ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২১ ১২:৪৭ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠক! ৩ ফেব্রুয়ারি বুধবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবরের শিরোনাম:

  • বার বার ভুয়া খবর প্রচারে সমালোচনায় আলজাজিরা, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে-ইত্তেফাক
  • ভাটারায় তৈরি হতো বিদেশি ব্র্যান্ডের ভেজাল মদ–যুগান্তর
  • এবি ব্যাংকের দেড়শ’ কোটি টাকা লোপাট, সোহরাওয়ার্দীতে যন্ত্রপাতি ক্রয়-৬৮ কোটি টাকার অডিট আপত্তি – মানবজমিন
  • সীমান্তে ফের রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা, বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চেয়েছে ইউরোপের দু’টি দেশ-মানবজমিন
  • পুলিশের ঊর্ধ্বতন ৩১ কর্মকর্তা বদলি-কালের কণ্ঠ
  • টিকাদান নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জে সরকার-নিবন্ধনে সাড়া কম, বিকল্প একগুচ্ছ পরিকল্পনা-সমকাল

এবার ভারতের কয়েকটি খবরের শিরোনাম:

  • কৃষি আইন নিয়ে উত্তাল রাজ্যসভা, সাসপেন্ড আপ-এর ৩ সাংসদ-আনন্দবাজার পত্রিকা
  • জোরালো হচ্ছে আন্দোলন, হরিয়ানায় টোলপ্লাজা, জাতীয় সড়ক অবরোধ কৃষকদের-আজকাল
  • কৃষক আন্দোলনে মৃতের তথ‌্য দিতে ব্যর্থ কেন্দ্র, দেওয়া হবে না ক্ষতিপূরণও-সংবাদ প্রতিদিন

শিরোনামের পর এবার দুটি বিষয়ের বিশ্লেষণে যাব। 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১. ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের হলে মাদক সেবন, ছাত্রলীগ নেতা আটক। কী বলবেন এ খবর সম্পর্কে?
২. মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর কয়েকশ সংসদ সদস্যকে খোলা আকাশের নিচে আটকে রাখা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে কীভাবে দেখছেন মিয়ানমার পরিস্থিতিকে?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর

হঠাৎ বেড়েছে বিত্তশালীর সংখ্যা-বাংলাদেশ প্রতিদিন

দলীয় প্রভাব, মাদক, টেন্ডার, দখলবাজি, দালালি, প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাতারাতি হয়ে যাচ্ছেন বিপুল টাকার মালিক

বৈধ আয়ের পথ ছাড়াই রাতারাতি বিত্তশালী বনে যাওয়া কয়েক হাজার মানুষ দেশের বড় আপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের বেপরোয়া কর্মকান্ড দেশ ও সমাজের সর্বস্তরে অসম পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে, ঘটাচ্ছে সীমাহীন বিশৃঙ্খলা। সমাজে কোন্দল-সংঘাত, জবরদখলদারি, একচ্ছত্র আধিপত্যের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাসহ লাগামহীন অপরাধ-অপকর্মের নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা। তাদেরই একটি বড় অংশ দলীয় নেতৃত্ব দখল করছে, ছিনিয়ে নিচ্ছে জনপ্রতিনিধির চেয়ার। শুরু হয়েছে শাসন-শোষণের মাধ্যমে রাতারাতি সম্পদ বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা। ফলে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, তদবিরবাজি থেকে শুরু করে সব ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে বাধাহীনভাবে।

জানা যায়, সর্বশেষ এক দশকে মাদক, টেন্ডার, দলীয় প্রভাব, দখলবাজি, দালালি, প্রতারণামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমেই অন্তত ১০ হাজার কোটিপতির জন্ম হয়েছে। এর বেশির ভাগেরই বৈধ আয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। এর মধ্যে অন্তত ১ হাজার কোটিপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দাখিল হলেও তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ কোনো ব্যবস্থাও দৃশ্যমান নয়। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, উৎসহীন বেশুমার টাকার গরমে তারা সমাজ, দল ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে নানা বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে নিজেদের ক্ষমতা জানান দেয়। সর্বত্রই অসম লড়াই সৃষ্টি করে।

অনুসন্ধানসূত্রে জানা যায়, হঠাৎ বড়লোক বা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার বৈধ কোনো উপায় নেই বাংলাদেশে। ‘যদি লাইগ্যা যায়’ ধরনের লটারিব্যবস্থাও নেই। আছে রাতারাতি অলৌকিক কায়দায় আলাদিনের আশ্চর্য জাদুর প্রদীপ লাভ, ‘ম্যাগনেটিক পিলার’ কিংবা তক্ষক লেনদেনের বাণিজ্য, ঠিকাদারি ব্যবসা চালানো, ইয়াবা বাণিজ্যে অংশগ্রহণ আর তাদের সর্বোত্তম পথ হিসেবে রয়েছে তদবিরবাজির দাপুটে বাণিজ্য।

ভাঙারি দোকানের কর্মচারী যখন চিফ কেমিস্ট ভাটারায় তৈরি হতো বিদেশি ব্র্যান্ডের ভেজাল মদ

উপকরণ- রং, পানি, চিনির রস, স্পিরিট এবং কেমিক্যাল * এ মদপানে ঘটছিল একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা * মালিকসহ ৬ জন ৫ দিনের রিমান্ডে-দৈনিক যুগান্তর

রাজধানীর ভাটারায় তৈরি হচ্ছিল বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল মদ। নাসির আহমেদ ওরফে রুহুল নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে নকল মদ তৈরি ও বিক্রি করে আসছিল।

মাঝে মাঝে টিউনিং করে একটি মদের বোতল থেকে ২-৩ বোতল মদ তৈরি করত তারা। সম্প্র্রতি ওয়্যারহাউজগুলো থেকে মদ কেনায় কড়াকড়ির পরিপ্রেক্ষিতে বাজারে সংকট তৈরি হয়। এ সুযোগে তারা নকল মদ তৈরির কারখানা গড়ে তোলে।

মিটফোর্ট হাসপাতালের আশপাশ এলাকা থেকে স্পিরিট, স্টিকার, রং সংগ্রহ করে, চিনি পোড়ানো কালার ব্যবহার করে মুহূর্তের মধ্যে নকল মদ তৈরি করতেন তারা।

ম্যানেজার আলামিন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতার মাধ্যমে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দিতেন। রাশিয়ান, স্কটিশ, সুইডিশ এবং ইংলিশ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদের নাম করে মূলত স্প্রিট, রং আর পচা পানি বিক্রি করে আসছিলেন তারা। এ মদের কারখানার চিফ কেমিস্ট ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন; যিনি ভাঙারি দোকানের কর্মচারী ছিলেন।

বিভিন্ন প্লাস্টিক ও কাচের বোতল সংগ্রহ করে মিটফোর্ডে বিক্রি করাই ছিল তার কাজ। নিরক্ষর জাহাঙ্গীর আলমই বিদেশি মদ তৈরির কারখানার প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা হয়ে যান।

তিনি চড়ামূল্যে মদ্যপ এবং পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের হাতে তুলে দিতেন মদ নামক বিষ। আর এতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েকদিনে এ মদ পান করে রাজধানীতেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ছয়জন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সম্প্রতি নকল এ মদ তৈরির কারখানা অবিষ্কার করে। গ্রেফতার করে এর সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে। মঙ্গলবার তাদের আদালতে হাজির করে ৫ দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি।

টিকাদান নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জে সরকার-নিবন্ধনে সাড়া কম, বিকল্প একগুচ্ছ পরিকল্পনা-সমকাল

আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে একযোগে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এই কর্মসূচির আওতায় প্রতিদিন দুই লাখ করে মাসে ৬০ লাখ মানুষকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী দেশের সব জেলায় টিকা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু টিকা পেতে আগ্রহ প্রকাশ করে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৫০ হাজার ২৬০ জন 'সুরক্ষা' ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত হয়েছেন। এ হিসাবে গতকাল ছিল সপ্তম দিন। এর আগে গত সোমবার ষষ্ঠ দিনে ৩০ হাজার ৮০০ মানুষ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছিলেন। সপ্তম দিনে আরও ১৯ হাজার ৪৬০ জন টিকা পেতে নিবন্ধন করলেন। তবে এই সংখ্যা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নিবন্ধন ছাড়া কেউ টিকা নিতে পারবেন না। অন্যদিকে, মানুষও নিবন্ধনে তেমন সাড়া দিচ্ছেন না। অনেকেই নিবন্ধন করতে পারছেন না। স্মার্টফোনও সব মানুষের হাতে নেই। এ অবস্থায় প্রতিদিন দুই লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। পুরো টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে সরকার নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবে নিবন্ধন কার্যক্রম সহজ করাসহ একগুচ্ছ বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার।

প্রতিদিনই টিকাদান কার্যক্রম নিয়ে মন্ত্রী, সচিব, ডিজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করছেন। আবার কখনও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করে পরামর্শ দিচ্ছেন অথবা তাদের মতামত শুনছেন। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা টিকার নিবন্ধন নিয়ে সবচেয়ে বেশি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন। কয়েকজন সিভিল সার্জন টিকা ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারি পরিকল্পনা আরও পর্যালোচনা ও সংশোধনের দাবি করেছেন।

কেন সাড়া কম :নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলার সিভিল সার্জন সমকালকে বলেন, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করেন। কিন্তু টিকাদান কেন্দ্রের সর্বশেষ অবস্থান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব ৮ থেকে ১২ কিলোমিটারের মধ্যে। আবার গ্রামের অনেক স্থানে নিবন্ধনের সুযোগ কম। এ অবস্থায় গ্রামাঞ্চলের মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী নাও হতে পারেন। এ কারণে নিবন্ধন কম হচ্ছে।

মহানগরী এলাকার একজন সিভিল সার্জন জানান, দেশে প্রথমে করোনা চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হবে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ১০ লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা সবাই নিবন্ধন করলেও এতদিনে ১০ লাখের বেশি নিবন্ধন হয়ে যেত। এরপর সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১৫ ক্যাটাগরির ৬০ লাখ মানুষকে প্রথম ধাপে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে। কিন্তু তাতে সাড়া কম। এ বিষয়ে সংশ্নিষ্টদের গুরুত্ব দিতে হবে।

রাজশাহী বিভাগের এক সিভিল সার্জন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ফোন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর চেয়ে তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। ওই চিঠিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের টিকার জন্য ফোন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর প্রয়োজন। এতে সবাই ধরে নিয়েছিল, টিকা নিতে কারও নিবন্ধন করতে হবে না। এটিও নিবন্ধন কম হওয়ার কারণ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, প্রথম ধাপে টিকা নেওয়ার জন্য তার পরিবারের চারজন সদস্য রয়েছেন। ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা মা-বাবা এবং তিনি ও তার স্ত্রী। এই চারজনের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত তিনজনের নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পেরেছেন। তার মায়ের এখনও নিবন্ধন করতে পারেননি। কারণ নিবন্ধন করতে গিয়ে সুরক্ষা নামের নির্ধারিত ওয়েবসাইটটিতে নানামুখী সমস্যা হচ্ছে। সাইটটি ধীরগতির। এ কারণে আপলোড নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যায়। আবার অনেক সময় সব তথ্য দেওয়ার পরও নিবন্ধন নিচ্ছে না। এসব জটিলতার কারণে অনেকে নিবন্ধন করার আগ্রহ হারাচ্ছেন।

তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অ্যাপ ও উদ্ভাবন প্রকল্পের প্রধান তারেক বরকতউল্লাহ বলেন, ওয়েবসাইটে কোনো ধীরগতি নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যে নিবন্ধনে সাড়া কম। প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ থেকে ছয়জন করে নিবন্ধিত হচ্ছেন। অনেকে নিবন্ধনের জন্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু সঠিক ক্যাটাগরি নির্বাচন, বয়সসীমাসহ বিভিন্ন ভুল তথ্য দেওয়ার কারণে ওয়েবসাইট সাড়া দিচ্ছে না। এতে অনেকে মনে করছেন, ওয়েবসাইটে ধীরগতি হচ্ছে। এটি সঠিক নয়।

সহজ করা ও বিকল্পের তাগিদ :নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ ও বিকল্প ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, টিকাদানের প্রক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে, সরকার চাচ্ছে মানুষ আগ্রহী হয়ে টিকা নেবে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি এত জটিল করে রাখা হয়েছে, যাতে মানুষ আগ্রহী হচ্ছে না। এখন সরকারের উচিত হবে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানো। প্রতিটি এলাকা ধরে নির্ধারিত দিনে মানুষকে আহ্বান করতে হবে। তাদের ফোন নম্বর ও এনআইডি নম্বর নিয়ে আসতে বলা হোক। তাদের নিবন্ধন করে সঙ্গে সঙ্গে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে পরবর্তী নির্ধারিত দিনে টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের হাজির হতে হবে। এভাবে প্রক্রিয়াটি সহজ করা হলে টিকদানে সফলতা আসবে।

চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব সমকালকে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন করে টিকা নিতে হবে, তা অত্যন্ত জটিল। দেশের অধিকাংশ মানুষই নিজে নিজে ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন না। আশঙ্কা হচ্ছে, এই নিবন্ধনের জন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে ল্যাপটপ ও কম্পিউটার নিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা বসে যাবেন। নিবন্ধন প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে হাতিয়ে নেবে। সরকার তাদের এই সুযোগটি করে দিচ্ছে। কিন্তু টিকাকেন্দ্রে নির্ধারিত দিনে নিবন্ধন করে টিকার ব্যবস্থা করা গেলে ভোগান্তি কম হবে। একই সঙ্গে মানুষও আগ্রহী হবেন। সরকারকে বিকল্প ভাবতেই হবে। অন্যথায় টিকাদান কার্যক্রম সফল হবে না।

বিকল্প একগুচ্ছ পরিকল্পনা:করোনাভাইরাসের টিকা নিবন্ধনের জন্য 'সুরক্ষা' অ্যাপে সাড়া কম থাকায় সরকারের হাইকমান্ডও উদ্বিগ্ন। টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে সরকার বিকল্প একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিবন্ধন বুথ চালু করা। একই সঙ্গে ওই সব বুথ থেকে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত মাইকিং করা হবে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক মুখপাত্র ও এনসিডিসি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন সমকালকে বলেন, করোনাভাইরাসের টিকার জন্য 'সুরক্ষা' নামের নিবন্ধন অ্যাপটি ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে উন্মুক্ত করা হবে। এখন এটি সুরক্ষা ওয়েবসাইট আকারে আছে। ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে গিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে কিছু অভিযোগ এসেছে। এগুলো আইসিটি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। তারা এটি সমাধান করে দেবে।

চলমান নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন দুই লাখ করে মানুষকে টিকাদানের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন করা সম্ভব হবে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০ লাখ মানুষের ফোন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে। নিবন্ধন অ্যাপে সাড়া কম থাকলে সংগ্রহে থাকা ওই জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এরপর তাদের টিকার আওতায় আনা হবে।

সরকারের করোনা টিকা ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কোর কমিটির সদস্য এবং জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএমএম আলমগীর সমকালকে বলেন, সুরক্ষা ওয়েবসাইটে নিবন্ধনে সাড়া কম থাকার বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। এর পরই তারা বিকল্প একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে প্রত্যেকটি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রে নিবন্ধন বুথ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশ্নিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আজ বুধবার থেকে সারাদেশে এই প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন শুরু হবে। একই সঙ্গে নিবন্ধনে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মাইকিং করা হবে। গণমাধ্যমে প্রচার ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে নিবন্ধনে ব্যাপক সাড়া মিলবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, নিজে না পারলে অন্যের সাহায্য নিয়ে অ্যাপের মাধ্যমে টিকা পেতে নিবন্ধন করুন। ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকেও নিবন্ধনের জন্য যেতে পারেন। এ ছাড়া টিকা কেন্দ্রে গিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন। সুতরাং নিবন্ধনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থাই করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান থাকবে, শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত নিজ নিজ এলাকার জনসাধারণকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করুন। প্রয়োজন হলে নিজেরা মানুষকে টিকা কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। কারণ করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ এই টিকা। সুতরাং সবাইকে টিকা নিতে হবে। তাহলেই আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরা যাবে।

ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

কৃষি আইন নিয়ে উত্তাল রাজ্যসভা, সাসপেন্ড আপ-এর ৩ সাংসদ-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা

সংসদের অধিবেশন শুরু হতেই কৃষি আইন নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠল রাজ্যসভা। কৃষি আইন নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন আম আদমি পার্টি (আপ)-এর ৩ সাংসদ। চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু এ ব্যাপারে ওই ৩ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ, এনডি গুপ্ত এবং সুশীল গুপ্তকে সতর্ক করেন। কিছু ক্ষণ পরে ওই ৩ সাংসদকেই সাসপেন্ড করেন বেঙ্কাইয়া।

বুধবার অধিবেশের শুরুতেই রাজ্যসভার চেয়ারম্যান সতর্ক করেছিলেন, অধিবেশন চলাকালীন যেন ফোন ব্যবহার না করা হয়। অনেকেই অধিবেশন চলাকালীন তা মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দি করছেন বলে জানান তিনি। এর পরই নায়ডু বলেন, “এই ধরনের কাজ সংসদীয় শিষ্টাচার বিরুদ্ধ।”

কৃষক আন্দোলনে মৃতের তথ‌্য দিতে ব্যর্থ কেন্দ্র, দেওয়া হবে না ক্ষতিপূরণও-সংবাদ প্রতিদিনের এ খবরে লেখা হয়েছে, দিল্লির সীমানায় কৃষক আন্দোলনে (Farmers Protest) কতজন কৃষক এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন তার কোনও হিসাব নেই কেন্দ্রের কাছে। মঙ্গলবার এমনটাই জানানো হয়েছে কৃষিমন্ত্রকের তরফে। আরও একটি বিষয় এদিন স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, আন্দোলনে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, যাঁদের শহিদের তকমা দিয়েছেন কৃষকরা – তাঁদের পরিবারকে কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।

আজকালের খবরে লেখা হয়েছে,কৃষকদের পাশে এবার রিহানা, গ্রেটা থুনবার্গ তবে  পাল্টা আক্রমণ করলেন কঙ্গনা।দৈনিকটির অন্য একটি খবরে লেখা হয়েছে জোরালো হচ্ছে কৃষক আন্দোলন। হরিয়ানায় টোলপ্লাজা এবং জাতীয় সড়ক অবরোধ করল কৃষকরা। 

দেশ জুড়ে প্রবল বিক্ষোভের জেরে ভারতের সঙ্গে বন্দর-টার্মিনাল গড়ার চুক্তি বাতিল করল শ্রীলঙ্কা। বন্দরের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দিন ধরে বিক্ষোভ চলছিল সেখানে। তাতেই শেষমেশ চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহিন্দা রাজাপক্ষ সরকার। এটি দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার খবর।

পেট্রোল-ডিজেলের পথে এবার কেরোসিনও (kerosene oil )। ভরতুকি উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবার কেরোসিনের উপর থেকেও।ফলে মধ্যবিত্তের মাথায় হাত!

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৩

  • বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।


 

ট্যাগ