অক্টোবর ০৭, ২০২০ ১৭:১০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা বলেছি ইরানের কৃষিপণ্যের মধ্যে আনারও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। আনার বা ডালিমের উৎপাদন এবং এর প্রকারভেদ নিয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করেছি আমরা।

বিশেষ করে ডালিম গাছের ফুল সম্পর্কে বলেছিলাম যে সাধারণত ডালিমের রঙের মতোই দেখতে এই গাছের ফুল। তবে লাল রঙ ছাড়াও আরও দুই রঙের ফুল দেখতে পাওয়া যায়।

গোলাপি রঙ এবং কমলা রঙ। গাছে ফুলগুলোকে দুইভাবে দেখতে পাওয়া যায়। কখনো একেবারে পৃথক পৃথকভাবে একটা একটা ফুল আবার কখনো বেশ কয়েকটি ফুল একসাথে। আবার আনারের স্বাদেও রয়েছে বৈচিত্র্য। হালকা টক, হালকা মিষ্টি মেশানো টক এই দুই স্বাদের আনার রয়েছে। ডালিম ফল কৃষি খাতের অন্যতম উদ্যানজাত একটি পণ্য। ডালিমের ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে যে, এই ফলটি ইরানে অন্তত চার হাজার বছর আগে থেকে চাষ হয়ে আসছে। গবেষকদের বিশেষ করে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের বেশিরভাগই মনে করেন ডালিম গাছের আদি নিবাস হলো ইরান। যাই হোক গত আসরের আলোচনার ধারাবাহিকতায় কৃষিপণ্য বা ফলফলাদির অন্তর্ভুক্ত আনার বা ডালিম নিয়ে আজকের আসরও শুরু করার চেষ্টা করবো।

ডালিম ফল রং এবং সাইজের দিক থেকেও বিভিন্ন প্রকারের রয়েছে। তবে এই রং কিংবা আকারগত বৈচিত্র্যের কারণে এর বৈশিষ্ট্য ও গুণে কোনো পরিবর্তন হয় না-সব আনারেরই ওষুধি গুণাগুণ অভিন্ন রকমের। খ্রিষ্টিয় দশম কিংবা একাদশ শতকের ইরানের কালজয়ী চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও দার্শনিক বিশিষ্ট মনীষী বু আলি সিনা বা ইবনে সিনা বলেছেন: মিষ্টি হোক কিংবা টকই হোক আনার যেন এক প্রজাতির চেয়ে অপর প্রজাতি অনেক বেশি মজার এবং পছন্দের। তিনি আরও বিশ্বাস করতেন যে, আনার বা ডালিম ফলের প্রতিটি অংশেরই আলাদা আলাদা ওষুধি গুণ রয়েছে। ডালিম এবং ডালিমের যৌগের বৈশিষ্ট্যের ওপর প্রচুর গবেষণা হয়েছে। এইসব গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে ডালিম বহু রোগের প্রতিরোধ ও চিকিত্সায় বেশ উপকারী। এছাড়াও ডালিমের খোসা, গাছের শেকড়, ফুল এবং ডালিমের বীজ-সবকিছুর ওষুধি গুণ থাকার কারণে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে এগুলো ব্যবহৃত হয়।

বলছিলাম এ পর্যন্ত আনারের ওষুধি গুণ নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে। গবেষণার ফলাফল হলো এই ফলটি রোগ প্রতিরোধ করা এবং রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। ট্র্যাডিশনাল চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকদের বিশ্বাস অনুযায়ী আনার ফলের ব্যাপক উপকারিতা এবং গুণের কারণে এটি হলো প্রাণদায়ী একটি মহৌষধ।কেননা এই ফলটিতে রয়েছে ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-১ এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এর বাইরেও রয়েছে ভিটামিন বি-৯ এবং আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম,পটাসিয়াম, ফসফরাস এবং সোডিয়ামের মতো খনিজ পদার্থও। আনার রক্ত পরিষ্কারে সাহায্য করে। লিভারকে শক্তিশালী করে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। আনার অ্যাজমার মতো শ্বাসকষ্টের রোগের জন্যও ভালো কাজ করে। বুকের ব্যথাসহ অতিরিক্ত কাশি উপশমে খুবই উপকারী এই ডালিম। হৃদরোগে যারা কষ্ট পাচ্ছেন তাদেরকে বেশি বেশি আনার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকগণ।

আনারের উপকারিতা নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা।ডালিম অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস এবং স্ট্রোক প্রতিরোধে কার্যকর। ডালিম হেমাটোপোইটিক, ওরাল আলসার প্রতিরোধক,অ্যান্টি-ডায়রিয়াল এবং অ্যান্টি-প্যারাসিটিক বা পরজীবী প্রতিরোধে খুবই কার্যকর। ইরানের ট্র্যাডিশনাল চিকিৎসায় এই আনার পিত্তথলির সমস্যা দূর করতে এবং কিডনিকে শক্তিশালী ও অধিক ক্রিয়াশীল করতে সাহায্য করে। এই আনারে রয়েছে অ্যান্টি ইউরিয়া এবং কোলেস্টেরল প্রতিরোধক গুণাগুণ।উচ্চ রক্তচাপ,প্রস্টেট ক্যান্সার,আলঝাইমারস,বার্ধক্য এবং স্থূলতা রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আনারের কার্যকর ভূমিকা পরীক্ষিত। ডালিমের বীজে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকার কারণে হজমের জন্য এটি খুবই ভালো। শরীরে বর্জ্যের পরিমাণ কমিয়ে দেয়ার কারণে কোলন ক্যান্সারের মতো ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার মতো সমস্যাও প্রতিরোধ করে আনার। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উচ্চ গুণমানের কারণে জীবাণু এবং ভাইরাসের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডালিমের জুড়ি মেলা ভার।

হাঁড়কে নরম করার রোগ রিকিটস্রোগ এবং স্নায়ুর দুর্বলতার চিকিত্সা করতে ডালিম বেশ কার্যকর। হতাশা, বিষন্নতা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করার ক্ষেত্রেও ডালিম খুব উপকারী। ডালিম খেলে মানুষের ভেতরে এক ধরনের উৎফুল্ল ভাব ও উদ্দীপণা তৈরি হয়। আনারের রঙ খুব সহজে পরিষ্কার হয় না মানে উঠে যায় না। এ কারণে প্রাচীনকালে আনারের শাখা, শেকড়, ফুল, পাতা, আনারের খোসা ইত্যাদিকে চামড়া শিল্পে, সূতা রং করতে, পশম কিংবা কাপড় রঙীন করতে ব্যবহার করা হত।আজও  আনারের খোসা ট্র্যাডিশনাল কালার তৈরির ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়। আনারের রসও প্রাকৃতিক রঙ হিসেবে ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।আনার দিয়ে বিচিত্র খাদ্যপণ্য থৈরি হয়। আনারের বিচি থেকে তৈরি তেল শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।

ইরানি পণ্য সামগ্রি আসরে আবারও স্বাগত আপনাদের। ইরানে এখন বছরে এক মিলিয়ন মানে দশ লাখ টন আনার উৎপাদিত হয়। উৎপাদনের পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে ইরান প্রথম স্থানে রয়েছে। রপ্তানিও হয় সারা বিশ্বে। ইরানের বিভিন্ন প্রদেশে সাত শ'রও বেশি প্রকারের আনার উৎপাদিত হয়। স্বল্প পরিসর আসরে কোন কোন এলাকায় কোন কোন ধরনের আনার পাওয়া যায় এবং সেগুলোর গুণগত বৈশিষ্ট্য কী তা বলা গেল না। তবে যেসব দেশে ইরানের আনার রপ্তানি করা হয় সেসব দেশের সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা তুলে ধরা অসমীচীন হবে না। ইরানের আনার হল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যঅন্ড, সুইডেন, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরাক এবং পারস্য উপসাগরীয় দেশ কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের আরও বহু দেশে রপ্তানি হচ্ছে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ