ইরানের পণ্যসামগ্রী: কোয়েল পাখি
কোয়েল পাখির মাংস এবং ডিম কিডনি, জকৃৎ ও হার্ট-এসবের কার্যক্ষমতা এবং হজম শক্তি অনেক বাড়াতে সহযোগিতা করে। পক্ষান্তরে অ্যাসিডিটি বা অম্লত্ব কমাতে সাহায্য করবে।
মানব মস্তিষ্ক সবসময় সতেজ রাখে। স্মৃতিশক্তি ভাল থাকে। ছোট বাচ্চাদের শারীরিক গঠন এবং মানসিক ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতেও কোয়েলের মাংস ও ডিম সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেলে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। যার ফলে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। ইরানের কেরমানশাহ, তেহরান, পশ্চিম আজারবাইজান এবং যানজন প্রদেশগুলো কোয়েল প্রতিপালনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কেন্দ্র।

কোয়েলের ডিমের পুষ্টিগুণ নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা। কোয়েলের একটি ডিমের ওজন একটি মুরগির ডিমের পাঁচ ভাগের একভাগের মতো। অথচ ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন-বি-এক, বি-দুইয়ের পরিমাণ মুরগির ডিমের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়াও কোয়েলের ডিম অন্যান্য ভিটামিনেরও সমৃদ্ধ উপাদান। এ কারণে কোয়েলের ডিমকে বলা হয় ভিটামিন বোমা। ইরানের পোল্ট্রি ফার্মগুলো এখন এক হাজার দুই শ টন বিভিন্ন পাখির মাংস রপ্তানি করে থাকে। এগুলোর মধ্যে কোয়েলের মাংস, তিতির পাখির মাংস এবং ফিজেন্ট জাতের পাখির মাংস। তিতির পাখির মাংস খুবই সুস্বাদু। স্বাভাবিকভাবেই তিতিরের মাংস এবং ডিমের দামও অন্যান্য পাখির মাংসের তুলনায় বেশি। তিতির আবার বহু জাতের হয়। তবে ইরানে তিতির পাখির যে জাতটির প্রতিপালন করা হয় সেটি আলেকটরিস চুকার নামে পরিচিত।
চুকার জাতীয় তিতির পাখিটি ইরানের স্থানীয় প্রজাতি। এ জাতের তিতির পাখি সাধারণত পার্বত্য এলাকায় বসবাস করে। চুকাররা শুষ্ক, খোলামেলা আবাসভূমি, মালভূমি এবং পাথুরে উপত্যকাসহ প্রায়শই প্রচ্ছন্ন ঝোপঝাড় বাস করতে পছন্দ করে। এদরেকে দশ হাজার ফুট ফুট উচ্চতায়ও পাওয়া যাবে। ক্রমশ ঢালু পাথুরে উপত্যকায় কিংবা ঘাস তৃণময় প্রান্তরেও চুকার জাতীয় তিতির দ্রুত বেড়ে ওঠে। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে তিতিরের বাচ্চার ওজন চার শ থেকে পাঁচ শ পঞ্চাশ গ্রামের মতো হয়ে যায়। তিতিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। প্রাকৃতিক খাদ্য খায় বলে খাদ্য খরচও কম। ছয় থেকে সাত মাস বয়সেই ডিম পাড়ে তিতির। এ কয় মাসেই তিতিরের মাংস খাওয়া ও বিক্রির উপযোগী হয়। দেশি মুরগির সাথে একত্রে পালন করা যায়। তিতির সারা বছর পালন করা যায়।
মুরগি বা পাখিজাতীয় অন্য একটি খামারি পাখি হলো উটপাখি। ইরানে এই উটপাখি প্রতিপালন শিল্পের বিকাশ বেশ আশাব্যঞ্জক। অন্ত দুই দশক ধরে ইরানে উটপাখি প্রতিপালনের প্রচলন হয়ে আসছে। প্রথম প্রথম উটপাখির ডিম বাইরের দেশ থেকে সংগ্রহ করে এনে লারণ ফঅরণ খলৈ বিভিন্ন বয়সে সেগুলোকে বিক্রি করা হত। এখন আর সে অবস্থা নেই। ইরান নিজেই এখন উট পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে লালন পালন করছে। তেহরান, ইস্ফাহান, গোলেস্তান এবং কেন্দ্রিয় প্রদেশে উট পাখির অসংখ্য খামার রয়েছে। বিশ্বে উটপাখির পরিমাণের দিক থেকে ইরানের অবস্থান তৃতীয়। ইরানে বর্তমানে এক লাখের মতো উটপাখি আছে যার মধ্যে অন্তত নয় হাজার উটপাখি জন্মদান ক্ষমতা সম্পন্ন। অর্থনৈতিক বিচারে উটপাখির চাষ খুবই লাভজনক। কেবল মাংস কিংবা ডিমই নয় বরং উটপাখির পশম, চামড়া, চর্বি, বিষ্ঠা, উটপাখির বাচ্চা সবকিছুরই ব্যাপক অর্থমূল্য রয়েছে।
উটপাখির চামড়া এই পাখি থেকে পাওয়া মূল্যবান একটি পণ্য। সমগ্র বিশ্বে উটপাখির চামড়ার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে কেননা এই পাখির চামড়া খুবই কোমল, নরম এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। গরুর চামড়ার তুলনায় উটপাখির চামড়ার স্থায়িত্ব অন্তত ছয় গুণ বেশি। এ কারণেই উটপাখির চামড়ার চাহিদা এতো বেশি। উটপাখির চামড়ায় এক ধরনের চর্বি থাকে। বিশেষ জাতের ওই চর্বি অন্যান্য পশু বা পাখির তুলনায় একেবারেই স্বতন্ত্র। উটপাখির চামড়া তুলতুলে হলেও দীর্ঘস্থায়ী। শুষ্কতা কিংবা ফেটে যাওয়া কোনোরকম আশঙ্কা থাকে না উটপাখির চামড়ার। বিশ্বে যত দামি চামড়া আছে উটপাখির চামড়া তার মধ্যে একটি। হ্যান্ডব্যাগ, জুতোসহ এ জাতীয় বহু সামগ্রী থৈরি হয় উটপাখির চামড়া দিয়ে। ইরানে উৎপন্ন উট পাখির চামড়া এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। কোরিয়া, তুর্কমেনিস্তান, তুরস্ক, চীন এবং রাশিয়াতে প্রচুর রপ্তানি হয় ইরানি উটপাখির চামড়া।
উটপাখি ছাড়াও পোলট্রি শিল্পে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে টার্কি মুরগি এবং রাজহাসের চাষ। উন্নতমানের প্রযুক্তি ও ইলেক্ট্রিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে ইরানে রাজহাসের চাষ হয়। এই হাস প্রতিপালন শিল্পটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে ইরানে। এগুলোর চাষে তেমন কোনো ঝামেলা নেই। কারণ রাজহাস খুবই সুশৃঙ্ক্ষল প্রাণী। সহজেই এগুলোকে প্রতিপালন করা যায়। রাজহাস খুব দ্রুত বৃদ্ধি লাভ করে। রাজহাসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক। সে কারণে এগুলোর প্রতিপালনের ক্ষেত্রে খুব বেশি ঔষধপাতির ব্যয়ভার পোহাতে হয় না। রাজহাসের মাংস এবং এর ডিমও তাই বেশ সুস্বাদু। টার্কি মুরগির চাষও এখন প্রচুর হচ্ছে ইরানে। অনেক আগে থেকেই ইরানিরা টার্কি মুরগির মাংস খেয়ে অভ্যস্থ। অন্তত পাঁচ শ বছর আগে থেকে এর প্রচলন হয়ে আসছে। সুতরাং এর চাষও যে অনেক আগে থেকেই চলে আসবে-সেটাই তো স্বাভাবিক।
স্থানীয় পদ্ধতিতে ইরানের বিভিন্ন প্রদেশে টার্কি মুরগির চাষ হয়ে এলেও বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতেই প্রতিপালিত হচ্ছে। খোরাসান, গিলান, মজান্দারন, পশ্চিম আজারবাইজান, পূর্ব আজারবাইজান, কেন্দ্রিয় প্রদেশ, ফার্স প্রদেশ, ইস্ফাহান এবং কেরমান প্রদেশসহ আরও বহু এলাকায় এখন টার্কি মুরগির প্রচুর খামার রয়েছে। বহু প্রজাতির টার্কি মুরগির চাষ হয় ইরানে। টার্কি মুরগির সুবিধাটা হলো এগুলোর মাংসে প্রোটিন বেশি কিন্তু চর্বি কম। কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব কম। তেহরান, ইস্ফাহান এবং কাজভিন প্রদেশে টার্কি মুরগির চাষ বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে। টার্কি মুরগির মাংসের শতকরা পঁয়ষট্টি ভাগই সাদা আর বাকি মাত্র পঁয়ত্রিশ ভাগ লাল। মাছ কিংবা চিংড়ি থেকেও টার্কি মুরগির মাংসে ফসফরাস এবং প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। ইরানে বছরে অন্তত বিশ লাখ টার্কি উৎপাদিত হয় এবং বিশ হাজার টন টার্কির মাংস বাজারে সরবরাহ করা হয়। তো হাতে আজ আর সময় নেই।#
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ২৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।