ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬ ১৬:৫৮ Asia/Dhaka

মিয়ানমারে স্পষ্ট গণহত্যা চলছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতায় বিস্মিত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেন মহসীন। তিনি রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মিয়ানমারে স্পষ্টত জাতিগত নিধন চলছে। পুরো সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করা হলো। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক আমেনা মহসীন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ভয়াবহ দমন-পীড়ন ও নির্যাতন চলছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই নির্যাতন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করণীয় কী?

অধ্যাপক আমেনা মহসীন: মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমান ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা নিয়ে আমি বিস্মিত হয়েছি। এ সম্পর্কে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই-মিয়ানমারে গণহত্যা চলছে। সুনির্দিষ্টভাবে সেখানে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর জাতিগত নিধন চলছে।

দেখুন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলতে এখানে জাতিসংঘের কথা বলা যায়। জাতিসংঘের ম্যন্ডেট রয়েছে মানবিক কারণে বিশ্বের যেকোনো জায়গায় তারা  তদন্ত করতে পারে এবং হস্তক্ষেপও করতে পারে। তাছাড়া ওআইসি আছে। ওআইসিরও মানবিক কারণে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রয়েছে। তাছাড়া মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার সুযোগও রয়েছে। সেখানকার রোহিঙ্গা কোনো সদস্য ব্যক্তিগতভাবে বা গোষ্ঠীগতভাবে আইসিসিতে মামলা করতে পারে। এছাড়া আসিয়ানসহ আরো অনেক ফোরাম আছে যাদের পক্ষে মিয়ানমারে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ আছে।কিন্তু আমি খুবই অবাক হচ্ছি মিয়ানমার ইস্যুতে জাতিসংঘসহ বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর পক্ষ থেকে তেমন কোনো সাড়া দেখা যাচ্ছে না। এটা খুবই হতাশাব্যঞ্জক বিষয়।

রেডিও তেহরান:  রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্পদ্রায়ের পক্ষ থেকে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন ছিল তা দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ কী? কেন এই পিছু টান?

অধ্যাপক আমেনা মহসীন: দেখুন এখানে পিছু টানের কথা না; তারা তো কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। মিয়ানমার সম্পর্কে আমি অন্তত দুটি বিষয় উল্লেখ করতে  পারি। মিয়ানমারে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বহু বছর ধরে অন্তর্মুখী  পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ছিল। সবার চাপ উপেক্ষা করে তারা তাদের কাজকর্ম চালিয়ে গেছে।আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মনে করছে এটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আর মিয়ানমার রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশের নাগরিক বলে মনে করছে না।

রেডিও তেহরান: রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকাকে আরো বেশি জোরদার দেখতে চায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের এই দাবিকে আপনি কীভাবে দেখছেন? 

অধ্যাপক আমেনা মহসীন: রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকাকে আরো বেশি জোরদার করার ব্যাপারে দেশের রাজনৈতিক দল বলতে আপনি যদি বিএনপির কথা বলেন সেক্ষেত্রে সংসদের বাইরের বিরোধী দল হিসেবে তারা এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপির সোচ্চার হওয়ার বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই। কিন্তু সরকারের ভূমিকা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে- আসলে রোহিঙ্গা ইস্যুটা কিন্তু কেবল এখনকার নতুন সমস্যা নয়। আশির দশক থেকেই রোহিঙ্গা সমস্যাটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমাধানের কোনো উদ্যোগই নিচ্ছে না। তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার অনেক বেশি সহযোগিতা করছে রোহিঙ্গাদেরকে। আর রোহিঙ্গাদের বিষয়টিকে আমাদেরকে দেখতে হবে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।বারবার বলা হচ্ছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে- একথা  আংশিকভাবে সত্য তবে পুরোপুরি ঠিক নয়। আর রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিলে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আমার মনে হয় না। বরং তাতে জঙ্গিবাদ আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে।

রেডিও তেহরান: রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি কিন্তু নীরবতা পালন করছেন বলে আমরা দেখতে পাচ্ছ। তার  এ ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখছেন? 

অধ্যাপক আমেনা মহসীন: অং সান সুচির ভূমিকা খুবই হতাশাব্যাঞ্জক। সুচি শান্তির জন্যে এবং গণতন্ত্রের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। ওনার কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা আরো অনেক বেশি ছিল। তো রোহিঙ্গা ইস্যুতে অং সান সুচির কোনো নৈতিক ভূমিকাও আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়।

রেডিও তেহরান:  মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের এই বিদ্যমান সমস্যা....এ সংকটের সমাধান কোন পথে বলে আপনি মনে করেন? 

অধ্যাপক আমেনা মহসীন:  মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের এই বিদ্যমান সমস্যা বা সংকটের সমাধান খুব সহসাই আমি আশা করছি না। বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক পর্যায় থেকে মিয়ানমার সরকারের ওপর যথেস্ট চাপ প্রয়োগের প্রয়োজন আছে।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৫