মার্চ ০৩, ২০২১ ১৯:৩০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা কথা বলার চেষ্টা করেছি ইরানের ফার্নিচার সামগ্রী নিয়ে। আসবাব বা ফার্নিচার সামগ্রীও বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্প। এই শিল্পটি দ্রুত বর্ধমান শিল্পগুলির মধ্যে একটি যা বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে সৃজনশীল ভূমিকা রাখছে। বিগত দশকগুলোতে বিশ্বব্যাপী ফার্নিচার শিল্প তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে বিবেচিত হতো না।

তবে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলো বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ফার্নিচার শিল্পে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করার ফলে ধীরে ধীরে ফার্নিচার শিল্প এখন বিশ্বের ছোট কিংবা মাঝারি মানের শিল্পের মর্যাদা লাভ করেছে। ইরানে আসবাব সামগ্রীর ইতিহাস বেশ প্রাচীন। পুরাতাত্ত্বিক গবেষণায় উঠে আসছে চমৎকার সব তথ্যবহুল সমৃদ্ধ ইতিহাস। ইরানের জাতীয় যাদুঘরের সংরক্ষিত রেই শহরের চেশমে আলি এলাকার খ্রিষ্টপূর্বকালের একটি চেয়ারের নিদর্শনের কথা বলেছি আপনাদের।  এর পাশাপাশি 'বনুয়ে রিসান্দে' নামে খ্যাত নতুন ইলাম যুগের ঐতিহাসিক আরেকটি আসবাব শিল্পের কথাও উল্লেখ করেছি গত আসরে। এই চেয়ারটি প্রাচীন আমলের ফার্নিচার শিল্পীদের শিল্প-নৈপুণ্যের একটি স্মারক বললে ভুল হবে না। এই চেরায়টির পায়াগুলো একটি সিংহের পাঞ্জার আকৃতিতে বানানো হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের আসরেও আমরা ফার্নিচার শিল্প নিয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো।

সিংহের পাঞ্জার আকৃতিতে চেয়ারের কিংবা খাটিয়ার পায়ার ডিজাইন করা হাখামানেশি শাসনামলের শিল্প নিদর্শন। তার মানে এগুলো খ্রিষ্টপূর্ব তিন শ ত্রিশ থেকে পাঁচ শ পঞ্চাশ বছর আগেকার। একইসঙ্গে এটাও প্রমাণিত হয় যে ইলাম যুগের শিল্প নিদর্শনের কিছু কিছু প্রভাব হাখামানেশিদের যুগে পড়েছে। ইরানের পুরাতত্ত্ব গবেষকগণ যেসব খননকার্য চালিয়েছেন সেসব থেকে আরও কিছু চেয়ারের নিদর্শন মিলেছে। ওই নিদর্শনগুলো ব্রোঞ্জের চেয়ার। উত্তর ইরানের গিলান প্রদেশের আমলাশ অঞ্চল থেকে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মূল্যবান ওই নিদর্শনগুলো পাওয়া গেছে। ব্রোঞ্জের তৈরি ছোট্ট এবং মিনিয়েচার কারুকাজ করা চেয়ারগুলোর আকার বা গঠন একেবারেই এখনকার যুগের চেয়ারের আকৃতির মতো। হেলান দেওয়া অংশটি আয়তকার আর পায়াগুলো সাদামাটা।

তৈজসপত্র কিংবা প্রাচীন আসবাবপত্রসহ পুরাতাত্ত্বিক ভবনগুলোতে যেসব নকশা বা কারুকাজ লক্ষ্য করা যায় তা থেকে অনুমান করা যায় যে ফার্নিচার এবং নিত্য ব্যবহার্য তৈজসপত্র তৈরি করাসহ ভবনের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ক্ষেত্রে ইরানের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, ইরানে হাতে বোনা কার্পেটের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। ইরানিরা প্রাচীনকাল থেকেই কার্পেট ব্যবহার করে এসেছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রাকৃতিক কারণেই এই কার্পেটের ব্যবহার ছিল স্বাভাবিক এবং আবশ্যকীয় একটি প্রবণতা। আর কার্পেট ব্যবহার করার কারণে সোফা, চেয়ার, টেবিলের মতো আসবাবগুলোর ব্যবহার খুব বেশি ছিল না। এগুলো কেবল  সমাজের সমৃদ্ধ ও অভিজাত শ্রেণির লোকজনই ব্যবহার করতো।

ফার্নিচার শিল্প নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা। বিগত এক শতাব্দীতে ইরানের ফার্নিচার শিল্পে চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। আসলে মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতির সঙ্গে পণ্য সামগ্রীরও মানানসই পরিবর্তন আসে। ইরানিরা এখন নিজেদের ঘরের অভ্যন্তরে কার্পেটের পাশাপাশি ফার্নিচারও ব্যবহার করছে। ফার্নিচার এখন হয়ে উঠেছে ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের অংশ। সুতরাং ফার্নিচার এখন খুবই প্রয়োজনীয় একটি সামগ্রী ইরানিদের কাছে। ইরানের আসবাবপত্র ও উড শিল্প এখন বেশ সক্রিয়। এই শিল্পের জগতে যারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় ভূমিকা রাখছে তাদের রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ফার্নিচার ফ্যাক্টরি। ছোটো ছোটো ফ্যাক্টরিগুলোতে ব্যাপক কাজ করছে ফার্নিচার শিল্পীরা। ইরানের বেশিরভাগ আসবাবই এইসব ফ্যাক্টরিতে তৈরি হচ্ছে। বড় বড় ফ্যাক্টরি বা শিল্প-কারখানা খুব বেশি নেই।

ইরানে বর্তমানে ছোটো ও মাঝারি আকারের অন্তত পঞ্চাশ হাজার ফার্নিচার তৈরির কারখানা সক্রিয় আছে। এসব কারখানার সুবাদে বিশাল কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে। এক লাখ সতেরো হাজারেরও বেশি জনশক্তি এইসব কারখানায় কর্মরত। এগুলোর পাশাপাশি রয়েছে দুই শ'রও বেশি বড় বড় কারখানা। এসব কারখানায় রয়েছে ফার্নিচার তৈরির পৃথক পৃথক বিভিন্ন বিভাগ। একেক ইউনিটে ফার্নিচারের একেকটি অংশ তৈরি হয়। সবগুলোর সমন্বয়ে তৈরি হয় পূর্ণাঙ্গ ফার্নিচার। ইরানের বেশিরভাগ শহরেই ফার্নিচার তৈরির কারখানা রয়েছে। তবু যে কয়টি শহরকে মূল কেন্দ্রের মর্যাদা দেওয়া যায় সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তেহরান, কোম, মালায়ের, মাশহাদ, তাব্রিজ এবং মারান্দ।

আসবাবপত্র তৈরিতে ইরানের অবস্থান তুলে ধরছিলাম আমরা। ইরানের ফার্নিচারকে প্রধান তিনটি ভাগে নিস্যস্ত করা যেতে পারে। একটা হলো অফিসিয়াল ফার্নিচার, দ্বিতীয়ত মডার্ন বা ইজি ফার্নিচার এবং তৃতীয় শ্রেণীতে পড়বে ক্লাসিক বা ঐতিহ্যবাহী ধারার ফার্নিচার। এই ক্লাসিক ধারা এবং অফিসিয়াল শ্রেণীর ফার্নিচারই ইরান থেকে বেশি রপ্তানি করা হয় বিদেশে। বিদেশ বলতে ইরানের প্রতিবেশী দেশ ইরাক, আফগানিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর পাশাপাশি পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের আরব দেশগুলোতেও ইরানের ফার্নিচার রপ্তানি হয়। এর বাইরে স্পেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং অস্ট্রিয়াতেও রপ্তানি হয় ইরানের ফার্নিচার।

বুঝতেই পারা যাচ্ছে ইরানের ফার্নিচারের গুণগত মান খুবই ভালো এবং উন্নত। রপ্তানি চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে তাই সংশ্লিষ্টরা এ ক্ষেত্রে আরও বহু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। দেশের বাইরেও স্থায়ী প্রদর্শনীর জন্য ডিসপ্লে সেন্টার স্থাপন করাসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নে রয়েছে অনেক অনেক পরিকল্পনা। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।