ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১ ২০:৩০ Asia/Dhaka

গত কয়েকটি পর্বে আমরা শিশু ও কিশোরদের আদর্শ মানুষ ও মুসলমান হিসেবে গড়ার শিক্ষা বা কৌশল প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে আদর্শ মানুষ গড়ার পূর্ব-শর্ত হিসেবে বিয়ের জন্য উপযুক্ত ও ধার্মিক বর-কনে নির্বাচনের গুরুত্ব, সন্তান গ্রহণের আগে মানসিক প্রস্তুতি ও সন্তান গ্রহণের পূর্ব-প্রস্তুতি বা আদব-কায়দা সম্পর্কেও কথা বলেছি।

এ ছাড়াও মায়ের গর্ভ ধারণের সময়ের করণীয় কর্তব্য এবং সন্তানকে মানুষ করার ক্ষেত্রে হালাল রিজিকের গুরুত্ব ও  গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও খাদ্য বিষয়ে নিয় কথা বলেছি যথাক্রমে গত দুই পর্বে। আজ আমরা সুসন্তান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারগত বৈশিষ্ট্য এবং স্বাধীন ইচ্ছা ও যথাযথ শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু কথা বলব।

উত্তরাধিকারগত বৈশিষ্ট্য মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের শরীরে বংশগতির বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের একক জিন বা বংশাণুর সংখ্যা ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার পর্যন্ত রয়েছে। বাবা-মায়ের চোখ যদি নীল বর্ণের হয় তাহলে তাদের সন্তানের চোখও নীল বর্ণের হবে এমন সম্ভাবনাই বেশি। ইউরোপীয় বাবা-মায়ের সন্তান ইউরোপীয় ধাঁচেরই হবে এবং আফ্রিকান কৃষ্ণকায় দম্পতির সন্তানও তাঁদের মতই হবে। প্রতিটি জীবের ক্ষেত্রেই বংশগতির প্রভাব ও ছাপ দেখা যায়। তবে উত্তরাধিকারগত বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষের বাহ্যিক দিক বা কেবল শরীরের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। সন্তানরা বাবা-মায়ের স্বভাব চরিত্রও পেতে পারে বংশগতি বা উত্তরাধিকারগত বিধানের প্রভাবে। যেসব সন্তানের বাবা-মা সৎ, পরোপকারী, দয়ালু ও নানা ভালো গুণের অধিকারী তাদের সন্তানকেও একই ধরনের নানা ভালো গুণের অধিকারী করাটা বা তাদের জন্য একই ধরনের গুণের অধিকারী হতে প্রশিক্ষণ দেয়াটা সহজ।  কিন্তু বাবা-মায়ের মধ্যে যদি সমস্যা থাকে বা ওইসব মহৎ গুণ না দেখা যায় তাহলে তাদের সন্তানকে উন্নত চরিত্রের অধিকারী করতে অনেক বেশি যত্ন নিতে হবে ও তাদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

বিয়ে করা বা বিয়ে করানোর ক্ষেত্রে যোগ্য বা উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী বাছাই করার ওপর ইসলাম ধর্মে যে ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হয় তার কারণই হল সুসন্তান গড়ে তোলা এবং প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা। সন্তান তার অর্ধেক গুণ পেয়ে থাকে মা ও অর্ধেক গুণ পেয়ে থাকে বাবার কাছ থেকে। ইসলাম ধর্ম বোকা ও মানসিকভাবে অসুস্থ কাউকে বিয়ে করতে নিষেধ করে। কারণ এমন ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের ফলে যেসব সন্তান জন্ম নেবে সেসব সন্তানও একই রকম হতে পারে। সৎ ও পবিত্র স্বভাবের মা-বাবার সন্তানও সাধারণত সেসব পছন্দনীয় স্বভাবই পেয়ে থাকে।

কৃপণ ও ভীরু লোকের সন্তানও সেরকমই হতে পারে। কুটিল স্বভাবের লোকের সন্তানও কুটিল বা কূট-স্বভাবের হবে এটাই সাধারণ নিয়ম। তবে ব্যতিক্রমও আছে। আর এ জন্যই বলা হয় কখনও কখনও গোবরেও পদ্মফুল ফোটে এবং অনেক মহাপুরুষের সন্তানও পাপী হতে পারে।

ইতিহাসে দেখা যায় ইয়াজিদের পুত্র সন্তান নিজ বাবা ও দাদার নীতির তীব্র নিন্দা জানিয়ে এবং তাদের কৃতকর্মের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষমতায় থাকতে পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানায়। ফলে সে রহস্যজনকভাবে নিহত হয়েছিল।  অন্যদিকে হযরত নুহ নবীর এক পুত্র কাফের হয়েছিল ও হযরত আদমেরও এক পুত্র হত্যাকাণ্ডের মত পাপে লিপ্ত হয়েছিল। এর কারণ হল মানুষকে দেয়া হয়েছে মত ও পথ বেছে নেয়ার স্বাধীনতা। তাই কোনো মহাপাপীর পুত্রও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সুবাদে সৌভাগ্যের অধিকারী এবং মহাপুরুষের সন্তানও ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে পথভ্রষ্টতা ও ধ্বংসাত্মক পরিণতির অধিকারী হয়। তবে মানুষের ব্যক্তিত্ব গঠনে যেমন বংশগতির প্রভাব রয়েছে তেমনি পরিবেশ ও শিক্ষার প্রভাবও রয়েছে। তাই এ দুই বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ) মিশরের গভর্নরের কাছে পাঠানো এক ফরমানে লিখেছিলেন: প্রশাসন চালানোর জন্য এমন লোকদের বেছে নাও যাদের মধ্যে রয়েছে সৎ গুণগুলোর আধার এবং যারা ধার্মিক পরিবারের সদস্য ও যাদের রয়েছে সুন্দর অতীত। এ কাজের জন্য বেছে নাও বীর যোদ্ধা, ক্ষমাশীল ও মহানুভবসহ এমনসব লোকদের যাদের মধ্যে রয়েছে মহতী নানা গুণের সমাবেশ।

মুসলমানদেরকে অমুসলিম নারী বিয়ে করতে নিষেধ করা হয় এ জন্যই যাতে তাদের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য, চিন্তাধারা ও সাংস্কৃতিক দিকগুলো সন্তানের মধ্যেও সহজেই ছড়িয়ে না পড়ে। সন্তানের ভবিষ্যত শিক্ষা ও উন্নয়ন বা অবনতি কিংবা অধোগতির ক্ষেত্রে বংশগতির প্রভাব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না  শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রভাব বেশি গুরুত্বপূর্ণ? এ প্রসঙ্গে আজকের আলোচনার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের আলোকে বলা যায় যে আলোচ্য ক্ষেত্রে বংশগতির প্রভাব বেশ গুরুত্বপূর্ণ হলেও মানুষের ইচ্ছা, বিবেক-বুদ্ধি এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয় যে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎসঙ্গে সর্বনাশ। কিন্তু এটাও বলা হয় যে উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে এবং তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ