ডিসেম্বর ১৯, ২০২০ ১৫:৫৫ Asia/Dhaka

গত পর্বের ধারাবাহিকতায় আজও আমরা হিজরি সপ্তম শতক তথা খ্রিস্টিয় ত্রয়োদশ শতকের বিখ্যাত ইরানি কবি ও আধ্যাত্মিক সাধক বা আরেফ ফখরুদ্দিন ইরাকির রচনা ও অবদান নিয়ে কথা বলব।

গত পর্বের আলোচনায় আমরা জেনেছি শাইখ ফাখরুদ্দিন ইব্রাহিম ইরাকি ছিলেন ইরানের একজন প্রখ্যাত সুফি সাধক ও কবি। তিনি ইলখানি বংশের রাজত্বকালের শেষদিকে হামেদানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৫৯২ থেকে ৬১০ হিজরির কোনো এক বছরে। তবে বেশিরভাগ গবেষক মনে করেন ইরাকির জন্ম হয়েছিল হিজরি ৬১০ সনে তথা ১২১৩ খ্রিস্টাব্দে। আর বহু দেশ সফরের পর তার মৃত্যু হয়েছিল খ্রিস্টিয় ১২৮৮ সনে অথবা ১২৮৯ সনে সিরিয়ার দামেস্কে ৭৮ অথবা ৮২ বছর বয়সে।  ইরাকি শৈশবেই মাত্র নয় মাসে সমগ্র কুরআন হিফজ্ করেন এবং মধুর সুরে ও সঠিকভাবে কুরআন আবৃত্তি করতে পারতেন। ৮ বছর বয়সেই তার প্রতিভার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। ইরাকির আসল নাম শাইখ ফাখরুদ্দিন। ইরাকি তার ছদ্মনাম মাত্র। 

শাইখ ফাখরুদ্দিন ইরাকি কালান্দার নামক দরবেশ গোষ্ঠীতে যোগ দিয়ে ভারতবর্ষের মুলতানে চলে আসেন এবং সেখানে প্রখ্যাত সুফি সাধক বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার শিষ্য বা মুরিদ হন।

ইরাকি একটি কবিতায় বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার প্রশংসা করে লিখেছেন:

যদি এ দুনিয়ায় প্রশ্ন কর কে মানুষের পথ প্রদর্শক /তাহলে আকাশ উত্তরে বলবে জাকারিয়া

শাইখ ইরাকি ছিলেন একজন বড় লেখক ও কবি। তার গদ্য ও পদ্য রচনা রয়েছে। তিনি ক্বাসিদা, গজল, রুবাইয়্যাত বা চতুর্পদি কবিতাসহ নানা ধরনের কবিতা রচনা করেছেন। ইরাকির রচিত কবিতার মোট পংক্তির সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার।

শাইখ ফাখরুদ্দিন ইরাকিকে ফার্সি সাহিত্যের তারকা কবি হিসেবে ধরা হয়। তার কবিতাগুলো বেশ সাবলীল ও সুন্দর। বিশেষ করে আধ্যাত্মিক গজল রচনায় ইরাকির দক্ষতা ছিল অসাধারণ। গজলের মাধ্যমে তিনি অনেক আধ্যাত্মিক পরিভাষা ও নিজের ইরফানি চিন্তাধারা তুলে ধরেছেন।   

এশাকনামে বা দাহ্‌ ফাস্‌ল্‌ শাইখ ফাখরুদ্দিন ইরাকির একটি বিখ্যাত কাব্য। দ্বিপদী এই কাব্যের পংক্তির সংখ্যা এক হাজার। এতে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আধ্যাত্মিক প্রেম বা খোদা-প্রেমের নানা দিক ও অবস্থা তুলে ধরেছেন।  ইরাকি তার এ কাব্যে ইমাম গাজ্জালি, শিবলি ও নাজমুদ্দিন কোবরার মত প্রখ্যাত সুফি-সাধকদের খোদা-প্রেম ও আধ্যাত্মিক অবস্থার নানা কাহিনী গজলের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

শাইখ ফাখরুদ্দিন ইরাকির আরেকটি বিখ্যাত বইয়ের নাম লামাআত বা সহসা সচকিত আলো। গদ্য ও পদ্য মিশ্রিত এ বইটি তুলনামূলকভাবে ছোট। কিন্তু ইরাকির এ বইটির ভাষা বেশ প্রাঞ্জল ও আকর্ষণীয়। এ বইটি মূলত বিখ্যাত আরেফ মহিউদ্দিন আরাবির বক্তব্যেরই সংক্ষিপ্ত রূপ। ইরফানের জগতে ফার্সি ভাষার এ বইটি ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছিল। লামাআত বইটির অনেক ব্যাখ্যা-গ্রন্থ লেখা হয়েছে পরবর্তীকালে। রেসালেইয়ে সুফিয়ান বা সুফিদের গ্রন্থ নামের একটি বইকেও ইরাকির লেখা বলে মনে করা হয়। সায়িদ নাফিসির সম্পাদিত ইরাকির রচনাবলী শীর্ষক বইয়ে এ গ্রন্থটি স্থান পেয়েছে। এ বইটিতে এমন কিছু পরিভাষা রয়েছে যা ইরাকির চিন্তাধারা ও কবিতা বোঝার জন্য খুবই সহায়ক ও কার্যকরী। ইরাকির কিছু চিঠিপত্র ও হাতে লেখা বইয়ের কপি বিশ্বের নানা লাইব্রেরিতে দেখা যায়। এসবের মধ্যে মাজমাউল বাহরাইন ও ফেরদৌসুল আরেফিন নামের বইও রয়েছে।

এবারে প্রখ্যাত কবি ও সুফি-সাধক ইরাকির একটি বিখ্যাত গজলের কিছু অংশের অনুবাদ শুনুন:

মদিরা যা দিয়ে পেয়ালা পূর্ণ হয়েছিল প্রথমে / তা ধার নেয়া হয়েছিল সাকির মোহন আঁখি হতে।

মত্ত মাতালের দল আত্মবিহবল হয়ে /বিতরণ করলে বেখুদির শরাব পেয়ালা ভরে।

প্রিয়তমের রঙ্গীন ঠোঁট  প্রেম পেয়ালা/ আর তারি নাম হল প্রেম-মদিরা।

প্রেমিক তন্বীসাকি সুন্দর ও দীর্ঘ অলকগুচ্ছের নেই বিশ্রাম/কারণ অসংখ্য হৃদয়বানের হৃদয় করছে বিরান।

আমাদের মজলিসে খারাপ ও ভালো লোকের রয়েছে স্থান

এবং এক পেয়ালা পরিবেশন করে সে সবাইকে করল অসম্বত। #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

ট্যাগ