বসুরহাট পরিস্থিতিকে যেভাবে দেখছেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন…
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট এলাকায় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের পর সেখানকার পরিস্থিতি থমথমে। জনগণ উদ্বেগের মধ্যে আছেন বলে বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা কথা বলেছিলাম বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটনের সঙ্গে। তিনি বললেন, দীর্ঘদিন কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে এবং আদর্শ লোপ পেলে একইসাথে বিরোধী দলের উপস্থিতি না থাকলে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে এ ধরনের দ্বন্দ্ব ও সংঘাত ঘটে থাকে।
সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।
রেডিও তেহরান: জনাব, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট এলাকায় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ, আহত, হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তো ক্ষমতাসীন দলের এই সংঘর্ষকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
নূর খান লিটন: আসলে দীর্ঘদিন ধরে যখন কোনো একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে এবং সেখানে যখন কর্মীরা দুর্নীতি ও অনাচারে যুক্ত হয়ে যায় তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে। সেখানে যখন কেউ সুবিধা পান আবার কেউ পান না এবং আদর্শিক চর্চা যখন অনুপস্থিত থাকে রাজনৈতিক দলে তখন অভ্যন্তরীণ কোন্দলগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। দেখা যায় দলের মধ্যে নানা উপদলের মধ্যে এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক, এলাকাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পায়। এরই ফলশ্রুতিতে কোম্পানিগঞ্জের বসুরহাটের ঐ ঘটনা।
শুধু কোম্পানিগঞ্জ সামনে এসেছে কারণ সেখানে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত স্পষ্ট হয়েছে। কয়েকমাস ধরে সেখানে নানামুখী তৎপরতা আমরা লক্ষ্য করছি ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে। এটার একটা প্রভাব এবং এ ধরনের ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। স্থানীয় সরকারের যে নির্বাচনগুলো হচ্ছে সেখানে আমরা লক্ষ্য করছি যখন দলীয় মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে তখন মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যে থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন অনেকে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকারি দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল-সংকট জনগণের সামনে প্রকাশিত হচ্ছে। আদর্শহীন রাজনীতিতে যে সংকটগুলো আমরা দেখে থাকি এবং মাসল ম্যানদের দৌরাত্ম সেটিই এখন বাংলাদেশে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রেডিও তেহরান: সংঘর্ষে দু দলই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে সেকথা কিন্তু পরিষ্কার। এ ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কী কাঙ্ক্ষিত বলে আপনি মনে করেন?
নূর খান লিটন: দেখুন, কেবলমাত্র বসুরহাট দিয়েই বলব না আমি সারাদেশের অবস্থাই বলছি। ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে অভ্যন্তরীণ গ্রুপগুলো যখন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তখন আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী একটি বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে যায়। অথবা আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ক্ষমতাধর নেতাদের পক্ষ অবলম্বন করে। ফলে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নিরাপত্তাবাহিনীর যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া দরকার তা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যহত হচ্ছে বা সেই উদ্যোগগুলোর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
রেডিও তেহরান: সংঘর্ষ হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে। ঘটনাটি কী দলের হাইকমান্ডের জন্য বিব্রতকর?
নূর খান লিটন: দেখুন, রাজনীতি যদি রাজনীতির জায়গায় থাকত, রাজনীতিবিদদের হাতে থাকত এবং আদর্শিক অবস্থান থাকত দলগুলোর তাহলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে একধরনের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে তাঁরা পড়তেন। যেহেতু রাজনীতিতে এখন রাজনৈতিক চর্চা নেই; এখানে এক ব্যক্তি কিংবা দুই একজনের নির্দেশক্রমে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দল বা দেশ পরিচালিত হচ্ছে এরকম একটি অবস্থায় কিন্তু কারও বিব্রতকর হওয়ার অবস্থা খুব বেশি দৃশ্যমান হবে না। যদিও বসুরহাটের বিষয়টি বিব্রতকর অবস্থায় পড়ার কথা। বসুরহাটের কথাই যদি বলি সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের আপন ভাই কাদের মির্জার সাথে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এর যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে যারা ক্ষমতায় আছেন সেই দরের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে ধরনের উদ্যোগ নেয়ার কথা ছিল সেই ধরনের উদ্যোগ আমরা দেখছি না।
এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে হস্তক্ষেপ দরকার ছিল-যদিও এখানে তাঁর হস্তক্ষেপের কথা নয় কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশের সবকিছু এখন কেন্দ্রীভূত হয়েছে ওঁনার কাছে ফলে সেখানে ওঁনার উদ্যোগের দরকার ছিল কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্ট্রং কোনো উদ্যোগ দেখছি না।
রেডিও তেহরান: অনেকে বলছেন, রাজনীতির মাঠে বিরোধীদলের অনুপস্থিতির কারণে এখন ক্ষমতাসীন দলের লোকজন নিজেরা নিজেরা সংঘর্ষ লিপ্ত। আপনিও কী তাই মনে করেন?
নূর খান লিটন: একটা দেশে যখন বিরোধী রাজনৈতিক দল দুর্বল হয়ে যায় বা রাজনীতির মাঠ থেকে প্রায় অনুপস্থিত থাকে তখন স্বাভাবিকভাবে গণতান্ত্রিক কার্যক্রম ব্যহত হয়। আর যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের মধ্যে একধরনের ক্ষমতালিপ্সা বেড়ে যায়। বাংলাদেশে আমরা এখন মনে করি সেই অবস্থাটি এসেছে।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১২
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।