ইরানের পণ্যসামগ্রী: বহু রকমের আঙুর রয়েছে ইরানে
গত আসরে আমরা বলেছিলাম ইরানের কৃষিপণ্যের মধ্যে বাগ-বাগিচাপণ্য আঙুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। সমগ্র বিশ্বেই ইরানের বাগানজাত বিচিত্র ফলফলাদি গুণ ও মানের দিক থেকে বেশ সমাদৃতি পেয়েছে। বিগত কয়েক দশকে ইরানে গ্রিন হাউজ প্রোডাকশন ব্যাপক হারে বেড়েছে।
শাকসব্জি যেমন শসা, টমেটো, বেগুণ, বরবটি, জুসিনি লাউসহ আরও বহু রকমের শাক সব্জির উৎপাদন বৃদ্ধির পরিমাণ চোখে পড়ার মতো। এইসব কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ইরানও। ইরানের উদ্যানজাত পণ্যের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে অপর একটি বৈশিষ্ট্য হলো বছরের বেশিরভাগ মওসুমে এসব পণ্য উত্পাদন করা যায়। ইরানে সাইত্রিশ মিলিয়ন হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। বিশ্বব্যাপী যে তেরটি আবহাওয়া মণ্ডল রয়েছে তার মধ্যে এগারো রকমের আবহাওয়া রয়েছে ইরানে। সে কারণে বিভিন্ন ধরণের উদ্যানজাত পণ্য উত্পাদন করার ক্ষমতা রাখে ইরান। ইরানের প্রায় সকল প্রদেশেই বাগানের কাজ অন্যতম একটি স্বীকৃত পেশা। ইরানের শতকরা পঞ্চাশ ভাগেরও বেশি বাগ-বাগিচা কেরমান প্রদেশ, ফার্স প্রদেশ, খোরাসানে রাজাভি প্রদেশ, পশ্চিম এবং পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশ, মজান্দারন ও কাজভিন প্রদেশে অবস্থিত।
ইরানে উদ্যানজাত পণ্য উৎপাদনের সুব্যবস্থা থাকায় এবং উৎপাদিত পণ্য বিক্রির বাজার দেশের আশেপাশেই থাকার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এই বাগিচা পণ্য উৎপাদন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে ইতালির কয়েকটি কোম্পানি এবং ইরানের মধ্যকার সহযোগিতামূলক কনসোর্টিয়ামের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। টেক্সকো সমঝোতা ইরানের সাথে ইতালির কয়েকটি সংস্থা বা কোম্পানির প্রযুক্তি হস্তান্তর সম্পর্কিত একটি চুক্তি। এইসব প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে চাষাবাদ, আচ্ছাদন, ফলন, গ্রেডিং, ফল ও শাকসব্জির প্যাকেজিংসহ আরও অনেক টেকনোলজি। ইরানের ফার্স প্রদেশ, খুজিস্তান প্রদেশ, লোরেস্তান এবং কুর্দিস্তানের মতো আরও কয়েকটি প্রদেশের মধ্যে ওইসব প্রযুক্তি হস্তান্তর সম্পর্কিত টেক্সকো চুক্তিটি হয়েছিল।

আবহাওয়াগত বৈচিত্র্যের পাশাপাশি বাগিচায় উৎপন্ন পণ্যের বৈচিত্র্য এবং শাকসব্জি উৎপাদনের রকমারি বাহুল্য যেমন রয়েছে ইরানে তেমনি এইসব পণ্য দেশের বাইরে রপ্তানি করার ব্যবস্থাপনাও রয়েছে হাতের নাগালেই। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় সমুদ্র বন্দরগুলোর সুবিধা থাকায় এবং সেখানে উৎপন্ন মালামাল পৌঁছানোর সুব্যবস্থা থাকায় দ্রুত পণ্যগুলোকে বাইরের দেশের বাজারে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। বাইরের দেশ বলতে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো, মধ্য এশিয়ার দেশগুলো এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর বাজারের কথাই বলা হচ্ছে। টেক্সকো চুক্তির আওতায় এ কারণেই বন্দরের নিকটবর্তী প্রদেশগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গত আসরে আঙুরের কথা বলেছিলাম মানে শুনিয়েছিলাম কিন্তু বেশি দূর অগ্রসর হওয়ার মতো সময় ছিল না হাতে। এবারে তাই আঙুর নিয়ে কথা বলার ইচ্ছে রইলো। আঙুর চেনেন না এমন তো কেউ আছেন বলে মনে হয় না। বেশ সুস্বাদু, রসালো, সুমিষ্ট এক জাতের থোকা থোকা ফল আঙুর। অর্থনৈতিক মূল্য বিচারে যেমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল আঙুর তেমনি খাদ্য পুষ্টিমানের দিক থেকেও আঙুরের অবস্থান শীর্ষস্থানীয়। আঙুর একেবারে তাজা তাজা গাছ থেকে পেড়ে যেমন খাওয়া যায় তেমনি আঙুরকে শুকিয়ে কিশমিশ বানিয়েও খাওয়া যায়। আঙুরের ব্যবহার বিচিত্র। কনসেনট্রেইট করে, ফার্মেন্টেড করে, জ্যাম বানিয়েও আঙুর খাওয়া এবং সরবরাহ করার ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রেইফ সিড অয়েলও বিশ্বব্যাপী খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য।
সুতরাং আঙুরের অর্থনৈতিক মূল্য যে কত বেশি তা বোধ হয় সহজেই অনুমান করা যায়। এছাড়াও অন্যান্য পণ্য যেমন ইথানল এবং অ্যান্থোসায়ানিনও আঙ্গুর থেকেই তৈরি হয় যেগুলো বিভিন্ন শিল্প কল-কারখানায় ব্যবহৃত হয়। ইরানে আঙুর চাষের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বলা হয়ে থাকে যে খ্রিষ্টপূর্ব দুই হাজার বছর আগে থেকে ইরানে আঙুরের চাষ হয়ে আসছে। তার মানে ইরানের জনগণ বহু আগে থেকেই আঙুর চাষ এবং উৎপাদনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিত। সে কারণেই লক্ষ্য করা যায় বর্তমানে ইরানের প্রায় সর্বত্রই আঙুরের চাষ হচ্ছে। ঠাণ্ডামণ্ডলীয় এলাকায় যেমন আঙুরের উৎপাদন হচ্ছে তেমনি উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকা এমনকি মরু অঞ্চলের পাশেও যেমন ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতেও বিভিন্ন জাতের আঙুরের চাষ হচ্ছে। ইরানের অন্তত তিন লাখ হেক্টর জমিতে এখন আঙুরের চাষ হচ্ছে। বহু রকমের আঙুর রয়েছে ইরানে।
বিরতির আগে বলছিলাম যে বহু রকমের আঙুর রয়েছে ইরানে। ফার্সি ভাষায় এগুলোর কয়েকটি জাতের নাম এরকম: আসগারি আঙুর, বি দনে মানে বিচিহীন আঙুর, শাহানি, কেশমেশি, সাহেবি, ফাখরি, লায়াল হোসাইনি, মারা’গেয়ি, ইয়াকুতি, শনি এবং শাহরুদি আঙুর। ইরানের খোরাসান, কাজভিন, পূর্ব আজারবাইজান এবং পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের মতো আরও অনেক প্রদেশ আঙুর উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আঙুরের পুষ্টিগুণ অসাধারণ। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, বি, এবং এ। আঙুরে রয়েছে খনিজ পদার্থ ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফসফরাস। প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় আঙুর শরীরের দুর্বলতা রোধে সাহায্য করে এবং স্নায়ুবিক রোগের জন্য আঙুর খুবই উপযোগী। হার্ট, ফুসফুস এবং কিডনিকে সুস্থ সবল রাখতে আঙুর খুব ভালো কাজ করে। মজার ব্যাপার হলো আঙুর স্থূল স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী তেমনি স্বাস্থ্যহীনতার ক্ষেত্রেও সমানভাবে কার্যকর। নির্ভর করে ব্যবহারের ওপর। আঙুর যদি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অন্য কোনো খাদ্য না খেয়ে খাওয়া হয় তাহলে স্থূল স্বাস্থ্য কমতে শুরু করবে। আবার আঙুর যদি অন্য কোনো খাবারের সঙ্গে খাওয়া হয় তাহলে স্বাস্থ্য বাড়তে থাকবে।
শুকনো আঙুরের নাম কিশমিশ। ইরান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কিশমিশ রপ্তানি করছে। #
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ২২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।