আগস্ট ০৩, ২০২০ ১৬:৪৭ Asia/Dhaka

জীবনশৈলীর আজকের আসরে আমরা নতুন একটি বিষয়ে আলোচনার চেষ্টা করব। আর তাহলো ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগত। বিশ্বের প্রতিটি মানুষের ওপরই কোনো না কোনোভাবে এই জগতের প্রভাব রয়েছে।

ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগতের প্রভাবে মানুষের জীবনব্যবস্থাই অনেকটা পাল্টে যাচ্ছে। জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার জরুরি। আজকের আসরে আমরা এর নানা দিক নিয়েই কথা বলার চেষ্টা করব।

ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরতার কারণে মানুষের আচার-আচরণেও পরিবর্তন আসছে। এ পরিবর্তন কখনো ইতিবাচক কখনো আবার নেতিবাচক। সাধারণ জ্ঞান অর্জন যেমন সহজ হয়েছে তেমনি সহজে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পথও খুলে গেছে। যোগাযোগ হয়ে পড়ছে যন্ত্রকেন্দ্রিক। বলা হয়ে থাকে, অনেকেই একসঙ্গে বসবাস করলেও তথ্য আদান-প্রদান করেন যন্ত্রের মাধ্যমে। এর ফলে মাধ্যমবিহীন যোগাযোগ ও সম্পর্ক ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। ভার্চুয়াল জগতের একটি আকর্ষণীয় দিক হলো, এখানে বাস্তবিক অর্থে কোনো বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা করতে হয় না। প্রয়োজনে নিজের পরিচয় গোপন রেখেই সব কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। কোনো প্রতিষ্ঠান বা সরকার নির্দিষ্ট কোনো সীমাবদ্ধতা আরোপ করলেও বিকল্প প্রযুক্তির মাধ্যমে তা এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব হয় এ জগতে। তবে বাস্তবতা হলো, ভার্চুয়াল জগতে একজন ব্যবহারকারী যে স্বাধীনতা ভোগ করেন তা আসলে প্রকৃত কোনো স্বাধীনতা নয়। এর মধ্যদিয়ে একজন ইউজার কেবল মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে স্বস্তি লাভ করতে সক্ষম হন।   

বর্তমানে পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যম হয়ে উঠেছে ভার্চুয়াল জগত। এ কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বড়দের অভিজ্ঞতা ও নির্দেশনা অনেকের কাছেই আগের মতো গুরুত্ব পাচ্ছে না। আবেগের বশবর্তী হয়ে সঙ্গী নির্বাচনের প্রবনতাও দিনদিন বেড়ে চলেছে। বিশেষকরে স্বামী বা স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ও সামাজিক দিকগুলো বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। অনভিজ্ঞ তরুণ-তরুণীরা জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়ায় তালাক বা বিচ্ছেদের মতো ঘটনা অনেক বেড়েছে। ইন্টারনেটভিত্তিক কথোপকথন কখনোই পারিবারিক বৈঠকগুলোর বিকল্প হতে পারে না। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভালোবাসা ও আকর্ষণ হচ্ছে পবিত্র। এই ভালোবাসা ও আকর্ষণের ভিত্তিতেই পারিবারিক সুখ নিশ্চিত হতে পারে।

ভার্চুয়াল জগতের প্রতি অতি আকর্ষণ ও অতি নির্ভরতার কারণে মানুষের জীবনে নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষকরে তরুণ-তরুণীদের এই জগতের মাধ্যমে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একটি পরিবারের অভিভাবকরা অর্থাৎ বাবা-মা উভয়ই যখন চাকরিজীবী হন তখন তারা সন্তানদেরকে বেশি সময় দেন না বা চাইলেও দিতে পারেন না। এ অবস্থায় সন্তানেরা একাকিত্বে ভোগে। তারা সময় কাটাতে ভার্চুয়াল জগতের আশ্রয় নেয়। ইন্টারনেটে ঢুকে নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাঙ্খিত বন্ধু-বান্ধবীর খোঁজ করতে থাকে। বড়দের পরামর্শ ছাড়াই এ ধরনের জগতে প্রবেশ করার কারণে কখনো কখনো বড় ধরনের ধোঁকা খায় তারা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যুক্ত হওয়া এখন এতোটাই সহজ যে, সব বয়সের মানুষই সেখানে তৎপরতা চালাতে পারে। এ অবস্থায় পরিবারের অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরি।

বাবা-মা'র উচিত সন্তানদের জন্য কিছু সময় ব্যয় করা যাতে তারা একাকিত্ব অনুভব না করে। বর্তমান যুগের ব্যস্ত জীবন পদ্ধতিতে বাবা-মায়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে ভুলটি করেন তাহলো, তারা সন্তানকে সব কিছুই দেন শুধু সময় ছাড়া। বাবা-মা সন্তানের জন্য বাড়ি-গাড়ি কেনেন, ভালো স্কুলে ভর্তি করেন, ভালো খাবার ও পোশাক দেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে যে সময় কাটানো দরকার, তাদেরকে যে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেয়া দরকার সে কথা ভুলে যান। সন্তানেরা স্কুল-কলেজে গিয়ে কী করছে, তার বন্ধু কে অথবা ইন্টারনেটে সে কাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলছে সেসব তথ্য বাবা-মায়েরা অনেক সময়ই জানেন না। এর ফলে বাবা-মায়ের অজান্তেই অনেক দুর্ঘটনা ঘটে যায়। এ ধরনের প্রবণতা বিশ্বের সব দেশেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, সংসারে নানা ঝামেলার কারণে পরিবারের তরুণ-তরুণীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি অতিমাত্রায় ঝোঁকে পড়ছেন। সাংসারিক সমস্যার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই কৃত্রিম সুখের সন্ধান করেন অনেক মানুষ। এ অবস্থায় কেউ কেউ সুস্থ্ বিনোদনের সন্ধান করতে গিয়ে বিপথে চলে যান। স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটানোর চেয়ে তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কাটানো বেশি আকর্ষনীয় মনে হয়। এরপর তা এক ধরনের নেশায় পরিণত হয়। ফলে সাংসারিক যে ঝামেলা সহজেই মিটে যেতে পারতা তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও জটিল হয়ে পড়ে। তবে মনে রাখতে হবে, ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম আমাদের জন্য নানা সুযোগ এবং সম্ভাবনাও তৈরি করেছে।

আমরা কীভাবে, কী উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার করছি তার ওপর নির্ভর করে আমরা এই জগত থেকে উপকৃত হবো নাকি বিপদগ্রস্ত হবো। বাস্তবতা হলো, ভার্চুয়াল জগতকে এড়িয়ে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কাজেই এ জগতকে মেনে নিয়ে সচেতনভাবে তা ব্যবহার করতে হবে, ভার্চুয়াল জগত ব্যবস্থাপনায় সময় দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সত্যিই আমার জন্য প্রয়োজনীয় কিনা তা প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে। আমি কি সত্যিই সেই মাধ্যম থেকে উপকৃত হচ্ছি নাকি শুধুই সময়ের অপচয় হচ্ছে তা স্পষ্ট হতে হবে। ভার্চুয়াল জগত বা ইন্টারনেটের সঙ্গে যাদের  কাজের সম্পর্ক তাদের কথা আলাদা। কিন্তু অনেকেই আছেন প্রতিদিনই একটা সময় অপব্যয় করছেন এই জগতের পেছনে। জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে ভার্চুয়াল জগতকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। এ বিষয়ে আগামী আসরে আরও আলোচনার আশা রেখে আজকের মতো এখানেই বিদায় চাইছি।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ০৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ