জুন ০২, ২০১৯ ২০:৩৪ Asia/Dhaka

বিশ্বের প্রতিটি শিশুরই স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদেও স্পষ্টভাবে এ অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই সনদের ২৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,শিশুকে সর্বোচ্চ অর্জনযোগ্য মানের স্বাস্থ্য সেবা দিতে হবে,তার রোগের চিকিৎসা করতে হবে,স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের সুবিধা দিতে হবে৷এ ধরনের সেবা থেকে কোন শিশু যাতে বঞ্চিত না হয় তা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্বে শিশু মৃত্যুর ৫০ শতাংশের বেশি ঘটে পুষ্টিহীনতার কারণে। এছাড়া অপুষ্টিতে ভোগার পরও যেসব শিশু বেঁচে থাকে তারা নানা জটিল সমস্যার সম্মুখীন হয়।বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে,গর্ভাবস্থা থেকে শুরু করে জন্মের পর দুই বছর বয়স পর্যন্ত –জীবনের প্রথম এই ১০০০ দিনের অপুষ্টি সারা জীবনের জন্যই স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। এ কারণে শিশুর স্বাস্থ্যসেবা শুরু হতে হবে ভ্রূণ অবস্থা থেকে। মনে রাখতে হবে,যে মা অপুষ্টিতে ভোগেন,সেই মা অপুষ্ট শিশুর জন্ম দেন।এ কারণে শিশুর স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার বাস্তবায়ন করতে হলে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যসেবাও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জন্মের পর খেয়াল রাখতে হবে,জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে শাল দুধ পান করানো হলো কিনা। এরপর ছয় মাস নিরবচ্ছিন্ন বুকের দুধ পান করাতে হবে। গর্ভবতী মা যদি অপুষ্টিতে ভোগেন অথবা জন্মের পর প্রথম দুই বছর যদি শিশু অপুষ্টিতে ভোগে তাহলে তার শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ও বিকাশ বিলম্বিত হয়। এ ধরণের শিশু জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নানা সমস্যার মুখে পড়ে।

শুধু শিশু নয়, প্রত্যেক মানুষের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণায়।আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণার ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,প্রতিটি মানুষ তার স্বাস্থ্য ও কল্যাণের জন্য চিকিৎসা সেবা পাওয়ার অধিকার রাখে। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির ১২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে,প্রত্যেক সরকারের পক্ষ থেকে তার নাগরিকদের উপযুক্ত শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

১৯৪৬ সালে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে স্বাস্থ্যের একটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে,স্বাস্থ্য মানে শুধু কোনো রোগ এবং দুর্বলতার অনুপস্থিতি নয় বরং পরিপূর্ণ দৈহিক,মানসিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকা।

এই সংজ্ঞা থেকে এটা স্পষ্ট যে,সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে একজন মানুষকে সার্বিকভাবে ভালো থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিশু তথা নবজাতকের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায় নি।নবজাতকের অত্যাবশ্যকীয় সেবা নেওয়ার হার এখনও অনেক কম। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, একটু সচেতন হলেই শিশু স্বাস্থ্যসেবা অনেকাংশে নিশ্চিত করা সম্ভব। তাদের মতে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বুকের দুধ পান করানো, জন্মের পাঁচ মিনিটের ভেতর নবজাতকের শরীর মুছে শুকিয়ে রাখা, জন্মের পরের তিন দিন নবজাতককে গোসল না করানো, নবজাতকের নাভিতে কোনো কিছু না লাগানো এবং প্রসব ও নাভি কাটার ক্ষেত্রে নিরাপদ সামগ্রী ব্যবহার—এই পাঁচটি অত্যাবশ্যকীয় সেবা নিশ্চিত করতে পারলে নবজাতকের মৃত্যু অনেক ক্ষেত্রেই ঠেকানো সম্ভব। এই সেবাগুলো বাসায় নবজাতকের বাবা মা কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের দিয়েই সম্ভব। সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলেই এই ক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া সম্ভব।

এর আগেও আমরা বলেছি, নবজাতকের স্বাস্থ্যের সঙ্গে মায়ের স্বাস্থ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের নিয়মিত সেবা নিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রসবের চিকিৎসার মান ভালো না হলে নবজাতকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই মাতৃস্বাস্থ্য ও নবজাতকের স্বাস্থ্যকে আলাদাভাবে না দেখে একই সঙ্গে সমন্বিতভাবে সেবা দিতে হবে। অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে আমরা শিশুর প্রতি সম্মান দেখানোর ওপর গুরুত্ব নিয়ে কথা বলব।

শিশুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না। শিশুকাল থেকেই মানুষের মধ্যে ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, মাতৃগর্ভ থেকেই একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ শুরু হয়। মা-বাবা বা অভিভাবকরা কিভাবে শিশুকে লালন-পালন করছে তার ওপরও ব্যক্তিত্বের অনেকখানি নির্ভর করে। বড়দেরকে দেখে শিশুরা শেখে এবং বড়রা যদি অন্যকে সম্মান করে তাহলে তাদের মধ্যেও অন্যের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি হয়। আল্লাহ নিজেই মানুষকে উচ্চ মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছন। সূরা বনী ইসরাইলের ৭০ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন,আর আমি মানুষকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি; স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি;তাদেরকে উত্তম রিজিক দান করেছি এবং আমি যা কিছু সৃষ্টি করেছি সেগুলোর উপর তাদেরকে অধিক শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।

ইসলামি বর্ণনায় এসেছে মানবজাতির আদর্শ,সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মাদ (স.)ও শিশুদেরকে অত্যন্ত সম্মান করতেন। তিনি শিশুদের কষ্টের কথা চিন্তা করে দ্রুত নামাজ শেষ করতেন। মদীনার মসজিদে নববীতে রাসুলুল্লাহ (স.) নামাজের জামাতে ইমামতি করতেন। এ জামাতে মহিলা নামাজীরাও শরিক হতো। তারা তাদের শিশু সন্তানদেরকেও নিয়ে আসতো এবং তাদেরকে একটু দূরে রেখে জামাতে নামাজ আদায় করতো। তিনি যখন ইমামতি করতেন,এসময় কোনো শিশুর কান্নার আওয়াজ তাঁর কানে গেলে তিনি দ্রুত নামাজ শেষ করতেন,যাতে ওই শিশুর কোনো কষ্ট না হয়।

একদিন কয়েক জন মুসল্লি রাসূলে খোদার কাছে দ্রুত নামাজ শেষ করার কারণ জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেছিলেন,আপনারা কি শিশুদের চিৎকার শুনতে পান নি! #   

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো.আবুসাঈদ/ ২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ