জুলাই ২২, ২০১৯ ১৯:০২ Asia/Dhaka

পৃথিবীর নানা প্রান্তে শরণার্থী শিশুদের ঢল নেমেছে। তারা আজ অমানবিক নির্যাতনের শিকার। বিশ্বের মোট শরণার্থীর অর্ধেকই হচ্ছে শিশু।

নানা কারণে শিশুরা শরণার্থীতে পরিণত হচ্ছে। এর মধ্যে আগ্রাসন,যুদ্ধ,জাতিগত বিদ্বেষ,প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দারিদ্র অন্যতম। অনেক শিশু আবার শরণার্থী শিবিরে জন্ম নিচ্ছে। এর ফলে জন্ম থেকেই তারা শরণার্থীতে পরিণত হচ্ছে। শিশু শরণার্থীদের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই। নানাভাবে তারা বঞ্চিত। সুষম খাদ্য,সুচিকিৎসা,উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার কোনোটিই পায় না শরণার্থী শিশুরা। অযত্ম-অবহেলায় বেড়ে ওঠা এসব শিশুর ভবিষ্যত একেবারেই অনিশ্চিত। স্বাভাবিকভাবেই যারা শিশু বয়সেই জেনে যায় যে,তাদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই তারা হতাশায় ভোগে এবং এ ধরণের হতাশা তাদেরকে অসৎ পথে যেতে উৎসাহ দেয়।

আগ্রাসন আর যুদ্ধের ফলে ফিলিস্তিন,সিরিয়া,ইরাক,আফগানিস্তান ও লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি শিশু আজ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। ভূমধ্য সাগর পাড়ি দিতে গিয়েও হাজার হাজার শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ভূমধ্য সাগরের সৈকতে ভেসে ওঠা শিশু আইমানের লাশ সাগরে অসংখ্য শরণার্থী শিশুর মৃত্যুর সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক শিশু তহবিল ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে শিশু শরণার্থীর সংখ্যা ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। ইউনিসেফ বলছে, বিশ্বে বর্তমানে প্রায় পাঁচ কোটি শিশু শরণার্থী রয়েছে। এদের একটা অংশ দেশের ভেতরেই শরণার্থী শিবিরে রয়েছে, আরেকটা অংশ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্য দেশে শরণার্থী হিসেবে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

দক্ষিণ এশিয়ার শরণার্থীদের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে রোহিঙ্গা শিশু শরণার্থীদের কথা আসে। বর্তমানে শুধু বাংলাদেশেই রয়েছে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিশু শরণার্থী। এদের মধ্যে কয়েক হাজার শিশু রয়েছে,যাদের বাবা বা মা কেউই নেই। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইনের স্থানীয় উগ্র বৌদ্ধরা তাদের বাবা ও মা-কে হত্যা করেছে। শুধু বাবা-মাকে নয় অনেক শিশুকেও হত্যা করা হয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর প্রমাণ পেয়েছে,মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধরা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের পাশাপাশি শিশুদেরকেও নির্মমভাবে হত্যা করেছে। অনেক রোহিঙ্গা বাবা-মা বাংলাদেশে এসে জানিয়েছেন,মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের সামনেই দুধের শিশুদের পশুর মতো হত্যা করেছে।

যাইহোক আমরা রোহিঙ্গা শিশু শরণার্থী নিয়ে কথা বলছিলাম। জাতিসংঘ শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ বলছে,বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শিশু মারাত্মক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। একইভাবে মারাত্মক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে সন্তানসম্ভবা নারীরা। সন্তানসম্ভবা নারীর ঝুঁকি মানেই অনাগত শিশুদের ঝুঁকি। বর্ষা মৌসুমে শিশু শরণার্থীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যায়। কারণ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে পাহাড়ের ওপর যেখানে আশ্রয় নিয়েছে সে এলাকা আগে থেকেই বন্যা,সাইক্লোন ও পাহাড়ধস বা ভূমিধসপ্রবণ এলাকা।

বর্ষার পানিতে সেখানে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়া বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়াবাহী মশার প্রকোপ তো আছেই। বর্ষা মৌসুমে অনিরাপদ খাবার পানি,অপর্যাপ্ত পয়োঃনিষ্কাশনব্যবস্থা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে কলেরা ও হেপাটাইটিস-ই’র প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এসব সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় শিশুরা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিশুদেরকে যৌন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মধ্যেই খবর আসে,যৌন ব্যবসার জন্য রোহিঙ্গা মেয়ে ও শিশুদের পাচার করা হচ্ছে। শিশুদেরকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এর চেয়ে নির্মমতা আর কি হতে পারে?

প্রতিটি মানব শিশু খুবই অসহায়ভাবে পৃথিবীতে আসে। তার বসতে,দাঁড়াতে, হাটতে কয়েক মাস সময় লাগে। এ জন্য মানব শিশুর অধিক যত্মের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন পড়ে নিরাপত্তার। মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থা থেকেই শিশুর অধিকারের প্রতি নজর রাখতে হয়। অন্তত কৈশোর পর্যন্ত মানব সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিশেষ যত্ম নেয়া বাবা-মা,আত্মীয়-স্বজন,প্রতিবেশী,সমাজ ও রাষ্ট্রের বিশেষ দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। আদর সোহাগ পাওয়া প্রতিটি শিশুর অধিকার। কিন্তু শরণার্থী শিশুরা বিশেষকরে যেসব শিশু বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনকে হারিয়েছে তাদেরকে আদর-যত্ম করার কেউ নেই।

এতিম শরণার্থী শিশুদের রক্ষায় রাষ্ট্রের পাশাপাশি সমাজের মানুষেরও দায়িত্ব রয়েছে। কারণ ইসলাম ধর্ম শুধু নিজের শিশুদেরকে আদর-যত্ম করতে বলে নি। সব শিশু বিশেষকরে এতিম শিশুদের  প্রতি দয়া ও ভালোবাসা প্রদর্শন মুসলমানদের দায়িত্বের অন্তভুর্ক্ত। শিশুদের আদর-সোহাগ করা সুন্নত। ইসলামি বর্ণনায় এসেছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) রাস্তার পাশে কান্নারত এক ইয়াতিম শিশুকে বাসায় এনে নিজের সন্তানের মত আশ্রয় ও ভালবাসা দিয়েছেন। মহানবী নিয়মিত শিশুদের খোঁজ-খবর নিতেন এবং মাঝে মধ্যে শিশুদের সঙ্গে রসিকতাও করতেন। মহানবী বলেছেন,তোমরা শিশুদের ভালবাসো এবং তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করো। আসলে শরণার্থী ও এতিম শিশুদের মতো অসহায় মানুষ আর হয় না। তাদের সাহায্যে সমাজের সবারই এগিয়ে আসা উচিত। শরণার্থী শিশুদের বিষয়ে রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সমাজের দায়িত্ব অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক সনদেও শরণার্থী শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। #

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো.আবুসাঈদ/ ২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ