জুলাই ১৭, ২০২০ ১৫:০২ Asia/Dhaka

বিশাল একটি দেশ ইরান। এ দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য,পুরাতত্ত্ব আর সংস্কৃতির বিচিত্র সমৃদ্ধ উপাদান। গত আসরে আমরা ইরানের নামকরা প্রদেশ ইস্ফাহানে গিয়েছিলাম।

ইস্ফাহান প্রদেশের কেন্দ্রীয় শহরের নাম ইস্ফাহান। ইস্ফাহানকে বলা হয় 'নেসফে জাহান' মানে অর্ধ বিশ্ব। আবার ইস্ফাহান শহরকে বলা হয় মোজে হামিশে জেন্দেয়ে ইরান। এর অর্থ হলো অমর যাদুঘর। সুতরাং বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে এই শহরে রয়েছে ঐতিহাসিক বহু নিদর্শন এবং প্রাণবন্ত ও মনোরম দৃশ্যাবলী। হাখামানেশিদের সময় ইস্ফাহান শহরে ছিল শাসকদের রাজকীয় বাসভবন। বিভিন্ন শহরের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্টও ছিল ইস্ফাহান শহর।

বিশেষ করে এই দুই কারণে ইস্ফাহান শহরের গুরুত্ব ছিল ব্যাপক। এই গুরুত্বের কথা বিবেচনা করেই হয়তো গ্রিক ভূগোলবিদ স্ট্রাবন ইস্ফাহান শহরকে ইরানের কেন্দ্রীয় শহর বলে উল্লেখ করেছিলেন। ভৌগোলিক দিক থেকেও কেন্দ্রে অবস্থানের কারণে এবং প্রাচীনকালের ব্যবসায়ী কাফেলার চলাচলের মহাসড়কের মাঝে অবস্থানের কারণে ইস্ফাহান বেশ কয়েক যুগ ধরে প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে মর্যাদার আসনে ছিল। এ কারণেই এই শহরে গড়ে উঠেছে ইতিহাসের বিভিন্ন যুগের গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান বহু নিদর্শন। বলা বাহুল্য ইস্ফাহান শহরটি যেন শিল্প-সংস্কৃতি আর ঐতিহাসিক নিদর্শনের যাদুঘরে পরিণত হয়েছে। তাই ইরানের সুন্দরতম, বিখ্যাত এবং পর্যটক আকর্ষণীয় শহর ইস্ফাহান। তাই ইরানের বিভিন্ন এলাকার লোকজন যেমন এই শহর দেখতে আসে তেমনি বিদেশি বহু পর্যটকও সারা বছর ধরেই ভ্রমণ করতে আসে এই শহরে।

গত আসরে আপনাদের কথা দিয়েছিলাম যে ইস্ফাহানের ঐতিহাসিক বিভিন্ন নিদর্শনের সঙ্গে আমরা আজকের আসরে পরিচিত হবার চেষ্টা করবো। আপনারা জানেন যে এই শহরটি ইসলামি সভ্যতার লালনভূমি এবং ইসলামি সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তাই ইসলামি সাংস্কৃতিক রাজধানীতে দেশি বিদেশি পর্যটকরা যে বেড়াতে আসবে-তাতে আর আশ্চর্য হবার কী আছে। বছরে কয়েক মিলিয়ন পর্যটক ইস্ফাহান ভ্রমণে আসে। তবে বেশিরভাগ পর্যটক সাধারণত বসন্ত ঋতুতে এবং ইরানের বিশেষ উৎসব নওরোজের সময় বেড়াতে আসে এখানে। কী আছে এই শহরে? এই কৌতূহলী প্রশ্নটি সবার মনেই উঁকিঝুঁকি মারবে-এটাই স্বাভাবিক।

 

হ্যাঁ! বন্ধুরা! এই শহরে রয়েছে ঐতিহাসিক বহু স্থাপত্য নিদর্শন। বিশেষ করে ইসলামি যুগের সুন্দর সুন্দর অনেক স্থাপনায় ভরপুর এই শহর। শহরে রয়েছে সুন্দর সুন্দর অনেক মহাসড়ক। রয়েছে অসংখ্য ব্রিজ। ছাউনিযুক্ত এসব ব্রিজের সৌন্দর্য একেবারেই অন্যরকম আকর্ষণীয়। প্রাচীন শানস আমলের অসংখ্য প্রাসাদ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে অবাক করা স্থাপত্য কাঠামোর অনেক মসজিদও। এসব মসজিদের স্থাপত্যশৈলীর অনন্য বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি কোনো কোনো মিনার আজও দর্শকদের চেহারায় বিস্ময় রেখা টেনে দেয়। এতোসব অসাধারণ এবং ব্যতিক্রমধর্মী স্থাপনার কারণেই ইস্ফাহান ইরানের সাংস্কৃতিক অভিধানে নেসফে জাহানমানে অর্ধবিশ্ব নামে পরিচিত।

দেখার তো আছে কতকিছু। কিন্তু শুরু করা যায় কোত্থেকে। সেই ভালো ইমাম স্কোয়ার থেকেই শুরু করা যাক। ইমাম স্কোয়ারের আরেক নাম হলো নাকশে জাহান। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে অনেক আগে। স্কোয়ারটি দৈর্ঘ্যে পাঁচ শ মিটার আর প্রস্থে এক শ পঁয়ষট্টি মিটার। স্কোয়ারের চারপাশ জুড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য স্থাপনা। স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগই সাফাভি যুগের। স্কোয়ারের মাঝখানে রয়েছে একটি হাউজ। বেশ বড়সড়ো ওই হাউজের মাঝখানে রয়েছে একটি ফোয়ারা। ফোয়ারাটি দেখার মতো আকর্ষণীয়। সেই শাহ আব্বাস সাফাভি শাসনামলের এই স্কোয়ারটি দেখলে এখনও মনে হবে কদিন আগেই মনে হয় বানানো হয়েছে। বেশ আধুনিক এবং ত্বকত্বকে ঝকঝকে। প্রাচীনকালে এই স্কোয়ারটিকে চোগান খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। চোগান হলো আধুনিক পোলো খেলা। পোলোকে পৃথিবীর প্রাচীনতম খেলা বলে ধরে নেয়া হয়। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব দু হাজার বছর আগে পোলো খেলা প্রচলিত হয় ইরানে। পোলো খেলা মাঠে খেলতে হয়। ঘোড়ার পিঠে চড়ে একটা লাঠি আর বল দিয়ে পোলো খেলতে হয়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এটি একটি রাজকীয় খেলা। কেননা এটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ কারণেই এটাকে রাজকীয় বা রাজপুত্রদের খেলাও বলে। ইমাম স্কোয়ারের উত্তর এবং দক্ষিণ প্রান্তে এখনও পোলো খেলার গেইটের বিমগুলো দেখতে পাওয়া যায়। স্কোয়ারের চারপাশ জুড়ে যেসব ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে সেগুলোর মাঝে আলিকাপু প্রাসাদ, ইমাম মসজিদ বা শাহ মসজিদ, শেখ লুৎফুল্লাহ মসজিদ ইত্যাদি স্থাপনা স্কোয়ারের সৌন্দর্যের পাশাপাশি ঐতিহাসিক মূল্যও বাড়িয়ে দিয়েছে। এগুলোর বাইরেও স্কোয়ারের সঙ্গে দোতলা মার্কেট বানানো হয়েছে যেখানে দুই শ দোকান রয়েছে। এই দোকানগুলো সাধারণ দোকান নয়। এগুলোতে বিক্রি যেমন হয় তেমনি প্রদর্শনীও হয়। ইস্ফাহানের সমৃদ্ধ হস্তশিল্পই বিক্রি হয় এসব দোকানে।

ফার্সি ভাষায় এগুলোকে বলে হুজরা। সাধারণ দোকানকে ফার্সিতে মাগাজেহ কিংবা সুপার বলা হয়। মিনিয়েচার শিল্প, কাষ্ঠখোদাই শিল্প থেকে শুরু সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কারুকাজের বিচিত্র শিল্প আপনার সামনে বসেই শিল্পীরা তৈরি করবে। আপনার যত কৌতূহল সব কৌতূহলের জবাব দেবে তারা হাসিমুখে। ইমাম স্কোয়ার বা নাকশে জাহান নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা। এই স্কোয়ারের অনেকগুলো প্রবেশপথ আছে। স্কোয়ারের চারপাশেই চারটি বাজার আছে। এসব মার্কেট এমনভাবে বানানো হয়েছে যে যে কেউ চাইলে এইসব দোকানের ভেতর দিয়ে স্কোয়ারে প্রবেশ করতে পারবে। সাফাভি শাসনামলে এই বাজারগুলো একেকটি একেক পেশার জিনিসের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। বর্তমানে স্কোয়ারের পশ্চিম পাশের বাজারটিতে তামা শিল্পের জিনিসপত্র বিক্রি হয় আর উত্তর পাশের বাজারে বিক্রি হয় কার্পেট বা কার্পেট জাতীয় অন্যান্য সামগ্রী।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ