নভেম্বর ২৩, ২০২০ ২২:২০ Asia/Dhaka

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক থেকে যথেষ্ঠ সমৃদ্ধ। যুগ যুগ ধরেই বিশ্ব পর্যটকগণ ইরানের প্রাকৃতিক লীলা বৈচিত্র্য, বিভিন্ন গোত্র-জাতি, পুরাতাত্ত্বিক শিল্প-সংস্কৃতি, বিচিত্র ভূ-প্রকৃতির সাথে পরিচিত। কেরমান প্রদেশটিও পর্যটকদের পদচারনায় মুখর থাকে সারা বছর।

এ প্রদেশটির আবহাওয়াগত বৈচিত্র্য লক্ষ্য করার মতো। শিল্প ও সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ প্রদেশ এটি। তাছাড়া এ অঞ্চলের লোকজন কষ্ট সহিষ্ণু, পরিশ্রমী এবং যথেষ্ঠ অতিথি পরায়ন। ইরানের ভৌগলিক ইতিহাসে কেরমান শহরটির নামের উৎস হিসেবে বেশ কয়েকটি শব্দ দেখতে পাওয়া যায়। যেমন : কারমানিয়া, কেরমানিয়া, যেরমানিয়া, কারীমান, কার্মানী, কেরমানী ইত্যাদি। তবে ভূগোল বিদদের কয়েকজনের ধারনা এর থেকে আরেকটু ভিন্ন। তারা মনে করেন এ শহরের প্রাচীন নাম ছিল গাভাশীর বা বোর্দেশীর।

হাজার হাজার বছরের পুরোণো প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ এই কেরমান প্রদেশ। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় এই মরু আঞ্চলিক প্রদেশ কেরমানের অন্তত ছয়টি প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন স্থান পেয়েছে। বুঝতেই পারা যায় যে কতোটা সমৃদ্ধ এবং ঐতিহ্যবাহী একটি প্রদেশ এই কেরমান। যারা ইরান সম্পর্কে খোজ খবর রাখেন ইরানের নাম স্মরণ করলেই তাদের মনে ভেসে উঠবে কেরমানের চমৎকার ডিজাইন ও রঙের কার্পেটের কথা। বিচিত্র খোরমা এবং উন্নতমানের থান কাপড়ের কথাও মনে পড়বে। ইরানের উন্নত মানের পেস্তা বাদামও এই কেরমান প্রদেশেই উৎপন্ন হয়।

কেরমান প্রদেশের কেন্দ্রিয় শহরের নামও কেরমান। শহরটি বেশ প্রশস্ত এবং সুন্দর। প্রাচীনকাল থেকেই এই শহরটির গুরুত্ব থাকায় কেরমান ছিল একটা সময় ইরানেরও রাজধানী শহর। কোনো কোনো শাসক বা রাজা-বাদশার শাসনামলে কেরমানসহ আরও অনেক শহরই রাজধানী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। রাজধানী নির্বাচনের বিষয়টি আসলে আঞ্চলিক গুরুত্বের ওপর নির্ভরশীল ছিল। যেমন কারাখিতায়িয়ানদের শাসনামলে প্রায় সত্তর বছরের মতো শুধু কেরমানই ছিল রাজধানী। কিন্তু আলে-বুইয়ে এবং আলে মুজাফফরের শাসনামলে কেরমানের পাশাপাশি আরও কয়েকটি শহরও রাজধানী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছিল। যান্দিয়াদের শাসনামলেও অগা মুহাম্মাদ খান কাজারের হাতে শিরাজের পতনের পর লুৎফে আলি খান যান্দ কেরমানে গিয়েছিলেন এবং কেরমান শহরকে দুই বছরের মতো রাজধানী হিসেবে মনোনয়ন দেন।

কেরমানে দুটি কেল্লা আছে বেশ প্রাচীন। কেল্লা দুটি বেশ উঁচুতে অবস্থিত । একটি কেল্লার নাম আর্দেশীর, আরেকটির নাম হলো দোখতার বা কণ্যা । আর্দেশীর কেল্লাটি একটি টীলার উপর নির্মিত হয়েছে । এর দেয়াল তৈরি করা হয়েছে রোদে পোড়া বড় বড় ইট দিয়ে । দোখতার বা কন্যা কেল্লাটি আর্দেশীর কেল্লার চেয়ে বেশ ছোট । যাই হোক, এই কেল্লা দুটির মাঝখানে মসজিদ এবং বিভিন্ন এমারত গড়ে তোলা হয়েছে । আবহাওয়াগত বৈচিত্র্যের কথা বলা হয়েছে একটু আগেই । এটা খুবই রহস্যময় ব্যাপার । উষ্ণ কোনো অঞ্চলের উপকন্ঠে যদি দেখা যায় অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করছে তাহলে সবাই বিস্মিত হন । আর এই বিস্ময়কর ব্যাপারটিই কিন্তু কেরমান প্রদেশে ঘটে থাকে ।কেরমানের এই আবহাওয়াগত বৈচিত্র্য নিয়ে আরও কথা বলার ইচ্ছে রইলো খানিক মিউজিক বিরতির পর।

বলছিলাম কেরমানের আবহাওয়াগত বৈচিত্রের কথা। মজার ব্যাপার হলো একই সময়ে দেখা যায় কেরমানের এক অঞ্চলের আবহাওয়া ঠাণ্ডা আবার অন্য অঞ্চলের আবহাওয়া গরম । আবহাওয়ার এই তারতম্যের কারণে অনেক ধরনের ফলফলাদি সেখানে উৎপন্ন হয় । উষ্ণ আবহাওয়ায় যেসব ফল উৎপন্ন হয় সেগুলো যেমন কেরমানে পাওয়া যায় শীতার্ত আবহাওয়ায় উৎপন্ন ফলও পাওয়া যায় কেরমানে। তাছাড়া পশুপালনের জন্য কেরমান প্রদেশ খুবই বিখ্যাত এবং উপযোগী একটি অঞ্চল। শিল্পকর্মের জন্যে যতো উপকরণ প্রয়োজন হয় সেসবের কাঁচামালও পাওয়া যায় এই কেরমানের বাজারেই। বাজারের প্রসঙ্গটি যেহেতু উঠলোই তাহলে বাজার নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।

কেরমান শহর দেখার প্রসঙ্গ এলেই রাস্তা বাজারের কথাটি প্রথমে আসবে। বাজারটি কেরমান বাজার এবং গাঞ্জআলি খান বাজার নামেও পরিচিত। বাজারটি প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা । ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে বিভিন্ন শাসক এই বাজারের বিভিন্ন অংশ নির্মাণ করে গেছেন । এই তথ্য থেকে অনুমিত হয় যে কেরমান একটি ঐতিহাসিক প্রদেশ এবং এই প্রদেশটি যুগে যুগে বিভিন্ন সংস্কৃতির লালনভূমি হচেছ কেরমান। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় যে সাফাভী এবং ক্বাজার যুগে যে বৃত্তাকার বা গোলাকৃতি খিলান ও গম্বুজ স্থাপিত হয়েছে সেগুলোতে আলো প্রবেশের ব্যবস্থা থাকায় বাজারের ভেতরে যথেষ্ট আলো থাকে। এই বাজারে প্রাচীন দুটি বিখ্যাত হাম্মাম রয়েছে ।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ