষার অনুকূল এবং আশাব্যঞ্জক।
ইসলামের আদর্শ নারীর মত ইরানের নারীরাও আত্মত্যাগী ও নিবেদিত-প্রাণ। জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াইয়ে পুরুষের পাশাপাশি ইরানি নারীও ভূমিকা রেখেছেন এবং এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়েও বেশি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। দেশ গড়া বা দেশ পুনর্গঠনের জিহাদে ইরানের শহরাঞ্চলের নারীরা গ্রাম ও অবহেলিত অঞ্চলের জনগণকে এবং কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছেন। ইরানের পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধে দেশটির নারী সমাজ যে কত বেশি সহায়তা দিয়েছেন ও আত্মত্যাগ করেছেন এর গভীরতা বহির্বিশ্বের জনগণ এখনও জানতে বা বুঝতে পারেননি। ইতিহাস তাঁদের আত্মত্যাগ ও গৌরবময় অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। আসলে একটি সুন্দর ও আদর্শ সমাজ গড়ার পূর্বশর্ত হল নারী ও মায়েদের আদর্শ ভূমিকা পালন। হযরত ফাতিমা জাহরা (সা) ও হযরত জাইনাব (সা. আ)'র আত্মত্যাগ আর সাধনা এক্ষেত্রে তাঁদের আদর্শ এবং পথ-চলার প্রেরণা।
হজরত ফাতিমা জাহরা (আ.) বিশ্ববাসীর জন্য অনুকরণীয় আদর্শ ও এমনকি অমুসলিম নারী-পুরুষের জন্যও আদর্শ। পূর্ণতা ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য এবং বিপথগামী হওয়া থেকে বাঁচতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেই মহীয়সী নারীর ব্যক্তিত্বের নানা দিক সম্পর্কে গভীর ও সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি।
হজরত ফাতিমা জাহরা (সা.)-এর কন্যা হযরত জাইনাব কোবরাও (সা.) আরেকজন আদর্শ নারী, যিনি নবী পরিবারের একজন আদর্শ নারীর ভূমিকা সবচেয়ে ভালোভাবে পালন করেছেন। কারবালার ঘটনার আগেও মদীনায় ও কুফায় এই মহীয়সী মানবীর চরিত্র ছিল অত্যন্ত বিশিষ্ট, প্রসিদ্ধ ও বরেণ্য এবং বিজ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা, নৈতিকতা ও পবিত্রতার দিক থেকে তা একজন মুসলিম নারীর জন্য আদর্শ।
ইরানের বিপ্লবী মুসলিম নারী-সমাজের সবচেয়ে বড় বা প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তারা সতীত্ব, চারিত্রিক পবিত্রতা ও হিজাব বা পোশাকের শালীনতা এবং ইসলামী বিধি-বিধান মেনে চলতে অভ্যস্ত। হিজাব বজায় রাখার মাধ্যমে মুসলিম নারী সমাজ সহজেই রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী বিপ্লবী নারী সমাজকে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সামরিক, ধর্মীয় ও আদর্শিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রগুলোসহ সব ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাতেন। তবে তাঁর মতে নারীর প্রধান আত্মিক ও নৈতিক বৈশিষ্ট্য হল সতীত্ব বা চারিত্রিক পবিত্রতা ও পোশাকের ইসলামী শালীনতা তথা হিজাব বজায় রেখে চলা, আর তাহলেই তাদের অন্য তৎপরতাগুলো মূল্যবান হয়ে উঠবে। অন্য কথায় নারী সামাজিক ও রাজনৈতিক সব তৎপরতাই চালাবেন তবে তা করতে হবে ইসলামী শালীনতা ও লজ্জা বজায় রেখে। ইমাম খোমেনী র.'র মতে সমাজের উন্নতি, অগ্রগতি ও সুশিক্ষার প্রসার নির্ভর করে নৈতিক দিক থেকে সুশিক্ষিত ও সমাজ-সচেতন নারীর সক্রিয় ভূমিকার ওপর। তাই তিনি বলতেন, সমাজের পরিশুদ্ধি ও উন্নয়ন এবং অধঃপতন নারীর পরিশুদ্ধি ও উন্নয়ন ও অধঃপতনের ওপর নির্ভরশীল।
একটি জাতি বা সমাজের নারীর পোশাক সেই সমাজের অবস্থা তথা সামাজিক ও আত্মিক বা আধ্যাত্মিক অগ্রগতির মান তুলে ধরে। কোনো সমাজের নারীর পোশাক থেকেও বোঝা যায় যে এই সমাজের জনগণ কোন্ সংস্কৃতির ধারক ও পতাকাবাহী। হিজাব বা পর্দা ব্যক্তির মর্যাদা ও পরিবারের সুরক্ষা রক্ষার জন্য অপরিহার্য। এ কারণেই নারীর শালীন পোশাক পরাকে ইসলাম ফরজ বা অবশ্য-পালনীয় কর্তব্য করেছে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবও ইসলামী সভ্যতার ধারাকে এগিয়ে নিতে বিপ্লবী নারী সমাজকে চারিত্রিক পবিত্রতা ও ইসলামী শালীনতা এবং লজ্জাশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানায়। ইরানের বিপ্লবী নারী সমাজ ইসলামী বিপ্লবের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে হিজাব ও শালীনতা নারীর অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে বাধা তো হয়নি বরং তারা ইসলামী-বিপ্লব-পূর্ব নারী সমাজের চেয়ে সব ক্ষেত্রে বেশি অগ্রগতি ও স্বাধীনতা অর্জন করেছেন। ইরানের বিপ্লবী নারী সমাজ শিক্ষা, গবেষণা, রাজনীতি, প্রশাসন, খেলাধুলা, চলচ্চিত্র , ধর্ম ও সংস্কৃতির সব শাখায় অতীতের চেয়ে সহস্র গুণে বেশি সফল। আর তা হিজাবের ছায়াতেই সম্ভব হয়েছে। ইরানের বিপ্লবী মুসলিম নারী সমাজ বৈশ্বিক পরির্বতন, দেশের বাস্তব পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও সচেতন। তাদের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জ্ঞানও বেশ উন্নত পর্যায়ের।
অন্য কথায় ইরানের বিপ্লবী মুসলিম নারী সমাজ ইসলামী বিপ্লবের অন্যতম বড় শক্তি হিসেবে এই বিপ্লবের নানা সাফল্য ও অগ্রগতিতে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। তাদের ঈমান, নৈতিকতা, আত্মত্যাগ ও সাংস্কৃতিক যোগ্যতা বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের জন্যও অনুকরণীয় আদর্শ। অন্যান্য মুসলিম দেশের নারী সমাজও ইরানের বিপ্লবী মুসলিম নারী সমাজের অনুসরণ করে তাদের দেশকে স্বাধীন, উন্নত ও স্বনির্ভর করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন। #
পার্সটুডে/২০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।