নভেম্বর ০৭, ২০২০ ২০:০০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা বলেছিলাম ইরানের কৃষিপণ্যের মধ্যে বাগ-বাগিচায় উৎপন্ন পণ্য ডুমুর নিয়ে কথা বলেছিলাম। কৃষিপণ্য উৎপাদনের বৈচিত্রের দিক থেকে বিশ্বে ইরানের অবস্থান চতুর্থ পর্যায়ে।

শুধু ফল উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে ইরানের অবস্থান অষ্টম স্থানে রয়েছে। ইরান তেল বহির্ভুত যেসব কৃষিপণ্য রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে তা হলো এই ডুমুর। ডুমুরে প্রচুর চিনি বা শর্করা রয়েছে। রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি’র পাশাপাশি ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, মেনজাইমসহ আরও বহু খনিজ উপাদান।

ডুমুর ক্যানসার প্রতিরোধ করে। ত্বকের চিকিৎসায় ডুমুর বেশ উপকারী। যেসব শিশু দুর্বল তাদের জন্য ডুমুর খুব উপযোগী একটি ফল। রক্তস্বল্পতা এবং ক্ষুধামন্দার জন্যও ডুমুরের ভালো ওষুধি গুণ রয়েছে। ফাইবারের চমৎকার একটি উৎস ডুমুর। আমরা এটাও বলেছি যে ইরানে ডুমুর উৎপাদনের মূল কেন্দ্র হলো লোরেস্তান প্রদেশ। এখানকার আবহাওয়া ডুমুর চাষের জন্য উপযোগী। কারণ এখানে রয়েছে জলটৈটুম্বুর নদী, রয়েছে ডুমুর চাষের জন্য উর্বর ভূমি।  দীর্ঘকাল ধরে এই এলাকার লোকজন ডুমুর চাষ করার কারণে মোটামুটি এটি তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশায় পরিণত হয়েছে। সুতরাং এই লোরেস্তানের মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস এখন ডুমুর চাষ থেকে পাওয়া আয় রোজগার। ইরানে যত নীল ডুমুর উৎপাদিত হয় তার শতকরা তেত্রিশ ভাগই উৎপন্ন হয় এই লোরেস্তান প্রদেশে।

লোরেস্তান প্রদেশের পোল-দোখতার শহরটিকে সবকিছুর উর্ধ্বে 'কালো ডুমুর' হিসেবেই বেশি চেনে লোকজন। এই জাতের ডুমুর একটু দ্রুত বৃদ্ধি পায় বলে অন্যান্য জাতের ডুমুরের চেয়ে আগেভাগেই বাজারে আসে। এ কারণে এই ডুমুরের চাহিদা ইরানের ভেতরে যেমন প্রচুর তেমনি ইরানের বাইরেও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদার কারণে স্বাভাবিকভাবেই কালো ডমুরের চাষ পোল-দোখতার শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় হয়ে থাকে। ব্যাপকভাবে উৎপাদনের সুবাদে পোল-দোখতার শহর ‌ইরানের মধ্যে কালো ডুমুর উৎপাদনের ক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

ইরানে যত ডুমুর উৎপাদিত হয় তার শতকরা নব্বুই ভাগ উৎপাদিত হয় দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ ফার্সে। ফার্স প্রদেশের ডুমুর অর্গানিক উৎপাদনের জন্য খুবই অনুকূল পরিস্থিতির কারণে বেশ উন্নত মানের। এই গুণগত মানের উন্নয়নের কারণ হলো ফার্স প্রদেশের ডুমুর চাষের ক্ষেত্রে বিশ্বের অপরাপর দেশের মতো সার কিংবা কৃষিতে ব্যবহার্য বিষ ব্যবহার করা হয় না। এ কারণে প্রকৃত স্বাদ এবং মান বজায় থাকে ফার্সের ডুমুরে। ফার্স প্রদেশের অন্তত বিশটি শহরে ডুমুরের চাষ করা হয়। এসব শহরের মধ্যে কয়েকটি হলো এস্তেহবন শহর, দরব শহর, নেই রিয এবং জোহরাম শহর।

ফার্স প্রদেশের যেসব শহরে বেশি বেশি ডুমুরের চাষ হয় সে বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলাম বিরতির আগে। সেচ ছাড়া শুধু বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে যেসব ফসলের চাষ হয় সমগ্র ইরানে সেরকম একটি ফলন হলো ফার্সের ডুমুর। বিশ্বের মধ্যে সেচবিহীন বৃষ্টিনির্ভর সবচেয়ে বেশি ডুমুরের চাষ হয় এই প্রদেশে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে ইরানের শতকরা পঁচাশি ভাগেরও বেশি ডুমুর উৎপাদিত হয় এই পদ্ধতিতে অর্থাৎ বৃষ্টির পানিতে। ফার্স প্রদেশের বেশিরভাগ ডুমুর বাগানই পার্বত্য এলাকায়। পাহাড়ের উচ্চতায় নিম্নমুখি ঢালে এসব ডুমুরের বাগান গড়ে উঠেছে যেখানে বৃষ্টির পানিও জমে থাকতে পারে না। দ্রুত ঢাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে নীচের উপত্যকার দিকে। এই বাগানগুলোর বয়স দুই শ বছরের বেশি। পূর্বপুরুষেরা অনেক কষ্ট করে এইসব বাগান চাষে উদ্যমী হয়েছেন বলে এখন জাতীয় পুঁজির উৎসে পরিণত হয়েছে।

এস্তেহবন ফার্স প্রদেশের আরেকটি শহর যেখানে দেশের সবচেয়ে বেশি ডুমুর উৎপাদিত হয়। এখানেও বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করেই ডুমুর চাষের ব্যবস্থা হয়েছে। বৃষ্টিনির্ভর ডুমুর বাগানের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডুমুর বাগান এখানেই। বছরে বিচিত্র জাতের অন্তত সাত হাজার টন ডুমুর উৎপাদিত হয় এখানকার বাগানগুলোতে। বিশেষজ্ঞদের মতে এস্তেহবনের ডুমুর গুণগত মান ও বৈশিষ্ট্যের বিচারে সবচেয়ে ভালো। শুকনো ডুমুর এখন বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ইরানই প্রথম শুষ্ক ডুমুর উৎপাদনের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি কুড়িয়েছে। এ কারণেই জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য বিষয়ক সংস্থা ফাওয়ের ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্বে শুষ্ক ডুমুর উৎপাদনের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হলো ইরানের ফার্স প্রদেশের এস্তেহবন শহর।

ফল শুকিয়ে সংরক্ষণ করার পদ্ধতিটি বেশ প্রাচীন হলেও বর্তমান বিশ্বে এর চাহিদা এখন ব্যাপক। বিশেষ করে শুষ্ক ফলের ওষুধি গুণ প্রচুর। যেসব ফল শুষ্ক করে রাখা হয় সেসবের মধ্যে কলা, কিভি, মাল্টা, নাশপাতি, জার্দালু, এপ্রিকট, পিস, আপেল ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা যায়। বছরে বর্তমানে ইরান দুই শ কোটি ডলারেরও বেশি বিদেশি মুদ্রা অর্জন করে এই শুষ্ক ফল রপ্তানি করে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন, সুইডেন, নরওয়েসহ পারস্য উপসাগরীয় দেশ কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েতে ইরানের শুষ্ক ফল রপ্তানি করা হয়। এসব দেশের বাইরেও  চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো এশিয় দেশগুলোতে যেমন রপ্তানি হয় ইরানের শুষ্ক ফল তেমনি অস্ট্রেলিয়া এমনকি রাশিয়াতেও রপ্তানি হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে।

বিশ্বব্যাপী ইরানি শুষ্ক ফলের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে ইরানে বেশ কিছু বড় বড় কোম্পানি এখন এ ক্ষেত্রে তৎপর হয়ে উঠেছে। ফল শুষ্ক করার আধুনিক পদ্ধতি সম্পন্ন বহু কারখানাও গড়ে তুলেছে এসব কোম্পানি। অর্গানিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রাখার জন্যও রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারের বিকল্প উপায় অবলম্বন করছে কোম্পানিগুলো। এর ফলে শুষ্ক ফলের গুণগত বৈশিষ্ট্য বজায় থাকছে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।