জুলাই ১৭, ২০২০ ১৫:৩৭ Asia/Dhaka

মানুষের অস্তিত্ব গড়ে উঠেছে দেহ ও মনের সমন্বয়ে। মানুষের দেহ যেমন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তেমনি তার মনেরও ক্লান্তি রয়েছে। একঘেয়ে জীবন দেহ ও মন উভয়কেই ক্লান্তির সাগরে নিমজ্জিত করে।

নতুনত্ব ও বৈচিত্রের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বা টান এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা, এটি মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য।  জীবনযাত্রার তাল লয়ে যখন কোনো বৈচিত্র থাকে না তখন তা মানুষকে বিষন্নতা ও হতাশায় ভোগায়। নানা গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে, সব সময় একই ধরণের কাজের মধ্যে ডুবে থাকলে একটা পর্যায়ে ওই কাজে একঘেয়েমি চলে আসে। আর এ ধরণের একঘেয়েমি কাজের গতি কমিয়ে দেয়। এ কারণে কাজের পাশাপাশি সুস্থ বিনোদন জরুরি। সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা থাকলে কাজের মান ও গতি বাড়ে। মানুষের একঘেয়ে জীবনে বড় ধরণের পরিবর্তন আনতে সুস্থ বিনোদনের বিকল্প নেই। প্রথমেই দেখা যাক সুস্থ বিনোদন সম্পর্কে পবিত্র ইসলাম ধর্ম কী ধরণের দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

ইসলাম ধর্মে সুস্থ বিনোদনের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কারণ পবিত্র ইসলাম ধর্মের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হচ্ছে ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি। বিনোদন হলো এই শান্তি বা আনন্দের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বা উপকরণ। ইসলাম ধর্ম নিষ্পাপ আনন্দ উপভোগকে সব সময়ই উৎসাহিত করেছে। এছাড়া হতাশা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। আর জীবনে আনন্দ ও শান্তি না থাকলে হতাশা জেকে বসে এবং কর্ম উদ্দীপনা কমে যায়। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (স.) নিজে সুস্থ বিনোদনের প্রায় সব উপায়-উপকরণ উপভোগ করেছেন। মানবতার আদর্শ হজরত মুহাম্মাদ (সা.) নিজে কুস্তি লড়েছেন। তৎকালীন আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ বীরকে তিনি তিন-তিনবার হারিয়েছেন। মদিনায় যুবকদের শারীরিক কসরত তিনি পর্যবেক্ষণ করতেন। আমিরুল মুমিনিন হজরত আলী (আ.) সবাইকে বিনোদন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ঈমানদারেরা জীবনযাত্রায় সময়কে তিন ভাগে ভাগ করে। একটি অংশ সে আধ্যাত্মিকতা চর্চা ও পালনকর্তার কাছে মোনাজাতের জন্য ব্যয় করে। দ্বিতীয় অংশ জীবিকা অর্জনের জন্য কাজে লাগায় এবং অপর অংশ হালাল পথে আনন্দ উপভোগের জন্য ব্যবহার করে।

আসলে বিনোদন জীবনের অন্য সব পরিকল্পনা ও কাজকে সঠিক ও সুচারুভাবে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। ইসলাম ধর্মে সুস্থ বিনোদনকে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, কোনো কোনো বর্ণনায় সুস্থ বিনোদনকে জীবিকা অর্জনের প্রয়োজনীতার সমপর্যায়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ধর্মীয় দায়িত্ব সুন্দর ও সুচারুভাবে পালনের প্রস্তুতি হিসেবেও সুস্থ বিনোদন জরুরি। তবে সব মানুষ একই ধরণের বিনোদন পছন্দ করে না। এ ক্ষেত্রে বয়সেরও একটা প্রভাব রয়েছে। মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার দৃষ্টিভঙ্গী ও চাহিদায় পরিবর্তন দেখা দেয়। বয়স ও চাহিদার ভিত্তিতে বিনোদনের ধরণে পরিবর্তন আসে। যেমন, আমরা শিশুকালে ছোট্ট একটা বল নিয়ে খেলতে খেলতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়ে দিতাম, এমনও হয়েছে হাতে বানানো কয়েকটা পুতুল নিয়ে অর্ধবেলা ব্যস্ত থাকতাম, কল্পনার জগতে কখনো নিজেই পুতুলগুলোর মা অথবা বাবা সেজে বসতাম, ঘুম পাড়াতাম, ঘুম থেকে উঠাতাম, খাবার দিতাম, চুলগুলো চিরুনি দিয়ে আচড়ে দিতাম।

একটা ফুটবল হাতে নিয়ে কল্পনার জগতে সুপারস্টারের স্থানে বসে যেতাম, নিজেকে সেরা ফুটবলার ভাবতে শুরু করতাম এবং ফুটবলে আমার প্রতিটি আঘাতের পর কল্পনার জগত থেকে অসংখ্য দর্শক ও শ্রোতার হাততালি ও চিৎকার ভেসে আসত। এভাবে নিজের ভেতরটা মহা আনন্দ ও তৃপ্তিতে ভরে যেত। এসবই ছিল শিশুকালের বিনোদন। কিন্তু বয়স বাড়ার পর ব্যক্তির কাছে এগুলো আর আনন্দের মাধ্যম হিসেবে থাকে না্ তার চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আসার সঙ্গে সঙ্গে বিনোদনেও পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়ে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কল্পনার জগতের পরিসর ছোট হয়ে আসতে শুরু করে এবং আনন্দের জায়গায় পরিবর্তন আসে। অনেকে শিহরন জাগানো ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলোতে আনন্দ পেতে শুরু করে। যাইহোক,  জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে নানা ধরণের সুস্থ বিনোদন চর্চা করা যেতে পারে। বিনা খরচাতেও মানুষ চমৎকার বিনোদন পেতে পারে। যেমন ধরুন, প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য একা অথবা পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে হেটে বেড়ানো আপনার জন্য আনন্দের উৎস হতে পারে।  এ ক্ষেত্রে কোনো ধরণের অর্থ ব্যয়ের দরকার হয় না। তবে সবার কাছে হেটে বেড়ানো আন্দনদায়ক নাও হতে পারে।

এছাড়া, ঘরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো, বিভিন্ন ধরণের খেলা ও প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া, নতুন কিছু শেখা, পছন্দের বই পড়া, প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরে বেড়ানো, পার্কে বসে গল্প করা, নতুন নতুন এলাকা ঘুরে দেখা, ভালো ও শালীন ফিল্ম ও নাটক দেখাও সুস্থ বিনোদন। যাইহোক দেহ ও মনের সুস্থতা হলো মানুষের জীবনকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম শর্ত। ইসলামসম্মত পন্থার বিনোদন মানুষকে ইবাদত, সার্বিক কাজকর্মে আরও বেশি উৎসাহী ও উদ্যমী করে তোলে। ইসলাম ধর্ম ওই সব বিনোদনকে বৈধতা দেয়,যা মানুষের শারীরিক ও মানসিক উন্নতি সাধানে সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং মানুষকে সামাজিক মূল্যবোধসম্পন্ন উদার ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলে। সুস্থ বিনোদন চর্চার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে চিন্তাভাবনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসে এবং নানা ধরণের অশুভ ও আশালীন কাজের প্রবণতা দূর হয়। দৈহিক ও আত্মিক সজীবতা আনে বিনোদন। মনোবিজ্ঞানীরাও মানুষের সুস্থতার জন্য আনন্দ ও চিত্ত বিনোদনকে খুবই গুরুত্ব দেন। 

বিনোদন যদি ইসলাম-নির্দেশিত নীতিমালার পরিপন্থি হয় তাহলে তা পরিহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, গোটা জীবনটাই আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহা নিয়ামত। বিনোদন সুস্থ ধারার না হলে তা সময় ও স্বাস্থ্যের অপচয়ের কারণ হয়। মানুষের জীবনে সময়ের মূল্য অপরিসীম। মানবজাতির উত্থান ও পতন, সফলতা ব্যর্থতা ও উন্নতি-অগ্রগতির সবকিছুরই প্রধান উপলক্ষ হিসেবে কাজ করে সময়। সময়ের সুষ্ঠু ব্যবহারে সফলতা অনিবার্য। এ জন্যে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সময়ের কসম করেছেন। এর মধ্য দিয়েও সময়ের ব্যাপক গুরুত্ব ফুটে উঠেছে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ