মার্চ ২৫, ২০২১ ১৫:৩০ Asia/Dhaka

গত কয়েকটি আসরে আমরা ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় ঐতিহাসিক প্রদেশ হরমুজগানের বিখ্যাত শহর বন্দর আব্বাসের পাশে অবস্থিত দ্বীপাঞ্চলীয় পর্যটন শহর কেশমের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখেছি। আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে

আজ আমরা এই কেশম দ্বীপ ছেড়ে যাবো হরমুজগান প্রদেশেরই আরেকটি দ্বীপের দিকে। আধুনিক নির্মাণশৈলিময় চমৎকার এই পর্যটন দ্বীপের নাম কীশ।

আমাদের ইরান ভ্রমণের ধারাবাহিকতায় আজ হরমুজগান প্রদেশের যে কিশ দ্বীপে বেড়াতে যেতে চাচ্ছি আমরা এই সুন্দর দ্বীপটিকে তার রুপ এবং উপভোগ্য প্রকৃতির নান্দনিকতার জন্য বলা হয় পার্সিয়ান উপসাগরের মুক্তো। ফার্সিতে বলা হয় মোরভরিদ। মুক্তো হিসেবে পরিচিত "কিশ দ্বীপ" একটি প্রবাল দ্বীপ। পারস্য উপসাগরের অন্যতম আকর্ষণীয় দ্বীপ এটি। এখানকার প্রশান্ত সমুদ্র সৈকত, প্রবাল, ঝিকমিকে বালুকণা, স্বচ্ছ জল এবং নীলাভ সবুজ রঙের স্বচ্ছ সমুদ্রসহ বিচিত্র রঙিন আলংকারিক মাছ দেখে রসিক মনের সৌন্দর্য পিয়াসি চেতনা মেটানো যাবে সহজেই। আমরা বরং কথা না বাড়িয়ে সোজা চলে যাবার চেষ্টা করি পারস্য উপসাগরীয় অনিন্দ্যসুন্দর দ্বীপ কীশে।

কিশ একটি পর্যটন অঞ্চল। এখানে একজন পর্যটকের জন্য প্রয়োজনীয় সকল আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে দেখার মতো বহু স্পট, সমুদ্র ক্রীড়া মানে সাগরের জলে খেলাধুলার আয়োজন, দর্শনীয় বহু কেন্দ্র, ডাইভিং সেন্টার, বাণিজ্যিক কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক মানের বাজার বা শপিং সেন্টার, পর্যটক সেবার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা মানে থাকার ব্যবস্থার জন্য রয়েছে পাঁচতারা হোটেল, মোটেল এবং আধুনিক ও উন্নত মানের ভিলা ইত্যাদি। এগুলো এমনভাবে সুসজ্জিত করে রাখা হয়েছে যে এগুলোও এখন কিশের আকর্ষণীয় এবং দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। আর এইসব পর্যটন আকর্ষণীয় সুন্দর সুন্দর স্থান এবং নীল সাগরের সুন্দর দৃশ্যের কারণে কিশ দ্বীপ দক্ষিণ ইরানের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এই কিশকে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার চতুর্থ পর্যটন কেন্দ্রের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে পর্যটন সংস্থা। বছরে প্রায় বিশ লাখ ইরানী ও বিদেশী পর্যটক কিশ দ্বীপ পরিদর্শন করে থাকেন।

এই দ্বীপে বিদেশী পর্যটকদের এতো বেশি আনাগোণার আরও একটি কারণ হলো সকল বিদেশি নাগরিকের জন্য প্রবেশ ভিসা নেওয়ার দরকার নেই। সুন্দর এই কিশ দ্বীপ ভ্রমণে তেমন কোনো জটিলতা ভোগ করতে হয় না। আমরা এই সুন্দর দ্বীপটি সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করবো। আপনাকেও আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আমাদের সঙ্গী হবার জন্য। কিশ দ্বীপকে আগে "কাইস" বা 'গেইস' নামেও অভিহিত করা হতো। এই দ্বীপের আয়তন প্রায় নব্বুই বর্গকিলোমিটার। কিশ দ্বীপের আকৃতি অনেকটা ডিমের মতো। এখান থেকে বন্দর আব্বাসের দূরত্ব তিন শ কিলোমিটার আর কেশম দ্বীপের দূরত্ব দুই শ পঁচিশ কিলোমিটার।

কিশ দ্বীপ থেকে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় বিখ্যাত বন্দর আব্বাস এবং কেশম দ্বীপের দূরত্ব নিয়ে কথা বলছিলাম।  হাখামানেশিদের সময়কালে কিশ দ্বীপ ছিল মুক্তো শিকারের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ‌কটি কেন্দ্র। বিশ্বের বড় বড় ব্যবসায়ীরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই দ্বীপে বাণিজ্যের জন্য যাওয়া আসা করতেন। এক সময় এই দ্বীপটি এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যে পারস্য উপসাগরের শাসকরা সেখানে বসতি স্থাপন করেন। ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগিজরা এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বাজারের ওপর তাদের আধিপত্য বিস্তার করার লক্ষ্যে ভারত মহাসাগরে তাদের যুদ্ধ জাহাজ ভিড়ায়। সাফাভি শাসনামল পর্যন্ত তারা কিশ দ্বীপে অবস্থান করে। শাহ আব্বাস সাফাভির আমলে শেষ পর্যন্ত কিশ দ্বীপ বিদেশী আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়েছিল।

কিশ দ্বীপের কৌশলগত এবং গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে এবং বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে অনুমোদিত হওয়ার পর উনিশ শ সত্তর সালে এই এলাকাটিকে একটি আন্তর্জাতিক পর্যটন ও বাণিজ্যিক অঞ্চলে পরিণত করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হয়। ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের আগেই এই দ্বীপের উন্নয়নের কাজ হয়েছিল। বিপ্লবের সময় সেই কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিপ্লব বিজয়ের পর কিশে ফ্রি জোন অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে দ্বীপের উন্নয়নের কার্যক্রম আবারও শুরু করা হয়। কিশকে একটি মুক্ত অঞ্চল হিসাবে নির্বাচন করা হয়। তাছাড়া বিদেশি নাগরিকদের মধ্য থেকে যারা বিনিয়োগ করবে তাদেরকে শুল্ক ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি ভিসার প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়।

কিশ দ্বীপে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুযোগ সুবিধা নিয়ে কথা বলছিলাম। মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল ঘোষণার ফলে কিশ দ্বীপটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য আকর্ষণীয় একটি অঞ্চলে পরিণত হয়। উনিশ শ বিরানব্বই সালে কিশকে ফ্রি জোনে পরিণত করার সাথে সাথে এই দ্বীপটি নতুন জীবন লাভ করে এবং তার দ্রুত উন্নয়ন ও বিকাশের পথ সুগম হয়। কিশের বেশিরভাগ দর্শনীয় স্থানই প্রকৃতির বিস্ময়। বছরের পর বছর ধরে প্রকৃতিই এইসব বিস্ময় তৈরি করেছে। পরবর্তীকালে মানুষের হাতে সেগুলোতে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।  কিশের এক বিস্ময় হলো এখানকার সত্যিকারঅর্থেই অসম্ভব সুন্দর সমুদ্র সৈকত। কিশের বালুকাময় সমুদ্র সৈকতের ঝিকমিকে আঁচল যেন প্রবাল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

বালুকার রেণুতে রোদের রৌপ্যময় ঝলক এমন এক বিস্ময়কর দৃশ্যের অবতারণা করে যে এককথায় এ এক অনন্য সৌন্দর্য। বলেছি যে কিশ একটি দ্বীপ। এখানে এতো পরিষ্কার নীল জলের সমুদ্র রয়েছে যে জলের স্বচ্ছতার কারণে সমুদ্রের কয়েক মিটার গভীরের দৃশ্যও দেখতে পাওয়া যায়। যার কারণে কিশের সমুদ্রকে প্রাকৃতিক অ্যাকোয়ারিয়ামের মতো মনে হয়। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ