ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২১ ১৭:০০ Asia/Dhaka

গত পর্বের আলোচনায় আমরা শুনেছি যে কেন ও কিভাবে ইরানের ইসলামী বিপ্লব আজও বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণের মাঝে আশার আলো হয়ে বিরাজ করছে।

প্রতিদিন নিত্য-নতুন নিষেধাজ্ঞার বাধা সত্ত্বেও ইরানের আদর্শিক ও বৈষয়িক শক্তির প্রভাব এবং সক্ষমতা বাড়তে থাকায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শয়তানি শক্তিগুলো ও তাদের সেবাদাস চক্রের আচরণ ইসলামী ইরানের প্রতি আরো বেশি শত্রুতাপূর্ণ ও উম্মাদনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। অন্যদিকে ইরানের ইসলামী নেতৃবৃন্দের আদর্শিক অঙ্গীকারগুলোর ওপর অবিচলতা ও একনিষ্ঠতাও আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। 
ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার প্রাক্কালেও ইরানের ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন সরকার। মার্কিন  সরকার ও ইহুদিবাদী ইসরাইল ইসলামী ইরানকেই তার সবচেয়ে বড় শত্রু  বলে বিবেচনা করছে। ইসলামী ইরানকে তারা সবচেয়ে বড় শত্রু  বলে বিবেচনা করার কারণেই তেহরানের ওপর স্মরণকালের নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা ও সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের ব্যর্থ নীতি প্রয়োগ করছে। আর এ থেকেই বোঝা যায় ইরানের ইসলামী বিপ্লব জালিম ও খোদাদ্রোহী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে পথ চলা অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন সরকারের সহযোগী ইউরোপও ইরান-বিদ্বেষী নীতি অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন-ইহুদিবাদী এবং পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী মহলের সেবাদাস বেশ কয়েকটি আরব রাজতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক সরকার ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে প্রকাশ্যেই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিয়ে ক্যান্সারতুল্য এই সন্ত্রাসী  ও অবৈধ রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের গোপন আঁতাত প্রকাশ করেছে। এই সরকারগুলো হচ্ছে আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান ও মরক্কো। আর এই প্রক্রিয়ায় নেপথ্য নাটের-গুরুর ভূমিকা রেখেছে সৌদি সরকার। আর প্রকাশ্য নাটের গুরু ছিলেন বিশ্বব্যাপী ব্যাপক মাত্রায় ধিকৃত বিদায়ি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 
যাই হোক্ মার্কিন ও ইহুদিবাদী চক্রের সেবাদাস আরব সরকারগুলো বলছে ইহুদিবাদী ইসরাইল নয় ইরানই তেলআবিবের সন্ত্রাসী অবৈধ সরকার ও তাদের প্রধান অভিন্ন শত্রু ! এইসব শয়তানি চক্র পারস্য উপসাগরে ইরান বিরোধী সামরিক জোট ও এমনকি কথিত আরব ন্যাটো গড়ার চেষ্টা করেও হালে পানি পায়নি। কারণ  পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী দেশ কাতার সৌদি মোড়লিপনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ইরান ও তুরস্কের প্রতি বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।  অন্যদিকে ইরাক, সিরিয়া ও লেবানন এবং ইয়েমেনের জনপ্রিয় ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন আনসারুল্লাহর নেতৃত্বাধীন সরকার ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় এ অঞ্চলে আরব ন্যাটো গঠনের স্বপ্নও দুরাশাই হয়ে আছে। 
সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ক্রীড়ণকরা ইরানকে সুন্নি মুসলিম জাতিগুলোর শত্রু  হিসেবে তুলে ধরে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। কিন্তু ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, কাশ্মির, বসনিয়া ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সুন্নি মুসলিম জনগোষ্ঠীসহ বিশ্বের মজলুম সুন্নি জাতিগুলোর প্রতি ইরানের আন্তরিক ও একনিষ্ঠ এবং  সর্বাত্মক সহায়তা শয়তানি চক্রের এই ষড়যন্ত্রকেও ব্যর্থ করেছে। ইরাক, সিরিয়া ও কুর্দি অঞ্চলগুলোর সুন্নি জনগোষ্ঠীর কাছেও ইসলামী ইরান তাদের সবচেয়ে বড় বিপদগুলোর সময়ের পরীক্ষিত ও সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং আত্মার আত্মীয় হয়ে আছে। 
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ইসলামী ঐক্য জোরদারের জন্য সুন্নি মুসলমানদের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বদের অবমাননা  করাকে হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন। ফলে শিয়া-সুন্নি মতভেদ থেকে ফায়দা হাসিলের সাম্রাজ্যবাদী প্রচেষ্টাও সফল হচ্ছে না। ইরানের ইসলামী নেতৃবৃন্দ বিপ্লবের সূচনালগ্ন থেকেই বলে আসছেন যে তারা মনে করেন মার্কিন নেতৃত্বাধীন  কথিত সুন্নি ও ব্রিটেনের নেতৃত্বাধীন কথিত শিয়া মুসলিম গ্রুপগুলো বিশ্বের জন্য ক্ষতিকর বিশ্বাসঘাতক চক্র। ইরানের ইসলামী নেতৃবৃন্দের এ ধরনের বক্তব্যের কারণ সম্ভবত এটাই যে মার্কিন সরকার এখনও শিয়া মুসলিম জনগোষ্ঠীগুলোর ওপর তেমন কোনো প্রভাব বা বড় ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়নি।  
যাই হোক ইরানের ওপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর নানা ধরনের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি সফল হচ্ছে না। এর কারণ হচ্ছে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বৃহত্তর ইসলামী ঐক্য-কেন্দ্রীক নীতিমালা এবং শাহাদাত ও প্রতিরোধের সংস্কৃতি। অনেকটা একই ধরনের নীতিমালার কারণেই ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে লেবাননের জনপ্রিয় ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ ও ইরাকের হাশদ্ আশ শাবি বা পপুলার মবিলাইজেশন ইউনিট। 
কিছুকাল আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ইরানের প্রতি মার্কিন সরকারের শত্রুতার কারণ প্রসঙ্গে বলেছেন: মার্কিন সরকার অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে আছে। কার ওপর ক্রুদ্ধ তারা? তারা এই নগন্য ব্যক্তি তথা কেবল আমার ওপরই ক্ষুব্ধ নয়, তারা ইরানি জাতির প্রতিও ক্ষুব্ধ। মার্কিন সরকার ইরানের ইসলামী সরকার ও ইসলামী বিপ্লবের প্রতিও ক্ষুব্ধ। কিন্তু কেন? এর কারণ তারা এই বিশাল বিপ্লব ও আন্দোলনের কাছে হেরে গেছে। এটা স্পষ্ট মার্কিন সরকারসহ সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা শক্তিগুলোর চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হল ইরানের ইসলামী রাষ্ট্রকে উৎখাত করা। ট্রাম্পের আগে যে সরকার আমেরিকায় ক্ষমতায় ছিল তারা প্রকাশ্যে এ লক্ষ্যের কথা বলতো না। তবে তাদেরও উদ্দেশ্য ছিল ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করা। কিন্তু ট্রাম্প সরকার কোনো ধরনের রাখঢাক না রেখেই এই উদ্দেশ্যের কথা জোরেশোরে ঘোষণা করেছে।
লক্ষ্যনীয় বিষয় হল ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হঠকারি কাণ্ডের হোতা, সন্ত্রাস-বিরোধী আন্তর্জাতিক যুদ্ধে ইরানের কিংবদন্তীতুল্য সফল মহানায়ক কাসেম সুলায়মানিকে হত্যার আত্মস্বীকৃতি খুনি ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের সেবায় সর্বোচ্চ মাত্রায়  সবচেয়ে বেশি হঠকারিতা দেখাতে সক্ষম মার্কিন ভাঁড় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ইতিহাসের আস্তাকুড়ের অংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতনের প্রক্রিয়া ও ঘরোয়া সংঘাতও তার উগ্র সমর্থকদের মাধ্যমে জোরদার হয়ে উঠতে পারে। হঠকারি  সব সাম্রাজ্য ও  সরকারেরও দশা হবে বর্ণবাদী ট্রাম্পের মত বা তার চেয়েও শোচনীয়। ইহুদিবাদের সেবাদাস আরব রাজা-বাদশাহ ও স্বৈরশাসকদেরও একই পরিণতি বহন করতে হবে ট্রাম্প বা স্বৈরতান্ত্রিক শাহ সরকারের মতই। 
অন্যদিকে বিশুদ্ধ তৌহিদি চেতনা ও মুহাম্মাদি ইসলামের পতাকাধারী ইরানের ইসলামী বিপ্লব হাজার বছরের অব্যাহত মহাবিস্ময় হয়ে  কেবল বিগত ৪২ বছরই নয়, আরও যুগ যুগ ধরে টিকে থেকে ইমাম মাহদির (আ) বিশ্ব ইসলামী বিপ্লবের ও ইসলামী সভ্যতার সর্বোচ্চ সোপান নির্মাণের পটভূমি গড়ার পথে এগিয়ে যাবে বলে বিজ্ঞ ইসলামী নেতৃবৃন্দ এবং চিন্তাবিদরা দৃঢ় আশা প্রকাশ করছেন। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের অব্যাহত নানা সাফল্য সে লক্ষনই ফুটিয়ে তুলছে জোরালোভাবে।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/৩১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ