মার্চ ১৭, ২০২১ ১৭:৩০ Asia/Dhaka

গত কয়েকটি আসরে আমরা ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় ঐতিহাসিক প্রদেশ হরমুজগানের বিখ্যাত শহর বন্দর আব্বাসের পাশে অবস্থিত দ্বীপাঞ্চলীয় পর্যটন শহর কেশমের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখে বেড়াচ্ছি।

 এখানকার কয়েকটি জিওপার্কের সঙ্গেও আমাদের পরিচয় ঘটেছে। এগুলোর একটি হলো 'কেশম ওয়ার্ল্ড জিওপার্ক'। এটি বিশটিরও বেশি জিওসাইট  নিয়ে গড়ে উঠেছে।

গত আসরে আমরা "স্টার ভ্যালি" নামে পরিচিত কেশমের প্রাকৃতিক এক বিরল উপহারের কথা বলেছিলাম আপনাদের। এখানকার মূল যে মালভূমি অঞ্চল সে অঞ্চলের উত্তর অংশে এখনও এই ভ্যালির কম বা বেশি অক্ষত দেখতে পাওয়া যায়। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অনিন্দ্যমনোহর। স্টার ভ্যালির পর চহকুহ প্রণালির কথাও বলেছি। এটি কেশম দ্বীপের আরও একটি দর্শনীয় স্থান। পূর্ব চহু গ্রামের পাশে কেশম শহর থেকে সত্তর কিলোমিটার দূরত্বে এই প্রণালিটি অবস্থিত। কেশম দ্বীপের উত্তর উপকূলের পশ্চিম অংশের এই উপত্যকায় যাবার সঙ্গে সঙ্গে  আপনার মনে হবে মায়াময় কোনো অভিনব রূপকথার জগতে প্রবেশ করেছেন আপনি।

চহকুহ প্রণালীটি একটি পাথুরে পাহাড়ের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। আপনি যখনই এই প্রণালীতে পা রাখবেন তখনই আপনি উঁচু প্রাচীরসহ বেশ প্রশস্ত জায়গা দেখা পাবেন। তবে এই বিস্তৃত পরিবেশ বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না। কেননা আপনি উপত্যকার দক্ষিণে গেলেই দেখতে পাবেন রাস্তার প্রশস্ততা ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে। এতোটাই সংকীর্ণ হয়ে উঠবে যে উপরের আকাশ দেখতে পাওয়া কঠিন হয়ে উঠবে। প্রণালীর পথ এতোই সংকীর্ণ হয়ে গেছে যে হাঁটাচলাফেরা করাটাও অসুবিধাজনক হতে পারে। না, ভড়কে যাওয়া কিংবা ভয় পাবার কোনো কারণ নেই। কেননা একটু পর পর এমন কিছু করিডোর রয়েছে যেখানে আপনি বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারেন।

ফার্সি ভাষায় 'চহ' মানে হলো কূপ। 'কূহ' মানে হলো পাহাড়। সুতরাং চহকূহ' মানে একত্রে দাঁড়ায় এটা এমন একটি পাহাড়ি উপত্যকা যেখানে গভীর অগভীর অনেকগুলো কূপ রয়েছে। হতে পারে এইসব কূপ এলাকাবাসী নিজেরাই খনন করেছে। বৃষ্টির পানি জমিয়ে বিভিন্ন কাজে এদিক সেদিক সরবরাহ করার সুবিধার জন্য। তবে এগুলো যে অনেক প্রাচীন পুরাতত্ত্ববিদরা তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেন।

একটি তথ্য এখানে জানিয়ে রাখা ভাল যে মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম এবং বৃহত্তম ক্রোকোডাইল পার্কটিও এই কেশম দ্বীপেই অবস্থিত। এই দুর্লভ প্রাণীর জীবনযাপন প্রণালী এবং খাদ্যাভ্যাসসহ অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের সাথে নিবিড়ভাবে পরিচিত হওয়ার জন্য এই পার্কটি যথেষ্ট উপযোগী। কারণ হলো পার্কটি একেবারেই নিরাপদ। বুনো জন্তু-জানোয়ার যারা ভয় করেন অথচ তাদের দেখতে খুবই আগ্রহী সেরকম পর্যটকদের জন্য চমৎকার এবং নিরাপদ জায়গা এই পার্ক। এই কমপ্লেক্সটি কেশম জিওপার্কের‌ই অংশ এবং পার্কটি পরিবেশ বান্ধব। প্রতি বছর এই পার্ক দেখতে অগণিত পর্যটক কেশেম ভ্রমণ করেন এবং এই অনন্য উদ্যানটি পরিদর্শন করেন।

নাজ দ্বীপপুঞ্জও কেশমের অন্যতম স্বপ্নীল পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত। এই দ্বীপপুঞ্জ পানির স্তর কমে যাওয়ার সময় সরু রাস্তার মাধ্যমে কেশমের সাথে সংযুক্ত হয়। পর্যটকরা তখন পায়ে হেঁটে কিংবা পানির মধ্য দিয়েই পৌঁছে যেতে পারে। আবার পানির স্তর যখন বেড়ে যায় তখন সুন্দর এই দ্বীপগুলির সংযোগ কেশম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দ্বীপগুলির এই লুকোচুরি খেলার কারণে অর্থাৎ পানির নীচে হারিয়ে যাওয়ার পর তাদের পুনরায় ভেসে ওঠা বা জেগে ওঠার যে স্বপ্ন ভেসে বেড়ায় এখানকার সবার মনে সেই স্বপ্নীল ইচ্ছে থেকেই এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে নাজ আদুরে কিংবা লাজুক লাজুক অনুভূতিময়।

সাধারণত যারা বিভিন্ন দেশে বা অঞ্চলে ভ্রমণ করতে যায় তারা ওই এলাকার স্মৃতি ধরে রাখা কিংবা সেই এলাকার বিভিন্ন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে। যারা ভ্রমণের স্মৃতি নিয়ে লিখতে চান তাদের জন্য তো ভ্রমণকৃত অঞ্চলের তথ্যসমৃদ্ধ একটি স্যুভেনির খুবই জরুরি। এখানে এরকম সমৃদ্ধ স্যুভেনির কিনতে পাওয়া যায়। ভ্রমণ গাইডসহ সামগ্রিক তথ্য ও ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে ছোটোখাটো একটা বর্ণনা থাকে এইসব স্যুভেনিরে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের শহরগুলির বেশিরভাগই উন্নতমানের খুরমা খেজুরের জন্য সুপরিচিত। কেশমে সেইসব বিচিত্র খুরমার সন্ধান মেলবে সহজেই। আপনি চাইলে কেশমের স্মৃতি হিসেবে কিছু খুরমা সংগ্রহ করে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন

কেশমে বিশ রকমেরও বেশি স্থানীয় রুটি তৈরি করা হয়। তবে সর্বাধিক খ্যাত কেশমি রুটির নাম হলো "তমুশির রুটি"। এই রুটি একটি প্যানে তেল দিয়ে ভাজা হয়। তাতে ডিম বা পনির দেওয়া হয়। তবে এই রুটির আসল মজাটাই হলো "সস" এর মধ্যে। একটা স্পেশাল সস দিয়ে এই তমুশির রুটি খাওয়া হয়। সাধারণত সসগুলি মাছের নির্যাস দিয়ে তৈরি করা হয়। তার সাথে সরিষা, ধনিয়া, লবণ এবং মৌরির মিশ্রণে তৈরি হয় এই সস।#

 

ইরানের ঐতিহাসিক কেশম দ্বীপের 'ওয়ার্ল্ড জিওপার্ক'

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ