নভেম্বর ৩০, ২০১৯ ২০:৩৩ Asia/Dhaka

যাই হোক ইরানের তেল-বহির্ভুত আরেকটি রপ্তানি পণ্য হলো শুকনো ফল বা শস্য। এই শুষ্ক ফলের মধ্যে অন্যতম হলো বাদাম।

বাদামকে শিল্পপণ্যে পরিণত করার জন্য কিংবা বলা যেতে পারে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাদামকে বাজারজাত করার জন্য অথবা বাদাম দিয়ে তৈরি বিচিত্র দ্রব্য তৈরি করার জন্য এই শিল্পে বিনিয়োগের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এই শিল্পে বিনিয়োগের পথ ধরে সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারে ইরানের জাতীয় অর্থনীতি। ইরান একটি বিশাল দেশ। এই দেশের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে আবহাওয়াগত বৈচিত্র্য। ভৌগোলিক এই অবস্থানগত বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্যের কারণে এবং ভূমির উর্বরতার কারণে এখানে একদিকে যেমন কৃষিপণ্যের ব্যাপক উৎপাদন লক্ষ্য করা যায় তেমনি বাগ-বাগিচায়ও উৎপন্ন হতে দেখা যায় বিচিত্র ফল-ফলাদি। এরকমই একটি পণ্য হলো বাদাম কিংবা বাদামের ভেতরের শাস যাকে অ্যালমন্ড বলা হয়।

বাদাম গাছ ঠিক কবে আবিষ্কৃত হয়েছে বলা কঠিন। তবে বলা হয়ে থাকে যে, খ্রিষ্টপূর্ব তিন হাজার বছর আগে এই বাদাম গাছের অস্তিত্ব ছিল। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের কারও কারও মতে বাদাম গাছের প্রাথমিক উৎস ছিল মধ্যপ্রাচ্য কিংবা দক্ষিণ এশিয় অঞ্চল। পরবর্তীকালে এই বাদাম গাছ ভূমধ্যসাগর উপকূলবর্তী এলাকায় বিস্তৃতি লাভ করতে করতে উত্তর আফ্রিকা এবং ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলে পৌঁছে যায়। আঠারো শতকের মাঝামাঝিতে স্পেনের মাধ্যমে এই বাদাম আমেরিকায় প্রবেশ করে।

বাদাম গাছের উচ্চতা চার থেকে দশ মিটারের মতো। এই গাছের শেকড় বেশ মজবুত এবং মাটির প্রায় তিন মিটার গভীরে চলে যায়। সে কারণেই শুষ্কতা কিংবা পানি স্বল্পতায়ও বেশ শক্তিশালী থাকে গাছটি। বাদাম গাছ সামান্য আর্দ্রতায়ও বেড়ে ওঠে। বাদাম গাছের পাতা ডিম্বাকৃতির, তবে পাতলা এবং সবুজ রঙের। বসন্ত ঋতুর শুরুতে বাদাম গাছ সাদা আর গোলাপি ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। এক অপূর্ব সৌন্দর্যে ভরে ওঠে বাগান।

বাদাম গাছের ডালাপালা বাত্তি বা পরিপক্ক হওয়ার আগে সুস্পষ্ট মেটে রঙের থাকে। পরিপক্কতার দিকে যেতে থাকলে রঙও ধীরে ধীরে ধূসর রঙ ধারন করতে থাকে এবং ধীরে ধীরে ডালপালার বাকল ফাটতে শুরু করে।ফলের গাছকে যদি বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয় তাহলে বাদাম গাছ পড়বে শক্ত খোসাময় ফলের বিভাগে। যেমন নারিকেল কিংবা আখরোট ইত্যাদি ফল। এসব ফলের বাইরে শক্ত আবরণ থাকে আবার একেবারে ভেতরেও নরম একটা পর্দার মতো থাকে। বাদামও ঠিক তেমনি একটি ফল। বাদামকে দুই পর্বে দুইভাবে খাওয়া হয়। সবুজ থাকাকালে নরম সবুজ খোসাসহ খাওয়া হয়। এসময় বাদামের নাম পাল্টে যায়। নারিকেল যেমন সবুজ অবস্থায় ডাবে পরিণত হয় তেমনি বাদাম সবুজ অবস্থায় চগলে বাদাম নামে অভিহিত হয়। এ সময় বাদামের চামড়া কাঁচা আমের মতো নরম থাকে তাই চামড়াসুদ্দই খাওয়া যায়।

চগলে বাদামের কথা বলছিলাম। সবুজ অবস্থায় চগলে বাদামের চামড়া কাঁচা আমের মতো নরম থাকে তাই চামড়াসুদ্দই খাওয়া যায়। কাঁচা খোসার ভেতর সাদা শাস থাকে। এই শাসটুকু খেতে বেশ মজার। সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে সবুজ চামড়াটিও রঙ বদলাতে থাকে, শক্ত হতে থাকে বাইরের খোসাটিও। ধীরে ধীরে সবুজ থেকে হলদেটে হতে হতে মূল বাদামের রূপ মানে বাদামি রঙ ধারন করে। পরিপক্ক হয়ে গেলে গাছেই বাইরের খোসাটি ফেটে যায়। খোসার ভেতরেও আরেকটি আবরণ থাকে শক্ত। ওই আবরণের ভেতরেই মূল বাদাম পাওয়া যায়।

বাদামকে সামগ্রিকভাবে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-তিক্ত এবং মিষ্টি। বহুভাবে বাদামের বাগান গড়ে তোলা যায়। কখনো বাদামের বীজ থেকে আবার বাদাম গাছ থেকে কলম করে। বাদাম একটি সুস্বাদু এবং উপকারী বা স্বাস্থ্যকর খাবার। ভারসাম্যপূর্ণভাবে বাদাম খেলে শরীর সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকতে পারে। আমন্ড বা অ্যালমন্ড বাদামে রয়েছে প্রচুর খাদ্য ও পুষ্টিগুণ।এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম,ফাইবার,পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস,ফলিক এসিড ও ভিটামিন-ই। এটি শ্বাসকষ্ট, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ত্বকের নানা সমস্যায় খুব ভালো। সকল বাদামের মধ্যে আমন্ডেই বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। নিয়মিত চার-পাঁচটি আমন্ড খেলে এলডিএল কোলেস্টেরল বা ব্যাড কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। ফলে হৃদরোগ কিংবা উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা থাকে না। কোলন ক্যান্সারের আশঙ্কা কমে। আলজেইমারের আশঙ্কাও কমে বাদাম খেলে। কেমোথেরাপি চলাকালে আমন্ড মিল্ক খেলে ইমিউনিটি সিস্টেমের উন্নতি ঘটে। আমন্ডের ফাইবার শরীরে কার্বোহাইড্রেট শোষণের গতি কমায়। ডায়াবেটিসের জন্য ও বাদাম বেশ উপকারী।

আমন্ড বাদামের গাছও বেশ উপকারী। এই গাছের কাণ্ড, ফুল, শাখা, পাতা, শেকড় এবং ফল সবই কাজে লাগে। বাদামের ফুল সেদ্ধ করে শিশুদের খাওয়ালে শিশুদের পেটের সমস্যা দূর হয়। যকৃৎ এবং পিত্তথলির সমস্যা দূর করে বাদাম গাছের পাতা সেদ্ধ করা পানি। আগেকার দিনের কবিরাজ বা হেকিমরা প্লীহা বা কিডনি সমস্যায় বাদাম গাছের শেকড় সেদ্ধ করে খাওয়ানোর পরামর্শ দিতেন। বাদাম কাশি, স্বরযন্ত্রের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, মূত্রথলি, অন্ত্রের জখমের চিকিৎসা এমনকি নিদ্রাহীনতার চিকিৎসাতেও কাজে লাগে। মূত্রথলির পাথর চিকিৎসায়, চামড়ার প্রদাহের চিকিৎসায়, পোড়া কিংবা এক্সিমার চিকিৎসাতেও বাদামের তেলের গুণাগুণ অপরিসীম।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ৩০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।