জুন ১৭, ২০১৯ ১৭:৩৩ Asia/Dhaka

বিভিন্ন রকমের ডিজারজেন্ট থেকে শুরু করে কসমেটিকস এবং ওয়াশিং পণ্য প্রচুর পরিমাণে তৈরি হয় ইরানে।

তেল বহির্ভুত যেসব ইরানি সামগ্রি বাইরে রপ্তানি করা হয় সেসবের মধ্যে এই ওয়াশিং পণ্য বা ডিজারজেন্ট, স্যানিটারি পণ্য, প্রসাধনী সামগ্রি ইত্যাদি অন্যতম। যাই হোক গত আসরের সমাপ্তি টেনেছিলাম সাবান বা 'সোপ' শব্দের উৎপত্তির কাহিনী দিয়ে। কাহিণীটি ছিল সাবানকে ইংরেজিতে বলা হয় সোপ। এই সোপ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে রোমের একটি টিলার নাম থেকে। প্রাচীন ওই টিলাটির নাম ছিল সাপো। ওই টিলায় কোরবাণির পশু বা জবাই করা পশু পুড়িয়ে ফেলা হতো। বহু বছর পর্যন্ত সেখানে পশুর চর্বি মাটির সঙ্গে  মিশে ধূসর হয়ে ছিল। বৃষ্টির পানিতে ওই ধূসর রঙের চর্বি মেশানো মাটি ধুয়ে টিবার নদীতে গিয়ে পড়তো। সেই এলাকার মানুষ বুঝতে পেরেছিল যে নদীটির মাটির একটি পরিষ্কারক প্রভাব রয়েছে। সে কারণে তারা শরীর ও কাপড় চোপড় ধোয়ার কাজে ওই নদীর কাদামাটি ব্যবহার করতো। তার অনেক পরে পরে,উদ্ভিদের ক্ষারযুক্ত ছাই থেকে সাবান তৈরি করা হয়। এ কাজের জন্য,বেশিরভাগ ভূমধ্যসাগরীয় গাছ ব্যবহৃত হয়।

ইতালি, স্পেন এবং ফ্রান্সে সাবান তৈরি করার জন্য ভেষজ তেল এবং বিশেষ করে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা হত। তবে ইউরোপের উত্তরাঞ্চলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাবান তৈরিতে বিভিন্ন প্রাণীর চর্বি ব্যবহার করা হত। গরুর চর্বি, বিভিন্ন মাছের চর্বি বেশি ব্যবহার করা হত। তবে ভেষজ তেল দিয়ে তৈরি সাবানের গুণগত মান প্রাণীর চর্বি দিয়ে তৈরি সাবানের চেয়ে উন্নত ছিল। কালের পরিক্রমায় সাবান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ঘ্রাণময় উদ্ভিদের নির্যাস ব্যবহার করে সাবানকে আকর্ষণীয় করে তোলে। গত কয়েক শতাব্দিতে জ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সাবান তৈরির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সাবান এখন সর্বসাধারণের হাতের নাগালে পৌঁছে গেছে। আগের মতো উচ্চমূল্যও নেই এখন। সাবান এখন প্রতিটি পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীতে পরিণত হয়েছে। পাসোর্নাল কেয়ার মানে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের জন্য শ্যাম্পু,ক্রিম, টুথপেস্টের মতো জিনিসের পাশাপাশি হোম কেয়ার অর্থাৎ ডিজারজেন্ট,গ্লাস ক্লিনার,ডিশ-ওয়াশিংয়ের মতো কাজেই এগুলোর ব্যবহার এখন বেশি।

প্রসাধনী এবং ওয়াশিং সামগ্রি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইরান একটি উল্লেখযোগ্য দেশ। এই শিল্পের কাঁচামাল তৈরিসহ সকল পণ্য তৈরির কাজে শত শত কোম্পানি ইরানে রয়েছে। হাইড্রোকার্বনের মতো রাসায়নিক যৌগ ইরানে প্রচুর পরিমাণে মজুদ থাকায় জ্ঞান ভিত্তিক কোম্পানিগুলোও এক্ষেত্রে তৎপর হয়ে উঠেছে। জ্ঞান ভিত্তিক কোনো কোনো কোম্পানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্কে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে ডিজারজেন্ট তৈরিতে ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে। ন্যানো প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের কল্যাণে এর ফর্মুলেশনে অ্যালকোহল ব্যবহার না করার কারণে ত্বক কিংবা জামাকাপড়ের যেমন ক্ষতি হয় না তেমনি অ্যালকোহলযুক্ত পণ্যের তুলনায় দ্রুত শুকিয়ে যায়। এ জাতীয় ক্লিনারগুলিতে অ্যাসিড বা ক্ষার না থাকায় ভিন্ন প্রযুক্তিতে তৈরি একই রকমের পণ্যের মতো ত্বক বা জামাকাপড় কিংবা অন্যান্য পণ্যের ক্ষতি করে না।

ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে তৈরি করা ক্লিনারগুলো ত্বকের ময়লা দূর করে এবং ধুলো ময়লা জমতে বাধা দেয়। ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার করে জ্ঞান ভিত্তিক কোম্পানিগুলো বিচিত্র এন্টিসেপটিক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বাসাবাড়ির বিচিত্র সামগ্রিতে যেমন এই এন্টিসেপটিক বা জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয় তেমনি চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন রকমের যন্ত্রপাতি, অস্ত্রোপচার, দন্তচিকিৎসা ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামকে জীবাণুমুক্ত রাখার ক্ষেত্রেও এগুলোর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিলিয়ন মিলিয়ন টন ক্লিনিং পণ্য কাঁচামালসহ ইরানে উৎপাদিত হয়েছে। ইরানের প্রতিটি নাগরিকের দৈনিক যে পরিমাণ ডিটোরজেন্ট পাউডার, হ্যান্ড ওয়াশিং, ডিশ ওয়াশিং, ক্লিনিং কিংবা প্রসাধনী সামগ্রির প্রয়োজন পড়ে তা হিসাব করে দেখা গেছে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে পারে ইরানের কোম্পানিগুলো। তবে সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ইরানের এইসব পণ্য পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও রপ্তানি করা হয়েছে। প্রতিবেশি এইসব দেশের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, ইরাক, আফগানিস্তান, সেন্ট্রাল এশিয়ার দেশগুলো এবং পারস্য উপসাগরীয় বিভিন্ন দেশ। যেসব পণ্য এসব দেশে রপ্তানি করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জীবাণুনাশক, ডিজারজেন্ট পাউডার, বিভিন্ন প্রকারের শ্যাম্পু, ওয়াশিং লিকুইড, ঘরে ব্যবহার্য বিভিন্ন প্রসাধনী, বিচিত্র ধরনের ক্রিম, সানস্ক্রিন ক্রিম ও লোশন, বডি ওয়াশ, ত্বক রক্ষাকারী ক্রিম, টুথ পেস্ট এবং বিচিত্র সেলুলয়েড সামগ্রি।

ইরানে যেসব কোম্পানি ওয়াশিং সামগ্রি, ডিজারজেন্ট, প্রসাধনী সামগ্রী ইত্যাদি উৎপাদনের ক্ষেত্রে সক্রিয় রয়েছে তারা এখন ইরানের সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি প্রতিবেশি দেশগুলোর পঁচিশ কোটি মানুষের বিশাল বাজারের চাহিদা মেটানোর মতো সক্ষমতা অর্জন করেছে। ইরানের বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে এই সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।