জানুয়ারি ২৫, ২০২০ ১৯:৪৯ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা সহমর্মিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আজকের আসরে আমরা সুস্থ সামাজিক সম্পর্ক এবং সততা ও সত্যবাদিতা নিয়ে আলোচনা করব।

সুস্থ সামাজিক সম্পর্ক হচ্ছে সুন্দর জীবনের অপরিহার্য উপাদান। ভালো সামাজিক সম্পর্কের অনেক ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে বিশেষকরে মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। সফল ও সুস্থ সামাজিক সম্পর্কের জন্য সততার সঙ্গে নিজের মতামত, আবেগ-অনুভূতি ও প্রত্যাশা তুলে ধরা এবং প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য চাওয়ার দক্ষতা জরুরি। মোট কথা সুস্থ সামাজিক সম্পর্কের জন্য সততা ও সত্যবাদিতার বিকল্প কিছু নেই। আমিরুল মুমেনিন হজরত ইমাম আলী (আ.) বলেছেন, সত্যবাদী মানুষের জন্য মুক্তি ও মহানুভবতা অপেক্ষা করছে। আর মিথ্যাবাদীর জন্য অপেক্ষা করছে পতন ও অপমান। সব নবী-রাসূলের একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলো তারা সবাই মানুষকে সততা ও সত্যবাদিতার প্রতি আহ্বান করেছেন। সততা ও সত্যবাদিতা হচ্ছে মানুষের এমন এক মহামূল্যবান বৈশিষ্ট্য যা অন্যদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সহায়তা করে। আর এই আস্থা ও বিশ্বাস সামাজিক সুসম্পর্কের অন্যতম উপাদান।

সত্যবাদী মানুষ সবার কাছেই সম্মানিত এবং প্রশংসিত হয়। চেনা মানুষগুলো তার প্রতি আকৃষ্ট এবং শ্রদ্ধাশীল হয়। সততা মানুষের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে এবং ব্যক্তিকে অন্যদের মাঝে প্রিয় করে তুলে। জন্মগতভাবেই সততা ও সত্যবাদিতার প্রতি মানুষের ঝোক থাকে। কেউ যদি ঐশী প্রবণতা থেকে দূরে সরে না যায় এবং খারাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারে তাহলে সে কখনোই মিথ্যাবাদী হয়ে উঠবে না। এ কারণেই বলা হয়ে থাকে, সত্য কথা শুনতে চাইলে শিশুদের কাছে যাও। শিশুদের মন ও আত্মা যেহেতু পবিত্র ও কলুষতামুক্ত থাকে সে কারণে তারা জন্মগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সত্য কথা বলে। তারা মিথ্যা বলতে জানে না। তারা যা সত্য তাই বলতে জানে। কারণ মানুষের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যই হলো সত্যবাদিতা ও সত্য অনুসন্ধিৎসা। মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে ব্যক্তির মনের ভেতরের উদ্দেশ্য এবং কাজে-কর্মের মধ্যে যখন মিল থাকে তখনি সেটাকে সততা বলা হয়। সততা কেবল একটি সত্য শব্দ বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সব সময় কথা ও কাজের মধ্যে মিল থাকা জরুরি।

যাদের মধ্যে সততা নেই তারা নিজেকে এবং অন্যদেরকে সঠিকভাবে চিনতে পারে না। এ ধরনের ব্যক্তি আসলে অন্যদেরকে ধোকা দেওয়ার পাশাপাশি নিজেকেও ধোকা দেয়। সৎ ও সত্যবাদী না হলে মানুষের অন্যান্য নৈতিক গুণাবলীও লোপ পায়। অসৎ ব্যক্তির সমাজে কোনো সম্মান থাকে না। কারণ নির্লজ্জের মতো যেকোনো ধরনের কাজে লিপ্ত হতে পারে। এতে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সততার প্রথম ভিত্তি তৈরি হয় পরিবারে। পরিবার হচ্ছে মানুষের প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে একজন মানুষের শিক্ষা ও বিকাশ শুরু হয়। একটি পরিবারে নিজেদের মধ্যে সততাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় গুণ। সবার আগে বাবা-মা-ই পারেন তার কথা, কাজ ও আচার-ব্যবহারের মাধ্যমে সন্তানদের শিক্ষা দিতে। এরপর শিশুরা শিক্ষা কেন্দ্রে সততার সঙ্গে আরও বেশি পরিচিত হয়। তারা প্রতি মুহূর্তে পরিবারের অন্য সদস্য এবং চেনা মানুষদের সততা পরিমাপ করতে শেখে এবং বড়দের অনুকরণ করে। বড়রা মিথ্যা বললে পরিবারের অন্য সদস্যরাও মিথ্যা বলতে শেখে।

মনে রাখতে হবে মিথ্যাচার থেকেই নানা অপকর্মের সূত্রপাত হয়। এ কারণে মিথ্যাচারকে অপকর্মের জননী বলা হয়ে থাকে। একবার একটা মিথ্যা কথা বলে ফেললে তা প্রতিষ্ঠা করতে আরো অনেক মিথ্যা কথা বলতে হয়। যারা মিথ্যা কথা বলে তারা অন্যদেরও মিথ্যাবাদী মনে করে। ফলে সমাজে আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়। মিথ্যাবাদীরাও সত্যকে গ্রহণ করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে। মিথ্যাবাদীদের দায়িত্বজ্ঞান লোপ পায়। মিথ্যাচারের কারণে মানুষ আল্লাহর রহমত ও হেদায়েত থেকে বঞ্চিত হয়। পবিত্র কুরআনের সুরা যুমারের ৩ নম্বর আয়াতের একাংশে বলা হয়েছে, আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে হেদায়াত দান করেন না, যে মিথ্যাবাদী ও সত্য অস্বীকারকারী।

মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) সব সময় মানুষকে মিথ্যা পরিহার করে সত্যের দিকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ সামান্য মিথ্যা কথা এক সময় মানুষকে পাপ কাজের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এর পরিণতিতে জান্নাতের দরজা বন্ধ হয়ে জাহান্নাম তার পিছু নিতে পারে। আসলে মিথ্যা হচ্ছে শয়তানের অন্যতম বড় অস্ত্র। এ কারণ মিথ্যা বলা মারাত্মক গোনাহ হিসেবে গণ্য হয়।

প্রকাশ্যে ও গোপনে মানুষের কথা ও কাজে সামঞ্জস্য থাকা জরুরি। মিথ্যাচার এমন এক ধ্বংসাত্মক বৈশিষ্ট্য যার প্রভাব মানুষের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও জাতীয় জীবনেও পড়ে। যে কোনো চিন্তাশীল মানুষই এটা স্বীকার করেন যে, মিথ্যা অসৎ গুণ এবং সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট বৈশিষ্ট্য। ভালো মানুষ কখনোই মিথ্যা বলতে পারে না। একজন ভালো মানুষ সবসময় সত্য বলে। শুধু ধর্মীয় দিক থেকে নয়, সাধারণ বুদ্ধি-বিবেচনাতেও সত্যবাদিতা হচ্ছে উত্তম ও অপরিহার্য মানবীয় বৈশিষ্ট্য। অনেকেই মিথ্যাচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন যা একপর্যায়ে ব্যাধিতে রূপ নেয়। এ ধরণের মানুষ এক পর্যায়ে ঠাট্টার পাত্রে পরিণত হয়। তাদের সত্য কথাও তখন আর মানুষ বিশ্বাস করতে পারে না। পবিত্র ইসলাম ধর্মের নির্দেশ হচ্ছে মিথ্যা পরিহার করতে হবে। কখনো কখনো মিথ্যাচার সাময়িক ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার করলেও চূড়ান্তভাবে তা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি করে থাকে। এ কারণে মিথ্যাবাদীকে মিথ্যাবাদীকে সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়, কারণ মিথ্যাবাদীরা সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনাস্থার বীজ বপন করে এবং ক্রমান্বয়ে তা শৃঙ্খলা নষ্ট করে দেয়। 

সততা ও মিথ্যাচার নিয়ে আগামী আসরে আরও আলোচনার আশা রেখে এখানেই বিদায় চাইছি।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।