জুলাই ২৯, ২০১৯ ২১:১৭ Asia/Dhaka

গোটা বিশ্বই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মানবিকতা ও নৈতিকতার দিক থেকে মানব সমাজের উন্নতি সেভাবে হচ্ছে না।

এ কারণে বর্তমান শতাব্দীতেও যুদ্ধ ও সংঘাতের মাত্রা কমে নি। মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতায় কোনো ভাটা পড়ে নি বরং অস্ত্র খাতে ব্যয়ের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। অস্ত্র রপ্তানিকারক কিছু দেশ নিজের অস্ত্র বিক্রির জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধের উসকানি দিচ্ছে। অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের একটা অংশ তারা যুদ্ধ উন্মাদন টিকিয়ে রাখার কাজে ব্যবহার করছে। এ কারণে বর্তমান যুগেও প্রতিদিনই যুদ্ধ ও সহিংসতায় অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। যুদ্ধের কারণে হতাহত মানুষগুলোর একটা অংশ হচ্ছে শিশু। যুদ্ধের কারণে শিশুদের যে ক্ষতি হয় তা কোনো মানদণ্ডেই পরিমাপযোগ্য নয়।

প্রতিটি যুদ্ধেই অসংখ্য শিশু মৃত্যুবরণ করে। যুদ্ধের পরও যেসব শিশু বেঁচে যায়, তারা অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের শিকার হয়। অনেক শিশুই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং চিকিৎসা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। যুদ্ধ ও আগ্রাসনে বাবা-মা হারানো শিশুর সংখ্যাও কম নয়। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুদ্ধ শিশুদের প্রতি বিশেষ সহযোগিতার বিষয়টি গোটা বিশ্বেই গুরুত্ব পায়। বিভিন্ন দেশের সরকার যুদ্ধশিশুদের নিয়ে ভাবতে শুরু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কোটি কোটি মানুষের প্রাণহানি সত্ত্বেও মানুষ যুদ্ধ থেকে সরে আসেনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দুই দশক পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলেও সে যুদ্ধের সময় শিশুরা বিশেষ কোনো সহযোগিতা পায় নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে আন্তর্জাতিক এ সংক্রান্ত জেনেভা কনভেনশন অনুমোদন লাভ করে। ওই কনভেনশনে যুদ্ধকালে শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার বিষয়টি স্থান পায়। এরপর আরও বহু আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও কনভেনশন অনুমোদিত হয়েছে।

যুদ্ধ চলা অবস্থায় শিশুদের অধিকার মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদেও। এই সনদে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুকে যুদ্ধে ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও  এখনও অনেক দেশ শিশুদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শিশুদেরকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শিশুদেরকে আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ, এর আগে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বে যুদ্ধরত পক্ষগুলো ভীষণভাবে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অমর্যাদা করছে এবং শিশুরা নিয়মিত হামলার শিকার হচ্ছে। তাদেরকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেনাবাহিনীতে ভর্তি, আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী এবং তাদের মানব প্রাচীর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইয়েমেনে গত  চার বছরের সংঘাতে হতাহত হয়েছে হাজার হাজার শিশু। আর অপুষ্টিতে ভুগছে কোটি শিশু। যুদ্ধের সময় শিশুদের রক্ষায় নানা আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিমালা থাকার পরও এখন পর্যন্ত ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন দেশে শিশু হত্যার হোতাদের কোনো বিচার হয় নি।  পবিত্র ইসলাম ধর্ম, যুদ্ধকালে শিশু, নারী ও বয়স্কদের রক্ষায় ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ও ইমামদের নির্দেশ হচ্ছে, একটি শিশু যদি শত্রুপক্ষের সহযোগীও হয়ে থাকে তাহলেও তাকে আঘাত করা যাবে না।

মহানবীর হাদিস উল্লেখ করে ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন, মহানবী (সা.) যখনি মুসলিম বাহিনীকে কেথাও জিহাদের জন্য পাঠাতেন তখনি ওই বাহিনীর কমান্ডারকে তিনি যেসব উপদেশ দিতেন তাদের মধ্যে প্রথম উপদেশ হচ্ছে, আল্লাহভীতি তথা তাকওয়া অবলম্বন করতে হবে। এরপর তিনি বলতেন, যুদ্ধ করতে হবে আল্লাহর নামে ও আল্লাহর পথে, আল্লাহকে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, কোনো প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া যাবে না, বিশ্বাসঘাতকতা করা যাবে না। নিহতদের অঙ্গচ্ছেদ করা যাবে না। শিশুদের হত্যা করা যাবে না। এবাদতরত কাউকে হত্যা করা যাবে না। খেজুর গাছে আগুন দেওয়া যাবে না। যে গাছে ফল রয়েছে সেটাকে কাটা যাবে না এবং কৃষিক্ষেত্রে আগুন দেওয়া নিষেধ। কারণ তোমাদেরই হয়তো এই গাছগুলোর প্রয়োজন পড়তে পারে। যেসব প্রাণীর মাংস হালাল সেসব প্রাণীকে খাওয়ার প্রয়োজন ছাড়া হত্যা করা যাবে না। মুসলমানদের শত্রুদের মোকাবেলা করার সময় তাদেরকে তিনটি প্রস্তাব দাও। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলো, জিযিয়া কর দিতে বলো অথবা যুদ্ধ পরিহার করতে বলো। শত্রুরা এর যেকোনো একটি প্রস্তাব মেনে নিলে তাদের সঙ্গে সংঘাতের প্রয়োজন নেই।

এ ধরণের আরও অনেক হাদিস রয়েছে যেখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যুদ্ধের সময়েও শিশু হত্যা করা যাবে না। এটা হারাম।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা ওআইসি থেকে প্রকাশিত ইসলামি মানবাধিকার নীতিমালাতেও যুদ্ধকালে শিশু অধিকার রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। পবিত্র ইসলাম ধর্ম কেবল যুদ্ধের সময় যেকোনো পরিস্থিতিতে শিশুদের রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। যুদ্ধের কারণে যেসব শিশু হতাহত হচ্ছে এবং নানা সমস্যায় পড়ছে তাদের দায় যেমন যুদ্ধরত পক্ষগুলোর ওপর বর্তায়, তেমনি অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশগুলো এর দায় থেকে রক্ষা পেতে পারে না। ইয়েমেনের দিকে নজর দিলে এটা স্পষ্ট, ইয়েমেনের শিশুদের ওপর যেসব বোমা ফেলা হচ্ছে তার অধিকাংশই আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো থেকে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশ সৌদি আরব বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় করে এসব অস্ত্র আমদানি করছে। এসব আগ্নেয়াস্ত্র দিয়েই তারা শিশুদের হত্যা করছে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো.আবুসাঈদ/ ২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ