ন্যাশনাল ব্যাংকে দুই প্রতিষ্ঠানের ঋণ জালিয়াতি: হাজার কোটি টাকা লোপাট
সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা! ৩০ নভেম্বর শনিবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি বাবুল আখতার। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি।
বাংলাদেশের শিরোনাম:
- আগেও আদালতে নিজেদের আইএস দাবি দুই জঙ্গির-দৈনিক প্রথম আলো
- সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল বিএনপি-জামায়াত : প্রধানমন্ত্রী- কালেরকণ্ঠ
- ন্যাশনাল ব্যাংকে দুই প্রতিষ্ঠানের ঋণ জালিয়াতি: হাজার কোটি টাকা লোপাট-দৈনিক যুগান্তর
- বরিশাল থেকে যাত্রীবাহী নৌযান ছাড়েনি, দুর্ভোগে যাত্রীরা-দৈনিক ইত্তেফাক
- রাজনীতি ভাগ্য নির্ধারণের হাতিয়ার নয় : কাদের-দৈনিক নয়াদিগন্ত
- বিএনপি কখনোই সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করে না : মির্জা ফখরুল-দৈনিক নয়াদিগন্ত
ভারতের শিরোনাম:
- ১৬৯ জনের সমর্থনে আস্থাভোট জিতলেন উদ্ধব, ভোটাভুটির আগেই ওয়াকআউট বিজেপির-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
- ঝাড়খণ্ডে প্রথম দফার নির্বাচনের দিনেই মাওবাদী হামলা-দৈনিক আজকাল
-
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর আশ্বাসই সার, গত ৬ বছরে সর্বনিম্ন দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
পাঠক/শ্রোতা! এবারে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাব। প্রথমেই বাংলাদেশের পত্রিকার খবর।
আগেও আদালতে নিজেদের আইএস দাবি দুই জঙ্গির-দৈনিক প্রথম আলো
গ্রেপ্তারের পর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে নিজেকে আইএসের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন জঙ্গি রাকিবুল হাসান (রিগ্যান)। আর আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেওয়া বক্তব্যে আরেক জঙ্গি জাহাঙ্গীর হোসেনও (রাজীব গান্ধী) নিজেকে আইএসের উত্তরবঙ্গের সামরিক শাখার প্রধান বলে দাবি করেছিলেন। এই দুজনকেই গত বুধবার রায় ঘোষণার পর আইএসের প্রতীকসংবলিত কালো টুপি পরে থাকতে দেখা গেছে।
দুই জঙ্গির নিজেদের আইএস দাবি করার বিষয়টি আদালতের রায়েও উল্লেখ রয়েছে। হোলি আর্টিজানে হামলা মামলার রায়ে জঙ্গি রাকিবুল সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তার দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে সে আইএসের সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছে এবং উক্ত সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। আসামি আসলাম হোসেনসহ অন্যান্য আসামির দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে রাকিবুল হাসান যে আইএসের কথা বলেছে, সে আইএস হলো জেএমবির এক অংশ নিয়ে গঠিত নব্য জেএমবি।’
জঙ্গি রাকিবুলের জবানবন্দিতেই উঠে আসে হোলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরী। এই তামিমের সঙ্গে রাকিবুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। জবানবন্দিতে রাকিবুল দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশে আইএস পরিচালনা ও পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিলেন তামিম। ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের এক জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত হন তামিম।
আর জাহাঙ্গীর হোসেন সম্পর্কে রায়ে বলা হয়েছে, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষাকালে আসামি স্বীকার করেছে, সে তামিম চৌধুরী ও সরোয়ার জাহানের মাধ্যমে বাইয়াত গ্রহণ করে এবং তাদের আনুগত্য স্বীকার করে। আইএসের উত্তরবঙ্গ সামরিক শাখার প্রধান হয় ও অনেকগুলো হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে।’
হোলি আর্টিজান হামলা মামলায় গত বুধবার রাকিবুল, জাহাঙ্গীর হোসেনসহ সাত আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান। তিন বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশানে অভিজাত রেস্তোরাঁ হোলি আর্টিজান বেকারিতে আইএস মতাদর্শ অনুসরণকারী পাঁচ জঙ্গি হামলা চালায়। তারা বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জনকে হত্যা করে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানের, তিনজন বাংলাদেশি, একজন ভারতীয় নাগরিক। এ ছাড়া দুজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছিলেন জঙ্গিদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড ও গুলিতে।
গত বুধবার এই মামলার রায় ঘোষণার পরই রাকিবুল আইএসের প্রতীকসংবলিত টুপি পরে এজলাস থেকে বের হন। এরপর প্রিজন ভ্যানে আরেক জঙ্গি জাহাঙ্গীর হোসেনের মাথায়ও একই ধরনের টুপি দেখা যায়। যদিও হোলি আর্টিজানে হামলার পর থেকেই পুলিশ দাবি করে আসছে, জঙ্গিদের সঙ্গে আইএসের কোনো যোগাযোগ ছিল না।
কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আনা জঙ্গিদের মাথায় আইএসের প্রতীকসংবলিত টুপি কীভাবে এল, তা নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আবার কারাগার প্রান্তে কোনো ত্রুটি ছিল কি না, তা তদন্তে তিন সদস্যের পৃথক কমিটি গঠন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার পুলিশ বলেছে, টুপিটি কারাগার থেকে এনেছিলেন জঙ্গি রাকিবুল। তবে পুলিশের এই দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি কারা কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, তদন্ত শেষেই পুরো বিষয় খোলাসা হবে।
হোলি আর্টিজান মামলার রায়জঙ্গি রাকিবুল হাসান ও জাহাঙ্গীর হোসেন নিজেদের আইএসের সদস্য দাবি করেছিলেন
প্রচার পেতে এবং প্রোপাগান্ডা চালাতে জঙ্গি রাকিবুল ও জাহাঙ্গীর হোসেন রায় ঘোষণার সময় আইএসের প্রতীকসংবলিত টুপি পরে এসেছিলেন বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভয়ংকর এসব জঙ্গিকে কঠোরভাবে হ্যান্ডেল (নজরদারি) করা প্রয়োজন। কারাগারে কিংবা আদালতে জঙ্গিরা কোনোভাবেই যাতে অন্যদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ না পায়, সেটি নিশ্চিত করা খুব জরুরি।
রাকিবুল–জাহাঙ্গীরকে নিয়ে রায়ে যা আছে
দোষ স্বীকার করে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন রাকিবুল হাসান, তা রায়ের একাধিক অংশে উল্লেখ করেছেন এই মামলার বিচারক। জবানবন্দিতে রাকিবুল বলেছিলেন, ‘আমি আইএস সংগঠনের সদস্য। আমার সাংগঠনিক নাম রাফিউল ইসলাম। সাংগঠনিক কারণে কোনো সদস্য জায়গা পরিবর্তন করলে তার কোড নেম (সাংকেতিক নাম) পরিবর্তন হয়।’ জবানবন্দিতে এই জঙ্গি বলেছেন, ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই আইএসে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বগুড়া থেকে ঢাকায় আসেন। যে পাঁচ জঙ্গি হোলি আর্টিজানে সরাসরি হামলায় জড়িত ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন রাকিবুল। এর বাইরে ১৩ জনকে জঙ্গি হামলা চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন এই জঙ্গি। যে ১৩ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে একজন হোলি আর্টিজানে হামলার পর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা চালাতে গিয়ে নিহত হন। আরেকজন রাজধানীর কল্যাণপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত হন।
জাহাঙ্গীর হোসেনের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেওয়া বক্তব্য রায়ের একাধিক অংশে উল্লেখ রয়েছে। এর এক জায়গায় বলা হয়েছে, ২০১৪ সালেই সাদা চামড়ার বিদেশিদের হত্যা করে দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তামিম চৌধুরী।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জেএমবির একাংশ নিয়ে গঠিত নব্য জেএমবির সদস্যরা গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে নারকীয় ও দানবীয় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদের উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার জঘন্য বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কলঙ্কজনক এ হামলার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চরিত্র হরণের চেষ্টা করা হয়েছে।
আদালত রায়ে এ মামলার এক সাক্ষীকে তারকা (অতি গুরুত্বপূর্ণ) সাক্ষী (১৮ বছরের নিচে, তাই নাম প্রকাশ করা হলো না) হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আদালত বলেছেন, তার সাক্ষ্যকে অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। রায়ের একাধিক অংশে এই সাক্ষীর বক্তব্য তুলে ধরেছেন বিচারক। এই সাক্ষীর বাবা (তানভীর কাদেরী) হোলি আর্টিজান হামলা চালাতে অর্থ দিয়েছিলেন। হামলাকারী জঙ্গিদেরও অশ্রয় দিয়েছিলেন তিনি। হোলি আর্টিজানে হামলার দুই মাস পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে রাজধানীর আজিমপুরে তানভীর কাদেরী নিহত হন।
হোলি আর্টিজান মামলার রায় নিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিচারিক আদালত সাক্ষ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে রায় দিয়েছেন। এখন মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য আইন অনুযায়ী মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে আসবে। তখন হাইকোর্টও রায়টি দেখবেন, পর্যালোচনা করবেন। তিনি বলেন, যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের বিচারের পুরো প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে সাজা কার্যকর হোক, এটিই মানুষ চায়।
সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল বিএনপি-জামায়াত : প্রধানমন্ত্রী- কালেরকণ্ঠ
রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির আমলে ভয়ে ঘরে থাকতে পারেননি আওয়ামী লীগ নেতারা।
আজ শনিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নির্দেশে সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর অত্যাচার করা হয়। বাংলাদেশ যেন উঠে দাঁড়াতে না পারে, সে চেষ্টা করেছিল বিএনপি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওরা ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে পারে না। বিএনপির কাজই হলো মানুষকে যন্ত্রণা দেওয়া। বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন দুর্নীতির কারণে কমে গিয়েছিল। আমরা এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি। তাদের কাজই হলো দুর্নীতি করা, লুটপাট করা আর মানুষকে নির্যাতন করা। হাওয়া ভবন খুলে লুটপাট করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদেশ থেকে এতিমের টাকা এসেছিল, সেই টাকা চলে গেল খালেদা জিয়ার অ্যাকাউন্টে। সেই মামলায় খালেদা জিয়া এখন জেল খাটছেন।’
ন্যাশনাল ব্যাংকে দুই প্রতিষ্ঠানের ঋণ জালিয়াতি: হাজার কোটি টাকা লোপাট-দৈনিক যুগান্তর
ন্যাশনাল ব্যাংকের দুটি শাখায় দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় নাফ ট্রেডিংয়ের নামে ৬৫০ কোটি টাকা এবং একই ব্যাংকের মহাখালী শাখায় হাসান টেলিকমের নামে ৩৩৫ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি হয়েছে।
বেআইনিভাবে প্রভাব খাটিয়ে এসব ঋণ নেয়া হয়েছে। ঋণের টাকা ঘোষিত ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ন্যাশনাল ব্যাংকের ওপর পরিচালিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামের নাফ ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আখতার ফারুককে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটিরও কোনো অস্তিত্ব পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল। প্রতিষ্ঠানটি খাদ্যপণ্য আমদানির জন্য ঋণ নিলেও কোনো পণ্য আনেনি।
অপরদিকে হাসান টেলিকম একটি ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে ঋণ নিলেও কোনো পণ্য আমদানি করেনি। এক্ষেত্রে ঋণ অনুমোদেনর আগেই টাকা ছাড় করার মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। হাসান টেলিকমের স্বত্বাধিকারী আরিফ খানের বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বর্তমানে দুই প্রতিষ্ঠানের ঋণই ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে পরিণত হয়েছে। যা আদায়ের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। দুটি ঘটনার আড়ালেই মুদ্রা পাচার হয়েছে বলে সন্দেহ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঘটনাটি আরও বিশদ তদন্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রচলিত ব্যাংকিং রীতিনীতি মানা হয়নি। পরিচালনা পর্ষদ ও শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের চাপের মুখে এসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর দায় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা ও পর্ষদ এড়াতে পারে না।
এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোস্তাক আহমেদের মোবাইল ফোনে ২৫ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত একাধিকবার কল দেয়া হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি।
পাশাপাশি একই মোবাইল ফোন নম্বরে ২৫ ও ২৭ নভেম্বর এই প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে এসএমএস পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। সর্বশেষ শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ফের তার মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানো হয়। রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি কোনো উত্তর দেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ন্যাশনাল ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় নাফ ট্রেডিংয়ের একটি হিসাব রয়েছে। শাখায় রক্ষিত তথ্য অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ভাড়া করা অফিসের ঠিকানা সঠিক নয়।
ওই শাখায় গ্রাহকের নামে হিসাব খোলা হয় ২০১৮ সালের ১২ মার্চ। হিসাব খোলার ২ দিন পর ১৪ মার্চ শাখার সঙ্গে গ্রাহকের দীর্ঘ সন্তোষজনক ব্যবসায়িক লেনদেনের কথা উল্লেখ করে ২৬০ কোটি টাকার বিশেষ ওভার ড্রাফট (ওডি) ঋণ সুবিধা প্রদানের জন্য আবেদন করা হয়।
কোনোরকম যৌক্তিক পর্যালোচনা ছাড়াই ছয় দিনের মধ্যে ২০ মার্চ গ্রাহকের আবেদন মঞ্জুরের জন্য শাখা থেকে প্রধান কার্যালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়। শাখা ব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধানসহ ৪ জন কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গ্রাহকের ঘোষণা অনুযায়ী শাখার গুদামে খাদ্যশস্য মজুদ পাওয়া যায়নি। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার শাখার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব আমদানির অনুমতি (আইআরসি) নেই। আইআরসি ছাড়া কোনো পণ্য আমদানির এলসি খোলার সুযোগ নেই। নিয়ম অনুযায়ী ঋণ দিতে গেলে কোম্পানির প্রোফাইল জমা দিতে হয়। শাখায় কোম্পানির কোনো প্রোফাইল পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে কোম্পানির বিগত বছরের ব্যবসার কোনো তথ্য না থাকার বিষয়গুলো অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
শাখার অভ্যন্তরীণ পরিদর্শনে উল্লেখিত নেতিবাচক পর্যবেক্ষণগুলো বিবেচনা না করে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ২৯ মার্চের সভায় গ্রাহকের নামে ২৬০ কোটি টাকার ওডি ঋণ অনুমোদন করা হয়। প্রধান কার্যালয় কর্তৃক জামানতের বিষয়টি উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি করে ১৫ মে ১৫০ কোটি টাকা প্রধান কার্যালয় থেকে শাখাকে বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়।
এ অর্থ গ্রাহকের চলতি হিসাবে জমা করা হলে ওইদিনই গ্রাহক তা তুলে নেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপের পরিপ্রেক্ষিতে অবশিষ্ট ১১০ কোটি টাকার মধ্যে ১০০ কোটি টাকা শাখার গ্রাহকের চলতি হিসাবে ১৯ জুলাই জমা করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাহকের ঋণসীমা ২৬০ কোটি থেকে ৬৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করার সময় শাখা থেকে গ্রাহকের সম্পদ বিবরণী, আয়কর বিবরণী, গুদাম ও গুদামের ভাড়া সংক্রান্ত দলিল এবং ব্যবসা বা ফ্যাক্টরির ৩ মাসের বিদ্যুৎ বিলের কপি চাওয়া হলে বিভিন্ন অজুহাতে গ্রাহক ওইসব তথ্যাদি দিতে অস্বীকৃতি জানান। তা সত্ত্বেও পর্ষদ সভায় গ্রাহকের ঋণসীমা বর্ধিত করা হয়।
গ্রাহকের ওডি ঋণ হিসাব থেকে ১৯ জুলাই দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা সরাসরি সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় স্থানান্তরিত করে একই শাখায় একইদিনে একটি স্থায়ী আমানত হিসাব খোলা হয়। তাছাড়া ১৫ মে, ৫ ডিসেম্বর ও ৬ ডিসেম্বর পে-অর্ডারের মাধ্যমে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের জুবলি রোড, খাতুনগঞ্জ ও দেওয়ানহাট শাখায় এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ৫০৭ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে।
এর মধ্যে ১২২ কোটি টাকা স্থানান্তরের পর ৬ ডিসেম্বর সমপরিমাণ অর্থ ৬টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক থেকে ন্যাশনাল ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় ফেরত আসে। ওই অর্থ দ্বারা আলাদা মালিকানার একটি কোম্পানির ঋণ আংশিক সমন্বয় করা হয়। ঋণের সিংহভাগ অর্থ অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়ায় তা কি কাজে ব্যবহৃত হয়েছে তা স্পষ্ট নয় এবং সুবিধাভোগী তৃতীয় কেউ হয়ে থাকতে পারে বলে প্রতিবেদনে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, ঋণের সদ্ব্যবহার না হওয়ায় এবং ঋণের বিপরীতে কোনোরূপ সহায়ক জামানত থাকায় ঋণ হিসাবে বকেয়া স্থিতি ৬৪৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা হয়েছে। যা আদায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাহক ঋণ হিসাবটি নবায়নকালে পুনরায় শাখা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের যৌথ পরিদর্শনেও ২০১৯ সালের ২২ মার্চ গ্রাহকের গুদামে কোনো খাদ্য মজুদ পাওয়া যায়নি। তবে গ্রাহক দাবি করেছে, জাহাজ থেকেই মালামাল বিক্রি হয়ে যাওয়ায় গুদামে কোনো পণ্য নেই। তবে পণ্য বিক্রির কোনো অর্থ গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়নি। ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত না করে জামানতের বিষয়গুলো নিষ্পত্তি না করেই ঋণ হিসাবটি পর্ষদের সভায় ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত মেয়াদে নবায়ন করা হয়।
এছাড়া হাসান টেলিকম প্রসঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডাইরেক্ট টু হোম প্রকল্পের আওতায় ৪৭৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ওয়ার্ক পারমিটের বিপরীতে ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখায় গ্রাহক ঋণের আবেদন করে। ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর ব্যাংকের পর্ষদ সভায় হাসান টেলিকমের অনুকূলে ২৭৫ কোটি টাকার ৫ বছর মেয়াদি ওডি ঋণ অনুমোদন করা হয়।
এর মধ্য থেকে ২৯ নভেম্বর গ্রাহকের চলতি হিসাবে ১০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। পুরো টাকা ব্যাংকের বনানী ও দিলকুশা শাখা থেকে ১৯টি চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়। ২ ও ৩ ডিসেম্বর যথাক্রমে ১০০ কোটি ও ৭৫ কোটি টাকা একইভাবে চলতি হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। পরে এগুলো একই ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে চেকের মাধ্যমে নগদে উত্তোলন করা হয়।
গ্রাহক চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি ঋণসীমা ২৭৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৩৫ কোটি টাকায় উন্নীত করার আবেদন করেন। গ্রাহকের এ আবেদন ৩১ জানুয়ারি ব্যাংকের পর্ষদ সভায় অনুমোদিত হয়।
গ্রাহকের হিসাব বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঋণ অনুমোদনের আগেই গ্রাহকের চলতি হিসাবে ২৪ জানুয়ারি ১১ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। যা নজিরবিহীন। একইদিন দিলকুশা থেকে তিনটি চেকের মাধ্যমে সমুদয় টাকা উত্তোলন করা হয়। ঋণ অনুমোদনের আগেই গ্রাহকের হিসাবে অর্থছাড়ের বিষয়টির ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশ্নের জবাবে শাখা থেকে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।
হাসান টেলিকম প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ৫, ৬, ৭ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি চলতি হিসাবে ঋণের বেশির ভাগ টাকা স্থানান্তর করে চেকের মাধ্যমে নগদে উত্তোলন করা হয়। ঋণের টাকা নগদে উত্তোলনের মাধ্যমে ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার লংঘন।
হাসান টেলিকমের হিসাব খোলার ফরম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির হিসাব ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর খোলা হলেও এতে কোনো লেনদেন হয়নি। এমনকি হিসাব খোলার প্রাথমিক জমা পর্যন্ত নেয়া হয়নি।
গ্রাহকের সম্ভাব্য লেনদেনের মাত্রায় উল্লেখ করা হয়েছে, মাসিক সম্ভাব্য উত্তোলনের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০০টি, একক সর্বোচ্চ উত্তোলনের পরিমাণ ২৫ কোটি টাকা, মাসিক সর্বোচ্চ উত্তোলনের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা।
এক্ষেত্রে প্রত্যয়নকারী ব্যাংক কর্মকর্তার নাম ও সিল-স্বাক্ষর কিছুই নেই। গ্রাহককে ব্যাংক থেকে বেআইনিভাবে একদিনে এত বিপুল পরিমাণ টাকা নগদে উত্তোলনের সুবিধা দেয়া হয়েছে। যা বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সার্কুলারের লংঘন।
এর সহায়ক জামানত হিসাবে ১৩৮ ও ৩৭ শতাংশ জমির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, আরিফ খান ওই জমি তিনটি দলিলের মাধ্যমে ২০১৮ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে শরীফ উজ্জামান খান ও শিকদার রিয়েল এস্টেট থেকে ক্রয় করেন। জমির মূল্য দলিলে উল্লেখিত মূল্যের চেয়ে ১৪ থেকে ৭৯ গুণ বেশি দেখানো হয়েছে। যা মাত্রাতিরিক্তভাবে অতিমূল্যায়িত।
ন্যাশনাল ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার গ্রাহক নাফ ট্রেডিং ও মহাখালী শাখার গ্রাহক হাসান টেলিকম লিমিটেডের অনুকূলে গুরুতর অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করে আমানতকারীদের যথাক্রমে ৬৪৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা ও ৩৩৫ কোটি টাকা ও সুদসহ মোট ১ হাজার ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ঝুঁকিগ্রস্ত করা হয়েছে। এর দায় শাখা, প্রধান কার্যালয় ও পরিচালনা পর্ষদ কেউ এড়াতে পারে না বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, এই ঋণের ব্যাপারে শাখা নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরলেও শেষ পর্যন্ত ঋণের জন্য সুপারিশ করে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রধান কার্যালয় কর্তৃক যাচাই-বাছাই ছাড়া পর্ষদে ঋণ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। সার্বিকভাবে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আমানতকারীদের অর্থ বিনিয়োগের আগে তদারকি ও ঝুঁকি প্রশমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
ব্যাংকের পর্ষদের কাছে নেতিবাচক তথ্য (গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট রিপোর্ট না থাকা, শর্ত অনুযায়ী গ্রাহকের জামানত বন্ধকি না হওয়া, ঋণ হিসাবে যথেষ্ট অর্থ জমা না করা ইত্যাদি) থাকা সত্ত্বেও তা উপেক্ষা করে ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ঋণসীমা। এরপরও ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবে পর্ষদ অনুমোদন দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইনে ব্যাংক কোম্পানির নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও তা পরিপালন নিশ্চিত করার জন্য পরিচালনা পর্ষদকে দায়বদ্ধ করা হয়েছে। নাফ ট্রেডিং ও হাসান টেলিকমের অনুকূলে ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের পর্ষদ এ দায়বদ্ধতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে।
বরিশাল থেকে যাত্রীবাহী নৌযান ছাড়েনি, দুর্ভোগে যাত্রীরা-দৈনিক ইত্তেফাক
১১দফা দাবিতে পূর্বঘোষণা অনুসারে নৌযানে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। একারণে দুর্ভোগে পরেছেন নৌপথের যাত্রীরা। শনিবার ভোর থেকে বরিশাল নদী বন্দর হতে কোনো যাত্রীবাহী নৌযান ছেড়ে যায়নি। স্থানীয় রুটের নৌযানগুলোকে পন্টুন থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
যাত্রীরা জানান, কয়েকদিন আগে বাস ধর্মঘট, সপ্তাহখানেকের মধ্যেই আবার নৌ ধর্মঘটে অতিষ্ট যাত্রীরা।বরিশাল লঞ্চ লেবার সমিতিরর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একিন আলী হাওলাদার জানান, দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
শ্রমিকরা জানান, বরিশাল নদীবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ ১০ রুটে ৩৩টি লঞ্চ প্রতিদিন যাতায়াত করে। আর রাজধানীর সাথে যাতায়াত করে প্রতিদিন ১৪টি বিলাসবহুল লঞ্চ। নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী বন্ধ, নৌশ্রমিকদের খাদ্য ভাতা প্রদান, সরকার ঘোষিত গেজেট মোতাবেক বেতন প্রদানসহ ১১দফা দাবিতে এই আন্দোলন শুরু করেছে নৌ-শ্রমিকরা। এর আগে ২০১০, ২০১২, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে এই একই দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচী, কর্মবিরতিসহ আন্দোলন করেছে শ্রমিকরা। আন্দোলনকারীদের ভাষায় লঞ্চমালিকরা তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও তা পালন না করায় বারবার কর্মবিরতি করতে হচ্ছে।
রাজনীতি ভাগ্য নির্ধারণের হাতিয়ার নয় : কাদের-দৈনিক নয়াদিগন্ত
রাজনীতি ভাগ্য নির্ধারণের হাতিয়ার নয়, রাজনীতি কেনাবেচার পণ্য নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের কাছে রাজনীতি আপন ভাগ্য নির্ধারণের হাতিয়ার নয়, রাজনীতি কেনাবেচার পণ্য নয়, শেখ হাসিনাই আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছেন শেখ হাসিনা আমাদের সেই দিয়েছেন। আজকে সেটা মনে রাখতে হবে। অনুকরণ করতে হবে। শেখ পরিবার আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।
কাদের বলেন, কেন দুর্নীতি করবেন, কেন টেন্ডারবাজি করবেন, কেন চাঁদাবাজি করবেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবার থেকে শিক্ষা নিন সততা কাকে বলে। আজ যেখানে যান দেখবেন দুর্নীতি। রাস্তা তৈরি করতে যান দুর্নীতি, কিছু কিনতে যান দুর্নীতি, যারা এসব করছেন তারা কারা ?
আসুন আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে এই পরিবার থেকে সততার শিক্ষা গ্রহণ করি। রাজনীতিকে আমরা মানুষের সেবার হাতিয়ারে পরিণত করি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আমাদের নেত্রীর দেশব্যাপী যে অভিযান শুরু করেছেন এই অভিযানকে সফল করতে হবে। মনে রাখবেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আর বেশি দূরে নয়, এই সম্মেলন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্বাচনে জেতার লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।
এর আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নৌকার মঞ্চে উপস্থিত হন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১১টায় তিনি উপস্থিত হয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, দলীয় পতাকা উত্তোলন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন।
মঞ্চে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাদের পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত আছেন। প্রথমবারের মতো এবার একসাথে যৌথভাবে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
বিকেল তিনটার পর দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দুই মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে।
বিএনপি কখনোই সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করে না : মির্জা ফখরুল-দৈনিক নয়াদিগন্ত
বিএনপি কখনোই সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমাদের জোট আছে।আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠনে বিশ্বাসী। সন্ত্রাসী তো তারাই যারা মানুষের ভোটাধিকার লুট করে জোর করে ক্ষমতায় থাকে। দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, আমরা সকল জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। হোলে আর্টিজান মামলার রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আসলে যখন কথা বলার সুযোগ থাকে না। সকল দরজা জানালা বন্ধ হয়ে যায়। তখনই জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। আমাদের প্রশ্ন এই সরকার কি ইচ্ছা করে এসব করতে চায়?
আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এই সভা হয়। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবিতে এই গোলটেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। সংগঠনের চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার পরিচালনায় গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী, মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, জাগপার আসাদুর রহমান প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে দেশ স্বাধীনের প্রায় ৫০ বছরে আমরা ক্রান্তিকালে এসে দাঁড়িয়েছি। যে কারণে যে প্রধান দাবিতে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম সেটা হলো নিপীড়নের বিরুদ্ধে। শোষণের বিরুদ্ধে। আজকের ক্ষমতাসীনদের মতোই পাকিস্তানীরা জোর করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলো। সে কারণেই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আজকে আওয়ামী লীগ কথা কথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তো মিছিলে গুলি করা নয়, কারো স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া নয়। আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে ভুলে গেছে। জেনারেল এমএজি ওসমানীর নাম নেয়না। তাজউদ্দীন আহমদের নাম নেয়না। আসলে আওয়ামী লীগের মনোভাব হলো জমিদারের মতো। মানে তারা ছাড়া আর কেউ নেই। আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে বাংলাদেশের প্রভু মনে করে। তাদের বিরুদ্ধে লড়ার মানে ফ্যাসিবাদ আর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই। তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা খুব সহজ নয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের ৫ শতাধিক নেতাকর্মী গুম, ১ লক্ষের ওপর মামলা, ২৬ লাখের বেশি আসামি। এভাবেই আমরা লড়ে চলেছি। আজকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে আসুন। মানুষের মাঝে গিয়ে এদের বিরুদ্ধে সংগঠিত করতে হবে। এজন্য শুধু বিএনপির দিকে তাকিয়ে থাকলে হবেনা। যার যার জায়গা থেকে লড়তে হবে। শুধু সমালোচনা না করে নিজের কাজটুকুও করেন। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে মানুষকে সংগঠিত করাই হচ্ছে মূল কাজ। মির্জা ফখরুল বলেন, এখন ঐক্যের সময়। দু:শাসন ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই সরকার তো সবকিছু ধ্বংস করে ফেলেছে। যদি কোনো শাসক দেয়ালের লিখন পড়ত, মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে পারতো তাহলে কোনো সরকার এতো খারাপ হতে পারতোনা! এই সরকার চারদিকে ব্যর্থ। তিনি বলেন, ক্যাসিনো অভিযানে যাদের ধরা হয়েছে তারা তো চুনোপুটি। গডফাদারদের ধরলেন না কেনো? তারা কোথায়? নাম প্রকাশ করুন। আজকে ব্যাংক ব্যবস্থা ধ্বংস। অর্থনীতি ধ্বংস। এদের দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা হবেনা। অর্থনীতি রক্ষা হবেনা।
এবার ভারতের বিস্তারিত খবর তুলে ধরছি
১৬৯ জনের সমর্থনে আস্থাভোট জিতলেন উদ্ধব, ভোটাভুটির আগেই ওয়াকআউট বিজেপির-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন আগেই।এ বার বিধানসভায় আস্থাভোটেও জয়ী হলেন উদ্ধব ঠাকরে। তাঁর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন ১৬৯ জন বিধায়ক। ভোটদান থেকে বিরত ছিলেন এমআইএম-এর ২ জন, সিপিআইয়ের ১ জন এবং উদ্ধবের খুড়তুতো ভাই রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নব নির্মাণ সেনার (এমএনএস) ১ জন বিধায়ক। তবে উদ্ধবের বিরুদ্ধে একটা ভোটও পড়েনি এ দিন।
দীর্ঘ টানাপড়েনের পর বৃহস্পতিবারই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন উদ্ধব ঠাকরে। আজ রাজ্য বিধানসভায় তাঁর শক্তি পরীক্ষা ছিল। স্পিকার নিয়োগ না করেই আস্থাভোট করার প্রতিবাদে বিধানসভা থেকে প্র.থমে ওয়াক আউট করে বিজেপি। তার পর প্রোটেম স্পিকার দিলীপ ওয়ালসে পাটিলের তদারকিতে দুপুর আড়াইটে নাগাদ আস্থাভোট শুরু হয়। তাতে ভাল ভাবেই উতরে যান উদ্ধব। আগামী পাঁচ বছর তিনিই মহারাষ্ট্রে সরকার চালাবেন।
বিজেপি নেতৃত্ব জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিল ‘মহা বিকাশ আগাড়ি’ জোট। ১৭০ জনের বেশি বিধায়কের সমর্থন রয়েছে বলে এ দিন সকালেই দাবি করে তারা। জোটের তরফে যে হিসাব প্রকাশ করা হয়, তাতে বলা হয়, শিবসেনার ৫৬, এনসিপি-র ৫৪ এবং কংগ্রেসের ৪৪ জন বিধায়ক ছাড়াও ৮ জন নির্দল বিধায়ক, সমাজবাদী পার্টির ২ জন বিধায়ক এবং স্বাভিমানী শেতকরি (১), বহুজন বিকাশ আগাড়ি(৩), মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা(১), পিস্যান্টস অ্যান্ড ওয়ার্কারস পার্টি অব ইন্ডিয়া(১), সিপিআই(১) মিলিয়ে মোট ১৭১ জনের সমর্থন রয়েছে উদ্ধব নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার মু্ম্বইয়ের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন উদ্ধব ঠাকরে। ওই দিন তাঁর সঙ্গে মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন আরও ছ’জন। তবে উপ মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। এনসিপি এবং শিবসেনা থেকে মোট দু’জনকে উপ মুখ্যমন্ত্রী করা হবে বলে, প্রথমে জানা গেলেও, এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে বিধানসভার স্পিকার পদের জন্য ইতিমধ্যেই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কংগ্রেসের নানা পাটোলে। তবে একটি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, দফতর বন্টন নিয়ে ইতিমধ্যেই কথা হয়ে গিয়েছে তিন দলের মধ্যে। স্বরাষ্ট্র, অর্থ, পরিবেশ এবং বন দফতর পেতে পারে এনসিপি। রাজস্ব, পূর্ত এবং শুল্ক দফতর কংগ্রেসের ঝুলিতে যেতে পারে। নগরোন্নয়ন, গৃহ নির্মাণ, সেচ যেতে পারে শিবসেনার কাছে। শিক্ষা, শিল্প প্রক্ষৃতি নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
ঝাড়খণ্ডে প্রথম দফার নির্বাচনের দিনেই মাওবাদী হামলা-দৈনিক আজকাল
শনিবার শুরু হল ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচন। আর প্রথম দফার ভোটগ্রহণের দিন সকালেই গুমলা জেলার বিষ্ণুপুর এলাকায় হামলা চালাল মাওবাদীরা। বিস্ফোরণের জেরে ওই এলাকার একটি সেতু ভেঙে পড়েছে। তবে এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। প্রভাব পড়েনি ভোটের কাজেও।গুমলার ডেপুটি কমিশনার শশী রঞ্জন জানান, শনিবার সকালে গুমলার বিষ্ণুপুর এলাকায় আচমকা হামলা চালায় মাওবাদীরা। বিস্ফোরণের জেরে ওই এলাকার একটি সেতু ভেঙে পড়েছে। তবে কেউ নিহত বা আহত হননি। ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়াতে কোনও বাধা পড়েনি। স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে অন্য সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীরা ওই এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে হামলাকারী মাওবাদীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছেন। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
এদিকে, শনিবার সকাল থেকেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে ঝাড়খণ্ডের ছটি জেলার ১৩টি বিধানসভা আসনে। সেগুলি হল ছাতরা, গুমলা, বিষ্ণুপুর, লোহারডাগা, মানিকা, লাতেহার, পানকি, ডালটনগঞ্জ, বিশরামপুর, ছাতারপুর, হুসেনাবাদ, গারওয়া ও ভবনাথপুর।শুক্রবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক বিনয় কুমার চৌবে জানান, প্রথম দফার নির্বাচনে ১৫ জন মহিলা সহ মোট ১৮৯ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। ভোটদান করবেন ৩৭ লক্ষের বেশি মানুষ। ৮১টি আসনের ঝাড়খণ্ড বিধানসভার অনেক এলাকা মাওবাদী অধ্যূষিত। তাই এখানে মোট পাঁচ দফায় নির্বাচন হবে।এই প্রথম ঝাড়খণ্ডে কোনও জোটসঙ্গী ছাড়াই লড়ছে বিজেপি। তাঁদের দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্ট ইউনিয়ন পার্টি এবারে আলাদা লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর আশ্বাসই সার, গত ৬ বছরে সর্বনিম্ন দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
কয়েকমাস ধরেই অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছিলেন দেশের অর্থনীতির হাল নিয়ে। যেভাবে আর্থিক মন্দার ফলে দেশের বিভিন্ন সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ হচ্ছিল তা আতঙ্কিত করেছিল তাঁদের। যদিও বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সংসদে দাঁড়িয়ে দাবি করেছিলেন, এই পরিস্থিতিকে কখনই আর্থিক মন্দা বলা যায় না। বরং আর্থিক বৃদ্ধির হার প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না বলা যেতে পারে। কিন্তু, ঠিক তার পরের দিন শুক্রবারই প্রকাশিত হল এই অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের সরকারি পরিসংখ্যান। যা দেখিয়ে দিয়েছে যে অর্থ মন্ত্রকের নীতি নির্ধারকরা অর্থনীতির হাল ফেরানোর জন্য যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। তাতে কোনও লাভই হয়নি। গত দেড় বছর ধরে যেভাবে আর্থিক বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী হয়েছে। এবারও সেই ট্র্যাডিশন বজায় রইল। গত ছবছরের মধ্যে সব থেকে নিচে নেমে পৌঁছল ৪.৫ শতাংশে।
যদিও বিপুল জনাদেশ পেয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য ইনিংসে শুরু করার সময় অন্য স্বপ্ন দেখিয়েছিল কেন্দ্রের শাসকদল। খুব তাড়াতাড়ি ভারত তিন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলেও দাবি করা হয়েছিল। এমনকী আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তা পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলেও আশাপ্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ঠিক তার উলটো ছবি। প্রথম ত্রৈমাসিকে পাঁচ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি হয়েছিল। যা গত ছবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। কিন্তু, শুক্রবার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের রিপোর্ট প্রকাশ পেতে সেটাও বেশি হয়ে গেল। বিশেষজ্ঞ ও বিরোধীদের আশঙ্কা সত্যি করে ৪.৫ শতাংশে পৌঁছল দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার। এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে এর থেকে কম ৪.৩ শতাংশে পৌঁছে ছিল জিডিপি বৃদ্ধির হার। কিন্তু, এর নিচে কোনওদিন যায়নি। কিন্তু, এবার পুরনো সেসব রেকর্ড ভেঙে গেল। তৈরি হল অর্থনীতির অধঃপতনের নতুন ইতিহাস!#
পার্সটুডে/বাবুল আখতার/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।