ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২১ ২৩:৩০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা ইরানে মধু চাষের প্রচলন নিয়ে কথা বলেছিলাম। মৌমাছি পালন বা মধু চাষের ক্ষেত্রে ইরান বেশ সক্রিয়।

যে দশটি দেশ বিশ্বের মধ্যে মধু চাষের ক্ষেত্রে ব্যাপক সক্রিয় তাদের মধ্যে ইরান অন্যতম।

আজকের আসরে আমরা আলোচনা করার চেষ্টা করবো বিদ্যুৎ শিল্প নিয়ে। একথা অনস্বীকার্য যে বিশ্বব্যাপী আজ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো বিদ্যুৎ সমস্যা। বিভিন্ন সমাজে জীবন মানের উন্নয়ন ও স্থায়ী উৎকর্ষের পেছনে বিদ্যুতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিদ্যুত নিশ্চিত করা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য একটি মৌলিক বিষয়। জ্বালানির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা করা এবং বিশুদ্ধ জ্বালানি ব্যবহার করার ফলে গ্রিন হাউজ গ্যাসের বিস্তার কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সাহায্য করে। সুতরাং সকলের জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করা এখন এ ক্ষেত্রে খুবই আলোচ্য একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কেননা বিদ্যুৎ হলো দূষণবিহীন একটি জ্বালানি। বিদ্যুৎ এখন নবায়নযোগ্যও বটে। এই বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের শিল্প ও কারখানাগুলোর প্রয়োজনীয় চাহিদা নিশ্চিত করা যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ এই বিদ্যুৎ খাতে ইরানের অবস্থান নিয়ে আজকের আসরে আমরা কথা বলার চেষ্টা করবো।

বিশ্বব্যাপী বছরে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তার শতকরা বিরানব্বই ভাগের মতো ব্যবহৃত হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের অবশ্য বহুরকম উপায় রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তার শতকরা চল্লিশ ভাগ উৎপাদিত হয় কয়লা থেকে, শতকরা তেইশ ভাগ উৎপাদিত হয় প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে, শতকরা একুশ ভাগ উৎপাদিত হয় নবায়নযোগ্য উৎস থেকে, শতকরা বারো ভাগ উৎপাদিত হয় পরমাণু উৎস থেকে আর শতকরা চার ভাগ উৎপাদিত হয় তেল কিংবা তেলজাত অন্যান্য উপাদান থেকে। বলা হয়ে থাকে যে বিশ্বব্যাপী এখনও প্রায় এক শ কোটি মানুষ বিদ্যুতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত আছে। কিন্তু এই বিদ্যুৎ শিল্পের অস্তিত্ব বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলেই মানব জীবনে চোখে পড়ার মতো নিত্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সত্যিই তাই। যে কৃষক মাঠে, ফসলের জমিতে পানি সেচন করে সেও বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যেই তার কাজ করার চেষ্টা করে। আবার হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা যে রোগীর জীবন মরণের বিচিত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে গবেষক চিকিৎসকগণও ওই বিদ্যুতের আশ্রয় নিয়ে থাকে। উভয়েই বিদ্যুতের গুরুত্বটা উপলব্ধি করতে পারে। আজকের দুনিয়ায় কম্পিউটার ছাড়া মানব জীবন প্রায় অচল। অফিস আদালতে, কল-কারাখানায় সর্বত্রই কম্পিউটার মানুষের জীবনের অনিবার্য সঙ্গী এখন। এই কম্পিউটারের ব্যাপকতার কারণেও ইলেক্ট্রিসিটির গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। সবার ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের গুরুত্ব যে কতো বেশি সেটা তখনই প্রকাশ পায় যখন লোডশেডিং দেখা দেয় মানে যখন বিদ্যুৎ চলে যায়।

বিদ্যুতের গুরুত্ব নিয়ে কথা হচ্ছিলো। বলছিলাম যে কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ না থাকলেই বোঝা যায় কতোটা গুরুত্বপূর্ণ এই বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ চলে গেলে নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, বিপদের মুখে পড়ে যায় সবাই। এককথায় মানব জীবন পুরোপুরি গভীর ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে যায়। মানুষ যত রকমের সমস্যায় সাধারণত পড়ে থাকে সেসব সমস্যার চেয়েও বিদ্যুৎহীনতার সমস্যাটা বড় হয়ে দেখা দেয়। এমনকি অন্য অনেক জিনিসের অভাবের তুলনায় বিদ্যুতের অভাব বড় বেশি রকমের বিপদজ্জনক সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। পাওয়ার গ্রিড সম্ভবত বিশ্বের বৃহত্তম হার্ডওয়্যার সিস্টেম এবং এটি পরিষ্কার ব্যবহার করা সহজ হবার কারণে এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে দূষণ তেমন একটা হয় না বললেই চলে।

এর কারণ হলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময়ই তার থেকে দূষণ হবার ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ হয়। বিদ্যুতের দূষণ নিয়ন্ত্রণের প্রথম পর্যায়টি হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রকে শহর বা গণ চলাচলের বাইরে স্থাপন করা। বিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধার জন্যও লোকালয়ের বাইরে স্থাপন করাটা সুবিধাজনক। সেখান থেকেই সরাসরি ব্যবহারকারীর নাগালে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। বিদ্যুৎ শিল্পের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এর অনেক অ্যাপ্লিকেশনই যেমন আলো জ্বালানো, গৃহের বিভিন্ন সরঞ্জাম বিশেষ করে ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম যেমন ফ্রিজ, টিভি, মাইক্রোওভেন, ইস্ত্রি, চুলা, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ইত্যাদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর কোনো বিকল্প নেই। বিভিন্ন শিল্পের ক্ষেত্রেও বিদ্যুতের ব্যবহার এতো বেশি যে বিশ্বের কোনো দেশই এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারবে না।

বলছিলাম বিদ্যুৎ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার সুযোগ কোনো দেশেরই নেই। বিশ্বে বিদ্যুৎ গবেষণা কেন্দ্রগুলোর গবেষণা অনুযায়ী একবিংশ শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধে ইলেক্ট্রিক জ্বালানি উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং তারই সুবাদে অপরাপর টেকনোলজির উন্নয়নও বৃদ্ধি পাবে। এদিক থেকে বিদ্যুৎ শিল্প কৌশলগত গুরুত্ব অর্জন করেছে। ইরানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সূচনা শতাধিক বছর কেটে গেছে। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে মোহাম্মাদ হোসাইন মাহদাভি নামের এক ব্যক্তি কয়লাভিত্তিক জেনারেটর কিনে এবং তা স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে তেহরান শহরের কিছু অংশকে আলোকিত করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে শুধু রাতের বেলা মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো তখন। যেহেতু জেনারেটরটি ছিল কয়লাচালিত সেজন্য এর খরচও ছিল অনেক বেশি। সুতরাং কয়লার পরিবর্তে ডিজেল চালিত জেনারেটর ব্যবহার করার চেষ্টা হলো।

ইরানে যে বিশাল বিশাল বাঁধ দেখতে পাওয়া যায় সেসব বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে এই ডিজেল চালিত জেনারটরের আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল। বিশেষ করে কারাজ বাঁধ, সেফিদ বাঁধ এবং দেজ বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এই ডিজেল চালিত জেনারেটরই ব্যবহার করা হয়েছিল। এরপর তেলের খনি আবিষ্কার এবং তেল উত্তোলনের সুবাদে ইরানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাহিদা মেটাতে ফসিল জ্বালানি ব্যবহার শুরু হয় এবং আজও তা অব্যাহত রয়েছে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ