এপ্রিল ০৯, ২০২০ ২১:১৩ Asia/Dhaka

বন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আপনারা জানেন যে, ইরানের জলে-স্থলে, ক্ষেত-খামারে, বাগ-বাগিচায়, কল-কারখানায় উৎপাদিত হয় বিচিত্র পণ্য সামগ্রী।

এর পাশাপাশি খনি থেকেও আহরিত হয় বিভিন্ন সামগ্রী। ইরানি নরনারীদের মেধা ও মনন খাটিয়েও তৈরি করা হয় বিভিন্ন শিল্পপণ্য। গত আসরে আমরা আলোচনা করেছিলাম শোভা বৃদ্ধি করে এমন বাহারি ফুল ও উদ্ভিদ নিয়ে। বলেছি যে, ইরান এখন বছরে পঞ্চাশ কোটি ডলার সমপরিমাণের ফুল ও উদ্ভিদ রপ্তানি করছে। পাঁচ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে ইরানে।

ইরাক, আজারবাইজান, ইউক্রেন, মালদ্বীপ, বেলারুশ, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, তাজিকিস্তান, কিরঘিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কাজাখস্তান এবং রাশিয়াসহ আরও বহু দেশে ইরানি ফুল রপ্তানি হয়। যাই হোক শ্রোতাবন্ধুরা! আজকের আসরেও আমরা উদ্ভিদ নিয়েই কথা বলার চেষ্টা করবো। তবে এই উদ্ভিদ বাহারি উদ্ভিদ নয় বরং ওষুধি উদ্ভিদ। ইরানে বাহারি উদ্ভিদের পাশাপাশি বিচিত্র ভেষজ উদ্ভিদ এবং ওষুধি উদ্ভিদও রয়েছে। রয়েছে গাছ-গাছালি আর বিচিত্র ফুল ও ফল গাছের প্রচুর নার্সারি। ইরানে ফুলের প্রতি অনুরাগ যে কতো বেশি সেটা ইরানের রাস্তাঘাটে, শহর-নগর, অলিগলিতে গড়ে ওঠা অসংখ্য নার্সারি এবং ফুল বিক্রির দোকানগুলো দেখলেই বোঝা যাবে।

বৈশ্বিক পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যায় বর্তমানে সারা পৃথিবীতেই ওষুধি উদ্ভিদ যাকে হার্বাল মেডিসিন বলা হয়, তার ব্যবহার সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ব্যাপক বেড়েছে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই ভেষজ উদ্ভিদের বাণিজ্যও বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে বিশ্বের যে কতগুলো স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় সেগুলোতে যেসব ওষুধের কথা প্রচার করা হয় সেগুলোর শতকরা পঁচিশ ভাগ ওষুধেরই উৎস বা কাঁচামাল ভেষজ উদ্ভিদ। একইভাবে ওষুধ তৈরি শিল্পে এক শ বিশ রকমের ভেষজ উপাদান ব্যবহার করা হয় এবং দুই শ পঞ্চাশটিরও বেশি ওষুধ যেগুলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু'র পক্ষ থেকে মৌলিক প্রয়োজনীয় ও জরুরি ওষুধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো ভেষজ ঔষধ। সর্বোপরি বলা যায় বিশ্বব্যাপী যত ঔষধ ব্যবহার করা হচ্ছে তার এক তৃতীয়াংশই ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরি।

বিশ্বে যত ঔষধি উদ্ভিদ ব্যবহার করা হয় তার ওপর পরিচালিত পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা আশি ভাগই ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার করে। এই পরিসংখ্যান থেকে অনুমিত হয় যে দিন দিন হার্বাল মেডিসিনের প্রতি জনগণের আকর্ষণ ও নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। হার্বাল-টি মানে চা তো এখন সবাই পছন্দ করছে। হার্বাল কসমেটিকসেরও ব্যবহার একইসঙ্গে বেড়ে গেছে ব্যাপক হারে। হার্বাল শ্যাম্পু, হার্বাল ক্রিম তো এখন অহরহই ব্যবহৃত হচ্ছে। এ থেকেই ভেষজ উদ্ভিদের অর্থনৈতিক মূল্য যে অনেক তা সুস্পষ্ট হয়ে যায়।

একটি উদ্ভিদের অর্থনৈতিক মূল্যের জন্য তার ওষুধি গুণাগুণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে ওষুধি উদ্ভিদ উৎপাদন এবং রপ্তানি করার কাজটি কৃষি অর্থনীতির সবচেয়ে মুনাফাময় বিভাগগুলোর একটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যে রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক উপাদান ও প্রাকৃতিক পদার্থ ব্যবহার করা উচিত যাতে পরিবেশ দূষিত না হয়। এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ওষুধি উদ্ভিদের বহুল উৎপাদনের লক্ষ্যে ব্যাপক বিনিয়োগ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উদ্ভিদ উৎপাদন যাকে নার্সারি বলেও চিনি আমরা-এটি এখন এক প্রকার শিল্পের মর্যাদা লাভ করেছে। প্ল্যান্ট কিংবা হার্বাল কালেকশানের দিক থেকেও ইরান এখন খুবই সমৃদ্ধ একটি দেশ। কৃষিজ উদ্ভিদ, বৃক্ষ, বাহারি উদ্ভিদের বাইরে বিচিত্র ফুলগাছ, সাজানোর উদ্ভিদ এবং ওষুধি উদ্ভিদের দিক থেকেও ইরানের সমৃদ্ধি এখন বিশ্বজনীন।

ইরানে বর্তমানে আট হাজার রকমের উদ্ভিদ রয়েছে। এসবের মধ্যে অন্তত দুই হাজার প্রকারের উদ্ভিদ ওষুধি গুণবৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ। ইরান একটি বিশাল দেশ আমরা আগেই বলেছি। এই বিশাল দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন রকমের আবহাওয়া বিরাজ করে। এই আবহাওয়াগত বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্যের সুবাদেই ওষুধি উদ্ভিদ উৎপাদন ও চাষাবাদের উপযুক্ত একটি ভূমি ইরান। ইরানের অন্তত এক শ চল্লিশ হেক্টর ভূমিতে বিভিন্ন জাতের ওষুধি উদ্ভিদের চাষ হচ্ছে। এসবের মধ্যে একটি উদ্ভিদ হলো সবুজ জিরা। সবুজ জিরা একদিকে যেমন রান্নাবান্নার উপযোগী মশলা হিসেবে ব্যবহার হয় তেমনি প্রাচীনকাল থেকেই এই জিরা বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক বা ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ওষুধি এই উদ্ভিদটি সর্বপ্রথম কোথায় যে আবিষ্কৃত হয়েছে তা স্পষ্ট নয় তবে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ সবুজ জিরাকে মিশরের নীল নদের উপকূলীয় এবং ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণাঞ্চলের একটি উদ্ভিদ বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।

যে অঞ্চলেই সবুজ জিরা আবিষ্কৃত হয়ে থাকুক না কেন ইরানে এর উৎপাদনের প্রাচীনত্ব এবং বিস্তৃতির দিক থেকে বিবেচনা করে অনেকেই এই জিরা যে ইরানের মাটিতেই পূর্ণতা পেয়েছে সে ব্যাপারে মত দিয়েছেন। সবুজ জিরা পার্সলে গোত্রের একটি উদ্ভিদ। ওষুধি গুণ এবং খাদ্যমান থাকার কারণে এই জিরার অসম্ভব গুরুত্ব রয়েছে। সবুজ জিরা ব্যথানাশক, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টাল গুণ সম্পন্ন, প্রদাহ প্রতিরোধক, বায়ুরোগ প্রতিরোধকারী, অ্যান্টি স্পাজমডিক, জন্ম-নিরোধক ইত্যাদি বিচিত্র গুণাবলি সম্পন্ন। এই সবুজ জিরা অ্যানেসথেশিয়া মানে অবশ করার কাজেও ব্যভহৃত হয়। খাবার দাবার হজম প্রক্রিয়ায় দারুন কাজ করে সবুজ জিরা। আঘাতের জখম বা প্রদাহ সারাতে কিংবা পেটের সমস্যা দূর করতেও সবুজ জিরা বেশ কার্যকর।

এইসব বিচিত্র গুণের কারণে সবুজ জিরার ব্যবহার বিশ্বব্যাপী ব্যাপকতা লাভ করেছে। এ কারণে জিরার অর্থনৈতিক মূল্য অনেক বেশি। ইকোলজিক্যাল বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় আবহাওয়া ছাড়া জিরা উৎপাদন সম্ভব নয়। সে কারণে বিশ্বের সর্বত্র জিরার চাষ হয় না। ইরানে জিরা চাষের অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করার কারণে ব্যাপক চাষ হচ্ছে। বিশ্বের যত দেশে বহুল পরিমাণে জিরা চাষ হয় এবং রপ্তানি করা হয় ইরান সেসব দেশের অন্যতম। বিশ্বের অন্তত চল্লিশ ভাগ জিরা ইরানেই উৎপাদিত হয়। ইরানে এই জিরার উৎপাদন হয় দুইভাবে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ