জুন ১২, ২০১৯ ১৮:০০ Asia/Dhaka

ইরানে ভেষজ উদ্ভিদ ও ঔষধি গাছ-গাছালির প্রাচুর্যের কল্যাণে এগুলো থেকে তৈরি হয় বিচিত্র প্রসাধনী সামগ্রি।

বিভিন্ন রকমের ডিজারজেন্ট থেকে শুরু করে কসমেটিকস এবং ওয়াশিং পণ্য প্রচুর পরিমাণে তৈরি হয় ইরানে। তেল বহির্ভুত যেসব ইরানি সামগ্রি বাইরে রপ্তানি করা হয় সেসবের মধ্যে এই ওয়াশিং পণ্য বা ডিজারজেন্ট, স্যানিটারি পণ্য, প্রসাধনী সামগ্রি ইত্যাদি অন্যতম। আপনারা জানেন যে,ফার্মাসিউটিক্যাল এবং স্যানিটারি শিল্প এখন বিশ্বের সবচেয়ে কৌশলগত ও নিত্য প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যক শিল্পগুলির মধ্যে একটি। বিশ্বব্যাপী আজকাল সামরিক শিল্পের মতো স্যানিটারি ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যও গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত শিল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ডিজারজেন্ট পণ্য শিল্প, প্রসাধনী ও স্যানিটারি শিল্প, ঔষধ শিল্প, খাদ্য ও পানীয় শিল্প এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মেডিক্যাল ইকুইপমেন্টস ইত্যাদি সামগ্রি স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে গণ্য করা হয়। সমগ্র বিশ্বেই এখন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সুস্থতার ক্ষেত্রে এইসব পণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে ডিজারজেন্ট হলো এমন একটি পণ্য চর্বির কণা কিংবা পুঁজ, ময়লা আবর্জনা ইত্যাদি শরীর থেকে এবং জামা কাপড় থেকে অপসারণ করে মানুষকে সুস্থ সবল রাখতে সহযোগিতা করে। ডিজারজেন্টগুলোকে অবশ্য দুই ভাগে ভাগ করা যায়। সাবান জাতীয় এবং সিনথেটিক জাতীয়।  

সাবান জাতীয় পদার্থের উপাদান বেশ প্রাচীন। প্রাচীন মিশরীয় যুগে এই উপাদান আবিষ্কৃত হয়েছে বলে ইতিহাসে পাওয়া যায়। তবে সিনথেটিক জাতীয় ডিজারজেন্টের উপাদান তেমন প্রাচীন নয়। কয়েক শতাব্দি আগে মাত্র এগুলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সামগ্রি হিসেবে গৃহীত হয়েছে। মানুষ স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বিষয়ে বিশেষ করে শরীর ও হাত পা পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে সচেতন হয়েছে প্রয়োজনে পড়ে। মানে অসুস্থ হবার পরই এ ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠেছে মানুষ। প্রাচীনকালে মানুষ পরিষ্কারের প্রয়োজনে,ধোয়া-মোছার প্রয়োজনে ব্যবহার করতো গরম পানি।

খ্রিষ্টপূর্ব আড়াইহাজার বছর থেকে শুরু করে ৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মানুষের মাঝে গোসল ও জামাকাপড় ধোয়ামোছার প্রচলন ছিল। প্রথমবারের মতো যখন রাসায়নিক পদার্থ সারফেকট্যান্ট ডিজারজেন্ট ব্যবহারের ফলে দেখা গেছে কম পানি ব্যবহার করেই জামা কাপড় পরিষ্কার করা যাচ্ছে, তখন থেকেই সারফেকট্যান্ট পরিষ্কারক ডিজারজেন্ট হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এরপর শুরু হয় গণগোসলখানা বা হাম্মাম তৈরির কাজ। এই হাম্মাম তৈরি একটা সামাজিক আচার-প্রথায় পরিণত হয়। হাম্মামের প্রয়োজনে যে পরিষ্কারকটি সর্বপ্রথম তৈরি করা হয় তা হলো সাবান। সাবান কয়েক হাজার বছর ধরে শুধুমাত্র ধোয়া-মোছা, গোসল করা এবং জামা-কাপড় পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। তখনকার সাবানগুলো তৈরি করা হতো প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে। তবে মানব উন্নয়নের সাথে সাথে এ ক্ষেত্রেও উন্নতি ঘটে।

সাবানকে ইংরেজিতে বলা হয় সোপ। এই সোপ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে রোমের একটি টিলার নাম থেকে। প্রাচীন ওই টিলাটির নাম ছিল সাপো। ওই টিলায় কোরবাণির পশু বা জবাই করা পশু পুড়িয়ে ফেলা হতো। বহু বছর পর্যন্ত সেখানে পশুর চর্বি মাটির সঙ্গে  মিশে ধূসর হয়ে ছিল। বৃষ্টির পানিতে ওই ধূসর রঙের চর্বি মেশানো মাটি ধুয়ে টিবার নদীতে গিয়ে পড়তো। সেই এলাকার মানুষ বুঝতে পেরেছিল যে নদীটির মাটির একটি পরিষ্কারক প্রভাব রয়েছে। সে কারণে তারা শরীর ও কাপড় চোপড় ধোয়ার কাজে ওই নদীর কাদামাটি ব্যবহার করতো। তার অনেক পরে পরে,উদ্ভিদের ক্ষারযুক্ত ছাই থেকে সাবান তৈরি করা হয়। এ কাজের জন্য,বেশিরভাগ ভূমধ্যসাগরীয় গাছ ব্যবহৃত হয়।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।