মে ০২, ২০১৯ ১৪:৫১ Asia/Dhaka

হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছি যে, বাবাদের দায়িত্ব সচেতনতার ব্যাপারে রাসূলে খোদা (সা) বলেছেন: "একটি পরিবারের অভ্যন্তরে বিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টি করার দায়িত্ব বাবার। সন্তানদের ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন থাকা এবং স্বাধীনতা ও মুক্তির ক্ষেত্র তৈরি করার দায়িত্বও বাবার। সেইসঙ্গে সন্তানদেরকে সকল প্রকার ঝুঁকিমুক্ত রাখার দায়িত্বও বাবার"।

সাধারণত প্রায় সকল সমাজে বাবাই পরিবারের আর্থিক চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সুতরাং আয়-রোজগারের দায়িত্ব তথা শ্রম-পরিশ্রমের গুরুভার বাবার ওপরই বর্তায়। ইসলামের দৃষ্টিতেও যখন একটি পরিবারে কাজ ভাগ হয় তখন আর্থিক জোগানের বিষয়টি বর্তায় বাবাদের ওপর। যাই হোক বাবারা এ ব্যাপারে তাঁদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করবেন আশা করি। আজকের আসরে আমরা আলোচনা করবো একটি পরিবারে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করার লক্ষ্যে অবসর সময়গুলোকে কীভাবে সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয় নিয়ে। একটি সুস্থ পরিবারের জন্য এই অবকাশ যাপন বা ছুটির অবসরকে কাজে লাগানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গ্রীষ্মের আগমনে স্কুলগুলো যখন লম্বা ছুটি দেয়-বিশেষ করে ইরানে তিন মাসের মতো বন্ধ থাকে স্কুল-তখন ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যাপক উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। কারণ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তাদের নিত্য দিনের স্কুলে যাবার পরিকল্পনা আর থাকে না। তাদের এই তিন মাসের অবসরকে কীভাবে সুন্দর করে কাটানো যায় সে বিষয়ে প্রত্যেক পরিবারেরই মোটামুটি একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকে। অবসর বা অবকাশ মানে বোঝায় বিশ্রাম নেয়া, একটু আরাম করা কিংবা ক্লান্তি দূর করে শ্রান্তির খোঁজে মুক্ত-স্বাধীন সময় কাটানো। প্রতিটি মানুষই এরকম একটি অবসর পেতে চায় এবং তাকে নিজের মতো করে কাটাতে চায়।

সমাজে আজকাল দেখা যায় নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে যুবক শ্রেণী আনন্দ করা কিংবা বিনোদন করতে গিয়ে অসুস্থ ও বিকৃত, বিচ্যুত সংস্কৃতির মায়াজালে আটকে পড়ে। সে কারণে একটি যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য বিশেষ করে সুস্থ সাংস্কৃতিক বিনোদন উপভোগ করার জন্য সমাজে একটি সাংস্কৃতিক আদর্শ খুবই প্রয়োজন। সুস্থ ও সুন্দর সংস্কৃতির চর্চার উপযুক্ত সামাজিক পরিবেশ নিশ্চিত করা না গেলে বিশেষ করে যুব সমাজে বিচিত্র অবক্ষয় নেমে আসার আশঙ্কা থেকে যায়। এ বিষয়টির প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত। অবসর বা ছুটির সময়গুলো যদি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে কাটানো যায় তাহলে মানসিক সুস্থতা, সৃজনশীল প্রতিভার উন্নয়ন করাসহ সামাজিক ও নৈতিক স্খলন রোধ করা সম্ভব হতে পারে।

অনেক সময় বাবা-মা সন্তানদের ভালো লাগা মন্দ লাগা কিংবা আগ্রহের প্রতি মনোযোগ দেন না। তাঁরা শুধুই সন্তানদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণমূলক প্রোগ্রামে দিয়ে দেন যাতে তারা ক্লাসের পড়াশোনাই আরও ভালো করে করতে পারে। এ জন্য সন্তানদের পরবর্তী ক্লাসের শুরুর দিকের পাঠ্য বিষয়গুলোর প্রতি কিংবা ভিন্ন কোনো ভাষা শেখানোর প্রতি বেশি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এর ফল হয় বিপরীত। সন্তান এ কাজের ফলে বিশ্রাম নেয়ার সুযোগই যে পায় না তাই নয় বরং তার পরবর্তী ক্লাসের পাঠ্য পুস্তকগুলো পড়ার জন্য ব্রেইনকে প্রস্তুত করারও অবসর পায় না। ওই ছাত্রের পড়ালেখা শেখার ব্যাপারে ক্লান্তিই শুধু বেড়ে যেতে থাকে।  অথচ ছুটির অবসরে সঠিক এবং সুসঙ্গত ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে সন্তানেরা চিন্তার সুযোগ পায় এবং পরবর্তী ক্লাসের পড়াগুলো শেখার ব্যাপারেও তাদের আগ্রহের পরিমাণ বড়ে যেতে পারে।

অবসর ছুটি কাটানোর একটা দারুন সুযোগ হলো খেলাধুলা করা। খেলাধুলা করার একটা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো উন্নত কোনো কাজের জন্য মানুষের শারীরিক এবং মানসিক প্রস্তুতি নেয়া।  বস্তুত মনোদৈহিক শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য সর্বোত্তম বিনোদনমূলক উপায় হলো খেলাধুলা। এ ব্যাপারে বিখ্যাত একটি উদ্ধৃতি রয়েছে: 'সুস্থ বুদ্ধি সুস্থ স্বাস্থ্যের মধ্যে নিহিত থাকে'। খেলাধুলা ব্যক্তির কর্মক্ষমতা এবং অনুভবগত নৈপুণ্যকেও শক্তিশালী করার পাশাপাশি চিন্তাশক্তিও বৃদ্ধি করে।

শৈল্পিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হলেও ব্যক্তির অন্তরাত্মা প্রশান্তি খুঁজে পায় এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কোনো একটা শিল্পকর্ম- তা যাই হোক না কেন-সৃষ্টি করতে পারলেই মানুষের ভেতরের সুপ্ত প্রতিভা জেগে ওঠে। এটা এক ধরনের মনের খোরাক যোগায়। অবসর সময়টা এই সৃষ্টিশীল কাজের জন্য মোক্ষম সুযোগ এনে দেয়।

বয়সভেদে অবসর সময় কাটানোর একটা চমৎকার উপায় হলো বই পড়া। বয়সভেদে পরিবারে যদি সকল সন্তানের উপযোগী বই পড়ার অভ্যাস বা সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায় তাহলে ছুটি কাটানোর সবচেয়ে উত্তম মাধ্যমটি পেয়ে যাবে সন্তানেরা। এর মাধ্যমে তারা তাদের বিচিত্র প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। পুরো ছাত্র জীবনজুড়ে তাদের পড়ালেখায় এইসব প্রশ্নের জবাব তাদেরকে বিচিত্রভাবে সাহায্য করবে।

সিনেমা-থিয়েটার দেখাও তরুণ যুবকদের ছুটির সময় কাটানোর একটা উপায় হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে ফিল্ম দর্শকদের মানসিকতা ও ব্যক্তিত্বের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। তবে এ ক্ষেত্রে ফিল্ম নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে, নৈলে বিপরীত ফলাফল বয়ে আনার আশঙ্কা থেকে যেতে পারে। গ্রীষ্মের ছুটিতে কম্পিউটার গেম এবং ইন্টারনেটের বসার প্রতি সন্তানদের আগ্রহ বেড়ে যায়। ইন্টারনেটের নেতিবাচকতার পাশাপাশি ইতিবাচক বহু তথ্যও রয়েছে যেগুলো সন্তানদের মেধা ও তথ্যভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পারে। সুতরাং সন্তানেরা ইন্টারনেটে কী করছে সেদিকে বাবা-মায়ের নজর রাখতে হবে।

ভ্রমণ ও বিনোদনমূলক ঘুরাঘুরি যেমন সপ্তাহান্তে পার্কে বেড়াতে যাওয়া,এক শহর থেকে অন্য শহরে যাওয়া, প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য উপভোগ করা একটি সুন্দর পরিকল্পনা হতে পারে। এর ফলে আর যাই হোক, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বন্ধনটুকু দৃঢ়তর হবে। মানসিক প্রশান্তি ও শারীরিক সুস্থতার ওপর এই ভ্রমণের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে এইসব পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনোকিছুই চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। সন্তানদের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে তাদের আগ্রহের প্রতি নজর রেখেই অবসর কাটানোর রুটিন তৈরি করতে হবে। তাহলে আনন্দের পাশাপাশি সন্তানদের সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি পাবে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২

ট্যাগ