জানুয়ারি ৩০, ২০২১ ২০:৩০ Asia/Dhaka

মধু একটি মিষ্টি এবং সুস্বাদু খাদ্য। যে-কেউ মধু পছন্দ করেন। এই খাদ্যগুণের বাইরেও মধুর মধ্যে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবেও কাজে লাগে।

বহু রকমের খাদ্যপুষ্টির অভাব পূরণ করে মধু। মধুতে প্রচুর খনিজ উপাদান রয়েছে। রয়েছে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, মেজাইম, দস্তা, শিসা, তামা, সালফার, নিকেল, সোডিয়ামসহ আরও নানা উপাদান। তবে এসব উপাদানের পরিমাণ নির্ভর করে মধুর তারতম্যের মধ্যে। এক কিলোগ্রাম মধুতে তিন হাজার ক্যালরি অ্যানার্জি রয়েছে। রয়েছে আরও বহু রকমের অ্যাঞ্জাইম, প্রোটিন, অ্যামিনো এসিডসহ আরও অনেক উপাদান।

জি এক কিলোগ্রাম মধুতে তিন হাজার ক্যালরি অ্যানার্জি রয়েছে। রয়েছে আরও বহু রকমের স্বাস্থ্যকর উপাদান। বিভিন্ন রকমের অ্যাঞ্জাইম, প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, ফরমিক অ্যাসিড ইত্যাদি উপাদান তো রয়েছেই। ফরমিক অ্যাসিড হলো জীবাণু নাশক উপাদানে সমৃদ্ধ একটি প্রাকৃতিক উৎস। রিউম্যাটিজম বিরোধী এই ফরমিক অ্যাসিড। মধুকে এই উপাদানটিই নষ্ট ও দূষণের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখে। সুতরাং মধুকে বলা যেতে পারে আহত স্থান বা জখম বিশেষ করে গলা এবং মুখের জখমকে দূষণ থেকে রক্ষা করার উত্তম মহৌষধ। যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা নিশ্চিন্তে মধু ব্যবহার করতে পারেন। বিশ্বে প্রায় একাশি মিলিয়ন মানে আট কোটি দশ লাখ মৌচাক থেকে পণর লক্ষ টন মধু পাওয়া যায়।

দুই হাজার তের সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইরানের মধু চাষ শিল্প মৌচাকের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। আর মধু উৎপাদনের পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে আট নম্বরে ইরানের অবস্থান। ইরানে যেহেতু বিভিন্ন রকমের আবহাওয়া অঞ্চল রয়েছে এবং রয়েছে বৃক্ষময় বন-জঙ্গল আর চারণভূমি মিলিয়ে প্রায় তের কোটি হেক্টর ভূমি সেজন্য মৌচাক এবং মৌ-চাষের জন্য উপযুক্ত একটি ক্ষেত্র ইরান। ইরানে তাই মৌ-চাষের ব্যাপক প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া ইরানে যেহেতু চারটি ঋতু রয়েছে সেজন্য সারা বছর ধরেই মোটামুটি মধু চাষ করার সুযোগ রয়েছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ইরানে মধু চাষের প্রচলন খ্রিষ্টপূর্ব কয়েক শতাব্দি আগে থেকেই ছিল। ইরানে মধু চাষের ইতিহাস বেশ প্রাচীন।  খ্রিষ্টপূর্ব কয়েক শতাব্দি আগে থেকেই ইরানে মধু চাষের প্রচলন ছিল।

সে সময়ও মধু চাষ একটা সৌখিন পেশা হিসেবেই প্রচলিত ছিল। বিংশ শতাব্দিতে এসে ইরানে মধু চাষের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। এ সময়ে মৌচাকের আকার আঙ্গিকে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আগেকার দিনে মৌমাছিরা মৌচাক তৈরি করতো গাছ-গাছালির শাখায়, কলস, বিভিন্ন ধরনের পাত্র ইত্যাদি। এখন আর সেরকম অবস্থা নেই। একেবারে বনে-বাদাড়ে, ঝোপ-জঙ্গলের কথা বলছি না, বলছি আধুনিক উপায়ে মধু চাষ প্রসঙ্গে। প্রায় চল্লিশ বছর আগে ইরানে পরিবর্তিত রানী মৌমাছির আগমন ঘটে।

এমনকি রানী মৌমাছিদের বংশবৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সরকারী ও বেসরকারী খাতে রানি মৌমাছির উৎপাদনও শুরু হয়েছিল। সেই যে শুরু হয়েছিল, আজ ইরানে প্রতিবছর ১০ লক্ষাধিক রানী উত্পাদিত হয় এবং মৌমাছি পালনকারীদের মাঝে সেগুলো বিতরণ করা হয়। মৌমাছির চাষ ইরানের বেশ কয়েকটি প্রদেশে ব্যাপকভাবে হচ্ছে এখন। প্রদেশগুলোর মধ্যে রয়েছে পশ্চিম আজারবাইজান, পূর্ব আজারবাইজান, আর্দেবিল, কুর্দিস্তান, লোরেস্তান, গোলেস্তান, মজান্দারন, ইস্ফাহানসহ আরও বহু প্রদেশ। তবে ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো বিশেষ করে পশ্চিম আজারবাইজান, পূর্ব আজারবাইজান, আর্দেবিল ইত্যাদি এলাকার মধুর গুণগত মান ও উৎকর্ষ সর্বজনবিদিত। আগে বলছিলাম ইরানের মধুর উৎকৃষ্ট মানের কথা। বিশেষ করে ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো যেমন পশ্চিম আজারবাইজান, পূর্ব আজারবাইজান, আর্দেবিল ইত্যাদি এলাকার মধুর গুণগত মান ও উৎকর্ষের কথা বলছিলাম। বিশ্বে যতগুলো উন্নত মানের এবং গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের মধুর ব্র্যান্ড রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি হলো 'আসালে সাবালান'। আসাল মানে হলো মধু আর সাবালান হলো আর্দেবিল প্রদেশের একটি এলাকার নাম। ইরানের আর্দেবিল প্রদেশ মধু চাষের জন্য খুবই নামকরা। এই প্রদেশের মধু চাষীদের অনেকেই এ অঞ্চলের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার প্রতি লক্ষ্য রেখে বিশেষ করে সাবালান পর্বতের উচ্চতায় বিচিত্র ফুলে ফুলে পরিপূর্ণ উপত্যকায়, আবার মেশকিন শহরেও সফল হয়েছে প্রতিটি মৌচাক থেকে অন্তত চল্লিশ গ্রাম মধু আহরণ করতে। 

মধু চাষীরা পোকামাকড় ধ্বংস করার জন্য প্রাকৃতিক কিছু উপাদান ব্যবহার করে। যার ফলে উৎপাদিত মধু পুরোপুরি অর্গানিক থাকে। এই প্রদেশের একটি এলাকার নাম খালখল। ইরানের মধ্যে স্থানীয়ভাবে মধু চাষের জন্য এই খালখল এখন পর্যন্ত শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। কেবল পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশেই বছরে উৎপাদিত হয় বিশ হাজার টন মধু। ইরানের মধু খাওয়ার মাত্রাও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ৩০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ