ইরানের পণ্যসামগ্রী: পোল্ট্রি সামগ্রি
গত আসরে আমরা ইরানের গবাদি পশুর খাদ্যপণ্য এবং মুরগি বা মুরগি জাতীয় অন্যান্য প্রাণীর খাদ্য সামগ্রি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। বর্তমান বিশ্বে মানব খাদ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো গোশত বা গোশত দিয়ে তৈরি অন্যান্য সামগ্রি।
প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য সামগ্রি সরবরাহ করা হয়। এসবের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যাবে পশুপাখির মাংস দিয়ে তৈরি প্রচুর খাদ্য সামগ্রি রয়েছে।
মাংস থেকে উৎপন্ন এইসব খাদ্যপণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় গবাদি পশুর মাংস যেমন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে তেমনি পাখি জাতীয় প্রাণীর মাংসের পরিমাণও চোখে পড়ার মতো। বিশ্ববাসীর জন্য স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের চাহিদা মেটায় পশু ও পাখি-এই দুই ধরনের প্রাণীর মাংস। এইসব পশুপাখির খাদ্য হলো কৃষিক্ষেতের ঘাস লতা পাতা কিংবা এসব থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন দানাদার পণ্য ইত্যাদি। সেইসঙ্গে বিভিন্ন সামগ্রির মিশ্রণে তৈরি বিশেষ খাবারও উল্লেখযোগ্য। যেমন যব, ফাইবার, লাল বিটসহ খনিজ ও ভিটামিন সামগ্রি সহযোগে এক ধরনের খাবার তৈরি করা হয় পশু পাখির জন্য। পশুপাখি ও মৎস্য খাবার উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইরান প্রায় সাত দশক ধরে তৎপরতা চালিয়ে এসেছে। বর্তমানে ইরানে অন্তত পঞ্চাশ রকমের পশুপাখি ও মাছের খাবার তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। এসব খাদ্য উৎপাদন কারখানাগুলোকে আরও উন্নত করে তুলতে এবং আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় গুণগত মান ও উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এগিয়ে এসেছে জ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন কোম্পানি।

বলছিলাম প্রাণীখাদ্য কারখানাগুলোকে আরও উন্নত করে তুলতে এবং আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় গুণগত মান ও উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এগিয়ে এসেছে জ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন কোম্পানি। এ ক্ষেত্রে ইরানি গবেষকদের বেশ কিছু সাফল্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হ'ল পশুসম্পদ, হাঁস-মুরগি এবং জলজ প্রাণীর পরিপূরক প্রোবায়োটিকের জন্য ছয়টি পণ্যের ফরমুলা তৈরি করা। এসব ফরমুলাকে কাজে লাগিয়ে ইরান প্রাণীখাদ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।
ইরানের পশুপাখি তথা প্রাণীসম্পদ বলতে বোঝায় টার্কি মুরগি, চীনা হাঁস, কোয়েল, পার্টরিজ বা তিতির, উটপাখি এবং বিভিন্ন ধরণের হাঁস-মুরগি ইত্যাদি। ইরানের পোল্ট্রি শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের মধ্যে ডিম, একদিনের মুরগি এবং মুরগির মাংসের কথা উল্লেখ করা যায়। বিভিন্ন দিক থেকে এই শিল্পের গুরুত্ব রয়েছে। যেমন খাদ্যপুষ্টির বিষয়টি তো রয়েছেই এর পাশাপাশি পোল্ট্রি শিল্প আয়ের একটি গুরুত্বপূণূ উত্সও বটে। কেননা পোল্ট্রি শিল্পে কর্মসংস্থানেরও ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে পুষ্টির বিবচেনায় মুরগির মাংস এবং মুরগির ডিম খুবই প্রয়োজনীয় হলেও মূল্যমানের দিক থেকে সবার জন্যই মোটামুটি ক্রয়সাধ্য। এ কারণেই বিশ্বব্যাপী এই দুটি পোল্ট্রি সামগ্রি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে মানব দেহের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে উচ্চমানের প্রোটিন এবং অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে ডিমের মধ্যে। ডিমে রয়েছে আয়রন, ফসফরাস, বিরল খনিজ, ভিটামিন ই, এ, কে। ভিটামিন-বি গ্রুপের সকল ভিটামিনেরও সমৃদ্ধ উৎস হলো ডিম। মাছের তেলের পর ভিটামিন ডি'র উৎসের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডিম। অ্যানার্জি তৈরির সমৃদ্ধ উপাদানও রয়েছে ডিমে। মাঝারি সাইজের একটি মুরগির ডিমে আনুমানিক সাতাত্তর ক্যালরি পরিমাণ অ্যানার্জি তৈরির ক্ষমতা রয়েছে।
মুরগির ডিমের খোসা হলো ক্যালসিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস। মাটিকে উর্বর এবং শক্তিশালী করার কাজে ডিমের ওই খোসা কাজে লাগে। সারাবিশ্বে বর্তমানে বার্ষিক সাত কোটি টন মুরগির ডিম উৎপন্ন হয়। ইরান এই ডিম উৎপাদনের পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে এগারোতম স্থানে রয়েছে। আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে ডিম রপ্তানির দিক থেকে ইরান খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে। গত দশ বছর ধরে এ অঞ্চলের অন্তত দশটি দেশের চেয়ে নিজস্ব পণ্য বেশি রপ্তানি করেছে ইরান। ডিমের পাশাপাশি বলা যেতে পারে পোল্ট্রি পণ্যের ক্ষেত্রে ইরান এক দিনের মুরগির বাচ্চাও রপ্তানি করেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
ইরানে এখন পাঁচ শ’র বেশি পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে যেসব ফার্মে মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। তিন শতাধিক কোম্পানি এ ক্ষেত্রে সক্রিয় রয়েছে। একদিনের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করা হয় মাসে দশ কোটির উপরে। এই পরিসংখ্যান তিন বছর আগেকার। এসব মুরগির বাচ্চা ডিমের জন্য নয় মাংসের জন্য। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত মুরগি প্রতিবেশি দেশগুলোতে রপ্তানি করা হয়। তিন বছর আগে ইরানি সৌরবর্ষের প্রথম ছয় মাসে ইরানের আলবোর্জ প্রদেশে উৎপাদিত তিন কোটি আশি লক্ষ এক দিনের মুরগির বাচ্চা পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোতে রপ্তানি করা হয়েছিল। #
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।