ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২১ ১৮:৩০ Asia/Dhaka

সাম্রাজ্যবাদী শিবির ও তাদের অনুচর সরকারগুলো যে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বদনাম করার জন্য শিয়া মুসলিম মাজহাবের সঙ্গে সুন্নি মুসলিম মাজহাবের মতপার্থক্যকে অপব্যবহারের চেষ্টা করছে তা আমরা গত পর্বের আলোচনায় জেনেছি।

এ প্রসঙ্গে আমরা গতকাল অধ্যাপক ডক্টর রাশিদ বেনআইসসার তুলে ধরা অকাট্য নানা যুক্তি ও কয়েকটি দৃষ্টান্ত সম্পর্কেও জেনেছি। অধ্যাপক ডক্টর রাশিদ বেনআইসসা একই প্রসঙ্গে আরও কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, আরব সরকারগুলো চায়নি যে খোমেনী সেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করুক যা করা উচিত ছিল আরব রাজা-বাদশাহদের। তাদের কথা: খোমেনী তো আরব ও ফিলিস্তিনিদের প্রতিবেশী নন। বৃহত্তম আরব দেশ মিশরের উচিত ছিল ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতা করা। সাত লাখ আরব-সুন্নি ও প্রতিবেশী ফিলিস্তিনি শরণার্থীর জন্যও কিছুই করেনি মিশর সরকার। তারা যদি সুন্নিদের প্রতি আন্তরিক হত তাহলে অবশ্যই তাদের সাহায্য করতো। তারা কি করেছে বসনিয়ার জন্য? বসনিয়ায় সাড়ে তিন লাখ মুসলমান নিহত হয়েছে। আর তা ঘটেছে ইউরোপের মধ্যে ইউরোপীয়দের হাতে! অধ্যাপক ডক্টর রাশিদ বেনআইসসা বলেন, 

আমি বসনিয়ায় অনেকবার গিয়েছি। আমি ইজ্জতবেগোভিচের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম তিন বার। তিনি বলেছিলেন, ইরান না থাকলে বসনিয়ার অস্তিত্বই থাকতো না। ইসলামী ইরানই বসনিয়ার এক লাখ ২০ হাজার সেনাকে অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এসবই করেছে শিয়া খোমেনী ও শিয়া-ইরান। কেন সুন্নিরা তাদের সাহায্য করেনি? বার্মায় এখন কি ঘটছে?
সৌদি সরকার এখন ইয়েমেনকে ধ্বংস করছে ও সেখানকার সন্ত্রাসীসহ সন্ত্রাসী নানা গোষ্ঠীকে অর্থ দিচ্ছে। অথচ সব আরব গোত্রের উৎসস্থল ইয়েমেন। সৌদি আরবের দুই-তৃতীয়াংশ জনগণই ইয়েমেনি। কিন্তু দেখুন সৌদিরা কি করছে ইয়েমেনে? এটা কি রাসুলের সুন্নাত?  তাই এই প্রতারণার বিষয়টি সবাইকে বুঝতে হবে। জনগণ এখন এসব বিষয়ে ক্রমেই বেশি সচেতন হয়ে উঠছে। পাশ্চাত্যের সেবাদাস আরব রাজা-বাদশাহরা ও ইসরাইল সিরিয়াকে ভয় পাচ্ছে। কারণ, সিরিয়া ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি। আর এটাই হচ্ছে সিরিয়ার একমাত্র অপরাধ। ইসরাইল গাদ্দাফির সঙ্গেও একই ধরনের কাজ করেছে। গাদ্দাফি ফ্রান্স ও ব্রিটেনকে শত শত কোটি ডলার অর্থ দিয়েছেন নিজেকে রক্ষার জন্য। কিন্তু তিনি কেন ফিলিস্তিনিদের এতো অর্থ দেননি? 

কয়েক বছর আগে দেয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ডক্টর রাশিদ বেনআইসসা আরো বলেন, তিন চার বছর আগে আমি ফিলিস্তিনি নেতা ইসমাইল হানিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। তিনি জানান, ইরানে সফরের আগে তিনি কাতারে এসেছিলেন। তাকে বলা হল, ইরানে যাবেন না। হানিয়া বললেন: আমি ইরানে যাচ্ছি অর্থ ও ক্ষেপণাস্ত্র আনতে। আমাকে তাহলে অর্থ ও ক্ষেপণাস্ত্র দিন, আমি তাহলে ইরানে যাব না! আসলে সত্যকে ঢেকে রাখা সব সময় সম্ভব নয়। 
ইমাম খোমেনী (র) মূর্তাদ সালমান রুশদির বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া দিয়েও মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার সহায়ক ভূমিকা রেখেছেন। সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা শক্তিগুলো ও বিশেষ করে ফ্রান্স বাক-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে মহানবীর (সা) অবমাননাকর পদক্ষেপ নেয়ায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বিশ্ববাসীর কাছে প্রশ্ন করেছেন,  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হলোকাস্টের কথিত হত্যাযজ্ঞ বা জার্মান নাৎসীদের হাতে ৬০ লাখ ইহুদি নিধনের কল্প-কাহিনী বা অতিরঞ্জনের বিষয়ে কেনো পাশ্চাত্যে কথা বলা যায় না এবং এ বিষয়ের সত্যতা চালেঞ্জ সংক্রান্ত গবেষণা বা তদন্ত কেন নিষিদ্ধ? এ কেমন দ্বিমুখী বাক-স্বাধীনতা?! 
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (র) সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ ও শিবিরের পতন ঘটার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং এই ভবিষ্যদ্বাণীর এক বছরের মধ্যেই তা বাস্তব হয়ে দেখা দেয়। তিনি মিখাইল গর্বাচেভের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে ও এ ব্যাপারে তার গবেষক-টিমকে পড়াশুনা করতে ইরানে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে মহানবীরই আরেকটি বড় সুন্নাত পালন করেন। 
ইরানের ইসলামী বিপ্লব কেবল মুসলমানদের জন্যই নয়/ বঞ্চিত, শোষিত ও নির্যাতিত অমুসলিম জাতিগুলোর জন্যও আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের শিকার কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় ও আফ্রিকার জনগণের অনেকেই ইরানের ইসলামী বিপ্লবের আদর্শে প্রভাবিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। ইরানে ইসলামী বিপ্লবের সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে দেশে দেশে জুলুম-বিরোধী সংগ্রাম বিশেষ করে ফিলিস্তিনে, কাশ্মিরে, মিশর, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, ইয়েমেন, লেবানন ও ইরাকে ইসলামী জাগরণ ও মুক্তি-সংগ্রাম জোরদার হয়ে ওঠে। অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে ভূমিকার কারণে ইরানের সঙ্গে কিউবা, ভেনিজুয়েলা ও ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরাক ও সিরিয়ায় পশ্চিমাদের মদদপুষ্ট তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সন্ত্রাস দমনে প্রধান ও শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা রেখে ইরানের ইসলামী নেতৃবৃন্দ এ অঞ্চলের জনগণের হৃদয়ে এবং বলতে গেলে সারা বিশ্বের শান্তিকামী ও ন্যায়বিচারকামী জনগণের হৃদয়ে অক্ষয় আসন করে নিয়েছেন। আর এই নেতৃবৃন্দের মধ্যে শহীদ কাসেম সুলায়মানি বিশ্বব্যাপী অনন্য বীরের মর্যাদা পেয়েছেন। একই কারণে ইসরাইল-বিরোধী লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিযবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস ও জিহাদের নেতৃবৃন্দও  বিশ্বের শান্তিকামী ও ন্যায়বিচারকামী জনগণের চোখের মনি হয়ে আছেন। অনেকটা একই ধারায় অগ্রসর হয়ে ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছে ইরাকের জনপ্রিয় স্বেচ্চাসেবী বাহিনী পিএমইউ বা পপুলার মবিলাইজেশন ইউনিট ও ইয়েমেনের আনসারউল্লাহ। উল্লেখ্য বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে এক বছর আগে কাসেম সুলাইমানির সঙ্গেই শাহাদাত বরণের সৌভাগ্য অর্জন করেন পিএমইউ'র শীর্ষস্থানীয় কমাণ্ডার আবু মাহদি মুহান্‌দিস। 

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (রা) ও বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীসহ শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ বলে আসছেন যে ইহুদিবাদী ইসরাইল ও মার্কিন সাম্রাজ্যের পতনও অবশ্যম্ভাবী। এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-উত্তর নানা নৈরাজ্যময় ঘটনায় ও তার আগে অধিকারবাদীদের প্রতিবাদের নানা ঘটনায় এইসব শক্তির পতনের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/০৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ