আগস্ট ৩০, ২০১৬ ১৯:৪৫ Asia/Dhaka
  • ইরানি গল্প ও রূপকথা: তিগ তরুণ (পর্ব-১)

আজ আমরা নতুন একটি গল্প শুনবো। গল্পটির নাম ''তিগ তরুণ''। গল্পটি আশা করি ভালোই লাগবে আপনাদের। তো চলুন তাহলে শুরু করা যাক। প্রাচীনকালে এক বাদশাহ ছিল। ওই বাদশাহর কোনো সন্তানাদি ছিল না। ফলে যা হয়, বাদশাহর মনটা সবসময় খারাপ থাকতো, মনমরা হয়ে থাকতেন বাদশা। একদিন বাদশা তার স্ত্রীর সঙ্গে বসে ছিলেন। এমন সময় এক দরবেশ এলো।

দরবেশ রাসুল এবং ইমামদের নামে প্রশংসাগাথা গেয়ে যাচ্ছিল। বাদশা তার স্ত্রীকে বললো: "আমাদের তো কোনো সন্তানাদি নেই যার জন্য আমাদের ধন-সম্পদ রেখে যাবো। এক কাজ করো! এক বাটি স্বর্ণ নিয়ে আসো। এই দরবেশকে দান করে দাও"। বাদশাহর স্ত্রী তাই করলো। কিন্তু দরবেশ ওই স্বর্ণের দিকে ফিরেও তাকালো না,বরং সে বললো: "তোমাদের এই পেরেশানি এই মনোকষ্টের কারণটা আমাকে খুলে বলবে? চেষ্টা করবো মনের সেই কষ্টগুলো দূর করার উপায় খুজে বের করতে। হয়তো পেয়েও যেতে পারি"!

দরবেশের কথা শুনে বাদশাহ খুবই উৎসাহী উঠে উঠলো। বললো: "আমার তো জীবন প্রায় শেষের পথে। অথচ এখনও আমি কোনো সন্তানের মুখ দেখতে পেলাম না"। দরবেশ তার হাতটা জামার পকেটে ঢুকালো এবং একটা আপেল বের করে আনলো। বাদশাহর হাতে আপেলটা দিয়ে বললো: আপেলটাকে দুই ভাগ করে অর্ধেক তুমি খাবে আর বাকি অর্ধেক দেবে তোমার স্ত্রীকে। নয় মাস পর আল্লাহ তোমাদেরকে একটি পুত্র সন্তান দেবেন। ওই সন্তানের নাম রাখবে 'তিগ তরুণ'। ফার্সি ভাষায় তিগ মানে হলো ব্লেড। কেননা একটি ব্লেডের মধ্যেই বাঁধা থাকবে তার জীবন।

দরবেশ আরও বললো: ছেলে সন্তানের পর তোমাদের আরও তিনটি কন্যা সন্তান হবে পরপর। তারপর আর কোনো সন্তান হবে না। দরবেশ এই বলে চলে গেল। পরবর্তী চার বছরে ঠিকই বাদশা চারটি সন্তানের পিতা হলেন। দরবেশ যেভাবে বলে দিয়েছিল সেভাবেই বাদশা তার ছেলের নাম রাখলেন 'তিগ তরুণ'। দিন মাস বছর যেতে যেতে বাদশাও বুড়ো থেকে আরো বুড়ো হতে লাগলো। বার্ধক্য এমন পর্যায়ে গেল যে একদিন বাদশাহ বুঝতে পারলেন তিনি হয়তো মারা যাবেন,সুতরাং তিনি তাঁর ছেলেকে ডেকে এনে বললেন: প্রিয় সন্তান আমার! আমার যাবার সময় হয়ে এসেছে। এরপর বাদশা যা যা বললেন তা শুনবো একটু পরে মিউজিক বিরতি শেষে।

শ্রোতাবন্ধুরা! বাদশা তার ছেলেকে ডেকে বলেছিল: আমি মারা যাবার পরপরই তোমার বোনের বিয়ের একটা প্রস্তাব আসবে। বড় বোনটার বিয়ে তার সঙ্গে দিয়ে দেবে কোনোরকম প্রশ্ন না করেই। আমাকে যখন দাফনের জন্য কাফন পরানো হবে তখন আরেকজন আসবে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। তোমার মেজো বোনটাকে তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। এরপর আমার দাফন কাফন শেষ হয়ে গেলে আরও এক লোক আসবে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। ছোটো বোনটাকে ওই লোকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। মনে রাখবে প্রস্তাব নিয়ে আসবে যারা তাদেরকে কোনোরকম প্রশ্ন করা যাবে না। ছেলে বাবার সব কথা এবং নির্দেশ মেনে নিলো এবং বাবার কথামতোই সব কাজ সমাধা করলো। বোনদের ঠিকঠাক মতো বিয়ে দিয়ে দিলো।

সব কাজ ঠিকঠাক মতো শেষ করার পর শাহজাদার মনে একটা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিলো। ঘরে তার মন বসতে চাইলো না। এ কারণেই কয়েক দিন ধরে সে ঘর থেকে সকালবেলা বেরিয়ে পড়তো। সারাদিন বাজারঘাটে কাটিয়ে ঘুরে ফিরে সন্ধ্যা হলে ফিরে যেত বাসায়। একদিন এক লোক একটা বিড়াল নিয়ে এলো বাজারে বিক্রি করার জন্য। শাহজাদা জাভন তিগ বিড়ালটা কিনে প্রাসাদে নিয়ে এলো। আরেকদিন বাজারে গিয়ে কিনে নিয়ে এলো একটা আরব্য কুকুর। তৃতীয় দিন কিনলো একটা কবুতর। এরপর একদিন শাহজাদার মা প্রাসাদের সব রুমের চাবি তার হাতে দিয়ে দিলো এবং বললো: এখন থেকে যেহেতু এই প্রাসাদের সবকিছু তোমার সঙ্গেই সম্পৃক্ত সুতরাং চাবিগুলো এখন থেকে তোমার কাছে থাকাই সঙ্গত।

চাবিগুলো হাতে নিয়ে শাহজাদা বুঝতে পারলো মা একটি রুমের চাবি রেখে দিয়েছে, তাকে দেয় নি। তাই সে মাকে জিজ্ঞেস করলো : ওই রুমের চাবিটা… মা!

মা বললো: ওই রুমের কথা বাদ দাও! ওখানে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই।

কিন্তু শাহজাদা কিছুতেই শুনলো না। মায়ের কাছ থেকে একরকম জোর করেই ওই রুমের চাবি আদায় করে নিলো এবং রুমের দরোজা খুললো। দরোজা খুলতেই তার নজর পড়লো দেয়ালে ঝোলানো একটি পোট্রেটের ওপর। ওই ছবি দেখেই শাহজাদা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল।*

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/টি:১০৮/২৮