এপ্রিল ২৬, ২০২০ ২১:০৯ Asia/Dhaka
  • জীবনশৈলী (পর্ব-২৮): পরোপকার

গত আসরে আমরা ভালো বন্ধু নির্বাচনের উপায় ও এর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, যার ভালো বন্ধুর সংখ্যা বেশি সে তত বেশি সুখী এবং তার জীবন তত বেশি সহজ। বন্ধুত্ব তাদের সঙ্গেই গড়ে তুলতে হবে যারা সৎ ও ভালো।

যাদের কথা, কাজ ও আচার-আচারণ আমাদেরকে সৎ পথে চলতে সহযোগিতা করবে। আমরা যেসব বন্ধুর সঙ্গে ওঠবস করছি তারা ভালো না খারাপ তা নির্ণয় করার সুযোগ আমাদের কাছেই রয়েছে। অত্যন্ত সহজভাবে বলা যায়, কারো সঙ্গে চলার পর যদি ভালো গুণ আমার ভেতরে আসতে থাকে,তাহলে মনে করতে হবে সে আমার ভালো বন্ধু। অন্যদিকে যদি খারাপ কিছু আসতে থাকে,তাহলে যত দ্রুত সম্ভব সেই বন্ধু ত্যাগ করে ভালো বন্ধু খুঁজে বের করে নেওয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আজকের আসরে আমরা পরোপকার নিয়ে আলোচনা করব।

পবিত্র ইসলাম ধর্মে বারবারই একে অন্যের সহযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে দাঁড়াবে, ইসলাম ধর্ম এটাই চায়। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)'র বিভিন্ন হাদিস এবং পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট, অন্যের উপকার করলে আল্লাহ খুশি হন এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া সম্ভব। নানা ভাবে অন্যের উপকার করা যেতে পারে। আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রে পরস্পরকে সহযোগিতা করা যেতে পারে।  যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো পরিস্থিতিতে তার সামর্থ্য অনুযায়ী পরোপকার করতে পারে। অনেকের ধারণা, টাকা-পয়সা দিয়েই কেবল অন্যকে সাহায্য করা যায়। কিন্তু এই ধারণা সঠিক নয়। মুখের কথা দিয়েও আপনি অন্যের উপকার করতে পারেন। ভালো বুদ্ধি দিতে পারেন। যেমন ধরুন, আপনি যদি একজন নেশাখোর বা হিরোইনচিকে এই পথ থেকে ফেরান,একটি শিশুকে তার পড়ালেখায় সহযোগিতা করেন এবং গরীব পরিবারকে অর্থসাহায্য দেন,অঙ্গদান করেন,অন্যের কষ্টের কথা শোনেন, তাহলে সেটাও অন্যের প্রতি সহযোগিতা হিসেবে গণ্য হবে।

ভালো কাজ বিশেষকরে পরোপকার করার সুযোগ পেলেই তা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করতেও কোনো দোষ নেই। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (স.) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, কারো সামনে ভালো কাজ করার সুযোগ এলে সেটাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, কারণ কেউ জানে না যে, কখন এই সুযোগ শেষ হয়ে যাবে। পরোপকার করলে অন্যরা যেমন লাভবান হন তেমনি পরোপকারী নিজেও উপকৃত হন। যিনি পরোপকার করেন তার ওপরও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, আত্মত্যাগের মানসিকতা বাড়ে। এ ধরণের সৎ কাজ গোটা মানব সমাজকেই প্রভাবিত করে এবং পরোপকারের সংস্কৃতি সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তা থেকে সবাই উপকৃত হয়। সব মানুষ একে অপরের সহযোগী হয়ে যায়। লোক দেখে বাছাই করে পরোপকার করার প্রয়োজন নেই। সুযোগ পেলেই তা করতে হবে। পবিত্র কুরআনেও এসেছে, দয়া ও পরোপকারিতা কোনো বিশেষ গোষ্ঠী ও জাতির গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মহান আল্লাহ সূরা ইমরানের ১৩৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন, তারাই সংযমী, যারা স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল অবস্থায় দান করে, যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।

আসলে যারা সব অবস্থায় পরোপকার করে তাদের অস্তিত্বের সঙ্গে তা মিশে যায়। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)'র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম বাকির (আ.) পরোপকারের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, তিনটি বৈশিষ্ট্য আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ভালো কাজ হিসেবে গণ্য হয়। এগুলো হলো, একজন মুসলমান যখন অন্য মুসলমানকে খাবার দিয়ে তার ক্ষুধা মেটায় আল্লাহ তখন ভীষণ খুশি হন। এছাড়া কেউ যখন অন্যের সমস্যার সমাধান করে এবং কারো ঋণ পরিশোধ করে তখনও আল্লাহ খুশি হন। 

এ কারণে বলা যায়, একজন মুসলমানের উচিত অন্যের উপকার করতে পারাকে আল্লাহর অনুগ্রহ বলে মনে করা এবং সে কখনো এ ক্ষেত্রে পিছপা হবে না। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত অন্যের উপকার করে আল্লাহকে খুশি করার জন্য সব সময় তৎপর থাকা। পাশাপাশি কেউ যদি অন্যের উপকার করার মতো অবস্থানে পৌঁছাতে পারে তাহলে তার উচিৎ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরকালের জন্য পাথেয় সঞ্চয় করা।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, যেসব ব্যক্তির নিজের সামর্থ্য অপর্যাপ্ত তারা কীভাবে অন্যের উপকার করবে? এর উত্তরে বলা যায়, যার যতটুকু সামর্থ্য সেটুকু উপকার করলেই তার দায়িত্ব পূর্ণ হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কম সামর্থ্যবান ব্যক্তির মধ্যেও পরোপকারিতার মানসিকতা থাকতে হবে। ইসলাম ধর্মে সামর্থ্যের বাইরে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার পক্ষে নয়। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, কেউ মুসলমানের বিপদের কথা জেনেও এগিয়ে না এলে সে প্রকৃত মুসলমান থাকেন না। ইসলামের ইতিহাসে মহান ব্যক্তিত্বরা সব সময় সব মানুষের উপকারে এগিয়ে এসেছেন, তারা শুধু মুসলমান বা ঈমানদার ব্যক্তিদের উপকার করেন নি। সব মানুষের উপকার সাধনের চেষ্টা করেছেন। মহৎ মানুষদের অনেকে এই পথে নিজেদের বিলিয়ে দিয়ে গেছেন। যারা স্বার্থপর নন তারা নিজেদের আকাশচুম্বী স্বার্থকেও তুচ্ছ মনে করে পরের জন্য নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করতে পারেন।

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, 'যদি তোমরা দান, সদকা, সাহায্য-সহযোগিতা প্রকাশ্যে করো তাও ভালো, আবার তোমরা দুস্থ, নিঃস্ব, ছিন্নমূল, এতিম, গরিব,অসহায়দের অতি সঙ্গোপনে চুপে চুপে দান করো তা আরও উত্তম।' এছাড়া আল্লাহতায়ালা আরও বলেছেন, 'তোমাদের কাছে কোনো দুর্দশাগ্রস্ত গরিব, এতিম, অসহায় ও দুস্থ মানুষ কিছু চাইলে তাকে ধমক দিয়ে ফিরিয়ে দিও না। মহানবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.)'র গোটা জীবন ছিল সমবেদনা ও মানবতার সেবায় পরিপূর্ণ। এ কারণেই মহানবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.)-কে বলা হয় মানবতার মুক্তির দূত। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর নবীর আদর্শের অনুসারীরা কখনো প্রতিবেশীকে উপোস রাখে না।  আর মনে রাখতে হবে মানবকল্যাণ এবং একে অন্যের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা ও সহানুভূতিতে রয়েছে চরম আত্মতৃপ্তি। আমাদের চারপাশে তাকালেই আমরা এমন সব মানুষকে দেখতে পাই যারা নানা ধরণের অভাব-অনটনে রয়েছেন তাদেরকে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য-সহযোগিতা আমাদের সবার দায়িত্ব।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ২৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।