মে ২৬, ২০১৮ ১৯:১৫ Asia/Dhaka

পবিত্র রমজানে আত্মশুদ্ধির নানা দিক সম্পর্কে আমরা কথা বলছিলাম গত কয়েক পর্বে। মানুষের নানা কুপ্রবৃত্তি ও বদ-স্বভাব জন্মগত পবিত্র প্রকৃতি আর বিবেককে অকার্যকর করে দেয়।

মানুষের এসব কুপ্রবৃত্তি ও বদ-স্বভাব অনেক ক্ষেত্রে বংশগত ও অনেক ক্ষেত্রে নিজের অর্জিত। তবে চেষ্টা করলে লোভ, কৃপণতা ও অলসতার মত যেসব স্বভাব মানুষ নিজ পরিবার থেকে পায় উত্তরাধিকার-সূত্রে, সেসবও সাধনার মাধ্যমে দূর করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। গোয়ার্তুমি বা একগুঁয়েমিও অত্যন্ত মন্দ স্বভাব যা মানুষকে সত্য থেকে দূরে রাখে। গোঁয়ার স্বভাবের মানুষ সত্যকে অস্বীকারের ক্ষেত্রে গোঁয়ার্তুমি অব্যাহত রাখলে সত্যের আলো দেখার ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে। এক শ্রেণীর মানুষ সত্যের ব্যাপারে অনমনীয় হওয়ায় আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী ও ইমাম হুসাইনের মত মহান ও শক্তিশালী মহাপুরুষদেরকেও হতে হয়েছে অত্যন্ত মজলুম এবং নৃশংসতার শিকার। মন্দ স্বভাবগুলো দূর করার জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টার পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। 

কেবল আল্লাহর ওপর ভরসা করে এবং তাঁর কাছে আশ্রয় নিয়ে ও তওবা করে যে কোনো মুসলমান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারেন। আল্লাহর কাছে চাইলে তিনি কাউকেই ফিরিয়ে দেন না। যেখানেই থাকুন না কেন অন্তরকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়ে দেখুন: অবশ্যই জবাব শুনতে পাবেন। যখন দেখবেন যে আপনার মন  হঠাৎ গলে গেছে কিংবা আপনার চোখ হয়েছে অশ্রু-সজল তখনই বুঝবেন যে আপনি আল্লাহর কাছ থেকে জবাব পেয়েছেন। মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, আমার কাছে চাও। তোমরা আমার কাছে চাইলে আমি জবাব দেব।.. আমি তোমাদের শাহরগের চেয়েও কাছে রয়েছি।...  আল্লাহ তওবাকারীদের ভালবাসেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, যারা একনিষ্ঠভাবে তওবা করে তাদের অতীতের পাপগুলোকেও আল্লাহ সাওয়াবে পরিণত করেন। তবে যারা কোনো মানুষের বস্তুগত বা অন্য কোনো ধরনের ক্ষতি করেছেন তাদেরকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি ওই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছেও ক্ষমা চাইতে হবে এবং ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি অর্জনের যথাসাধ্য ও সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।

রমজান অফুরন্ত রহমত, বরকত বা প্রাচুর্য ও মাগফিরাতের মহাসুযোগের মাস। মহানবীর হাসিসে এ মাসকে বলা হয়েছে মহান আল্লাহর ভোজসভার মাস যাতে সবাইকেই দাওয়াত দেয়া হয়েছে। এখন এই সভা থেকে আপনি কতটা খাবেন বা নেবেন সেটা নির্ভর করছে আপনার যোগ্যতার ওপর।  অনেকেই এই পবিত্র মাসেও এত বেশি বস্তুগত কাজে ব্যস্ত যে কখন এই মাসটি এলো ও চলে গেল তা যেন তারা টেরই পান না! ব্যাপারটা যেন এমন যে আপনাকে এক মহাজৌলুসময় ও অফুরন্ত কল্যাণময় ফ্রি-ভোজসভায় দাওয়াত দেয়া হল অথচ আপনি দাওয়াতের কার্ডের দিকে তাকিয়েও দেখলেন না! অনেকে এই মহাভোজসভার কথা টের পেলেও তাতে যোগ দেন না! এই শ্রেণীর মানুষ সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও রমজানে রোজা রাখেন না, কুরআন তিলাওয়াত ও রমজানের দোয়াগুলোও চোখ বুলিয়ে দেখেন না! আর অনেকে এ ভোজসভায় যোগ দিলেও তা থেকে সমান মাত্রায় বা সর্বোচ্চ মাত্রায় কল্যাণ অর্জন করতে পারেন না।

যারা রমজান মাসে সংযম সাধনা করেন রোজা রেখে তারা গভীর নুরানিয়াত ও ধর্মীয় বরকতের অধিকারী হন। দোয়া ও নামাজ ছাড়াও এ মাসে পবিত্র কুরআন অধ্যয়নেরও রয়েছে আলাদা ধরনের আধ্যাত্মিক তৃপ্তি। এ মাসে চিন্তা-ভাবনাসহ কুরআন অধ্যয়নের যে সুযোগ রয়েছে তা অন্য মাসে নানা ঝামেলার কারণে সহজ হয় না। কুরআন তিলাওয়াতের সময় মনে হবে যেন মহান আল্লাহ নিজেই আপনার সঙ্গে কথা বলছেন। জীবনের সব সমস্যার সমাধান রয়েছে যে মহাগ্রন্থে সেই মহাগ্রন্থের আলোকে জীবন গড়ার জন্য এবং সেই মহাগ্রন্থ থেকে নানা বিষয় শেখার জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হচ্ছে তিলাওয়াত। কুরআন তিলাওয়াত ক্লান্ত ও শ্রান্ত মনে এনে দেয় গভীর প্রশান্তি এবং নিজেকে আল্লাহর পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য অনন্য উদ্দীপনা। নানা বিষয়ে দিক-নির্দেশনা ও সুপথ লাভের সবচেয়ে মোক্ষম গ্রন্থ হল আল-কুরআন। অন্যদিকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের জীবন-ধারা ছিল জীবন্ত কুরআনেরই বাস্তব নুমনা। সেজন্য তাঁদের বাণী বা হাদিসও ক্লান্ত আত্মায় জোগায় অনাবিল প্রশান্তি। 

পবিত্র রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ জনাব মুহাম্মাদ মুনির হুসাইন খান বলেছেন:

মাহে রমযান  পবিত্র কোরান অবতীর্ণ হওয়ার মাসঃ

ইমাম সাদিক ( আঃ ) বলেছেন: সমগ্র কোরান রমযান মাসে একদফায় বাইতুল মামুরে অবতীর্ণ হয় এবং এরপর  ২০ বছর ধব়ে ধাপে ধাপে ( ধীরে ধীরে ও পর্যায় ক্রমে ) তা অবতীর্ণ হতে থাকে।

রমজানে মহান আল্লাহর ভোজসভার আরেকটি প্রধান আকর্ষণ হল বিশেষ ধরনের নানা দোয়া ও মহান আল্লাহর কাছে বান্দাহর প্রেমময় সংলাপ এবং কাকুতি-মিনতি।

আমরা আগেও বলেছি খোদাপ্রেমের মোহনীয় সব সংলাপ শেখার এক দারুণ মাধ্যম রমজানের এইসব দোয়া আর মুনাজাত যা মুসলমানদেরকে উপহার দিয়ে গেছেন বিশ্বনবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইত। এইসব দোয়ার মধ্যে রয়েছে দোয়ায়ে সাহার, দোয়ায়ে আবু হামজা সুমালি, দোয়ায়ে ইফতেতাহ, দোয়ায়ে জওশান কাবির ও দোয়ায়ে জওশান সাগির ইত্যাদি।  রমজানের দিনে ও রাতে কিংবা সকাল ও সন্ধ্যায় যখনই সময় পাওয়া যায় তখনই এসব দোয়া পড়া উচিত। দোয়ায়ে কুমাইল ও মসজিদে কুফায় হযরত আলী (আ)'র পঠিত বিশেষ দোয়াও এ মাসে খোদাপ্রেমের অনন্য দোয়া হিসেবে পড়া যেতে পারে। মোটকথা পবিত্র রমজানে খোদায়ি ভোজ-সভা থেকে সর্বোচ্চ কল্যাণ হাসিলের জন্য সচেষ্ট হওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ যাতে কেবল এক রমজানের বরকতই সারা জীবন ও পরকালের জন্য যথেষ্ট পাথেয় হতে পারে। 

 

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/ ১০

ট্যাগ