ইরানের পণ্যসামগ্রী: গবাদি পশুর খাদ্যপণ্য
গত আসরে আমরা বলেছিলাম ইরানের কৃষিপণ্যের মধ্যে বাগ-বাগিচায় উৎপন্ন পণ্য ডুমুর নিয়ে কথা বলেছিলাম। কৃষিপণ্য উৎপাদনের বৈচিত্রের দিক থেকে বিশ্বে ইরানের অবস্থান চতুর্থ পর্যায়ে।
শুধু ফল উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে ইরানের অবস্থান অষ্টম স্থানে রয়েছে। ইরান তেল বহির্ভুত যেসব কৃষিপণ্য রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে তা হলো এই ডুমুর। ডুমুরে প্রচুর চিনি বা শর্করা রয়েছে। রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি’র পাশাপাশি ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, মেনজাইমসহ আরও বহু খনিজ উপাদান।
ডুমুর ক্যানসার প্রতিরোধ করে। ত্বকের চিকিৎসায় ডুমুর বেশ উপকারী। যেসব শিশু দুর্বল তাদের জন্য ডুমুর খুব উপযোগী একটি ফল। রক্তস্বল্পতা এবং ক্ষুধামন্দার জন্যও ডুমুরের ভালো ওষুধি গুণ রয়েছে। ফাইবারের চমৎকার একটি উৎস ডুমুর। আমরা এটাও বলেছি যে ইরানে ডুমুর উৎপাদনের মূল কেন্দ্র হলো লোরেস্তান প্রদেশ। এখানকার আবহাওয়া ডুমুর চাষের জন্য উপযোগী। কারণ এখানে রয়েছে জলটৈটুম্বুর নদী, রয়েছে ডুমুর চাষের জন্য উর্বর ভূমি। দীর্ঘকাল ধরে এই এলাকার লোকজন ডুমুর চাষ করার কারণে মোটামুটি এটি তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশায় পরিণত হয়েছে। সুতরাং এই লোরেস্তানের মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস এখন ডুমুর চাষ থেকে পাওয়া আয় রোজগার। আজ আমরা কথা বলার চেষ্টা করবো গবাদি পশুর খাদ্যপণ্য এবং মুরগি বা মুরগি জাতীয় অন্যান্য প্রাণীর খাদ্য সামগ্রি নিয়ে।
বলা হয়ে থাকে বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রতি বছর অন্তত দশ কোটি মানুষ যুক্ত হয়। সে হিসেবে ২০৪০ সালের মধ্যে এই পৃথিবীর জনসংখ্যা দাঁড়াতে পারে নয় শ কোটিতে। সুতরাং বিশাল এই জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বিশ্ব সমাজের জন্য সত্যি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যতই জনসংখ্যা বাড়বে ততই গবাদি পশুর মাংসের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে-এটাই স্বাভাবিক। এ বিষয়টির গুরুত্ব তখনই বৃদ্ধি পায় যখন বিশ্বের ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের মতো ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়ে বিশ্ববাসী। তখন কৃষিপণ্যের সংকট দেখা দেয়, দেখা দেয় লুটতরাজের মতো বিরুপ বিশৃঙ্ক্ষলা। এরকম একটি পরিস্থিতিতে গবাদি পশুপাখি এবং তাদের খাদ্যসামগ্রির উৎসগুলোর স্বাস্থ্যকর দিকটির প্রতি লক্ষ্য রাখার মতো বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। কেননা পশুপাখির স্বাস্থ্যকর খাবারের বিষয়টি মানুষের সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্ববহ।

বর্তমান বিশ্বে মানব খাদ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো গোশত বা গোশত দিয়ে তৈরি অন্যান্য সামগ্রি। প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য সামগ্রি সরবরাহ করা হয়। এসবের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যাবে পশুপাখির মাংস দিয়ে তৈরি প্রচুর খাদ্য সামগ্রি রয়েছে। মাংস থেকে উৎপন্ন এইসব খাদ্যপণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় গবাদি পশুর মাংস যেমন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে তেমনি পাখি জাতীয় প্রাণীর মাংসের পরিমাণও চোখে পড়ার মতো। বিশ্ববাসীর জন্য স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের চাহিদা মেটায় পশু ও পাখি-এই দুই ধরনের প্রাণীর মাংস। এইসব পশুপাখির খাদ্য হলো কৃষিক্ষেতের ঘাস লতা পাতা কিংবা এসব থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন দানাদার পণ্য ইত্যাদি। সেইসঙ্গে বিভিন্ন সামগ্রির মিশ্রণে তৈরি বিশেষ খাবারও উল্লেখযোগ্য। যেমন যব, ফাইবার, লাল বিটসহ খনিজ ও ভিটামিন সামগ্রি সহযোগে এক ধরনের খাবার তৈরি করা হয় পশু পাখির জন্য।
পশুপাখি ও মৎস্য খাবার বিষয়ক আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের পর্যালোচনা অনুযায়ী গত বিশ বছরে বিশ্বে পশপাখির খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া শতকরা অন্তত চল্লিশ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালে সারাবিশ্বে প্রায় এক শ কোটি টন মৎস্য ও পশুপাখির খাবার উৎপাদিত হয়েছিল। বিশ্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে সারাবিশ্বে মাছের খাবার এবং পশুপাখির খাবার উৎপাদনের ক্ষেত্রে তৎপর ছিল অন্তত ত্রিশ হাজার কারখানা। আমাদের মানব সমাজের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যপণ্য বিশেষ করে প্রোটিন সামগ্রি সরবরাহ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এইসব শিল্প কারখানার নেপথ্য ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমান বিশ্বে বছরে এক শ কোটি টনের বেশি পরিমাণ পশুপাখি ও মাছের খাবার সামগ্রি উৎপন্ন ও ব্যবহৃত হচ্ছে।
পশুপাখি ও মৎস্য খাবার উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইরান প্রায় সাত দশক ধরে তৎপরতা চালিয়ে এসেছে। পোল্ট্রি ফার্ম এবং মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মূলত এই শিল্পের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং তখন থেকেই পশুপাখি ও মাছের খাবার তৈরির শিল্পকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করে। সময়ের পরিক্রমায় এই শিল্পে বিনিয়োগও বাড়তে থাকে। বর্তমানে ইরানে অন্তত পঞ্চাশ রকমের পশুপাখি ও মাছের খাবার তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। এই শিল্পে বছরে প্রায় এক হাজার এক শ কোটি মার্কিন ডলার লেনদেন হয়। দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা হয় এসব সামগ্রি। বিশেষ করে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোসহ পারস্য উপসাগরীয় দেশ ইরাক, আরব আমিরাত, কাতারের মতো দেশগুলোতে যেমন রপ্তানি করা হয় তেমনি তুরস্ক এবং সিরিয়ার মতো দেশেও ইরানের পশুপাখি ও মাছের খাদ্য সামগ্রি রপ্তানি হয়।
ইরান বহু আগে থেকেই পশুপাখি ও মাছের খাদ্য সামগ্রি রপ্তানি করে বিভিন্ন দেশে। বলাবাহুল্য সমগ্র ইরানের বিভিন্ন প্রদেশে বর্তমানে পশুপাখি ও মাছের খাদ্য সামগ্রি তৈরির কারখানায় সরাসরি কর্মরত আছে বিশ হাজারের বেশি জনশক্তি। #
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।