নভেম্বর ০৩, ২০২০ ২৩:৩০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা বলেছিলাম ইরানের কৃষিপণ্যের মধ্যে বাগ-বাগিচাপণ্য আপেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। সমগ্র বিশ্বেই ইরানের বাগানজাত বিচিত্র ফলফলাদি গুণ ও মানের দিক থেকে বেশ সমাদৃতি পেয়েছে।

গত আসরে আমরা আপেল নিয়ে কথা বলেছিলাম। যারা চিন্তাভাবনামূলক মানে গবেষণা কিংবা ব্রেন ওয়ার্ক করেন এবং যাদের কাজে গভীর মনোযোগ প্রয়োজন পড়ে তাদের জন্যও কোনোভাবেই আপেল খাওয়া ভুলে যাওয়া উচিত নয়। আপেল মস্তিষ্কে ফসফরাসের একটি ভাল উত্স। আপেল খুব শক্তিশালী বিষ পরিষ্কারক একটি  ফল।  বেহেশতি এই ফলটি প্রশান্তিকর এবং মানসিক চাপ ও উদ্বেগ থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়। সুতরাং আপেল বেশি বেশি খাওয়া উচিত। সে কারণে আপেলের চাহিদা বিশ্বব্যাপী। তাই আপেল একটি বাণিজ্যিক পণ্য হয়ে উঠেছে সারাবিশ্বে। ইরানের যেসব প্রদেশে আপেল উৎপাদিত হয় সেসব প্রদেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: পূর্ব ও পশ্চিম আজারবাইজান, তেহরান, ফার্স, ইস্ফাহান, খোরাসানে রাজাভি, হামেদান, চহর মাহলে বাখতিয়রিসহ আরও অনেক প্রদেশ।পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশেই আপেল বাগানের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আজ আমরা কথার চেষ্টা করবো ইরানের চেরি ফল নিয়ে।

আসলে ইরানকে বলা চলে ফলের বেহেশত। ফলের জন্য ইরানের মাটি খুবই উপযোগী। উর্বর মাটির কারণে তাই ইরানে বিচিত্র ফল উৎপাদিত হয়। ফরাসি পর্যটক জন শারদেন ইরান ভ্রমণ করার পর যে ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন তাতে ইরানের ফলের বৈচিত্র্যের কথা উল্লেখ করেছেন। বিশেষ করে রকমারি খরবুজা, শসা, আঙুর, যার্দালু, আনার, অঅপেল, নাশপাতি, মাল্টা, আলু বোখারা, ডুমুর, বিচিত্র বাদাম, আখরোট, পেস্তা, অলিভসহ আরও বহু ফলফলাদির কথা উল্লেখ করতে ভোলেন নি। আরও লিখেছেন: ইউরোপে যেসব ফল পাওয়া যায় সেগুলো ইরানেও পাওয়া যায়। কিন্তু ইরানের ফলগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সুস্বাদু। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞগণ ইরানের ভৌগোলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করেছেন।

আবহাওয়াগত দিক থেকে ফলের উপযোগী ভূমণ্ডলে ইরানের অবস্থানের কারণে এখানে বিচিত্র ফল উৎপন্ন হয়। এখানে গরম এলাকা যেমন রয়েছে তেমি রয়েছে ঠাণ্ডা এলাকা। আবার নাতিশীতোষ্ণ, মরু এবং পার্বত্য এলাকাও রয়েছে। সুতরাং সকল আবহাওয়ার ফলই ইরানে রয়েছে। অর্ধ উষ্ণ এলাকায় বিভিন্ন জাতের খোরমা যেমন পাওয়া যায় এখানে তেমনি ঈষৎ ঠাণ্ডা বা নাতিশীতোষ্ণ এলাকার অ্যাপ্রিকট জাতীয় ফলও পাওয়া যায় প্রচুর। ইরান চার ঋতুর দেশ। প্রত্যেক ঋতুতেই আলাতা আলাদা জাতের ফল হয় এখানে। মাল্টার কথা বলেছিলাম। এই ফলটি ইরানের উত্তরাঞ্চলে যখন উৎপাদিত হয় একই সময়ে ইরানের দক্সিণাঞ্চলে তখন উৎপাদিত হয় তরমুজ বা তরমুজ গোত্রের বহু ফল। ফলের দোকানগুলোতে একসময় এই দুটি ফল একসঙ্গে দেখতে পাওয়া যায়।

কৃষিপণ্য উৎপাদনের বৈচিত্রের দিক থেকে বিশ্বে ইরানের অবস্থান চতুর্থ পর্যায়ে। শুধু ফল উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে ইরানের অবস্থান অষ্টম স্থানে রয়েছে। ইরানের একেকটি শহর একেকটি ফলের জন্য বিখ্যাত। যদিও প্রত্যেক শহরেই কমবেশি প্রায় সব ফলই জন্মে তবু একেক শহর বিশেষ কোনো একটি ফলের জন্য খ্যাতিমান। যেমন কেউ যদি আনার কিনে তাহলে সে খোঁজে স’ভের আনার। কারণ আনারের জন্য এই শহরটির বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। নাশপাতি কিনতে গেলে নাতাঞ্জের নাশপাতিই খুঁজবে। তরমুজের জন্য বিখ্যাত শহর হলো মিনাব। তবে ফলের দেশ ইরানের প্রায় সকল শহরেই কমবেশি যে ফলটি পাওয়া যায় সেটি হলো চেরি। সুঘ্রাণ, সুদর্শন এবং সুস্বাদু এই ফলটি পছন্দ করে না এমন ভোজনরসিক মনে হয় কমই আছে। ইরানের এই ফলটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে সমাদৃত।

বলছিলাম চেরির জন্য নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়াই বেশি উপযোগী। চেরি গাছ কিন্তু খুব বড় হয় না। এর শাখাগুলো লাল থেকে কফি বা খয়েরি রঙের কাছাকাছি। চেরি গাছে কাঁটা হয় না। সবুজ রঙের পাতা হয়। চেরি গাছ বিশ থেকে ত্রিশ বছর পর্যন্ত বাঁচে। চেরি তো দেখেছেন আপনারা। ছোট্ট একটি বিচি থাকে ভেতরে বাকি পুরোটাই ফল। অন্তত চার রঙের চেরি দেখতে পাওয়া যায়-লাল, কালো, হলুদ এবং গোলাপি। বসন্ত ঋতুর ফল এই চেরি। চেরিতে ভিটামিন এ, সি, কার্বোহাইড্রেট, ফলিক এসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, পটাশিয়াম, মেনজাইমসহ আরও বহু খনিজ উপাদান রয়েছে। সুতরাং চেরিতে যে বহু রকমের উপকার রয়েছে তা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না। ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে চেরির বাগান প্রচুর দেখতে পাওয়া যায়। এই প্রাচুর্যের কারণে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশকে বলা হয় ইরানের চেরির রাজধানী।

চেরি উৎপাদনের দিকে বিশ্বে ইরানের অবস্থান তৃতীয় শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। পূর্ব আজারবাইজান ছাড়াও মাশহাদে পাওয়া যায় কালো চেরি, লাভাসনত এলাকায় পাওয়া যায় গোলাপি চেরি। হজ ইউসেফি, আর্দেবিল প্রদেশের মাহন শহর এবং মেশকিন শাহরেও পাওয়া যায় চেরি। রাশিয়াসহ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোতে ইরানের চেরি প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হয়। চেরি তো কাঁচা খাওয়া হয় সাধারণত তবে আজকাল কেক বানাতে কিংবা বিভিন্ন জাতের মিষ্টি বানাতেও চেরির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। চেরি ফলটিকে বেশিদিন খোলা রাখা যায় না। কম সময়ের মধ্যে চেরি শেষ হয়ে যায়। তাই চেরিকে মোরব্বা বানিয়ে, জেল বানিয়ে, কনসার্ট করে ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে সংরক্ষণ করা হয়। চেরির স্কোয়াশও বেশ প্রচলিত। বিশেষ উপায়ে ক্যানেও সংরক্ষণের প্রচলন রয়েছে আজকাল। সাপাক সিস্টেমেও খাদ্যপণ্য বিশেষ করে চেরি সংরক্ষণের কথা উল্লেখযোগ্য। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।