আগস্ট ২৮, ২০১৯ ১৭:১৫ Asia/Dhaka

সুরা নাজিয়াত পবিত্র কুরআনের ৭৯ তম সুরা। পবিত্র মক্কায় নাজিল-হওয়া এ সুরায় রয়েছে ৪৬ আয়াত। পরকাল ও পুনরুত্থান এবং বিচার-দিবস এই সুরার কেন্দ্রীয় বিষয়।

পুনরুত্থান দিবসের অনিবার্যতা ও এ দিবসের ভয়াবহ নানা চিত্র, ফেরাউন ও হযরত মুসা নবীর কাহিনী, আকাশ ও ভূমণ্ডলে মহান আল্লাহর ক্ষমতার নানা নিদর্শন এবং খোদাদ্রোহীদের শাস্তি ও নেককারদের পুরস্কার সুরা নাজিয়াতের কয়েকটি আলোচ্য বিষয়।

 

সুরা নাজিয়াত শুরু হয়েছে বার বার কয়েকটি শপথ নেয়ার মাধ্যমে। এসব শপথ খুবই অর্থপূর্ণ ও বিশেষ চিন্তা-উদ্দীপক। পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত শপথগুলো এই মহাগ্রন্থের মু’জিজার ও  সবচেয়ে হৃদয়গ্রাহী এবং সুন্দর বাক্যগুলোর অংশ। এই শপথগুলোর বিষয়বস্তু নানা দিক থেকে বিচার-দিবস ও পরকালের আলোচনার সৌন্দর্য ও সূক্ষ্মতা তুলে ধরে।

সুরা নাজিয়াতের প্রথম বাক্যেই ‘নাজায়াত’-এর শপথ করেছেন মহান আল্লাহ। এ শব্দের অর্থ এমন একদল ফেরেশতা যাদেরকে মহান আল্লাহ বিশ্বের নানা ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলেন নাজায়াত সেইসব ফেরেশতার নাম যারা অবিশ্বাসীদের প্রাণ নির্মমভাবে টেনে বের করেন। এই ফেরেশতাদের নামে মহান আল্লাহর শপথ করা থেকে তাদের ভূমিকার ব্যাপক গুরুত্ব ফুটে ওঠে ।

ফেরেশতারা নূরের তৈরি। ফেরেশতাদের রয়েছে ছোট ও বড় নানা শ্রেণী বা অসংখ্য গ্রুপ। একেক গ্রুপের রয়েছে সুনির্দিষ্ট কাজ বা দায়িত্ব। যেমন, একদল ফেরেশতা মানুষের তৎপরতা নথিবদ্ধ বা রেকর্ড করেন। একদল ফেরেশতা ওহি বা মহান আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দেন।  আরেকদল ফেরেশতা মানুষ ও জীব-জন্তুর খাদ্য ও জীবিকার যোগান দেন। কোনো কোনো ফেরেশতা মানুষের রুহ বা প্রাণ কেড়ে নেন। মোটকথা অজস্র দায়িত্ব পালন বা কাজ করার জন্য নিয়োজিত রয়েছেন অজস্র গ্রুপ বা শ্রেণীর ফেরেশতা।  

সুরা নাজিয়াতের প্রথম কয়েক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

(১) শপথ তাদের যারা অবিশ্বাসীদের প্রাণ নির্মমভাবে টেনে বের করে, (২) শপথ তাদের যারা বিশ্বাসীদের প্রাণ মৃদুভাবে বের করে নেয়, (৩) শপথ তাদের যারা মহান আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নে দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসে (৪) এবং এরপর তারা তীব্র গতিতে একে অপরের চেয়ে অগ্রগমন করে। (৫) এবং শপথ তাদের যারা বিশ্বজগতের কর্মতৎপরতা নির্বাহ করে।

-      কিয়ামত বা পুনরুত্থান তথা বিচার-দিবস সব আসমানি ধর্মেরই মৌলিক বিশ্বাসের অংশ। পবিত্র কুরআনে এর অনিবার্যতা সম্পর্কে এত বেশি জোর দেয়া হয়েছে যে এ মহাগ্রন্থের প্রায় ১৪০০ আয়াত কিয়ামত সম্পর্কিত। পুনরুত্থান বা কিয়ামতের অন্যতম লক্ষণ হল শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া যার প্রচণ্ড শব্দ কাঁপিয়ে তুলবে গোটা বিশ্ব।

-    সুরা নাজিয়াতের পরের কয়েকটি আয়াতে কিয়ামত সম্পর্কে বলা হয়েছে:

 (৬) যেদিন প্রকম্পিতকারী এক ফুৎকার প্রকম্পিত করবে। (৭) আর এক পশ্চাদবর্তীপ্রকম্পিতকারী তার অনুসরণ করবে, (৮) সেদিন কাফির ও পাপীদের হৃদয়গুলো সন্ত্রস্ত হবে, (৯) তাদের দৃষ্টিগুলো ভীতি-বিহ্বলতায় নত হবে। (১০) তারা বলে, ‘আমাদের কি পূর্বাবস্থায় ফেরানো হবেই,

কিয়ামত বা পুনরুত্থান তথা বিচার-দিবস শুরু হবে শিঙ্গায় ফুঁ দিয়ে। পবিত্র কুরআন একে পার্থিব জগতের সমাপ্তি ও পরকালের অবিনশ্বর বা চিরস্থায়ী জগতের সূচনা বলে উল্লেখ করেছে। এ মহাগ্রন্থ কিয়ামতকে প্রলয়ংকরী ও সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনা হিসেবে তুলে ধরেছে। তাই সুরা নাজিয়াতে বলা হয়েছে: সেদিন কাফির ও পাপীদের হৃদয়গুলো সন্ত্রস্ত হবে, তাদের  দৃষ্টিগুলো ভীতি-বিহ্বলতায় নত হবে। তারা সেদিন তীব্রতম আতঙ্ক ও উদ্বেগের শিকার হবে। কারণ কঠোর হিসাব-নিকাশ ও শাস্তির ভয় তাদের সমগ্র অস্তিত্বকে গ্রাস করবে। তীব্র ভয়ে তাদের চোখ দুটি হবে বিস্ময়ে বিমূঢ়, আনত ও স্থির এবং মনে হবে যেন তারা দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। 

সুরা নাজিয়াতের ১৫ থেকে ২৬ নম্বর আয়াতে পরাক্রান্ত খোদাদ্রোহী ও জালিম শাসক ফেরাউন ও তার দলবলের ধ্বংস হওয়ার কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। এখানে আরব মুশরিকদের বলা হচ্ছে, তারা ফেরাউন ও তার দলবলের চেয়ে শক্তিশালী নয়। তাই তারা মহান আল্লাহর শাস্তি ও ক্রোধ মোকাবেলায় অক্ষম। অন্যদিকে এখানে  বিশ্বাসীদের বলা হচ্ছে, শত্রুদের বাহ্যিক শক্তির কারণে তাদের ভয় করা উচিত নয়। কারণ তাদেরকে বিপর্যস্ত ও নাস্তানাবুদ করে দেয়া মহান আল্লাহর জন্য খুবই সহজ। ক্ষমতার লালসা ফেরাউনকে এতটাই খোদাদ্রোহী করেছিল যে সে নিজেকে সবচেয়ে বড় খোদা বলে দাবি করত! কিন্তু মহান আল্লাহ তার দর্পচূর্ণ করে দুনিয়া ও আখেরাতে কঠোর শাস্তি দিয়েছেন। মানুষ যেন এই কাহিনী থেকে আল্লাহকে ভয় ও তাঁর ওপর ভরসা করতে শেখে তা এই কাহিনী তুলে ধরার অন্যতম উদ্দেশ্য।

পৃথিবী সব জীবের লালন-ক্ষেত্র। এর পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা ও উপত্যকাসহ সব কিছু মহান আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন। সুরা নাজিয়াতের ত্রিশতম আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: এবং এরপর তিনি ভূমিকে বিস্তৃত করেছেন। এর অর্থ প্রথমে সব ভূমিই ছিল বৃষ্টির পানির নীচে। এরপর ধীরে ধীরে এসব পানিকে ভূমির নীচু অংশে রাখা হয়। এভাবে পানির নীচ থেকে জেগে-ওঠা ভূমি বাড়তে থাকে।  অন্যদিকে ভূমি প্রথমদিকে অতি উঁচু-নীচু ছিল। পরে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে ভূমির উঁচু স্থানগুলোর উচ্চতা কমে আসে ও বাড়তে থাকে বসবাসযোগ্য সমতল ভূমি। ফলে জমিন হয়ে ওঠে কৃষিকাজ ও বসবাসের উপযুক্ত। আর এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় দাহুল আরদ্‌ বা ভূমির বিস্তার। অবশ্য ভূমির ভেতরকার জলীয় পদার্থের চাপে পৃথিবীতে দেখা দেয় ভূমিকম্প ও নানা কারণে ঘটে ঝড়-তুফান। আর এসব প্রতিরোধ ও ভূমিকে সুদৃঢ় রাখতে মহান আল্লাহ পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি করেছেন বড় বড় পর্বতমালা।  সুরা নাজিয়াতের ৩৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: এসবই করা হয়েছে তোমাদের ও তোমাদের গবাদি-পুশর ভোগের বা কল্যাণের জন্য।

সুরা নাজিয়াতের শেষ আয়াতে মহানবী (সা)-কে স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে, আপনার সতর্কবাণী কেবল তাদের জন্য কার্যকর যারা কিয়ামতকে ভয় করে, কিন্তু যারা কিয়ামতকে ভয় করে না তাদেরকে পুরো কুরআন পড়ে শোনানো হলেও তারা সচেতন হবে না।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/  ২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।