ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩ ১২:১২ Asia/Dhaka

ইরানের ইসলামী বিপ্লব ৪৪ বছর শেষ করে ৪৫ বছরে পা দিয়েছে। কিন্তু আজও সেই মহা-বিপ্লবের বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এ মহা-বিপ্লব হাতছানি দিচ্ছে অচিরেই বিশ্ব-সভ্যতার উজ্জ্বলতম মহাকাব্যিক অধ্যায় গড়ার। 

ইসলামি বিপ্লবের বিজয় বার্ষিকী উদযাপন

প্রকৃত মুহাম্মাদি ইসলামের অনুসরণই ছিল এ বিপ্লবের অভাবনীয় সাফল্যগুলোর রহস্য। ইসলামের এই অতুলনীয় শক্তির বলেই মুসলিম বিশ্বে  মার্কিন সরকারের সবচেয়ে বড় মিত্র শাহের সরকারকে উৎখাত করেছিলেন ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেনী (র)। অথচ সেনা ও সামরিক শক্তির দিক থেকে শাহের সশস্ত্র বাহিনী ছিল বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ শক্তি। ইসলামের সেই অনন্য শক্তির সুবাদেই ইসলামী বিপ্লব এ পর্যন্ত বানচাল করতে পেরেছে দাম্ভিক শক্তিগুলোর  জটিল ও কুটিল নানা ষড়যন্ত্র। সভ্যতাগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব তত্ত্বের প্রণেতা মার্কিন তাত্ত্বিক হান্টিংটন ১৯৯৩ সালে বলেছিলেন, রাজনৈতিক ইসলাম অনুপ্রেরণা পেয়েছে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের কাছ থেকে। তিনি বলেছেন, যে ইসলাম নিজেকে পাশ্চাত্যের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করে তা মার্কিন বিশ্ব-ব্যবস্থার জন্য প্রধান বিপদ।

ফরাসি ইসলাম বিশেষজ্ঞ ইয়ান রিচার্ড বিপ্লব-পূর্বকালে ইরানে শাহের বিরোধিতা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেছেন, ষাটের দশকের পর পাহলভি সরকারের পাশ্চাত্য-প্রীতির ব্যাপকতায় ইরানী জনগণ অসন্তুষ্ট হয়েছিলো। যার ফলে ইরানী জনগণ তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির দিকে ফিরে আসার এবং আত্মপরিচয় ফিরে পাবার আকর্ষণ অনুভব করেছিল। দল-মত-মাযহাব নির্বিশেষে ইরানের ইসলামী বিপ্লবে জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি সম্পর্কে ফরাসি বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক এবং মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ এরিক রোলো বলেছেন, ইরানের বিপ্লবই একমাত্র ধর্মীয় বিপ্লব যেখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা পর্যন্ত একত্রে মিলেমিশে আন্দোলন করেছিল। ব্রিটিশ গবেষক এবং ইরান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্রেড হ্যালিডে শাহের বিরুদ্ধে জনগণের বিশাল বিক্ষোভকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো গণবিক্ষোভ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 

ইরানের ইসলামী বিপ্লব স্বৈরাচার ও সাম্রাজ্যবাদের ওপর কঠোর আঘাত হানায় এবং মজলুম জাতিগুলোর সহযোগী হওয়ায় এর সঙ্গে স্থায়ী শত্রুতায় জড়িয়ে আছে বিশ্ব-সাম্রাজ্যবাদী জোট। কিন্তু ইসলামী বিপ্লবের স্থপতি ইমাম খোমেনী (র) ও তাঁর ইন্তেকালের পরও ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী প্রায় সাড়ে চার দশক পর্যন্ত ইরানি জাতিকে ইসলামী বিপ্লবের আদর্শের পথে আপোষহীন, অবিচল এবং ঐক্যবদ্ধ রেখে নানা ক্ষেত্রে বিস্ময়কর সাফল্য ও শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন। তার নেতৃত্বের এই ধারা আরও বহু বছর অব্যাহত থাকলে ইসলামী ইরান নানা বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারবে বলে মনে করা যায়। 

ইসলামী ইরানের বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ ও জনগণের আদর্শিক ঐক্য এই মহা-বিপ্লবকে দুর্বলতা ও বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করার অন্যতম প্রধান কারণ। বহু দেশের বিপ্লবই চিন্তাগত বা আদর্শিক ঐক্যের অভাবে আপোসকামিতা আর নানা ধরনের ঘরোয়া দ্বন্দ্বের শিকার হয়ে কিছুকাল পরই নিষ্ক্রিয় ও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। 

এ বিপ্লবের শুরুর দিক থেকেই সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা নেতারা বলতেন, এ বিপ্লব বড় জোর কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস টিকবে! কয়েক বছর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরানের ইসলামী বিপ্লব তার চল্লিশতম বিজয়-বার্ষিকী পালনের সুযোগ পাবে না। কিন্তু ট্রাম্পের সেই ভবিষ্যদ্বাণীও ব্যর্থ হয়েছে। ইসলামী ইরানের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের সূচিত সর্বশেষ বহুমুখী প্রচারণার ঝড় বইয়ে দেয়া হয়েছে বিশ্বের নানা দেশের সংবাদ, গণমাধ্যম ও এমনকি সামাজিক মাধ্যমেও! কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে কোনো কোনো বিষয়ে জনগণের মধ্যে কিছু ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও ইরানের ইসলামী নেতৃবৃন্দ ও ইসলামী বিপ্লবের মূল্যবোধের প্রতি এখনও ইরানের বেশিরভাগ জনগণই অবিচল আস্থা পোষণ করছেন।   ইরানের ইসলামী বিপ্লবের টিকে থাকা এবং অব্যাহত সাফল্য ও অগ্রগতির কারণ হল এ বিপ্লবের বাণীগুলোর সত্যতা বা বাস্তবতা। দুনিয়ার বহু বিপ্লব বা অভ্যুত্থানই ক্ষণস্থায়ী হওয়ায় সংশ্লিষ্ট জাতিগুলোর অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে বা তারা আগের মন্দ অবস্থায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু সত্যের বাণী এমন নয়। তা চিরস্থায়ী হয়। 

ওয়ালিয়ে ফকিহ বা সর্বোচ্চ ইসলামী আইনবিদের নেতৃত্বে ধর্ম-ভিত্তিক জন-শাসন-ব্যবস্থার যে মডেল ইসলামী ইরান উপহার দিয়েছে তা ইরানের ইসলামী বিপ্লবের শক্তিমত্তা ও দৃঢ়তাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। পশ্চিমা শক্তিগুলো প্রচার করে যে ইরানের প্রেসিডেন্টরা জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত হলেও সর্বোচ্চ নেতা জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত নন! অথচ ইরানের সংসদের উচ্চ-কক্ষ হিসেবে বিবেচিত বিশেষজ্ঞ পরিষদই সর্বোচ্চ নেতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে যে পরিষদ জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত। এ পরিষদ সর্বোচ্চ নেতাকে পদচ্যুত করার ক্ষমতা রাখে। এ পরিষদ দেখছে যে মরহুম ইমাম খোমেনীর পর ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা দূরদর্শী ও বিচক্ষণ পরিচালনার মাধ্যমে ইসলামী বিপ্লবকে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিয়েছেন। তিনি রাজনীতি, প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধমূলক অর্থনীতির ক্ষেত্রে জাতিকে শক্তিশালী করার নীতি অনুসরণ করে বিজাতীয় শক্তিগুলোর নানা বাধা আর ষড়যন্ত্রকে বানচাল করেছেন এবং নানা সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি ইসলামের বিপ্লবী মূল্যবোধগুলোকেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে চলেছেন।

 ইরানের বিরুদ্ধে যে হাজার হাজার বা লাখ লাখ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা শক্তিগুলো সেগুলোর বেশিরভাগই ব্যর্থ হচ্ছে ও অনেক ক্ষেত্রে বুমেরাং হচ্ছে ইরানের জনগণ ও নেতৃবৃন্দের ঐক্যের কারণেই। ইরানের ইসলামী বিপ্লবী জনগণের এক বিশাল অংশই ভোগ নয় বরং ত্যাগ, সম্মান ও স্বাধীনতার সংস্কৃতিকেই বেশি গুরুত্ব দেন। পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমে কখনও এ তথ্য তুলে ধরা হবে না যে ইসলামী বিপ্লবের আগে ইরানের সবচেয়ে সাধারণ মানের শ্রমিকরা যে আয় করত এখন সেই মানের শ্রমিকরাও প্রায় চারগুণ বেশি অর্থ উপার্জন করছেন।   

প্রখ্যাত ফরাসি চিন্তাবিদ মিশেল ফুকো ইরানের ইসলামী বিপ্লব পরিদর্শনে এসেছিলেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এবং ইরানী জনগণের ঐক্য ও সংহতি দেখে তিনি অভিভূত হয়েছেন। তিনি তাঁর 'নিষ্প্রাণ বিশ্বের প্রাণ ইসলামী বিপ্লব' নামক গ্রন্থে লিখেছেন-"বাস্তবতা হলো এই বিপ্লবী ঘটনার উদাহরণ ইতিহাসে বিরল। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করতাম, জনগণের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা বা প্রত্যয় অনেকটা খোদা কিংবা আত্মার মতোই অদৃশ্য, চোখে দেখা যায় না...কিন্তু আমরা তেহরানে এবং সমগ্র ইরানে একটি জাতির সামষ্টিক ইচ্ছা লক্ষ্য করেছি। এটা খুবই প্রশংসনীয় এবং বিরল একটি ঘটনা।

 কারণ এই বিপ্লবে পুরো একটি জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে।" তিনি আরো বলেছেন, "আধ্যাত্মিকতা ছিল ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মূলভিত্তি। এ বিপ্লব পুরনো চিন্তাধারার প্রতি ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করেছে। এ বিশেষত্ব ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে বিশ্বের অন্যান্য বিপ্লব থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দান করেছে এবং নিজেই একটি আদর্শে পরিণত হয়েছে।"

ইসলামী ইরান সামরিক শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানা ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। ইরান নিজের তৈরি একাধিক কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে মহাকাশে।   সামরিক শক্তিতে ইরান আজ এত উন্নত যে শত্রুরা ইরানে প্রকাশ্যে কোনো অভিযান চালানোর কথা চিন্তাও করতে পারছে না। রাডারকে ফাঁকি দিতে সক্ষম ইরানের বিভিন্ন ধরনের ড্রোন, ক্রুজ ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ দূরপাল্লার নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডার, সামরিক বিমান ও সাবমেরিন, মহাকাশ গবেষণা, ন্যানো প্রযুক্তি, মৌলিক কোষ বিষয়ক উন্নত গবেষণা বিশ্বের জ্ঞানী-গুণী মহলকে বিস্মিত করেছে। ফিলিস্তিনি, ইয়েমেনি, বাহরাইনি ও সিরিয়সহ বিশ্বের মজলুম জাতিগুলোকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ইসলামী ইরান

বিশ্বের সবচেয়ে স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতির অধিকারী হল ইরান। দেশটি আজ পরিপূর্ণ অর্থেই স্বাধীন। ইরানের স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি শান্তির জন্য নিবেদিত। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও গবেষক একেএম আনোয়ারুল কবির বলেছেন: ইসলামী ইরান স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির আওতায় সব সময়ই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শান্তি বজায় রাখতে চেয়েছে। ইসলামী সম্মেলন সংস্থা বা ওআইসির একটি স্বাধীন সদস্য হিসেবে সব সময় ভূমিকা পালন করেছে ইরান। এমনকি যেসব সরকার এক সময় ইরানের বিরুদ্ধে প্রবল শত্রুতা করেছে ও ইরানকে একঘরে করতে সমবেত প্রচেষ্টা চালিয়েছে সেসব দেশের বিরুদ্ধে সুযোগ পেয়েও ইরান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সাদ্দাম যখন কুয়েত দখল করে তখন বহু আরব দেশ চেয়েছিল সাদ্দাম ও ইরাকের বিরুদ্ধে ইরানকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে। কিন্তু ইরান তাতে সায় দেয়নি। যখনই কোনো মুসলিম দেশ সাম্রাজ্যবাদের হামলার শিকার হয়েছে তখনই ইসলামী ইরান তার প্রতিবাদ করেছে। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনী (র) কড়া প্রতিবাদ ছিল এর দৃষ্টান্ত।' 

 ইসলামী ইরানের ক্ষমতার কাঠামো, রাজনীতি ও সংস্কৃতি বাইরের শক্তিগুলোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত নয়। বিশ্বের অন্যতম প্রধান ক্ষমতাধর দেশের শক্তিশালী নেতা হওয়া সত্ত্বেও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা, প্রেসিডেন্ট এবং শীর্ষস্থানীয় নেতারা সবচেয়ে বিনয়ী ও জনদরদি। ইরানের সংসদ ও সরকারের রয়েছে জনগণের কাছে জবাবদিহিতার কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র প্রকাশ্যেই প্রেসিডেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে তার নানা কার্যক্রমের সমালোচনা করতে পারেন। সামাজিক নিরাপত্তা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার দিক থেকেও ইরান আজ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ। দেশটির নেতৃবৃন্দের খোদাভীতি ও সততাও শীর্ষ পর্যায়ের। 

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের স্থপতি ইমাম খোমেনী যদি চাইতেন তাহলে তার সন্তানদেরকে বড় ধরনের রাষ্ট্রীয় পদে নিয়োগ দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, বরং রাষ্ট্রীয় বড় কোনো পদ গ্রহণ না করতে সন্তানদেরকে উপদেশ দিয়ে গেছেন। 

ইরানই বিশ্বের একমাত্র ইসলামী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেখানে প্রতি বছর কোনো না কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ইরানের সংবিধান অনুযায়ী দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ বা ইসলাম বিরোধী কোনো দল গঠন নিষিদ্ধ। ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও এর স্থপতি মরহুম ইমাম খোমেনী দেশটির শাসন ব্যবস্থা ইসলামী প্রজাতন্ত্র-ভিত্তিক হবে কিনা এবং নতুন সংবিধানের প্রতি জনগণের সমর্থন আছে কিনা তা গণভোটের মাধ্যমে যাচাই করে নিয়েছিলেন। ইরানের ভোটারদের ৯৮ শতাংশই ইসলামী রাষ্ট্র-ব্যবস্থা ও সংবিধানের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।  এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে প্রকৃত ইসলামী ব্যবস্থা বা ইসলামী শাসনও জোর করে চাপিয়ে দেয়া যায় না জনগণের ওপর। 

ইসলামী ইরানের জনগণের প্রতি ইসলামী সরকারের অশেষ শ্রদ্ধাবোধের কারণে জনগণও এই বিপ্লবকে টিকিয়ে রাখার জন্য সব ধরনের ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করেছে।  এই দেশটিতে নানা রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও ধারা বা উপধারা থাকলেও সব ধারার অনুসারী জনগণ ইসলামী শাসন-ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার সমর্থক। আর তারই প্রমাণ পাওয়া যায় প্রতি বছর ইসলামী বিপ্লবের বিজয়-বার্ষিকীতে গণ-শোভাযাত্রায় সারা দেশের সব শ্রেণীর মানুষের অংশগ্রহণ থেকে। এমনকি ইরানের অমুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরাও এই শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে থাকেন।

কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের নিয়ন্ত্রিত প্রচারমাধ্যমগুলো এই শোভাযাত্রায় সর্বস্তরের কোটি কোটি ইরানির অংশগ্রহণের খবরকে যথাযথভাবে প্রচার করে না। ইসলামী ইরানের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদের প্রচার যুদ্ধের আওতায় এটা করা হয়। 

পশ্চিমা শক্তিগুলো ইরানকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ও জাতি হিসেবে তুলে ধরার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। অথচ ইরান বিশ্ব-শান্তির জন্য জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ দু'টি প্রস্তাব দিয়েছে: প্রথমতঃ পরমাণু অস্ত্র-মুক্ত মধ্যপ্রাচ্য গড়া ও দ্বিতীয়তঃ বিশ্ব থেকে গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র নির্মূল করা। এ থেকেই বোঝা যায় যে ইরান মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কত নিবেদিত। অথচ ইরানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে। ... ইরানের বিরুদ্ধে এই যে কোমল বা প্রচার যুদ্ধ (soft war) তার মোকাবেলায়ও ইরান যে সফল হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পরমাণু চুক্তিতেও তারা প্রমাণ করেছে যে ইরান কখনও পরমাণু শক্তিকে ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করতে চায়নি। এ ছাড়াও ইরান প্রকৃত ফিলিস্তিনিদের অংশগ্রহণে একটি গণভোটের মাধ্যমে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু ইহুদিবাদী ইসরাইল গায়ের জোরে ফিলিস্তিনকে দখলে রাখতে চায় বলেই ইরান প্রতিরোধ সংগ্রামীদের সহায়তা দিতে বাধ্য হচ্ছে। এসব দৃষ্টান্ত থেকেই বোঝা যায় যে ইরান মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কত বেশি নিবেদিত।  
 
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রভাবেই গড়ে উঠেছে ফিলিস্তিনের ইন্তিফাদা আন্দোলন এবং হামাস ও ইসলামী জিহাদের মত সংগ্রামী দল। লেবাননের হিজবুল্লাহর ইসরাইল-বিরোধী কিংবদন্তীতুল্য সাফল্যের মূলেও রয়েছে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী চেতনার সেই জনপ্রিয় ঐতিহাসিক শ্লোগান: প্রতিটি দিনই আশুরা ও প্রতিটি ময়দানই কারবালা। কাসেম সুলায়মানি ও ফাখরিজাদের মত মহান বিপ্লবী আর গুণী শহীদদের দেশ ইসলামী ইরান ইসলামী বিপ্লবের পথে এভাবেই তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে এবং মহান আল্লাহর নুর চারিদিকে ছড়িয়ে দিবে তা সত্যের শত্রুরা ইসলামকে যতই অপছন্দ করুক না কেন!
ইসলামী বিপ্লবের বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে আবারও অজস্র শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।   #

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ