পক্ষপাত থাকলে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থায় সদস্যপদ অর্থহীন: পেজেশকিয়ান
(last modified Thu, 10 Jul 2025 14:04:33 GMT )
জুলাই ১০, ২০২৫ ২০:০৪ Asia/Dhaka
  • মাসুদ পেজেশকিয়ান
    মাসুদ পেজেশকিয়ান

পার্সটুডে: ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, “ইরান ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মধ্যে পূর্ববর্তী সহযোগিতাগুলো ছিল নীতিনির্ভর ও ব্যাপক, তবে ভবিষ্যৎ সহযোগিতা নির্ভর করবে সংস্থাটির পক্ষপাতমূলক আচরণ সংশোধনের ওপর।”

বুধবার রাতে ইউরোপীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তার সঙ্গে এক টেলিফোনালাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি ১২ দিনের আগ্রাসন এবং ইরান-ইইউ সম্পর্ক নিয়ে তারা মতবিনিময় করেন।

পার্সটুডে জানিয়েছে, পেজেশকিয়ান এই আলোচনায় ইরান সরকারের নীতিগত অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেছেন, তেহরান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে গঠনমূলক সম্পর্ক ও পারস্পরিক সম্মানভিত্তিক সংলাপ চায়। তিনি বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইরানের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার প্রতি প্রতিশ্রুতির কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।

বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিনষ্টে ইসরায়েলের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিশদ বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, "আমাদের দেশ ইসরাইল ও আমেরিকার আক্রমণের শিকার হয়েছিল, যখন আমরা সংলাপ ও আলোচনার পথে ছিলাম। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের কঠোর জবাবের মুখে তারা যুদ্ধবিরতি চেয়ে বসে। নিঃসন্দেহে, আমেরিকার সমন্বয় ও অনুমতি ছাড়া ইসরাইল এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হতো না।"

আইএইএ'র সাথে ইরানের সহযোগিতা বন্ধ নিয়ে ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্টের উদ্বেগের জবাবে পেজেশকিয়ান সংলাপ, কূটনীতি, পারস্পরিক সম্মান ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ইরানের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি ইরানের পার্লামেন্টের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে আইএইএ মহাপরিচালকের পক্ষপাতদুষ্ট ও অপেশাদার আচরণের প্রতি একটি প্রতিক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করেন।

পেজেশকিয়ান যোগ করেন, "প্রতিবেদনে নিরপেক্ষতার অভাব, ইরানের পরমাণু স্থাপনায় স্পষ্ট হামলাকে উপেক্ষা করা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে নীরবতা—এসবই আইএইএ'র অবস্থান ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং আমাদের পার্লামেন্টকে এই আইন পাস করতে বাধ্য করেছে। স্বাভাবিকভাবেই, আইএইএ'র মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সদস্য হিসেবে দেশগুলোর প্রত্যাশা হলো সেগুলো থেকে সমান সুবিধা ও সমর্থন পাওয়া। অন্যথায়, এই সংস্থাগুলোর সদস্যপদ মূল্যহীন হয়ে পড়ে।"

আইএইএ'র সাথে ইরানের অতীতের নীতিভিত্তিক সহযোগিতার কথা স্মরণ করে পেজেশকিয়ান বলেন, "এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য ইরানের পরমাণু কর্মসূচির প্রতি দ্বিমুখী আচরণ বন্ধ করতে হবে। কোনো ধরনের আগ্রাসন পুনরাবৃত্তি হলে, তার জবাব হবে আরও কঠোর ও অনুশোচনাযোগ্য।"

তিনি ইউরোপীয় পরিষদের প্রেসিডেন্টকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ইরান সবসময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্মানজনক ও ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য নিরসন ও সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য প্রস্তুত।

এই টেলিফোন আলোচনায় আন্তোনিও কোস্টাও ইরানের সাথে বর্তমান সমস্যাগুলোর কূটনৈতিক সমাধান ও সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইচ্ছার কথা জানান। তিনি বলেন, "আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত যে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কোনো ধরনের দ্বিমুখী মানদণ্ড এড়িয়ে চলা উচিত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের ইতিহাস, সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল এবং সংলাপ ও সহযোগিতার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।"

তিনি একমত পোষণ করে বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে অবশ্যই দ্বৈত মানদণ্ড পরিহার করতে হবে। আন্তোনিও কোস্টা আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করে।

ইসরায়েলি হামলায় ইরানি নাগরিকদের শাহাদাতের হওয়ার ঘটনায় আন্তরিক সমবেদনা জানিয়ে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট বলেন, গাজায় ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিন্দনীয়, যুদ্ধ বন্ধ ও ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি।

ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলায় নিহত ইরানি নাগরিকদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে কোস্টা বলেন, "ইউরোপীয় ইউনিয়ন গাজায় ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানায় এবং যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা পাঠানো ও ফিলিস্তিনি জনগণের কার্যকর সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।"#

পার্সটুডে/এমএআর/১০