অক্টোবর ১৭, ২০১৮ ২০:৩১ Asia/Dhaka

যখনি ইন্টারনেট তথা সাইবার জগতের প্রসঙ্গ আসে তখনি স্বাভাবিকভাবেই এ জগতের নিরাপত্তার কথাও চলে আসে।

নিরাপত্তার প্রসঙ্গটি আসার কারণ হচ্ছে এই জগতে অপরাধ সংঘটনের মাত্রা দিন দিনই বাড়ছে। একটা বিশেষ শ্রেণির মানুষ আছে যারা ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগতে অপরাধে জড়িত। তারা সাইবার-সন্ত্রাসও সৃষ্টি করে। নিরীহ মানুষ তাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। নানাভাবে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়। এ জগতের অপরাধীরা নানা কৌশলে কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তিকে তার কাজে বিরত রাখতে পারে অথবা প্রয়োজনে কোনো কাজে বাধ্যও করতে পারে। কম্পিউটার সিস্টেম ও নেটওয়ার্কের ক্ষতি করতে পারে। ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে পুরো নেটওয়ার্ককে বিকল করে দিতে পারে। এছাড়া নানা ক্ষেত্রে জালিয়াতি ও প্রতারণা করতে পারে। সরাসরি কিংবা ছদ্মবেশে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বা ভীতি সৃষ্টিসহ মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিভ্রান্ত করতে পারে।  

এছাড়া সাইবার অপরাধীরা দেশের অখণ্ডতা,সংহতি ও জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করারও চেষ্টা চালাতে পারে। পর্নোগ্রাফি,ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য হাতিয়ে নেয়া,বিনা অনুমতিতে গোপনে অন্যের ছবি বা ভিডিও ধারণ,সংরক্ষণ ও প্রচারের মতো ঘটনাও অহরহই ঘটছে। ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল জগতের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। বিশ্বে এই জগতের যুদ্ধকে বলা হচ্ছে পঞ্চম ডোমেইনের যুদ্ধ। অনেক দেশই স্থল,নৌ,বিমান ও মহাকাশ-যুদ্ধ মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জনের পর পঞ্চম ডোমেইন সাইবারস্পেসে যুদ্ধ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ যুদ্ধে যে অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে তা পরমাণু বোমা,বন্দুক,গোলাবারুদ নয়। এ যুদ্ধের অস্ত্রকে বলা হচ্ছে লজিক বোমা। কেউ কেউ একে ডিজিটাল কন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল হিসেবে আখ্যায়িত করছে। এ যুদ্ধে প্রযুক্তি পণ্যে প্রোগ্রামিং কোড সংযোজন,সফটওয়্যার টেম্পার ও ওয়েবসাইট হ্যাক করে মেধাস্বত্ব,তথ্য ও ডেটা চুরি এবং ইন্টারনেটচালিত ব্যবস্থাকে পুরোপুরি অচল করে দেওয়া হয়। এর ফলে প্রতিবছর বিভিন্ন সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধিত হয়।

বাস্তবতা হচ্ছে,সাইবার নিরাপত্তা গোটা বিশ্বের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গণসচেতনতার বিকল্প নেই। বর্তমানে হ্যাকারদের আক্রমণের অন্যতম একটি লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক ও ব্যাংকিং খাত।  বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে,হ্যাকাররা হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে প্রথমেই ব্যাংকের সাধারণ কর্মীদের টার্গেট করে। এরপর তাদেরকে ভুলের ফাঁদে ফেলে গ্রাহকের তথ্য চুরি এবং পেমেন্ট সিস্টেমে অনধিকার প্রবেশ করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালায়। এর ফলে এক সময় সফলও হয়। এজন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত সবারই সাইবার আক্রমণের ধরণ সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। এ জন্য ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

সাইবার আক্রমণে বিশ্বে প্রতিবছর অন্তত কয়েকশ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। ২০১৪ সালে ইন্টেল সিকিউরিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়,বিশ্বে সাইবার আক্রমণজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৩ সালে এ ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সাইবার অপরাধে বিশ্বে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিপুল অংকের অর্থও চুরি হয়েছে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে। ক্রমাগত সাইবার অপরাধ বেড়ে চললেও তা মোকাবেলায় দরিদ্র দেশগুলোর পক্ষ থেকে তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সাইবার নিরাপত্তায় অনেক দেশেই আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কোন অবকাঠামো নেই। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ বা দমন করার কোন আইন নেই। এছাড়া দক্ষ জনবলের অভাব তো রয়েছেই। সাইবার নিরাপত্তার জন্য গবেষণার প্রতি জোর দেয়া উচিৎ। বাসার কাজ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রতিটি কাজে ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগতের  ব্যবহার রয়েছে।

সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। নিজের ধন-সম্পদ রক্ষায় নিজেদেরই ব্যবস্থা নিতে হবে,এটা অন্যদের দিয়ে হবে না। প্রতিটি দেশ ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে। ঘরের নিরাপত্তার জন্য গেটে ভাল মানের একটা দরজা ও তালা দরকার যাতে কেউ এতে ঢুকতে না পারে। এখন দরজা লাগানোর পরেও যদি সম্পদ চুরি হয়,তাহলে বলতে হবে ঘরের মানুষের মধ্যেই চোর রয়েছে। সেক্ষেত্রে ঘরের চোর ধরার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু তার আগে নিজের গেট ও তালা ঠিক করতে হবে।  প্রতিটা অফিসের কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের সচেতন হতে হবে। কারণ কোন্‌ ফাইল,মুভি বা ছবিটা ডাউনলোড করবে, কোন্‌ অ্যাপস বা সফটওয়্যারটা ইনস্টল করবে আর কোনটা করবে না এই জ্ঞানটা তাকে দিতে হবে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১৭

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন