ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২১ ১৭:১৫ Asia/Dhaka

ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে একটি বড় ধরনের বিপ্লব বা মহাবিপ্লব বলা যায় এ কারণে যে এ বিপ্লব নানা ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন এনেছে এবং এই পরিবর্তনগুলোকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বজায় রেখেছে যা প্রচলিত অন্য বিপ্লবগুলোতে দেখা যায় না।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের তিনটি বড় বৈশিষ্ট হল: ইসলামী বিপ্লবের মূল্যবোধগুলোকে প্রভাব-বিস্তারকারী শক্তি হিসেবে অব্যাহত রাখতে পারা, পরাশক্তিগুলোর সহায়তা ছাড়াই প্রকৃত স্বাধীনতা বজায় রাখা এবং ইসলামী বিপ্লবের পথে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরাশক্তিগুলোর একাধিপত্যকামীতাকে ভেঙ্গে দিয়েছে ইরানের ইসলামী বিপ্লব। ন্যায়বিচারকামী এ বিপ্লব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেও  প্রকৃত সংগ্রামের এক বড় মডেলে পরিণত হয়েছে। 
 
জাতিগুলোকে স্বাধীনভাবে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার দেয়ার পক্ষে এবং পরাশক্তিগুলোর একপেশে নীতির বিপক্ষে কথা বলে আসছে ইরানের ইসলামী সরকার। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগলিক অখণ্ডতা রক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামী ইরানের প্রতিরোধ ও সংগ্রামের নীতি দেশে দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ফলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো ও তাদের পুতুল সরকারগুলোর বিরুদ্ধে জেগে উঠ্‌ছে মজলুম এবং সচেতন জাতিগুলো।
ইরানের নেতৃত্বে রাজনৈতিক ইসলামের ব্যাপক সাফল্যে আতঙ্কিত পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ। মার্কিন চিন্তাবিদ ও তাত্ত্বিক হান্টিংটন এ প্রসঙ্গে বলেছেন: 'ইসলাম নিজেকে পাশ্চাত্যের প্রতিদ্বন্দ্বি বলে মনে করছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব-ব্যবস্থার জন্য এটাই হচ্ছে মূল বিপদ।'  
 
চমস্কির মত বিশ্বখ্যাত বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রভাবে  বিশ্বের মজলুম ও সংগ্রামী জাতিগুলোর স্বাধীনতা ও মুক্তিকামীতা এবং ন্যায়কামীতা জোরদার হয়েছে। আর এ জন্যই ইসলামী ইরানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের নীতি ব্যবহার করছে মার্কিন সরকার যাতে অন্য কোনো দেশ বা জাতি ইরানের অনুসরণ না করে কিংবা মার্কিন আধিপত্যকামীতার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে না দাঁড়ায়। কিন্তু শত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরানের সংগ্রামী ও বিপ্লবী নীতির সাফল্য বিশ্বের মুক্তিকামী জাতিগুলোর জন্য দিনকে দিন বড় ধরনের অনুপ্রেরণা ও সংগ্রামের আদর্শ বা মডেলে পরিণত হচ্ছে।
 
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের আরেকটি বড় সাফল্য হল এর ধর্ম-ভিত্তিক গণ-শাসন-ব্যবস্থা। ইসলামই জনশাসনকে গুরুত্ব দিয়েছে বলে এ বিপ্লব বিজয়ের পর পরই দেশের অবিসম্বাদিত তৎকালীন নেতা ইমাম খোমেনী (র) জনগণের অংশগ্রহণ-ভিত্তিক ইসলামী রাষ্ট্র-ব্যবস্থা চালুর প্রশ্নে গনভোটের নির্দেশ দেন। এই গণভোটে শতকরা ৯৮ শতংশ জনগণ গণ-ভিত্তিক ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পক্ষে ভোট দেন। অথচ গণভোট ছাড়াই ইসলামী রাষ্ট্র-ব্যবস্থা চাপিয়ে দিতে পারতেন ইমাম খোমেনী।  ওই গণভোটের পর ইরানে প্রায় প্রতি বছরই কোনো না কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ে কিংবা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে এবং প্রেসিডেন্ট পদসহ নানা ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছে এসব নির্বাচন। আর এসব নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বেশিরভাগ নাগরিক।  
 
ইসলামী বিপ্লবের পর চার দশকেরও বেশি সময় ধরে খোদা-প্রদত্ত নাগরিক অধিকার হিসেবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার টিকে থাকার বিষয়টি ইরানের এই বিপ্লবকে করেছে বিশ্বের সবচেয়ে গণ-ভিত্তিক বিপ্লব। প্রতি বছর এই বিপ্লবের বিজয়ের বার্ষিকীর শোভাযাত্রায় ইরানের প্রতিটি শহরের অধিকাংশ নাগরিকের অংশগ্রহণের ব্যাখ্যাও পাওয়া যায় এখানেই।  
এটা স্পষ্ট জনগণই ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে বিজয়ী করেছে এবং জনগণই এ বিপ্লবকে টিকিয়ে রেখেছে।
নির্বাচনসহ ইসলামী ইরানের সবক্ষেত্রে জনগণের রায়ের মত বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেও সমানভাবে শ্রদ্ধাভরে মেনে চলা হয়। আর তাই ইরানি জনগণও এই বিপ্লবী ইসলামী রাষ্ট্রের  নীতিমালা ও নেতৃবৃন্দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
ইরানের সার্বিক সমৃদ্ধি ও বিশ্বজোড়া ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী জোট। কিন্তু শত হুমকি আর বাধা সত্ত্বেও বিশ্বগ্রাসী ও লুটেরা শক্তিগুলোর ঘুম হারাম করে দিয়ে ইরানের ইসলামী বিপ্লব তার গৌরবময় ৪২ তম বিজয়-বার্ষিকীর প্রাক্কালেও মুক্তিকামী, সচেতন ও গৌরব-পিয়াসী জাতিগুলোর জন্য আদর্শিক অনুপ্রেরণার প্রধান আলোক-সম্পাত-কেন্দ্র হিসেবে জ্বলজ্বল করছে। প্রখ্যাত মার্কিন চিন্তাবিদ নোয়াম চমস্কি ইসলামী ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর প্রবল শত্রুতার কারণ তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন: 'যতদিন ইরান স্বাধীনচেতা থাকবে ও মার্কিন কর্তৃত্বকামীতার কাছে মাথা নোয়াবে না ততদিন মার্কিন  সরকারের শত্রুতা অব্যাহত থাকবে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান মার্কিন সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, দেশটি তার স্বাধীনতার বিষয়কে অগ্রাহ্য করে না।'
চমস্কি আরও বলেছেন: 'ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানই প্রথমবারের মত বিশ্বে সফল ইসলামী-রাজনৈতিক বিপ্লবের মডেল উপস্থাপন করেছে যাতে বিশ্বের মুসলিম ও নির্যাতিত জাতিগুলো এ বিপ্লবের সুফলগুলো থেকে উপকৃত হয়।'
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সফল স্থপতি মরহুম ইমাম খোমেনী এই বিপ্লবে ইরানি জাতির ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেছেন:   'ইরানের মুসলিম জাতি সমস্ত শক্তি নিয়ে ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং তারা এক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ জাগরণের মাধ্যমে ইসলামের শত্রু শাহ সরকারকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। ইরানি জাতি ইসলামের প্রতি তাদের বিশ্বাসের কারণে এ ধর্মের সুরক্ষায় সব ধরনের ত্যাগ ও কুরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তাই ইরানি জাতির এই সংগ্রাম যে বিজয় অর্জন করবে ও শত্রুরা পরাজিত হবে তাতে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই।'
 
ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী একই প্রসঙ্গে বলেছেন: যে কোনো বিপ্লবকে সফল করতে হলে একটি চিন্তাগত চালিকা-শক্তি ও দু'টি মানবীয় চলকের দরকার হয়। চিন্তাগত দিকটি হল বিপ্লবের সুমহান আদর্শ। আর মানবীয় দুই চলক হল জনগণ ও নেতৃবৃন্দ। আর এই তিন চালিকা-শক্তি যখন অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পরস্পরের পাশে এসে দাঁড়ায় তখনই ঘটে যায় বিপ্লব। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ক্ষেত্রে এ তিনটি চলক বা চালিকা শক্তিরই সমন্বয় ঘটেছে। আর তাই ইরানের ইসলামী বিপ্লবের দুর্বার অগ্রযাত্রা ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি এবং একই কারণে ভবিষ্যতেও তা সম্ভব হবে না বলেই বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/০৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ