জানুয়ারি ১৪, ২০২০ ২০:৩৪ Asia/Dhaka

সহমর্মিতা আসলে কী? যার জন্য সহমর্মিতা প্রকাশ করছি তার স্থানে দাঁড়িয়ে তার অবস্থা উপলদ্ধি করা এবং সে অনুযায়ী অনুভূতি প্রকাশ করার নামই সহমর্মিতা।

তবে একাজটি অনেক সময়ই ততটা সহজ হয়ে ওঠে না। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই একই ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের থাকে না। মানুষের একে অপরের অভিজ্ঞতার মধ্যে মিল না থাকলেও সাধারণত আমাদের আবেগ ও অনুভূতির প্রকাশে অনেক মিল পাওয়া যায়। যেমন আমরা বিরূপ পরিস্থিতিতে রেগে যাই, কষ্ট পাই এবং অনুকূল পরিস্থিতে আনন্দ পাই, হাসি। ফলে একজনের কোনো কারণে মন খারাপ থাকলে হয়তো ঠিক সেই অভিজ্ঞতাটা আপনার-আমার মধ্যে নাও থাকতে পারে। কিন্তু দুঃখ নামের আবেগ আপনার-আমরা সবার মধ্যেই রয়েছে। এ কারণে আবেগ প্রকাশের মধ্যে মিল থাকায় অন্যের মনের অবস্থাকে অনেকটাই অনুভব করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে সহমর্মিতার মানে হলো সমব্যথী হওয়া,তার দুঃখ-কষ্ট অনুভব করে সে অনুযায়ী আচরণ করা এবং কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাকে সহযোগিতা করা।

সহমর্মিতা প্রকাশের ক্ষেত্রে আমাদেরকে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে তাহলো আমরা যাকে সহমর্মিতা জানাচ্ছি তার জন্য আমার কোনো কথা বা আচরণ যেন পীড়াদায়ক হয়ে না দাঁড়ায়। অর্থাৎ তার কষ্টকে আমরা যেন আরও বাড়িয়ে তুলি। সহমর্মিতার উদ্দেশ্য হলো অপর পক্ষের কষ্ট লাঘব করা, বাড়িয়ে তোলা নয়।

প্রথমেই আমাদের উচিৎ সমস্যার শিকার ব্যক্তির কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা। ওই ব্যক্তিকে তার মতো করে কথা শেষ করতে দিতে হবে এবং মাথা নেড়ে বুঝাতে হবে যে আপনি তার কথা গুরুত্বের সঙ্গে শুনছেন।  এ অবস্থায় কোনোভাবেই তার অবস্থান নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ বা সমালোচনা করা ঠিক হবে না। যদি এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তি পরামর্শ চায় কেবল তখনি তাকে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে এবং সেটাও হতে হবে সহমর্মিতা প্রকাশের মধ্যদিয়ে। তাকে বুঝাতে হবে আপনি সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছেন, সম্ভাব্য সব ধরণের সহযোগিতার পথ খোলা রাখুন। তবে ওই পক্ষ সহযোগিতা না চাইলে আগ বাড়িয়ে সহযোগিতা করার প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে। সে অপমানবোধ করতে পারে। আমরা আমাদের পরিবার-পরিজনের গন্ডি থেকে সহমর্মিতা প্রকাশের অনুশীলন শুরু করতে পারি। সহমর্মিতা পরস্পরের মধ্যে এমন এক সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপন করে  যা পরিবারের সদস্যদের ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে তোলে এবং একে অপরের প্রতি মমত্ববোধ শানিত করে। অধিকারী হতে সাহায্য করে। তবে যারা অহংকারী ও আত্মম্ভরী তাদের পক্ষে প্রকৃত সহমর্মী হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যারা সুন্দর মনের অধিকারী তারা সহমর্মিতা প্রকাশ করতে জানে এবং অন্যের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তারা সফল। 

একটি পরিবারকে তখনি সফল পরিবার বলা যাবে যখন সেখানে স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা ও সন্তান এবং ভাই-বোনদের মধ্যে সহমর্মিতা ও সহানুভূতির চর্চা থাকবে। আমরা যদি অন্যের সমস্যা ও দুঃখ-কষ্ট ভালোভাবে উপলব্ধি করে সহমর্মী হই তাহলে অন্যরাও আমার সমস্যায় এগিয়ে আসবে এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। সাধারণত বিপদগ্রস্ত হলে বা কষ্টে পড়লে আমরা সবাই চাই অন্যরা আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসুক এবং সহমর্মিতা জানাক,সহানুভূতি প্রকাশ করুক। আমাদের কাছের কেউ সমস্যার মধ্যে থাকলে বা বিপদে পড়লে আমরা নানাভাবে তাকে সাহায্য করতে পারি। কথা, কাজ ও মানসিক সমর্থন দিয়েও তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা যেতে পারে।

ধরুন আপনার বোনের সঙ্গে তার স্বামীর বিরোধ দেখা দিয়েছে এবং সে স্বামীর বাড়ী ছেড়ে চলে এসেছে। এ অবস্থায় আপনি তার কষ্ট লাঘবের জন্য প্রথমেই তাকে কাছে ডাকবেন, মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করবেন এবং তাকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেবেন। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা এমন হতে পারে, দেখো অনেক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই এ ধরনের মনোমানিল্য দেখা দেয় এবং আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়। তোমাদের ক্ষেত্রেও তাই হবে। তোমাদের জন্য শুভদিন অপেক্ষা করছে। হতাশ হয়ো না। এর ফলে সে সাহস পাবে এবং শান্ত হবে। 

পরিবারের শিশুদেরকে সহমর্মিতাবোধের শিক্ষা দিতে হবে। এ কারণে অনেক দেশেই শিশুদের স্কুল পর্যায়ে সহমর্মিতাবোধের শিক্ষা দেওয়ার নিয়ম চালু আছে। একে অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারা ও অন্যের অনুভূতি ভাগাভাগি করে নেওয়ার অভ্যাস ছোটবেলা থেকে শিক্ষা দিলে তার ফল পাওয়া যায়। সাধারণত ক্লাসে শিশুদের নিজের সমস্যা সম্পর্কে বলতে বলা হয়। শিক্ষক-সহপাঠীসহ এরপর সবাইকে নিয়ে সে সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা হয়। তারা অন্যের কথা শুনে একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে একে অপরকে জানতে–বুঝতে পারে। এ ধরনের প্রশিক্ষণ পদ্ধতি শিশুদের মধ্যে প্রতিহিংসা তৈরির বদলে সহযোগিতার মনোভাব তৈরি করে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনকার দিনে শিশুদের মধ্যে পারস্পরিক সহমর্মিতাবোধ বাড়ানোর বিষয়টি আগের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। এতে পরস্পরকে নিপীড়ন করার বদলে বিশ্বকে জানার পদ্ধতিটাই বদলে যাবে। শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার পাশাপাশি পুরো জীবনে এ থেকে সুবিধা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

মানুষের জীবনে হাজারো দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হয়। সেগুলোকে সহজভাবে কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া। অর্থাত্ সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়া। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আজকাল আমরা অনেকেই তা করি না। অথচ বিপদে-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই হলো সর্বোচ্চ মানবতা।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।