মে ০৮, ২০২০ ১৪:৫০ Asia/Dhaka

বছরের যে কোনো সময়ে বিশেষ করে পবিত্র রমজানে আত্মশুদ্ধি ও আত্ম-উন্নয়নের জন্য কুরআন অধ্যয়নের পাশাপাশি হাদিস অধ্যয়ন এবং নানা ধরনের দোয়া পাঠও জরুরি। তাই আমরা বাদবাকি রমজানে বিশ্বনবীর বেশ কিছু হৃদয়-গলানো উপদেশ ও হাদিস শোনাব।

মহানবী (সা) বলেছেন, তিন শ্রেণীর লোক কিয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় থাকবে: যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য সেটাই চায় যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। যে ব্যক্তি কোনো কাজের মুখোমুখি হলে সে কাজে পা বাড়ানো বা পিছিয়ে আসার আগে খতিয়ে দেখে যে, কাজটি আল্লাহর পছন্দের নাকি অপছন্দের। আর যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ছিদ্রান্বেষণ করার আগে সেই দোষটি নিজের মধ্য থেকে সংশোধন করে নেয়। আর, যখনই সে নিজের একটি ত্রুটি সংশোধন করে নেয় তখনই নতুন আরেকটি ত্রুটি দেখতে পায়। তাই মানুষের জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবে।

মহানবী আরও বলেছেন, পুণ্যের দরজা তিনটি: মনের উদারতা, মিষ্ট ভাষা, আর কষ্ট ও উৎপাতে ধৈর্যধারণ।

বিশ্বনবী (সা.) আরো বলেছেন, তাওরাতে চারটি কথার পাশে আর চারটি বাণী রয়েছে : যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রতি মোহগ্রস্ত হয় সে আল্লাহর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি তার ওপর নেমে-আসা বিপদের জন্য অভিযোগ করে সে আল্লাহর বিরুদ্ধেই নালিশ করে। যে ব্যক্তি কোনো ধনাঢ্যের কাছে এসে নিজেকে হীন করে তার এক-তৃতীয়াংশ ঈমান বিনষ্ট হয়ে যায়। আর এ উম্মতের মধ্যে দোযখে যাবে সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে উপহাস ও খেলনার পাত্র বানাবে।

মহানবীর হাদিসে বলা হয়েছে: চারটি জিনিসের পাশে চারটি জিনিস থাকে : যে রাজা হয়, সে স্বেচ্ছাচারিতা করে, যে পরামর্শ করে না অনুতপ্ত হয়, যেমন আচরণ করবে তেমনই আচরণ পাবে, আর ধর্মীয় জ্ঞান ও ঈমানের অভাব হলো বড় মৃত্যু।

বিশ্বনবী (সা) আরও বলেছেন, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চোখই কাঁদতে থাকবে কেবল তিনটি চোখ ছাড়া: যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় বিনিদ্র রাত কাটায়, যে চোখ আল্লাহর নিষিদ্ধ হারাম থেকে অবনত থাকে, আর যে চোখ আল্লাহর ভয়ে অশ্রু ঝরায়। ধন্য সেই মুখমণ্ডল যার দিকে আল্লাহ্ তাকিয়ে দেখেন যে, এমন পাপের জন্য সে ক্রন্দনরত যে সম্পর্কে আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ খবর রাখে না।

বিশ্বনবী (সা.) আরো বলেছেন, তিনটি জিনিস ধ্বংসকারী। আর তিনটি বিষয় পরিত্রাণ দানকারী : ধ্বংসকারী তিনটি হলো: রিপুর কামনা যার অনুসরণ করা হয়, কৃপণতা যা মেনে চলা হয় আর মানুষের আত্ম-পূজা। অন্যদিকে পরিত্রাণ দানকারী তিনটি বিষয় হলো: সন্তুষ্টি ও ক্রোধের মধ্যে ন্যায়পরায়ণ থাকা, সামর্থ্য ও অভাবের মধ্যে মিতচারী হওয়া, আর গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় করে চলা যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর যদি তুমি না দেখতে পাও, তিনি তোমাকে দেখছেন।

পবিত্র রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ জনাব মুহাম্মাদ মুনির হুসাইন খান  বলেছেন: 

মহানবী ( সাঃ ) বলেছেনঃ রমযানের মাসের প্রথম ভাগ ( প্রথম দশ দিন )  হচ্ছে রহমত ( দয়া ও কৃপা ), মধ্যভাগ ( দ্বিতীয়  দশ দিন ) হচ্ছে মাগফিরাত ( ক্ষমা ) এবং তৃতীয় বা শেষ ভাগ ( শেষের দশ দিন ) হচ্ছে দোযখের আগুণ থেকে মুক্তি।

আগামীকাল ১৫ রমজান বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র বড় নাতি হযরত ইমাম হাসান মুজতবা (আ.)'র পবিত্র জন্ম-বার্ষিকী। মুসলিম বিশ্বের যোগ্য ইমাম হিসেবে তাঁকে গড়ে তুলেছিলেন স্বয়ং বিশ্বনবী (সা.), আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.) ও হযরত ফাতিমা জাহরা (সালামুল্লাহি আলাইহা)। তাঁর জন্ম হয়েছিল মদীনায় হিজরি তৃতীয় সনে ও মুয়াবিয়ার ষড়যন্ত্রে তিনি শহীদ হন হিজরি ৫০ সনে। তিনি সমাহিত হন মদীনার জান্নাতুল বাকিতে।

মহানবী (সা.) প্রিয় এই নাতিকে কোলে নিয়ে আদর করা ছাড়াও তাঁর সঙ্গে খেলতেন। একবার তিনি এই নাতির জন্য আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করে বলছিলেন: হে আল্লাহ! আমি হাসানকে ভালবাসি, তাই আপনিও তাদের ভালবাসুন যারা হাসানকে ভালবাসে।

 

মহানবী (সা) আরো বলেছেন, যারাই হাসান ও হুসাইনকে ভালবাসে আমিও তাদের ভালবাসি, আর আমি যাদের ভালবাসি আল্লাহও তাদের ভালবাসেন, আর আল্লাহ যাদের ভালবাসেন তাদের বেহেশত দান করবেন এবং যারা হাসান ও হুসাইনের সঙ্গে শত্রুতা রাখে তাদেরকে আমিও আমার শত্রু মনে করি, ফলে আল্লাহও তাদের শত্রু হন, আর আল্লাহ তার শত্রুকে জাহান্নামে পাঠাবেন। 

মহানবী (সা.) আরো বলেছেন: হাসান ও হুসাইন বেহেশতি যুবকদের সর্দার। এরা দু' জন আমারই সন্তান। তিনি আরো বলেছেন: হাসান ও হুসাইন-দু'জনই মুসলমানদের ইমাম বা নেতা, তা তাঁরা তাগুতি শক্তির বিরুদ্ধে বিপ্লব করুক বা নাই করুক কিংবা ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক।

সমর্থকদের নিষ্ক্রিয়তা ও আদর্শিক বিচ্যুতিসহ নানা দিক থেকে পরিস্থিতি অত্যন্ত প্রতিকূল থাকায় ইমাম হাসান মুজতবা (আ.) মুয়াবিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ, ইমামের প্রধান সেনাপতিসহ অনেকেই ভেতরে ভেতরে মুয়াবিয়ার কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এ সময় তিনি মুয়াবিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ অব্যাহত রাখলে ইসলাম পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত এবং সুযোগ-সন্ধানী রোমানরা বায়তুল মোকাদ্দাস দখল করে নিত। এ ছাড়াও এ চুক্তির ফলে মুয়াবিয়ার প্রকৃত চেহারা জনগণের কাছে তুলে ধরা সহজ হয়েছিল।

ইমাম হাসান (আ) কয়েক বার তাঁর সম্পদ পুরোপুরি এবং কয়েকবার সম্পদের অর্ধাংশ দান করেছেন দরিদ্রদের জন্য। তিনি অন্তত ২৫ বার পায়ে হেঁটে হজ করেছেন।

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/ ১৪

ট্যাগ