জুলাই ১৮, ২০২০ ১৯:৫৪ Asia/Dhaka
  • ইরানের পণ্যসামগ্রী: দন্ত্য চিকিৎসায় ইরানের উন্নয়ন ও অগ্রগতি

ইরানের জলে-স্থলে, ক্ষেত-খামারে, বাগ-বাগিচায়, কল-কারখানায় উৎপাদিত হয় বিচিত্র পণ্য সামগ্রী। এর পাশাপাশি খনি থেকেও আহরিত হয় বিভিন্ন সামগ্রী। ইরানি নরনারীদের মেধা ও মনন খাটিয়েও তৈরি করা হয় বিভিন্ন শিল্পপণ্য।

গত আসরে আমরা বলেছিলাম সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বেই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি বন্ধ্যাত্বের চিকিত্সার জন্য ইরানের কয়েকটি মেডিক্যাল সেন্টার ব্যাপক সুপরিচিত।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার জন্য যত রকমের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে প্রায় সকল পদ্ধতিই ইরানে সফলভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। বন্ধ্যাত্ব বিদ্যা এবং এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও কারিগরি সকল সুবিধাই রয়েছে ইরানে। সম্প্রতি আমেরিকা, ইতালি, সুইডেন, জার্মানিসহ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে বহু বন্ধ্যা দম্পতি ইরানে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর কারণ হলো ইরানে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থার পাশাপাশি বিদেশি রোগীদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সেবা যত্নের আয়োজন করা। যাই হোক, কেবল চক্ষু চিকিৎসা আর বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসাই নয় বরং দন্ত্য চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ইরান এখন বেশ অগ্রসর। ইরানের স্বাস্থ্য পর্যটন ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আয় হচ্ছে এই দন্ত্য চিকিৎসায়। আমরা স্বাস্থ্য পর্যটন বিষয়ক আলোচনার ধারাবাহিকতায় আজ এই দন্ত্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে ইরানের উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো।

এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ যে সারাজীবনে অন্তত একবারের জন্য হলেও দন্ত্য চিকিৎসকের চেম্বারে যায় নি। তবে যারাই দন্ত্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন তাদেরকে স্মৃতিচারণ করতে বললে বেশিরভাগ রোগীর গল্পই মোটেও সুখকর হবে না। দীর্ঘকাল ধরেই দাঁত ও মুখের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা করাতে দন্ত্য চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার বিষয়টি ছিল বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ মানুষেরই একটা দু:স্বপ্নের মতো। দাঁতের অবস্থা যতই খারাপ হোক না কেন ভয়ে কেউই দন্ত্য চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁতের চিকিৎসা বা মেরামত করতো না। দন্ত্য চিকিৎসাকে এরকমই একটা ভীতিকর চিকিৎসা বলে মনে করতো। মূলত দাঁত এবং মুখের সুস্থতাকে একজন মানুষের সুস্থতার মূল লক্ষণ বলে মনে করা হয়।

দন্ত্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে সম্প্রতি উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের কারণে খুব সহজেই এখন মুখ ও দাঁতের অনেক জটিল চিকিৎসা করা হচ্ছে। দন্ত্য চিকিৎসার ভুবনে এসব নয়া প্রযুক্তির আবির্ভাবের ফলে আগে যারা দাঁত ও মুখের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করাতে ভয় পেতেন তারাও এখন সহজেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। কেননা প্রযুক্তি দাঁতের এইসব চিকিৎসা পদ্ধতিকে ব্যথা, যন্ত্রণা ও কষ্টমুক্ত করে তোলার মধ্য দিয়ে রোগীদের অনেকটাই মানসিক ও আত্মিক প্রশান্তি দিতে সক্ষম হয়েছে। নয়া প্রযুক্তি এমনকি দাঁতের চিকিৎসায় ডেন্টিস্টদের চিকিৎসা পদ্ধতিও পাল্টে দিয়েছে। দাঁত ও মুখের চিকিৎসা সারা বিশ্বেই ব্যয়বহুল। দাঁতের রোগ কিংবা মুখের যে-কোনো রোগ সরাসরি, পেট, কিডনি, হার্টসহ মানবদেহের আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ওপর প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ দাঁতের ইনফেকশন বা প্রদাহ এবং শরীরের সকল অঙ্গের ওপর ওই প্রদাহের প্রভাবের বিষয়টি উল্লেখ করা যেতে পারে। দাঁতের প্রদাহ দ্রুতই ছড়িয়ে পড়তে পারে দেহের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।

দাঁতের প্রদাহ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ভয়াবহতা নিয়ে বলছিলাম আমরা। এই প্রদাহের কারণে অনেক সময় শ্বাস-প্রশ্বাসেও ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়। এমনকি রোগীকে কোনো হাসপাতালের আইসিইউ'তে পর্যন্ত ভর্তি করার প্রয়োজন হতে পারে। দাঁতের প্রদাহের কারণে অনেক সময় ব্রেন টিউমারও হতে পারে এমনকি মেনিনজাইটিসেরও আশঙ্কার কথা বলেছেন অনেক চিকিৎসক। সুতরাং দাঁতের যে-কোনো ছোট খাটো রোগকেও গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দ্রুত তার চিকিৎসা করাতে হবে। এখন যে প্রশ্নটি সামনে এসে দাঁড়ায় তা হলো মুখ এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বলতে বোঝায়টা কী? আগেকার দিনে মনে করা হতো দাঁতের সুস্থতা বলতে বোঝায় দাঁতের কোনো অসুখ না থাকা।কিন্তু আজকাল সমাজে এবং জনগণের চিন্তা-চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক সূক্ষ্ম পরিবর্তন এসেছে। মানুষের জীবনযাপনের গুণগত মান বিচারে দাঁতের সুস্থতাকে এখন বিচিত্র দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হয়। এইসব উপাদান মানুষের মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক ও ফিজিওলজিক্যাল বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে।

দন্ত্য চিকিৎসা বিষয়ক বিশ্ব সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ ডেন্টিস্ট্রি বা এফডিআই 2020 সালের জন্য রূপকল্প গঠনের ক্ষেত্রে,মুখের স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং যত্ন নেওয়াকে একটি মৌলিক মানবাধিকার বলে মনে করে। এই রূপকল্প অনুযায়ী নিঃসন্দেহে মুখের স্বাস্থ্যের অন্যতম মূল উপাদান হিসেবে রোগ,রোগের অবস্থা,অগ্রগতি এবং শেষ পর্যন্ত ব্যথা এবং অস্বস্তির বিষয়টি বিবেচ্য। এই মুখের স্বাভাবিক কার্যক্রমের বিষয়টির ওপরও নজর দিতে হবে। সেটা হলো মানবদেহের এই অংশটি মানে মুখের আসল কাজ কথা বলা, হাসা, চিবানো ইত্যাদি। সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে দেহের এই অঙ্গটি যেন কোনোরকম ব্যথা, জড়তা কিংবা লজ্জার মতো অনুভূতির মুখোমুখি না হয় সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।

ডেন্টাল ট্যুরিজম কিংবা ডেন্টাল ভ্যাকেশন মেডিক্যাল ট্যুরিজমেরই একটি অংশ। ডেন্টাল ট্যুরিজমে পর্যটকরা সাশ্রয়ী অথচ উন্নতমানের দন্ত্য চিকিৎসার লক্ষ্যে সফর করে থাকেন। বিশ্বমানের চিকিৎসাটা খুব স্বল্প খরচে পাবার কারণে দন্ত্য পর্যটকরা খুবই উৎসাহিত বোধ করেন। আজকাল সারা বিশ্বেই বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে দন্ত্যচিকিৎসা পর্যটনের বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। তবে কোনো কোনো উন্নয়নশীল দেশেও চিকিৎসার গুণগত মান নিশ্চিত করার কারণে সেসব দেশেও ডেন্টাল ট্যুরিজম বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। দাঁতের রোগীরা কেন যায় অন্যদেশ ভ্রমণে? জবাব হলো নিজ দেশের চিকিৎসা ব্যয়ের তুলনায় স্বল্প খরচে চিকিৎসার সুযোগ নিতে। সুতরাং যেসব দেশে চিকিৎসার গুণগত মান ভালো এবং চিকিৎসা ব্যয়ও কম সেসব দেশের মধ্যে ইরান অন্যতম। এ কারণেই ইরানে দন্ত্য পর্যটকের আনাগোণা চোখে পড়ার মতো।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।