মে ১০, ২০২০ ১২:৩০ Asia/Dhaka

মানুষের পূর্ণতা ও উন্নতির পথে একটি বড় বাধা হল অহংকার ও নিজেকে বড় ভাবা। বেশিরভাগ সাধারণ মুসলমানের একটি বড় মানসিক রোগ বা ব্যাধি হল এই আত্মপ্রীতি ও অহংকার।

নবী-রাসুলদের আগমন, তাঁদের নসিহত ও ধৈর্যধারণ, ধর্মগ্রন্থগুলো নাজিল হওয়া, নামাজ-রোজা ও হজসহ সব ইবাদত, সত্য ও মিথ্যার লড়াই এবং ন্যায়বিচার ও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ আরও বহু কার্যক্রমের উদ্দেশ্যই হল মানুষকে অহংকার থেকে মুক্ত করা। পৃথিবীর ইতিহাসের অনেক বড় বড় যুদ্ধের কারণ ছিল অহংকার। আধুনিক যুগেও হিটলারের অহংকারের পরিণতি ছিল একটি বিশ্বযুদ্ধ ও কোটি কোটি মানুষের প্রাণনাশ। মার্কিন শাসকগোষ্ঠীর শক্তিমত্তার অহংকারের কারণে অ্যাটম বোমার আঘাতে জাপানের নিরপরাধ লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ভিয়েতনামসহ আরও বহু দেশের লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়েছে একই কারণে। এখনও দেশে দেশে মানুষের প্রাণনাশ করা হচ্ছে মার্কিন অহংকারের কারণে।

ইহুদিদের অহংকারের কারণে শহীদ হয়েছেন শত শত নবী এবং বর্তমান যুগেও ইহুদিবাদীদের হাতে নিহত হয়েছেন লাখ লাখ আরব মুসলমান ও বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি বিতাড়িত হয়েছেন মাতৃভূমি থেকে। ইহুদিবাদী ইসরাইলসহ দাম্ভিক শক্তিগুলোর দম্ভ আর অহংকারের কারণে প্রাণ হারাচ্ছে ইয়েমেন, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, পাকিস্তান, কাশ্মির ও মিয়ানমারের লাখ লাখ মানুষ।

অহংকারের রয়েছে বহু শাখা-প্রশাখা। এ হচ্ছে এমন এক রোগ যার ফলে মানুষ নিজের সব কিছুকে সুন্দর ও যথাযথ বা নির্ভুল বলে মনে করে ও নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড় ভাবে। নিজের মত ও অভিরুচির বাইরের বক্তব্য যত সত্য এবং সঠিকই হোক না কেন অহংকারে মদমত্ত ব্যক্তিদের মন তা মানে না। ফলে তারা খুব সহজেই সেসব সত্য আর বাস্তবতাকে নাকচ করে দেয়। 

ইফতার সামগ্রী

যারা ধর্মকর্মে অভ্যস্ত তাদের মধ্যেও এমন অহংকার দেখা দেয় যে এর ফলে তারা অন্যদের ছোট মনে করেন আর নিজেদেরকে বড় ও বেশি পবিত্র মনে করেন!  কয়েক দিন রাত জেগে নামাজ পড়ার কারণে কিংবা শবে কদরে রাত জেগে ইবাদত করার কারণে মনে এমন ভাব জাগে যে পরের দিন বাইরে এসে মানুষদের দেখে মনে মনে বলেন যে: এদের অনেকেইতো কাল রাতে আমাদের মত ইবাদত করেনি বা মসজিদেও আসেনি! – এই যে অহংকার এটাই মানুষের পূর্ণতার পথে বড় বাধা। কেবল সাধারণ মানুষ নয়, এমনকি অনেক বড় বড় সাধক বা দরবেশও অহংকারের শিকার হতে পারেন! বংশ-গৌরব, খ্যাতি আর সম্পদের গৌরব, বড় বড় ডিগ্রি আর পদাধিকারী হওয়ার অহংকার- এসবই মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথে বড় বাধা।

শক্তিমত্তা, সুস্বাস্থ্য, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, জ্ঞান-বুদ্ধি ও বাহ্যিক রূপ বা সৌন্দর্যের অহংকার থেকে শুরু করে সব ধরনের অহংকার দূর করার জন্য সব সময় এটা মনে রাখতে হবে যে এসব কিছু থাকা সত্ত্বেও আমরা সবাই আল্লাহর দরবারে নিঃস্ব ফকির মাত্র। আমাদের কাছে যা কিছু আছে – তার সবই মহান আল্লাহর করুণা বা দান ও ক্ষণস্থায়ী সম্পদ এবং পরীক্ষার মাধ্যম মাত্র! প্রত্যেক নবী-রাসুল অতি সাধারণ পেশার কাজ করেছেন। যেমন, পশুপালন ও শ্রমিকের কাজ করা! কিন্তু হযরত সুলায়মান (আ) বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী ও বড় রাজ্যের অধিপতি হওয়ার পরও মহান আল্লাহর দরবারে একজন নিঃস্ব ও অসহায় দরিদ্রের মতই মুনাজাত করতেন। নবী-রাসুলরা সবচেয়ে বড় মর্যাদার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও দরিদ্র ফকিরদের সঙ্গে বসে খাবার খেতে দ্বিধা বোধ করতেন না!

পবিত্র রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ জনাব মুহাম্মাদ মুনির হুসাইন খান বলেছেন: "যে ব্যক্তি মাহে রমযানে রোযা রাখে অতঃপর নিজ লজ্জাস্থান ও জিহ্বাকে হেফাজত করে ও সংযত রাখে মহান আল্লাহ তার সকল পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহ মাফ করে দেবেন, তাকে দোযখ থেকে মুক্ত করে চিরস্থায়ী আবাসস্থল অর্থাৎ বেহেশতে স্থান দেবেন এবং তৌহীদে বিশ্বাসীদের পাহাড় – পর্বতের সমান (অগণিত) গুনাহ ও পাপ ক্ষমা করে দেয়ার জন্য তার শাফায়াতও কবুল করবেন।" 

আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রে মহানবীর হাদিসের ব্যাপক গুরুত্বের আলোকে এবারে কয়েকটি হাদিস শোনাব। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর সবচেয়ে প্রিয় উত্তরাধিকারী আলী (আ.)-কে বলেছেন:   হে আলী! নিশ্চয় মুমিনের চি‎হ্ন তিনটি: রোযা, নামায ও যাকাত। আর আত্মকেন্দ্রিক মানুষের চি‎‎হ্ন তিনটি: সামনে তোষামোদি, পেছনে বদনাম আর বিপদে গালি-গালাজ করা। অত্যাচারীর চি‎হ্ন তিনটি: অধীনকে দমন, ঊর্ধ্বতনকে অমান্য, আর অত্যাচারীদের সাথে আঁতাত করা। নিজেকে জাহিরকারীর চি‎হ্ন তিনটি: লোকজনের সামনে তৎপরতা দেখানো, একাকী থাকলে আলসেমি করা আর সবাই তার কাজে বাহবা দিক সেটাই পছন্দ করে।

মুনাফিকের চি‎হ্ন তিনটি: কারো কথা বর্ণনার সময় মিথ্যারোপ করা, আমানত রাখা হলে তার খেয়ানত করা ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করা।

রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে আরো বলেছেন,  হে আলী! নিশ্চয় মূর্খতার চেয়ে কোনো দারিদ্র্য নেই, বিচক্ষণতার চেয়ে ফলদায়ক সম্পদ নেই, স্বার্থপরতার চেয়ে ভয়ঙ্কর কোনো একাকিত্ব নেই, পরামর্শের চেয়ে ভালো কোনো সহযোগিতা নেই, চিন্তা করার ন্যায় কোনো বুদ্ধিবৃত্তি নেই, সচ্চরিত্রের ন্যায় কোনো বংশ মর্যাদা নেই। নিশ্চয় কথার রোগ হলো মিথ্যা, জ্ঞানের রোগ হলো বিস্মৃতি, আর দানের রোগ হলো করুণার গর্ব তথা বলে বেড়ানো ও খোঁটা দেয়া।

হে আলী! যখন আয়নায় তাকাবে তখন তিনবার তাকবীর দিয়ে বলবে : আল্লাহুম্মা কামা হাসসানতানি খল্কি ফা হাসসিন খুলকি। অর্থ : হে আল্লাহ্! আমার সৃষ্টিকে যেমন সুন্দর করেছেন সেভাবে আমার চরিত্রকেও সুন্দর করুন। -মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এসব হাদিসের আলোকে জীবন গড়ার সুযোগ দিন। 

 এবারে  অর্থসহ ১৬ তম রোজার দোয়া:

الیوم السّادس عشر : اَللّـهُمَّ وَفِّقْنی فیهِ لِمُوافَقَةِ الاَْبْرارِ، وَجَنِّبْنی فیهِ مُرافَقَةَ الاَْشْرارِ، وَآوِنی فیهِ بِرَحْمَتِکَ اِلى دارِ الْقَـرارِ، بِاِلهِیَّتِکَ یا اِلـهَ الْعالَمینَ .

হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে তোমার সৎবান্দাদের সাহচর্য লাভের তৌফিক দাও। আমাকে মন্দ লোকদের সাথে বন্ধুত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখো। তোমার খোদায়ীত্বের শপথ করে বলছি, আমাকে তোমার রহমতের বেহেশতে স্থান দাও। হে জগতসমূহের প্রতিপালক। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/মো.আবুসাঈদ/১৬

ট্যাগ