সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮ ১৩:৩১ Asia/Dhaka
  • দেখব ঘুরে ইরান এবার: কেরমানের দুটি ঐতিহাসিক শহর যা ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত

কেরমান প্রদেশের দুটি বিখ্যাত এবং ঐতিহাসিক শহর বাম এবং আর্গ শহর

শহর দুটি হলো কাঁচা ইটের তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সুন্দর শহর হিসেবে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়েছে।

বাম শহরটি কেরমান প্রদেশের পূর্বদিকে অবস্থিত। এখানকার আবহাওয়া সমতলভূমি এলাকায় গরম আর পার্বত্য এলাকায় নাতিশীতোষ্ণ। বাম শহরের কেন্দ্রীয় শহরও বাম। কেরমান শহর থেকে বাম শহরের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটারের মতো। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই শহরটির উচ্চতা এক হাজার ৭৬ মিটার। এই শহরটি বিস্তীর্ণ সমতল প্রান্তর এবং জাবালে কাবুদি ও বারেয পর্বতমালার মাঝখানে পড়েছে। বাম শহরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম। পুরো বছরে ৬০ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টিপাত হয় এখানে। 

শহরের আশেপাশের পাহাড় পর্বত থেকে প্রচুর ঝর্নাধারার সৃষ্টি হওয়ায় এবং সেগুলোর বহমান ধারার কারণে বাম শহরের ভূগর্ভে পানির অস্তিত্ব ব্যাপক মাত্রায় দেখা যায়। মাটির নীচে পানির এই অস্তিত্ব কেরমান এলাকাটিকে সবুজ হয়ে উঠতে সহযোগিতা করেছে। কেবল তাই নয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত আবহাওয়াময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ একটি চমৎকার শহরে পরিণত হয়েছে কেরমান। ঐতিহাসিকভাবে বহু প্রাচীন হবার কারণে বাম শহরটি প্রাচ্য ভূখণ্ডের একটি শহরের পরিপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। আর এ কারণে শহরটির মূল্যও বিচিত্র কৌণিক। আগকোর দিনে শহরটির অবস্থান ছিল ‘সিল্ক রোডের’ কাছে। 

অবশ্য রেশম উৎপাদন এবং প্রতিপালন করা হয় এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রয়েছে পাশেই। এখানকার আরেকটি ঐতিহাসিক এলাকা হলো বাম। বাম নামক শহরটি গেল কবছর আগে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তার প্রাচীন অস্তিত্ব পুনর্গঠনের মাধ্যমে এখনো বজায় রয়েছে। বাম শহরটিতে উন্নতমানের খেজুর উৎপন্ন হয়। এখানকার খেজুর সমগ্র ইরানে তো বটেই পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশসহ সমগ্র পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত এবং সুপরিচিত। বাম শহরের উত্তর পূর্বে বিরাট পাথুরে এবং পার্বত্য উপত্যকার উচ্চতায় একটি দূর্গ রয়েছে। প্রতিরক্ষার দিক থেকে খুবই সুরক্ষিত দূর্গটি। ওই এলাকার লোকজন দূর্গটিকে ‘আর্গ’ নামে চেনে। বিশাল এই দূর্গ স্থাপনাটি মূলত প্রাচীন বাম শহরের ঐতিহ্যের স্মারক। 

এই প্রাচীন বাম শহরটির চারদিকে ৩৮টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে। কেল্লার দক্ষিণ দিকে রয়েছে চারটি বিশাল দেয়াল। উত্তর পূর্বদিকেও বিশাল দেওয়াল রয়েছে। দূর্গটি নির্মাণ করার ক্ষেত্রে মূল যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে রোদে পোড়া কাঁচা ইট, কাদামাটি এবং শুকনো খড় বা ঘাস। তবে কোনো কোনো অংশে পাথর, ইট এবং খুরমা খেজুর গাছও ব্যবহার করা হয়েছে। বামের এই দূর্গ এবং স্বয়ং বাম শহর বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক মর্যাদায় অভিষিক্ত।

 

ঐতিহাসিক তথ্যপঞ্জি অনুযায়ী বিশেষ করে ‘হুদুদুল আলম’ এবং ‘তারিখে ওয়াযিরি’সহ আরো বহু ইতিহাসমূলক বইতে এই বাম শহরটিকে দুই হাজার বছর আগের বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই বইগুলো লেখা হয়েছিল কাজারি শাসনামলে। সর্বোপরি বলা যেতে পারে ইসলামী যুগের লেখালেখি, পুরাতত্ত্ব বিষয়ক গবেষণা এবং স্থাপত্য বিষয়ক প্রাথমিক পর্যালোচনা থেকে যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তো থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে,এই দূর্গটি শাসানী শাসনামলের আগে কিংবা সম্ভবত আশকানী যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দূর্গের আশেপাশে কয়েকটি উঁচু দেওয়াল এবং দরোজারও অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গেছে। একটি কথা এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন সেটা হলো বামের এই ঐতিহাসিক দূর্গটি ইরানের মধ্যে দর্শনীয় সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপনা হিসেবে মনে করা হয়।   

অবশ্য ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে এই দূর্গটির ওপর বহুবার হামলা হয়েছে। তবে যতবারই আক্রমণ হয়েছে, ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে ততবারই পুনর্নির্মাণ করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। বাম দূর্গের সবোর্চ্চ অংশের দিকে দৃষ্টি দিলে কিংবা পুরো কমপ্লেক্সের দিকে তাকালে, সেইসাথে এই স্থাপনার আশেপাশের চমৎকার খেজুর বাগানের দিকে নজর দিলে বোঝা যাবে স্থাপনাটি কতোটা মূল্যবান এবং ঐতিহ্যবাহী। বিশেষ স্থাপত্যকলার বিচারে দূর্গের নির্মাণশৈলী এই আধুনিক যুগের স্থপতিদেরকেও বিস্মিত করে। 

বাম দূর্গের আয়তন এক লাখ আশি হাজার বর্গমিটারের কাছাকাছি। দেয়ালগুলোর উচ্চতা ছয় থেকে সাত মিটারের মতো। দেয়ালটির দৈর্ঘ্য এ হাজার আট শ পনর মিটার। দূর্গটি দুই ভাগে বিভক্ত বলা যায়। একপাশে ছিল শাসকদের বসবাসের ব্যবস্থা, শহরের সামরিক কর্মকর্তাদের কার্যালয়। আর অপর অংশে ছিল প্রজা সাধারণ এবং কৃষিকাজের সাথে জড়িত লোকজন। এই অংশে মসজিদ যেশন ছিল তেমনি ছিল বাজার, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এবং বন্দিশালাও। 

সে সময়কার অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রয়োজনীয় চাহিদার আলোকেই বিশাল এই কমপ্লেক্সটি বামে গড়ে উঠেছিল। সার্বিক দিক বিবেচনায় রেখে যা যা যেভাবে প্রয়োজন ছিল সেভাবেই নির্মাণ করা হয়েছে। এই নির্মাণের যে মুন্সিয়ানা এখনো লক্ষ্য করা যায় তা সে সময়কার নির্মাণ শিল্পীদের মেধা এবং প্রতিভার বিষয়টি ফুটিয়ে তোলে। ঘরবাড়ি, বাজারঘাট, রাস্তাঘাট, সামরিক কেন্দ্রগুলো বসবাসকারী নাগরিকদের সুবিধার্থে এতো সুন্দরভাবে তৈরি করা হয়েছে যে স্থাপত্য শিল্পীদের জন্য তা গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে। 

বাম দূর্গে যারা বসবাস করত সম্ভবত তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করত কৃষিকাজ করে কিংবা তাঁতের কাপড় বুনে। দূর্গের ভেতরে যারা বসবাসের সূত্রপাত সম্ভবত কেল্লা গড়ে ওঠার পর থেকেই শুরু হয় এবং কাজারি শাসনামলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত একটানা  বিরতিহীনভাবে জারি ছিল। কিন্তু এ সময়টার পর কেন যে এখানে বসবাস করার রেওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল সেটার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও জানা যায় নি।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/  ২০

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন

ট্যাগ