এপ্রিল ১৮, ২০১৭ ১৭:৩৮ Asia/Dhaka

কুরআনের আলো অনুষ্ঠানের এই পর্বে সূরা আন-নমলের ৭০ থেকে ৭৫ নম্বর আয়াত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই সূরার ৭০,৭১ ও ৭২  নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَلَا تَكُ فِي ضَيْقٍ مِمَّا يَمْكُرُونَ (70) وَيَقُولُونَ مَتَى هَذَا الْوَعْدُ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ (71) قُلْ عَسَى أَنْ يَكُونَ رَدِفَ لَكُمْ بَعْضُ الَّذِي تَسْتَعْجِلُونَ (72)

"(হে নবী!) ওদের (বিপথগামিতার) জন্য তুমি দুঃখ করো না এবং ওদের চক্রান্তের জন্য মনঃক্ষুণ্ন হয়ো না।" (২৭:৭০)

"ওরা বলে, যদি সত্যবাদী হও, তবে বল,(ইহকাল বা পরকালের শাস্তির) প্রতিশ্রুতি কখন কার্যকর হবে?" (২৭:৭১)

"বলো, তোমরা যেটাকে ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছো তার একটি অংশ হয়তো তোমাদের পিছু নিয়েছে (এবং তোমাদের কাছে পৌঁছে যাবে)।" (২৭:৭২)

এর আগে সূরা নমলের ৬৯ নম্বর আয়াতে অপরাধীদের পরিণতি সম্পর্কে জানতে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমণ করতে বলা হয়েছে যাতে মানুষ অতীতের বিভিন্ন জাতি ও সভ্যতার পরিণতি  থেকে শিক্ষা নিতে পারে। ওই আয়াতের ধারাবাহিকতায় এসব আয়াতে আল্লাহতায়ালা রাসূল (স.)-কে উদ্দেশ্য করে বলছেন: মুশরিকরা যদি নিজেদের নির্বোধসুলভ কর্মকাণ্ডের ওপর জিদ ধরে বসে থাকে এবং শত্রুতা অব্যাহত রাখে তাহলে তুমি দুঃখ পেয়ো না। কারণ তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করেছ। সত্যের বাণী তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছ। আল্লাহতায়ালা মানুষকে স্বাধীন হিসেবে সৃষ্টি করেছেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার দিয়েছেন। আল্লাহ চান না, তারা বাধ্য হয়ে ঈমান আনুক।  যদিও তারা কখনো ঈমান আনবে না বরং তারা সবসময় তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে,অবশ্য আমি তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেব। ফলে তুমি এ বিষয়ে চিন্তা করো না। 

আগের কয়েকটি আয়াতে এসেছে, মুশরিকরা রাসূলগণ ও মুমিনদেরকে ঠাট্টা করে বলে: দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তি নেমে আসবে বলে যে কথা বলা হয়েছে, তা কেন আসছে না? আমরা তো ঐ শাস্তির অপেক্ষায় আছি। আল্লাহতায়ালা তাদের ওই বক্তব্যের জবাবে বলছেন, 'তাড়াহুড়া করো না। খুব শিগগিরই তোমাদেরকে ঐ শাস্তির মুখে পড়তে হবে। যা নিয়ে ঠাট্টা করছ তা তোমাদের কাছ থেকে খুব বেশি দূরে নয়।'

সূরা নমলের ৭০, ৭১ ও ৭২ নম্বর আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:

১. পথভ্রষ্টদের জন্য মনে কষ্ট পাওয়ার ক্ষেত্রেও একটা সীমা-পরিসীমা রয়েছে। তাদেরকে সৎ পথে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করতে হবে। সত্যের বাণী পৌঁছার পরও তারা যদি তা মেনে না নেয়, তাহলে তাদেরকে তাদের মতো ছেড়ে দিতে হবে।

২. কাফের ও জালিমদেরকে দ্রত শাস্তি দেয়া হচ্ছে না দেখে এটা ভাবা যাবে না যে, আল্লাহ তাদের কথা ভুলে গেছেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে,তারা আগে হোক,পরে হোক নিজেদের কৃতকর্মের শাস্তি পাবেই।

সূরা নমলের ৭৩,৭৪ ও ৭৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন:

  وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَشْكُرُونَ (73) وَإِنَّ رَبَّكَ لَيَعْلَمُ مَا تُكِنُّ صُدُورُهُمْ وَمَا يُعْلِنُونَ (74) وَمَا مِنْ غَائِبَةٍ فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ (75)

"আসলে তোমাদের পালনকর্তা মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল,কিন্তু তাদের অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।" (২৭:৭৩)

"নিঃসন্দেহে তাদের অন্তর যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে তোমার পালনকর্তা অবশ্যই তা (ভালোভাবে) জানেন।" (২৭:৭৪)

"আকাশ ও পৃথিবীর এমন কোনো গোপন (বিষয়) নেই যা (আল্লাহর কাছে) একটি সুস্পষ্ট কিতাবে (লিপিবদ্ধ) নেই।" (২৭:৭৫)

আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় আল্লাহতায়ালা এখানে বলছেন: অপরাধীদেরকে দ্রুত শাস্তি না দেয়ার অর্থ এই নয় যে, তিনি তাদের কথা ভুলে গেছেন বা শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা রাখেন না বরং এটা হলো আল্লাহর করুণা। আল্লাহ মানুষকে সুযোগ দেন যাতে তারা সংশোধন হতে পারে এবং তওবা করতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো,মানুষ আল্লাহর এ মহান নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না বরং নিজেদের কুকর্ম অব্যাহত রাখে। সম্ভবত: অন্যায়কারীরা মনে করে, আল্লাহ তাদের অপকর্ম, ষড়যন্ত্র ও ভয়ংকর ইচ্ছা সম্পর্কে জানেন না। আর তাই তাদেরকে শাস্তি দিচ্ছেন না। যদিও আল্লাহ শুধু তাদের প্রকাশ্য কর্মতৎপরতাই জানেন তাই নয় বরং তারা মনের মধ্যে যেসব মারাত্মক ধরণের হিংসা-বিদ্বেষ লুকিয়ে রাখে এবং যেসব চক্রান্ত ও কূটকৌশলের কথা মনে মনে চিন্তা করে, সেগুলোও তিনি জানেন। কোনো কিছুই আল্লাহর কাছে অজানা নয়।

সূরা নমলের ৭৩,৭৪ ও ৭৫ নম্বর আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:

১. আল্লাহর দেয়া সুযোগ কাজে লাগাতে হবে এবং এ সুযোগে নিজেদের ভুল সংশোধন ও তওবা করতে হবে। পাপের শাস্তি হচ্ছে না বলে নিজের অন্যায় কাজকে সঠিক হিসেবে ধরে নেয়া যাবে না।

২. আল্লাহ গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু সম্পর্কে অবগত। কেয়ামতের তারিখসহ আসমান-জমিনের সব কিছু আল্লাহ ভালোভাবে জানেন। পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। আল্লাহর কাছে সব কিছুর হিসেব-নিকেশ রয়েছে।

৩. কেবল আমাদের কাজ-কর্ম ও আচার-আচরণে সংশোধন আনলেই চলবে না। একইসঙ্গে আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা তথা নিয়তের ক্ষেত্রেও সংশোধন জরুরি। অন্যের জন্য অমঙ্গল কামনা করার পরিবর্তে মঙ্গল কামনা করতে হবে। অন্যের ভালো চাইতে হবে। কারণ আল্লাহ আমাদের অন্তর সম্পর্কে পুরোপুরি জানেন। আর এর ওপরই আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্তির বিষয়টি নির্ভর করে।#